somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দেশবাসী অপমানিত বেগম জিয়ার আচরণে

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে সেই যে পাকিস্তানি ক্যান্টনমেন্টে আটকা পড়েছিলেন, মানসিকভাবে সেখান থেকে আর বের হতে পারেননি। এরপর থাকতেন তিনি বাংলাদেশের সেনা শিবিরস্থ বিশাল বিলাসবহুল বাসায়, মঈনুল রোডে। ওখানে থাকতেই তিনি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন। ক্যান্টনমেন্টের বাসা ছিল তার কাছে তার রাজনৈতিক নক্শা প্রণয়নের উপুক্ত জায়গা। ওখানে বসবাস করে যত রাজনৈতিক সাফল্য তিনি পেয়েছেন, অত সাফল্য ওখান থেকে ছিটকে পড়ার পর আর পাননি।
রাষ্ট্রপতি প্রয়াত জিয়াউর রহমান যে প্রক্রিয়ায়ই হোক মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন, ভারতেই অবস্থান করেছিলেন। সেখান থেকে বেগম জিয়ার কাছে লোক পাঠিয়েছিলেন ভারতে যাওয়ার জন্য। তিনি সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছিলেন। কেন করেছিলেন, তার ব্যাখ্যা আজ পর্যন্ত তিনি নিজে জাতিকে দেননি, গোপনই রেখে দিলেন। তার মুখ থেকে এর কারণ জানার অধিকার দেশবাসীর আছে। এতবড় একজন নেত্রী মুক্তিযুদ্ধের মূলধারার বিপক্ষে অবস্থান নেয়ার কারণে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। বাংলাদেশের মাটিতে কোনো ক্রমেই পাকিস্তান প্রীতির ভাবধারা প্রতিষ্ঠা পেতে দেয়া যায় না। তাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানি পরিত্যক্ত ভাবধারা কার্যকর আছে বাংলাদেশে, এটা মেনে নেয়া যায় না। থুথু মুূখ থেকে মাটিতে ফেলে পুনরায় তা চেটে খাওয়া যায় না। পাকিস্তানি আদর্শে রাজনীতি করা থুক ফেলে দিয়ে থুক তুলে খাওয়ার সমতুল্য।
জাতির জনক এবং তার পরিবার, জিয়া ও বেগম জিয়ার প্রতি কোনো অবিচার করেনি কখনো। জিয়াউর রহমান ক্ষেপে গিয়েছিলেন সেনাবাহিনীর প্রধান হতে না পেরে, শফিউল্লাহ সাহেবকে সেনাপ্রধান করাতে। যা হোক, বেগম জিয়াকে বঙ্গবন্ধু নিজের মেয়ের স্বীকৃতি দিয়েছিলেন। এক বিশেষ পরিস্থিতিতে তার সংসারে ফেরার ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলেন। এসবের জন্য তিনি মনে মনেও বঙ্গন্ধুর প্রতি কৃতজ্ঞ হতে পারতেন। তাও হননি। বরং তুচ্ছতাচ্ছিল্যই করেছেন বঙ্গবন্ধুকে সারা জীবন। লন্ডনে বসে তারেক জিয়া বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে যে অশ্রদ্ধা জ্ঞাপক কথাবার্তা বলেছেন, সে ব্যাপারে বেগম জিয়া তারেককে সংযত হতে বলতে পারতেন। তাতে তার লাভ হতো। বঙ্গবন্ধুকে অশ্রদ্ধা করে স্বাধীনতাকে শ্রদ্ধা করার পথ খোলা আছে বলে আমার মনে হয় না। স্বয়ং জিয়াউর রহমান একবার ক্ষমতায় থাকতে দৈনিক সংবাদের প্রতিনিধির কাছে বলেছিলেন, ‘তিনি আমাদের জাতির মহান নেতা’। পারত পক্ষে জিয়া বঙ্গবন্ধুকে কটাক্ষ করতেন না। বেগম জিয়া তার স্বামীর এই সূ² পলিসি অনুকরণ করলে ভালো করতেন। তার প্রধান প্রতিদ্ব›দ্বী শেখ হাসিনা, মনের খেদ মিটিয়ে তাকেই সমালোচনা করতে পারতেন। বঙ্গবন্ধুকে হেয় না করলেই ভালো হতো।
পাকিস্তানি একজন সামরিক অফিসার ব্রিগেডিয়ার জানজুয়ার মৃত্যুতে তিনি প্রটোকল ভঙ্গ করে শোকবার্তা পাঠিয়েছিলেন। অর্থাৎ একাত্তরের ক্যান্টনমেন্টেই আছেন তিনি তার প্রমাণ দিলেন। ব্যাপারটি যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের অগণিত মানুষের মনে কষ্ট লাগার ব্যাপার, তাও ভাবেননি তিনি। তার রাজনৈতিক গতিবিধি আমাদের জানিয়ে দিচ্ছে যে, তিনি রাজনীতির ক্ষেত্রে ভালো পরামর্শদাতা পাননি। শত্রু দেশের আদর্শ দিয়ে মহৎ রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করা যায় না।
তিনি তিনবার প্রধানন্ত্রী ছিলেন (১ বার ছিলেন স্বল্পতম সময়)। তিনি জাতির জীবনে ঘটে যাওয়া কয়েকটি স্পর্শকাতর হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার করা, এমন কি তদন্ত করা সম্পর্কে ন্যূনতম চিন্তা করেননি। ১৫ আগস্ট হত্যা, জেল হত্যা, ২১ আগস্ট হত্যা, সাবেক অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া ও শ্রমিক নেতা আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা সম্পর্কে নিশ্চুপ ছিলেন।
