somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি রুশ রূপকথা “বুরান”

২১ শে মে, ২০১৬ রাত ৮:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ,চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মার্কিন যুক্ত্ররষ্ট্রের পারমানবিক বোমা হামলা থেকে এবার বুজি আর রক্ষা পাওয়া যাবে না।কারণ মার্কিনীরা বনাচ্ছে এমন এক মহাকাশযান যেটা মহাকাশে গিয়ে প্রায় অক্ষত অবস্থায় আবার ফিরে আসতে পারে,এবং এটি পারমানবিক বোমা বহনে সক্ষম।মার্কিনীরা যানটার নাম দিয়েছে “স্পেস শাটল”।যে নামই দিক সোভিয়েতদের ভয় কিন্তু তাতে যায় না।টিকে থাকতে হলে এখন সোভিয়েতদেরও চাই অমন একটা যান যেটা কাজ করবে ঠিক মার্কিনীদের মহাকাশযানের মত।এভাবেই শুরু হয়ে যায় স্নায়ুযুদ্ধের সময়ে পুনরায় ব্যাবহার যোগ্য মহাকাশযান বানানোর প্রতিযোগিতা।১৭ ফেব্রুয়ারি ১৯৭৬ সালে সোভিয়েত কেন্দ্রীয় কমিউনিস্ট পার্টির এক ডিক্রির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরু হয় “বুরান-এনারগিয়া” প্রজেক্ট।


কাজাখাস্থান এর বৈকনুর কসমোড্রাম এর এক গোপন কারখানায় শুরু হয় এই গোপন প্রজেক্ট।রুশ ভাষায় বুরান শব্দের অর্থ “তুষার-ঝড়”।মুল যান প্রস্তুত করার দায়িত্ব পায় সোভিয়েত ইউনিয়নের তৎকালীন রকেট প্রস্তুতকারী কোম্পানি “RKKEnergia”।প্রস্তুতকারী দলের প্রধান হন রকেট সাইন্টিস্ট “গ্লেভ লোজিনো-লোজিনস্কি”,যিনি পূর্বে “স্পাইরাল” প্রজেক্টে কাজ করেছিলেন।

তার সাথে যুক্ত হয় ১২০০ প্রকৌশলী,প্রযুক্তিবিদ এবং সোভিয়েত সরকারের প্রায় ১০০ মিনিস্ট্রি।বাজেট ধরা হয় প্রায় ১৪.৫ বিলিয়ন রুবল।সোভিয়েত রকেট বিজ্ঞানীরা ঠিক মার্কিনীদের মতই একটি যান প্রস্তুত করতে থাকেন,তবে আরও উন্নত সংস্করণ।বুরানকে মোট ১০ জন নভোচারী বহনের ক্ষমতা সম্পন্ন করে প্রস্তুত করা হয়।এর ওজন বহন ক্ষমতাও বৃদ্ধি করা হয়,এটি মহাকাশে যেতে পারত ৩০ টন ওজন নিয়ে এবং ফিরে আসতে পারত ২০ টন নিয়ে।এর গায়ে তাপ নিরোধক প্রায় ৩৮০০০ টাইলস বসানো ছিল,এর প্রথম উড্ডয়নের পর এটি যখন পৃথিবীতে ফিরে আসে তখন এর মাত্র ৫টি খুঁজে পাওয়া যায়নি। যে বৈশিষ্ট্যটি বুরানকে মার্কিন স্পেস শাটল থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করেছিল তা হল,প্রকৌশলীরা একে সম্পূর্ণ অটোমেটিক ক্ষমতা সম্পন্ন করে প্রস্তুত করেন।এর মানে, এটি মনুষ্যবিহীন অবস্থায় মহাকাশে গিয়ে আবার ফিরে আসতে পারবে।


