somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

খালেদা জিয়ার গণনায় গোলমাল না অন্য কিছু ?

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ ভোর ৬:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শীতের শুরুতেই কাউকে পাবনা পাঠানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠা সুস্থতার পরিচয় বহন করে না। বিশেষত আমাদের দেশে। যেখানে শীতকাল আসতে না আসতেই কিছু মানুষের মাথা, মানে হেডকোয়ার্টারে গণ্ডগোল শুরু হয়ে যায়। তারা কী বলে কেন বলে বা কী ভেবে বলে সেটা বোঝা মুশকিল হয়ে পড়ে।

খালেদা জিয়ার মতো কয়েক বারের প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি দলের নেতার মুখে এমন প্রলাপ কাম্য নয় জেনেও শুনতে হল। সোমবার তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পাবনা পাঠানোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। গিয়েছিলেন ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশ ও আলোচনা সভায়। বিজয় দিবসের আলোচনা হবে হয়তো। মুক্তিযুদ্ধের একজন সেক্টর কমান্ডারের গড়া ও নিজেদের নেতাকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করা দলের নেত্রী সেদিন আরও চমকে দিলেন মুক্তিযুদ্ধে নিহত শহীদদের সংখ্যা নিয়ে তাঁর শঙ্কা বা সন্দেহের কথা বলে।

তিন তিনবার প্রধানমন্ত্রী পদে আসীন থাকাকালীন তিনি কি এমন কিছু বলেছিলেন? তাঁর যখন দোর্দণ্ড প্রতাপ, দেশ-জাতি তাঁর কথায় উঠছে-বসছে– বেচারা ইতিহাস, কলম-বেয়োনেট, কালির আঁচড়ে বা ঘষামাজায় পথ হারাচ্ছে– তখনও কিন্তু তিনি এ নিয়ে কিছু বলেছিলেন বলে মনে পড়ে না। এখন কেন হঠাৎ করে তিরিশ লাখ নিয়ে এই সংশয় বা সন্দেহ? তিনি কি হঠাৎ করে এগুলো বলছেন না এর পেছনে কোনো দুরভিসন্ধি আছে?

বেগম জিয়ার এখন ঘোর দুঃসময়। তিনি নিজে যেমন একা, তাঁর দলের অবস্থাও ত্রাহি ত্রাহি। যে দিন তিনি এ কথাগুলো বললেন, সে ভাষণেই আগাম পরাজয়ের কথা বলে রেখেছেন। তাঁর মতে, দলীয় প্রতীকে নৌকা ও ধানের শীষে পৌর নির্বাচন করার কারণ নাকি জনগণকে দেখিবে দেওয়া যে, নৌকার কাছে ধানের শীষ পাত্তা পায়নি। আগাম এমন কথা বলার ভেতর যদি সত্য থাকেও, তাতে নেই দূরদর্শিতা বা প্রজ্ঞা। সেটা যদি জানবেনই, তবে বিনপি-প্রার্থীরা ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচনে গেলেন কেন?

ম্যাডাম জিয়া ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ না নিয়ে যে ভুল করেছেন তার প্রায়শ্চিত্ত বা মুচলেকা হিসেবে এ নির্বাচনে যেতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ জ্বালাও-পোড়াও, যানবাহন বা জীবননাশ করেও মানুষকে প্রলুব্ধ করা যায়নি। বরং দেশের ভেতর একা ও নিঃসঙ্গ অবস্থায় মোটামুটি বন্দি সময় কাটাতে হয়েছিল তাঁকে।

সে সময় বড় বড় নেতাদের কাউকে আমরা রাজপথে সাহস করে নামতে দেখিনি। মুখে অনেক বড় বড় কথা বললেও তারা আসলে পিছটান দিয়েছিলেন। দুয়েক জন নেতা বিদেশে বসে ভাইবারে বা মোবাইলে অন্যদের উস্কে দিয়ে নিজেরা ভালো থাকলেও বেচারা মাহমুদুর রহমান মান্নার এখন হাড্ডি পচে পানি। গুজব আছে, খোকা নাকি এখন আর খোকা নেই। বুদ্ধিমান হবার পর স্ব-উদ্যেগে মান্নাকে হাজতে পোরার পুরস্কার উপভোগ করছেন।

এই হচ্ছে খালেদা জিয়ার দলের নেতাদের বর্তমান হাল! এক ব্যারিস্টার তো পুস্তক লিখে তরুণ জিয়ার ভেতরের খবর দিয়ে হাওয়া ভবনের চাকা পাংচার করে দিতে ব্যস্ত। সে হাওয়ার যে দুর্গন্ধ সেটাও কি বিএনপির জন্যে সুখের? আরেক ব্যরিস্টার সাফ জানিয়ে দিয়েছেন যে, এদেশের রাজনীতিতে, তাদের ভাষায়, ‘শহীদ জিয়ার আদর্শ’ বাস্তবায়নে খালেদা ম্যাডামের দরকার নেই। বড় আচানক বাত! এই ব্যারিস্টারই প্রথম ব্যক্তি যিনি মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ের আদর্শ বাস্তবায়নে একাই একশ। এমন কথা শুনে শেখ আসিনার কী বোধোদয় হবে জানি না, তবে আমার ধারণা, খালেদা জিয়া এদের সঙ্গে থাকতে থাকতেই পাবনার প্রতি এতটা দুর্বল হয়ে পড়েছেন।

শহীদের সংখ্যা নিয়ে খালেদা জিয়ার এই সন্দেহ আসলে কার অপমান? যারা জীবন দিয়েছেন তাদের? না, যিনি তাদের পবিত্র রক্তের অর্জনের ওপর দাঁড়িয়ে এদেশে কয়েক দফায় প্রধানমন্ত্রী হতে পেরেছিলেন, তার? যে মাটি যে পতাকা যে সঙ্গীতের ওপর ভর করে এখনও চলছেন– যে ইতিহাস না থাকলে খালেদা জিয়ারা এদেশের সাধারণ গৃহবধূ– তার সঙ্গে এই আচরণের আসল রহস্য কী?

