somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরিনত মোহ কিংবা অপরিনত ভালোবাসা (ষষ্ঠ পর্ব)

২৫ শে নভেম্বর, ২০০৮ রাত ১১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকাল থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। কি কাপড়চোপড় পড়বো, কখন যাবো, কি কথা বলবো এইসব ঠিক করছি। হঠাৎ খেয়াল হলো শার্ট আর প্যান্ট কোনমতন চললেও জুতার অবস্থা খুবই খারাপ। এই জুতা পড়ে অবন্তীর সাথে শপিংয়ে গেলে যে কেউ আমাকে তাদের বাসার চাকর টাকর ভেবে বসতে পারে। হাতে টিউশনীর কিছু টাকা জমেছে। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম নতুন জুতা কিনবো। সে অনুযায়ী গেলাম কাছের দোকানে। একেকটা দোকান ঘুরে ঘুরে জুতা দেখি আর অবাক হই। জুতার দাম যেভাবে বেড়েছে ভালো জুতা কেনাই বড় সমস্যা। এক দোকানে বেশি দাম চাওয়ায় হেসে হেসে বললাম- এতো টাকার জিনিষ পায়ের নিচে থাকবে! দরকার নাই।

দোকানী আরও একধাপ এগিয়ে। হেসে জবাব দিলো- আপনার অবস্থা দেখি দামী লুঙ্গি কেনা ক্রেতার মতো। বলেই হাসতে লাগলো জোরে জোরে।

আমি ঘটনা ধরতে পারলাম না। তাই নিজে থেকেই জানতে চাইলাম, দামী লুঙ্গি কেনা ক্রেতার ঘটনা আবার কি?
ওহ! ভাই তাইলে ঘটনা জানেন না! এক লোক খুব দামী লুঙ্গি কিনছে। অনেকদিন ব্যবহারের পর লুঙ্গি ছিড়ে গেল। তখন লোকটি লুঙ্গি ছিড়ে তা গামছা বানালো। একপর্যায়ে গামছাও ছিড়ে গেল। তখন তা নিয়ে ন্যাকড়া বানালো হলো। ন্যাকড়া পুরানো হয়ে গেলে তা পুড়িয়ে আগুন জ্বালানো হলো। সেই ছাই দিয়ে লোকটা পুকুরের পাশে বসে দাত মাজে আর বলে, হায়রে আমার এতোগুলো টাকা টাকা জলে ভেসে গেল।
শুনে হেসে দিলাম। দোকানীর বর্ণনার স্টাইলে মুগ্ধ হয়ে গেলাম। এই মুগ্ধ হওয়াটাই কাল হলো। দোকানী ঠিকই কড়া দামে নতুন জুতা ধরিয়ে দিলো।কি আর করা! নতুন জুতা নিয়ে বাসায় ফিরলাম।


বিকালে অবন্তীদের বাসায় চলে গেলাম। অন্যদিনের মতো লাগছে না আজ ।কেমন যেন একটা অনুভুতি। চিন্তাভাবনা থেকে শুরু করে পোশাক পরিচ্ছদ সবকিছুতেই আমার মধ্যবিত্তের সেন্টিমেন্ট। তারপরেও চেষ্টা করতে থাকলাম নিজেকে স্মার্ট প্রমাণ করতে। কি দিন যে আসলো! এখন নিজেকেই স্মার্ট প্রমাণ করতে হয়।


অবন্তীদের বাসায় গিয়ে দেখি সে বারান্দায় বসে বই পড়ছে। প্রচ্ছদ দেখে গল্পের বই মনে হলো। কাছে গিয়ে দাড়াতেই আমার দিকে তাকিয়ে বললো-
ওহ! তাহলে আপনি এসেছেন শেষ পর্যন্ত।আপনিতো আবার বিজি মানুষ।
বুঝতে পারলাম খোঁচা দিয়ে কথা বলেছে অবন্তী। ইচ্ছা করেই ভাব নিয়ে বললাম-
জরুরী কিছু কাজ সেরেই তবে আসলাম। আপনি বলেছেন না আসলে কেমন দেখা যায়।
কথাটা বলেই খেয়াল করলাম অবন্তীর মুখে বাকা হাসি। আমি আর কথা বাড়ালাম না।
কিছুক্ষণ পরে বই রেখে অবন্তী আমার দিকে তাকালো। মুচকি হেসে বললো-
আপনি বসেন আমি রেডি হয়ে আসছি। ইচ্ছা করলে বইটা পড়তে পারেন।
বইটা টেনে নিয়ে পাতা উল্টানো শুরু করলাম। অবন্তী ভিতরের রুমে চলে গেছে। কিছুক্ষণের মধ্যেই অবন্তীদের কাজের বুয়া ট্রে-তে করে বিকালের নাস্তা দিয়ে গেল। চায়ে চুমুক দিতে দিতে বইয়ের পাতা উল্টাছি। পড়াতে একদম মন নেই। ভাবছি হঠাৎ করে একসাথে শপিংয়ে যাওয়ার কথা কেনো বললো অবন্তী! বই রেখে দাড়িয়ে পেইন্টিং দেখতে লাগলাম। চারদেয়াল জুড়েই নানা রকমের পেইন্টিং। একটা পেইন্টিং এ চোখ আটকে গেল। মনোযোগ দিয়ে দেখতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর খেয়াল করলাম অবন্তী আমার পিছনে এসে দাড়িয়ে আছে। কখন যে চুপিসারে এসে দাড়িয়েছে পাশে লক্ষ্যই করিনি। নীল শাড়ি পড়ে আছে সে। অদ্ভুত সুন্দর লাগছিলো। মনে মনে ভাবলাম, অবন্তী কি জানে আমি নীল শাড়ি কতোটা পছন্দ করি!