এত দিনে তার মধ্যে একটি উত্তরণ দেখে আমি খুশি হয়েছি যে, তিনি তার মন থেকে ভারত বিদ্বেষ ত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রতিবেশির গুরুত্ব সাংঘাতিক এ কথা তিনি আরো গভীরভাবে ভাবলে মঙ্গলজনক হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু বিদ্বেষের মাত্রা কমিয়ে আনতে শুরু করেছেন। ‘মসজিদে উলুধ্বনি বাজবে’ বা ‘গোপালগঞ্জের নাম পাল্টিয়ে দেবো’ গোছের বক্তৃতা তিনি আজকাল আর দেন না।
কিন্তু বিচলিত হচ্ছি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষ নেয়ার কারণে। পর পর দুবার আমাদের শত্রু রাষ্ট্র পাকিস্তান যুদ্ধাপরাধী বিচারের রায় নিয়ে আপত্তিকর অযাচিত মন্তব্য করেছে। আমাদের রাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেছে। বাংলাদেশের বর্তমান সরকার তার কড়া প্রতিবাদ করেছে; কিন্তু বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এ ব্যাপারে কোনো প্রতিবাদমূলক কিছু বলেননি। বরং নীরব থেকে পাকিস্তানকে সমর্থনই করেছেন। পাকিস্তান একাধিকবার দাবি করেছে বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীরা তাদের লোক। তারা খোলাখুলি বলছে যে, পাকিস্তানকে সমর্থন করার কারণে বাংলাদেশ সরকার তাদের ফাঁসি দিচ্ছে।
এসব কথার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নেই কেন বেগম জিয়ার? প্রতিবাদ না করার ভেতর দিয়ে এই দায় তিনি নিচ্ছেন যে, পাকিস্তান সমর্থকরা তার দলভুক্ত ও জোটভুক্ত। কেন তিনি যুদ্ধাপরাধের পক্ষ নেবেন? একাত্তরের মানবতাবিরোধীদের প্রোটেকশন দেয়ার রাজনীতি কেন তিনি করবেন? অনেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেছেন, বেগম জিয়া জামায়াত ত্যাগ করলে তার দলের কোনো ক্ষতি হবে না, তবুও তিনি জামায়াত ত্যাগের কথা ভাবতেও পারেন না। ঐ যে বলেছি, মানসিকভাবে পড়ে আছেন ১৯৭১-এর পাকিস্তানি ক্যান্টনমেন্টে, সেটাই ঠিক কথা। তিনি বোধ করি রাজনৈতিক বিচক্ষণতা দিয়ে খেয়াল করেননি যে, আওয়ামী লীগ দলীয়ভাবে যুদ্ধাপরাধের বিচারের পদক্ষেপ নেয়নি। এমন ভাবনা তারা এককভাবে ভেবে ওঠার সাহস পায়নি। জামায়াতিদের আস্ফালনের কারণে অরাজনৈতিক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবি অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। যেমন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, উদীচী, সেক্টর কমান্ডারস্ ফোরাম, প্রজন্ম ’৭১, গণজাগরণ মঞ্চ ইত্যাদি। বেগম জিয়া এটাও খেয়াল করেননি যে গণজাগরণ মঞ্চ নতুন করে দেশের ভেতরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে শানিত করতে সক্ষম হয়েছে। এর ফলে জাতি জামায়াতিদের ঔদ্ধত্য, আস্ফালন হজম করতে অপারগ হয়ে উঠেছে।
এসব চিত্র সামনে রেখেও বেগম জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বলছেন ‘জাতীয় নেতা’, বিরোধী দলীয় নেতা’ ইত্যাদি। তার দলের পক্ষ থেকে বিবৃতি দিয়ে বলা হলো ‘সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী সুবিচার পায়নি।’ ফাঁসির দণ্ড কার্যকর হওয়ার পর স্বয়ং বেগম জিয়া গেলেন সাকার পরিবারকে সান্ত¡না দেয়ার জন্য। তাই রবীন্দ্রনাথের কবিতা মনে পড়লো, ‘হে মোর দুর্ভাগা দেশ, যাদের করেছ অপমান, অপমানে হতে হবে তাহাদের সবার সমান।’ (গীতাঞ্জলি, অপমানিত)। এবং সমানভাবেই অপমানিত বোধ করছে সমগ্র দেশবাসী বেগম জিয়ার এই আচরণে। এতে প্রমাণিত হলো সাকাকে অশ্লীল আচরণ করার সাহস যোগান দিয়েছিলেন বেগম জিয়া স্বয়ং। শেখ হাসিনাকে কুরুচিপূর্ণ কথা বলার, বঙ্গবন্ধুকে উপহাস করার, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ব্যঙ্গ করার স্পর্ধা সাকা পেয়েছিলেন বেগম জিয়ার সমর্থন থেকে। এও লক্ষ্য করার বিষয় যে, বঙ্গবন্ধু হত্যা এবং মানবতাবিরোধী অপরাধীদের পক্ষে আদালতে দাঁড়িয়েছিলেন বেগম জিয়ার উকিলরা। এত বড় জঘন্য অপরাধীদের তারা নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা চালিয়েছেন। জনগণের পক্ষ থেকে জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার দাবি উঠেছে। এমন একটি জল্লাদী দল নিয়ে বেগম জিয়া হেঁটে চলেছেন রাজনীতিতে। তার শুভবুদ্ধির উদয় হোক, এটা আমাদের নতুন বছরের কামনা। সুত্র
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৪৬
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:২৮