ধরে নিলেম তিরিশ লাখ মরেনি, তাতে বিএনপির কী লাভ? পাকিস্তানিরা এ নিয়ে তর্ক করে, করবেও। কারণ তারা ছিল ঘাতক। ঘাতক কখনও খুনের দায় স্বীকার করে না। সে কারণে তাদের কাছ থেকে এ নিয়ে বিতর্ক আশা করা যায়। পাকিস্তানি রাজনীতির অন্তর্গত ধারক বিএনপি কি তবে এখন তার আসল ফর্মে আসতে চাইছে আবারও?

কারণ যাই হোক, এই ছেলেমানুষি খেলা বা কথার পরিণাম শুভ হবে না। এটা বিএনপির জন্য আরও একবার অশনি সংকেতের কাজ করবে। তারা তাদের অভিজ্ঞতা ঝালিয়ে নিলেই দেখতে পাবে, জামায়াত ও পাকিস্তানি লবিংএর কারণে আজ তাদের ব্যাকফুটে খেলতে হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের এ দেশে হাজার ঝুট-ঝামেলা থাকলেও মৌলিক চেতনার জায়গাটা নষ্ট হয়ে যায়নি। শাহবাগের সময় যে আন্দোলন বা স্ফুলিঙ্গ জ্বলে উঠেছিল তার বিপরীতে পরিকল্পিতভাবে ধর্ম ও মৌলবাদের ব্যবহার টেকেনি। এমনকি ফাঁসিও রদ হয়নি। আমি ব্যক্তিগতভাবে মৃত্যুর জন্য উল্লাসে বিশ্বাসী নই। কিন্তু যে সব মৃত্যূ আপনা থেকে অপমৃত্যু বা অন্যায়ের আলিঙ্গন করে তা রূখবে কে? খালেদা জিয়া এসব অপমৃত্যুর সঙ্গে শহীদের আত্মা গুলিয়ে ফেলতে চাইছেন। কেন যেন মনে হচ্ছে, পাকি ইন্ধন, আক্রোশ আর মিত্র হারানোর বেদনায় এখন এসব বলে খোলা গরম করাই তাদের ইচ্ছে।

প্রশ্ন জাগে, নিজের শাসনামলে খালেদা জিয়া কেন শহীদের সংখ্যা নির্ধারণ করেননি? কেন নিদেনপক্ষে একটি লিস্ট তৈরি করেননি? কেন অজস্রবার তিরিশ লাখ শহীদের আত্মার শান্তি কামনায় মোনাজাত করতেন? কেন ভাষণে-বক্তৃতায়, সভা-সমাবেশে এদের কথা বলে মুখে ফেনা তুলতেন? এসব প্রশ্ন তো আজ জাতি করতেই পারে। কারণ তিনি যে অস্তিত্বের গোড়া ধরে টান দিতে চাইছেন। দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও একটি শক্তিশালী দলের প্রধান হিসেবে দেশের মৌল বিষয়, শহীদের সংখ্যা ও আদর্শ নিয়ে প্রশ্ন তুললে কাউকে কি দেশপ্রেমিক বলা যায়?

সময় এসব মাফ করবে না। কলিকাল বলে অনেক কিছুই চলছে। মুক্তিযুদ্ধের অপমান আর শহীদের প্রতি অবজ্ঞা করে এদেশে কেউ টেকেনি। এ সত্য জানা না থাকলে নিজের জীবনটা একবার আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে দেখুন। জানালা খুলে শুনুন, এখনও ‘ওরা আসবে চুপিচুপি’ গানটি শুনে চোখের জলে কেমন ভিজে যায় এই দেশ। এই দেশের মানুষেরা রক্ত ও মাটির অপমান সহ্য করতে শেখেনি। এটা না জানলে রাজনীতি এগিয়ে নেবেন কীভাবে?

শোক দিবসে বিএনপির দলীয় প্রধানের জন্মদিন পালনের প্রচলন তাদের জন্য একটি পলিটিক্যাল সুইসাইড। কেক কাটার বহর হয়েছে আত্মঘাতী হামলার মতো। সে সঙ্গে ম্যাডাম জিয়ার একাত্তরের অবস্থান ও কথিত পাকি-প্রীতির বিষয়টি এখনও রহস্যময়। এমন মানুষটি আমাদের জাতীয় বীরদের অপমান করেন কীভাবে?

সে সন্ধ্যায় উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধা নামধারীদের জানাই ঘৃণা। বুকে এক কণা বাংলাদেশ থাকলেও আপনারা চুপ থাকতে পারতেন না। মাতৃনিন্দা আর রক্তের গৌরবের এভাবে অপমান করার বিপরীতে জবাবাদিহিতা চাই। বিএনপি কি এর উত্তর দিতে পারবে?
সূত্র

খালেদা জিয়াকে একটি অনুরোধ, আবার গুণে দেখুন। না পারলে যারা জানে তাদের সাহায্য নিতে পারেন। এতে দোষের কিছু নেই।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ ভোর ৬:৩২
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×