somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদেশিনী ‘জেন” ও আমরা কয়েকজন বাংলাদেশী-০১

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৮:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

লাস্ট দুইটা মাস দেশেই ছিলাম। কিছুদিন হল এখানে আসছি, দেশ ছেড়ে চলে আসার কষ্ট কেমন সেটা কেউই আপনাকে কথা কিংবা লিখে বুজাতে পারবে না। তাই ভাবলাম আপনাদের সাথে জীবনের কিছু জিনিস শেয়ার করি। আমি লেখালেখিতে খুব একটা ভাল না, তার পর ও গুছিয়ে লিখার জন্য চেষ্টা করলাম।

বেপারটা নাটকীয় মনে হতে পারে কিন্তু একটুকুও বানিয়ে বলছি না, এই নিশ্চয়তা দিচ্ছি।
আমি গল্প লিখতে বা পড়তে খুব একটা পছন্দ করি না। আমাকে ফার্মাকোলজি বা মলিকুলার মেডিসিন এর বই বেশী টানে, গল্পের বই কিংবা মুভি দেখার থেকেও।

আমি জানিনা আপনারা আমার এই লিখা টিকে কীভাবে নিবেন।
প্রথমেই আমার দিক দিয়েই শুরু করি:

ভিসা হাতে পেয়ে অনেক খুশী হয়েছিলাম,সেই সাথে একটা লুকোচুরি কান্না ও ছিল। বাবার জমি বিক্রির টাকা আর বোন কে বিয়ে দেওয়ার জন্য বাবার জমানো টাকা নিয়ে আমি উন্নত কোন একটা দেশে পড়তে যাচ্ছি। তাই সামনের বছর হয়তো ফসল কম আসবে কিংবা আমার ছোট বোনের বিয়ে পিছিয়ে যাবে আরও কয়েক বছর। যদিও আমি কিংবা আব্বু কেউই চাচ্ছিলাম না তাকে এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দেই।
বিমান বন্দরে আমাকে বিদায় দেওয়ার জন্য কার অশ্রু সজল চোখ দেখলাম না কারন কাউকে না আসার জন্য নিষেধ করছিলাম(একটা ছোট ভাই আসছিল অনলি)। এটা জানতাম দুই দিন আগ থেকেই মায়ের চোখের সামনে ছোট একটা নদী হয়ে গিয়েছিল।

পরিচিত কেউই ছিল না এই দেশে, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক সম্পর্ক অফিসার থেকে আতিক নামে এক বাঙালি ছাত্রের ইমেইল নিয়ে সাহায্য চাইলাম। বিমান থেকে নামতেই দেখি আমার নাম অ্যান্ড ছবি নিয়ে একজন দাড়িয়ে আছেন। তাকে অনেকটা বাঙ্গালির মতই লাগছিল,এখন অবশ্য উনাকে মিডল ইস্ট এর পোলাপানের মত মনে হয়। জিজ্ঞাসা করল আমি তানজিম কিনা,হা উত্তর পেয়েই বলল জিনিষ পত্র তো বেশী নেই চল গাড়িতে। প্রথম বার প্রাইভেট কারে উঠে চলে আসলাম একটা লোকালয়ের বিতরে। সাজানো সারি সারি বাড়ী দেখে খুব অবাক হলাম। আতিক ভাই আমাকে একটা ডুপ্লেক্স বাড়ীর সামনে নামিয়ে দিয়ে আমার দিকে খুব অবাক দৃষ্টিতে(জামাকাপড় এর) তাকিয়ে এক হাজার ডলার দিয়ে বলল ভিতরে গিয়ে বস। বাংলাদেশী টাকায় হিসেব করতে গিয়ে মাথা উপড়ে গেল,এত টাকা কেউ কাউকে এমনেই দেয়, কারণ আমার বিমান ভাড়ার টাকাটাও প্রফেসর পে করে দিয়েছিল।

ওই বাড়ীতে মোট ছয় জন বাঙালি ছিল। বুজলাম এটাই আমার নতুন আবাস। পরে বুজলাম এই বাড়ীতে আতিক ভাই থাকেন না। তাই একটু রাগ হল উনি আমাকে কোথায় দিয়ে গেলেন। পরের গল্পটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। বোন এখন প্রাইভেট মেডিক্যাল এ আর আব্বু এখন গাভী বিক্রি করে দিয়ে,জমি বগরা রেখে নিজের হাতে প্রতিষ্ঠিত মসজিদের তদারকিতে সময় কাটান। বলব আতিক ভাইকে নিয়ে কিন্তু আমার কিছু কথা না বললে হয়তো আতিক ভাই সম্পর্কে ধারনা পেতেন না।

আতিক ভাই আমার অনেক আগেই এই দেশে আসছেন,এখন বয়স ৩২এর কাছাকাছি। মাজে মাজে উনাকে আমার মিডল ইস্ট এর পোলাপান থেকে আলাদা করতে কষ্ট হয়ে যায়। দেখলে মনে হয় ২২বছর এর তরুণ এর মত। ছয় বছর ধরে এখানে থাকলেও আমি কখনো উনার বাসায় যাইনি। উনি কখনো নিতে চান নি অথবা উনার বাসা নিয়ে কখনো কোন কথা বলেন নি। আমিও এটা নিয়ে বেশ মাথা গামাতাম না। কিন্তু প্রতি সপ্তাহে উনার সাথে জুমার নামায পড়া একবারের জন্য ও মিস হয়নি।

এপ্রিল-২০১০ , বিকেলের দিকে উনার ফোন পাই, তখন আমি ল্যাব এ আমার রক্ত নিয়ে নতুন একটা ড্রাগ পরীক্ষা করছিলাম। উনি একটা হসপিটালের নাম এবং ঠিকানা, রুম নাম্বার দিয়ে আসতে বললেন। আমি আমার কাজটা শেষ না করে ট্যাক্সি নিয়ে সোজা তার দেওয়া ঠিকানায়। আতিক ভাইর ফোন তাছাড়া আবার হসপিটাল ,বুজলাম যে উনার কিছু একটা হয়েছে কিন্তু ফোনে উনাকে খুব শান্তই মনে হল। রুমের বাহিরে আমি অপেক্ষা করছিলাম, ভাবছি ঢুকব কিনা কারন হসপিটালেই দুকতেই আমাকে একটা জেরার অতিক্রম করতে হয়েছিল। অনেক নার্স আমার দিকে অবাক দৃষ্টি নিক্ষেপ করে নিজেদের কাজে চলে যায়। আমি আতিক ভাইকে ফোন দিলাম উনি না ধরে কেটে দেন। একটু পরে দেখলাম ৬/৭ বছরের একটা মেয়ে ওই রুম থেকে বের হয়ে আসছে,আমি বুজতে পারছি যে আমি হয়তো ভুল রুমের সামনে দাঁড়ানো। কিন্তু মেয়েটি সরাসরি আমার দিকে এসে জিজ্ঞাসা করল আমি তাঞ্জিম কিনা? হা বলতেই তার সাথে রুমের ভিতরে আসতে বলল। রুমেই ডুকে দেখলাম আতিক ভাই বসে আছে,তার পাশে ৪/৫বছরের একটা ছেলে। হসপিটালের সাদা দবদবে বেডের মাজে এক মহিলা শুয়ে আছে,নাকে মুখে,হাতে,বুকে অনেক তার লাগানো। অবাক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে,আমিও তার হাসির উত্তর দিলাম একটু মুচকি হেসে। ভদ্র মহিলার বয়স খুব বেশী বলে মনে হচ্ছে না। একদম তরুণী মনে হচ্ছে।
চলবে।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×