আমাদের কার কি করা উচিৎ আর কি করা উচিৎ না সেটাই আমারা জানি না। আমাদের দেশে মানুষ জন্ম নেয়ার সাথেই একটি গাছ লাগানো উচিৎ । আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানবতার কাজে বিশ্বাসে বড় ধাক্কা মিল্টন সমাদ্দার

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:১৭


মানুষ মানুষের জন্যে, যুগে যুগে মানুষ মাজুর হয়েছে, মানুষই পাশে দাঁড়িয়েছে। অনেকে কাজের ব্যস্ততায় এবং নিজের সময়ের সীমাবদ্ধতায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারে না। তখন তারা সাহায্যের হাত বাড়ান আর্থিক ভাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিসিএস দিতে না পেরে রাস্তায় গড়াগড়ি যুবকের

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৫

আমাদের দেশে সরকারি চাকরি কে বেশ সম্মান দেওয়া হয়। আমি যদি কোটি টাকার মালিক হলেও সুন্দরী মেয়ের বাপ আমাকে জামাই হিসেবে মেনে নিবে না। কিন্তু সেই বাপ আবার ২০... ...বাকিটুকু পড়ুন

ডাক্তার ডেথঃ হ্যারল্ড শিপম্যান

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:০৪



উপরওয়ালার পরে আমরা আমাদের জীবনের ডাক্তারদের উপর ভরশা করি । যারা অবিশ্বাসী তারা তো এক নম্বরেই ডাক্তারের ভরশা করে । এটা ছাড়া অবশ্য আমাদের আর কোন উপায়ই থাকে না... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার ইতং বিতং কিচ্ছার একটা দিন!!!

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩



এলার্ম এর যন্ত্রণায় প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গে আমার। পুরাপুরি সজাগ হওয়ার আগেই আমার প্রথম কাজ হয় মোবাইলের এলার্ম বন্ধ করা, আর স্ক্রীণে এক ঝলক ব্লগের চেহারা দেখা। পরে কিছু মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×