somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোড়ো (১ম পর্ব)

০৫ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ১১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকটা হেঁটে আসতে হয়েছে ওদের। পিঠের বোঝাটাও বেশ ভারী লাগছে। দুপুরের তপ্ত সূর্য যেন শরীর থেকে সব শক্তি নিংড়ে নেওয়ার চিন্তা করেছিল। এখন বনের মাঝে ঢুকে একটু ছায়া পেয়ে যেন ক্লান্তি আরো বেড়ে গেল দু'জনের। তাই গাছের নিচে থামল দু'ভাই, স্টিভেন্স আর রোনাল্ড।

দুই ভাই-ই খুব ভ্রমন প্রিয়। তাই ছুটি পেলেই বেড়িয়ে পড়ে নতুন জায়গার খোঁজে। মনের ক্লান্তিও দূর হয়, ছুটিও উপভোগ করা হয়। এবার এসেছে আলাস্কার উত্তরে একটি বনে। সমতল ভূমি থেকে কিছুটা উপরে এ বনটা। বনটি খুব বেশী বড়ও নয় আবার একদম ছোটও নয়। চারিদিকে সবুজ প্রকৃতি, পাখির কিচির মিচির সব মিলিয়ে অসাধারন পরিবেশ। ভেতরে কিছুদূর গিয়ে একটি নদীর ধারে তাঁবু ফেলবে ওরা।

কিছুক্ষন বিশ্রামের পর রোনাল্ড-ই প্রথম মৌনতা ভঙ্গ করল। ভাইয়া শুনতে পাচ্ছ পানির শব্দ শোনা যাচ্ছে? একমুহূর্তের একটু বেশী সময় কান খাড়া করে মৃদু শব্দটা শোনার চেষ্টা করল স্টিভেন্স, তারপর মাথা নেড়ে সায় দিল ভাইয়ের কথার সাথে। আবার বলে উঠল রোনাল্ড, "আমরা মনে হয় আমদের গন্তব্যের কাছাকাছি পৌছে গেছি। ম্যাপটা খুলে একটু দেখতো।"
ম্যাপটা চোখের সামনে মেলে ধরল স্টিভেন্স, "আমরা যেখানে আছি সেখান থেকে আধা কিলোমিটারের মত দূরেই নদীটা থাকার কথা। বিশ্রাম তো হল চল এবার চল ওঠা যাক।" বলেই উঠে দাঁড়াল স্টিভেন্স। রোনাল্ডও উঠল। হাটতে শুরু করল দু'জনে।

আধা ঘন্টার মাঝেই পৌছে গেল নদীর ধারে। কূলে দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন দেখে নিল চারপাশ। বাহ! কি চমৎকার প্রকৃতি। এই জায়গাটায় জঙ্গল কিছুটা হালকা। খরস্রোতা নদী বইছে অবিরাম। স্রোতের শব্দ কানে সুরের মত বাজছে অবিরাম!

ব্যাগ থেকে সব কিছু বের করে তাঁবু গেড়ে ফেলল। কিছুক্ষন তাঁবুর বাইরে বসেই উপভোগ করল প্রকৃতি। "এবারের ছুটিটাতে একদম মনের মত একটা জায়গাই পেলাম। ঠিক এরকমই নির্জন, প্রকৃতির খুব কাছাকাছি একটা জায়গা আমি চাইছিলাম।" বলল স্টিভেন্স।
হ্যাঁ ভাইয়া ঠিকই বলেছ, জায়গাটা অপূর্ব।

কথা শেষ করে নিজেদের খারার তৈরীতে ব্যস্ত হয়ে পড়ল দু'জনে। লাঞ্চের পর তাদের ক্লান্তি যেন শেষ সীমায় পৌঁছল। তাঁবুতে গিয়ে দু'জনেই গা এলিয়ে দিল বিছানায়। কিছুক্ষনের মাঝেই গভীর ঘুমে অচেতন হয়ে পড়ল।

স্টিভেন্স- এর ঘুম ভাঙল প্রথমে, বিকেলের রোদ তখন প্রায় মিলিয়ে এসেছে। কিছুক্ষন বিশ্রামের পর বেশ সতেজ লাগছিল। বাইরে বেরিয়ে এল সে, অদ্ভূত সুন্দর এক আলো খেলা করছে বনের ভেতরে। এরকম সুন্দর সময়ে বেড়িয়ে আসলে মন্দ হয় না। ভিতরে গিয়ে ভাইকে ডেকে তুলল।

বনের গভীরের দিকে হাঁটতে লাগল দু'জনে। যতই গভীরে যাচ্ছিল ততই সবুজ চোখকে আরো বেশী রাঙিয়ে তুলছিল। সাথে বিভিন্ন ব্ন্য পশু পাখির ডাক, বানরের এ গাছ থেকে ও গাছে লাফিয়ে বেড়ানো। যতদূর জানে হিংস্র জন্তু তেমন নেই এ বনে, তবে সাপের ভয় আছে। সাবধানে পা ফেলে হাঁটছিল দু'ভাই। বনের বেশ গভীরে চলে এসেছিল দু'জনে। হঠাৎ যেন সম্বিৎ ফিরে পেল স্টিভেন্স, এখনই না ফিরলে অন্ধকার নেমে আসবে তখন বনের মাঝে পথ চিনতে অসুবিধা হবে। ফেরার পথ ধরতে বলল ভাইকে, কিন্তু মনে হল রোনাল্ড তার কথা শুনতে পেল না। আবারও ডাকল ভাইকে, এবার সাড়া দিল। ফেরার কথা শুনে বলল, আর একটু ভেতরে যাই তারপর ফিরব, কিন্তু স্টিভেন্স বাঁধা দিল। কেমন যেন অন্যমনস্ক দেখাচ্ছিল রোনাল্ডকে, একবার ভাবল জিজ্ঞেস করবে। আবার কি ভেবে যেন চুপ করে থাকল।

ফেরার পথা কোন কথা বলল না রোনাল্ড, যেন কিছু নিয়ে গভীর চিন্তায় মগ্ন। তাঁবুতে ফেরার পরও বেশ গম্ভীর হয়ে রইল সে।

ডিনার শেষ করে আগুন জ্বেলে নদীর ধারে বসে প্রকৃতির নিঃস্তব্ধতা উপভোগ করল। প্রকৃতির মৌনতা যেন তাদের আরো বেশী মৌন করে তুলেছে। কিন্তু রোনাল্ডের মনে ভেতর উঁকি দিচ্ছে কিসের যেন অজানা আশঙ্কা। ঠিক বুঝতে পারছে না সে যা দেখল তা কি সত্যি নাকি, দৃষ্টিভ্রম......

(চলবে)


** গল্পের নামটার জন্য সজীবকে ধন্যবাদ।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই এপ্রিল, ২০১১ রাত ১১:৫৮
৫৮টি মন্তব্য ৫৭টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×