১৫ নভেম্বর ১৯৮৮ সালে বুরান তার প্রথম উড্ডয়ন সম্পন্ন করে সম্পূর্ণ অটোমেটিক ভাবে,এটি মহাকাশে গিয়ে পৃথিবীকে ২০৬ মিনিটে দুই বার প্রদক্ষিণ করে নিরাপদে ফিরে আসে।২০১০ সাল পর্যন্ত বুরান ছিল একমাত্র মনুষ্যবিহীন মহাকাশযান যেটি পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করেছিল।বুরান এর এই কীর্তি দীর্ঘদিন পৃথিবীর মানুষ জানতে পারেনি সোভিয়েত নেতাদের গোপনীয়তার কারণে।
সেই নাম বিহীন উড্ডয়নের পর সোভিয়েতদের স্বপ্নের “বুরান” আর আকাশে ডানা মেলেনি।এর কিছুদিন পরই সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেজ্ঞে পড়ে,অন্য অনেক প্রজেক্ট এর মত “বুরান” প্রজেক্টও বন্ধ হয়ে যায় পর্যাপ্ত অর্থের অভাবে।৩০ জুন ১৯৯৩ সালে প্রেসিডেন্ট বরিস ইয়েলেত্‌সিন আনুষ্ঠানিক ভাবে সমাপ্তি ঘোষণা করেন বুরান প্রজেক্ট।


এই প্রজেক্টে তৈরি হয় “বুরান” এর কিছু প্রোটোটাইপ,যাদের একটির নাম “পিচপা” ,যার ৯৭% কাজ হওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায়।আরেকটি প্রোটোটাইপ “বৈকাল”,যার ৫০%কাজ সম্পন্ন হয়,এটি দীর্ঘদিন পরেছিল এক পুরনো গাড়ির গ্যারেজে,চরম অবহেলায়।মস্কোর ম্যাক্সিম গোর্কি পার্কের রুশীয়রা সকাল-বিকাল দেখে তাদের স্বপ্নের করুন অবস্থা,এখানেও রাখা আছে বুরানের একটি প্রোটোটাইপ,পর্যাপ্ত দেখভালের অভাবে যেটি ধ্বংস-প্রায়। প্রায় ১৫ বিলিয়ন রুবল বাজেট এর এই প্রজেক্ট এর কোন মেটারিয়ালই পরবর্তীতে কোথাও ব্যাবহার করা হয়নি।মানব সম্পদ এবং অর্থের কি নিদারুণ অপচয়!
তাইতো রুশ মহাকাশ একাডেমীর বিজ্ঞানী আলেকজান্ডার ঝিলকিয়ানভের কণ্ঠে ফুটে ওঠে নিদারুণ হতাশা “Buran was made to shine in Space, but finally it died on Earth”।


বুরান গল্পের শুরু হয় ১৫ই নভেম্বরের এক রৌদ্দোজ্বল দিনে ,আর এই গল্প শেষ হয় ১২ই মে ২০০২ সালের এক বৃষ্টিভেজা দিনে যখন কিছু কর্মী,কাজাখাস্থান কসমোড্রাম এর হ্যাজ্ঞার ১১২ মেরামত করছিল যেখানে রয়েছে বুরান ১.০১ ( একমাত্র এই মডেলটিই পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করেছিল),মেরামতের একপর্যায়ে হ্যাজ্ঞারটির ছাদ ধ্বসে পরে।এই দুর্ঘটনায় ৭ কর্মীর সাথে মৃত্যু হয় এক সোভিয়েত রজ্ঞীণ স্বপ্নের।জন্ম হয় নতুন এক রুশ রূপকথার,যার নায়ক এক নিসঃজ্ঞ মহাকাশযান।এক যে ছিল বুরান............!!
Reference
1. http://www.russianspaceweb.com/buran.html
2. http://www.buran.ru/htm/molniya.htm
3. https://en.wikipedia.org/wiki/Buran_programme
4. http://www.buran.ru/htm/techno.htm
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১৬ রাত ৮:০৯
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×