আমি রেডি, চলেন বের হই।
একবার ভাবলাম নীল শাড়ির প্রশংসা করবো। আবার ভাবলাম আবার যদি অবন্তী এটাকে ন্যাকামি ভাবে! তাই চুপ করে গেলাম। কিছুক্ষণ পর অবন্তীই জিজ্ঞেস করলো-
নীল শাড়িতে কি আমাকে ভালো দেখায়? এর আগে নীল শাড়ি পড়িনি। আজকেই প্রথম পড়লাম।
অবন্তী আজকেই প্রথম নীল শাড়ি পড়েছে আর আমি নীল শাড়ি খুব পছন্দ করি; দারুন মিল মনে হলো। আমি কি বলবো বুঝতে না পেরে ছোট্ট করে বললাম- হ্যা বেশ ভালো দেখাচ্ছে।
বিশেষণ সহযোগে আরো অনেক কিছুই বলতে পারতাম, কিন্তু ওই সময়টাতে কি বলবো বুঝে উঠতে পারছিলাম না। মাথার ভিতর ঘুরছিলো জীবনানন্দ দাশের কবিতার লাইন।

"আলো-অন্ধকারে যাই- মাথার ভিতরে
স্বপ্ন নয়, কোন এক বোধ কাজ করে!
স্বপ্ন নয়-শান্তি নয়- ভালোবাসা নয়,
হৃদয়ের মাঝে এক বোধ জন্ম লয়!
আমি পারি না তারে এড়াতে,
সে আমার হাত রাখে হাতে;
সব কাজ তুচ্ছ মনে হয়, পন্ড মনে হয়,
সব চিন্তা- প্রার্থনার সকল সময়
শূন্য মনে হয়,
শূন্য মনে হয়।"


অবন্তী তাদের গাড়িটা নিয়ে বের হয় নি। হেটে হেটেই বাড়ি থেকে বের হলো। আমি কিছুটা অবাক হলাম। ইচ্ছে করলেই গাড়ি নিয়ে বের হতে পারতো সে, তারপরেও হেটে হেটে বের হলো কেনো! সরু রাস্তাটাতে হাটতে হাটতে কথা বলে যাচ্ছিলাম আমরা। অবন্তীই কথা বলছিলো বেশি।
জানেন আমি শেষ কবে যে রিক্সাই চড়েছি নিজেই ভুলে গেছি। মাঝেমধ্যে রিক্সায় চড়তে খুব ইচ্ছা হয়। কিন্তু বাবা তা পছন্দ করে না। কোথাও যেতে চাইলেই বাবা সঙ্গে গাড়ি দিয়ে দেন।
আমি ছোট্ট করে বললাম- রিক্সায় চড়তে আমার অনেক ভালো লাগে।
মৃদু হেসে অবন্তী বললো, চলেন তাহলে রিক্সায় চড়ে কিছুক্ষণ ঘুরে বেড়াই।


এ যেন মেঘ না চাইতে বৃষ্টি। অবন্তীর সাথে একই রিক্সায়! একটা রিক্সা ঠিক করে উঠে গেলাম দুজনে। রিক্সা চলা শুরু করতেই অবন্তী বললো-
আসলে শপিং করার বিষয়টা মুল উদ্যেশ্য না। রিক্সায় চড়ার জন্যই আপনাকে আসতে বললাম। অনেকদিন ধরেই ভাবছিলাম একটা বিকাল রিক্সা করে ঘুরে বেড়াবো। অবন্তী বললো।

আমি চুপ করে অবন্তীর কথা শুনে যাচ্ছিলাম। হাত নেড়ে নেড়ে কথা বলে যাচ্ছে সে। মাঝেমধ্যে নীল শাড়ির আঁচলটা উড়ে আমার মুখে সামনে চলে আসছে। কিছুক্ষণ থেমে অবন্তী বললো-
সেদিন আপনাকে ভালোবাসার সম্পর্কের কথা বলেছিলাম। আমার ভাবনাটা আপনাকে জানানো হয়নি।
আমি আগ্রহ দেখিয়ে বললাম, বলেন, বলেন। শুনি আপনার ভাবনা।
আমার কাছে ভালোবাসার সম্পর্ক মানে প্রিয় কিছু প্রত্যাশা আর প্রাপ্তির সমন্বয়। অন্যান্য সম্পর্কেও প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি থাকে। তবে ভালোবাসার সম্পর্কে প্রত্যাশা আর প্রাপ্তিগুলো খুবই স্পেশাল।
হুমমম। প্রত্যাশা আর প্রাপ্তিগুলো কাজ করে কিভাবে? আমি জিজ্ঞেস করলাম।
একজন যখন অন্য আরেকজনকে ভালোবাসার মানুষ হিসাবে পছন্দ করে তখন তার কাছে কিছু বিশেষ বিষয় খুঁজে ফিরে সেই মানুষটা। সেগুলো অন্য কারো কাছে সে চায় না। তাই প্রত্যাশাগুলো থাকে খুবই একান্ত এবং স্পেশাল। তবে এইটা ঠিক যে প্রত্যাশাগুলো একদিনে গড়ে উঠে না। ভালোবাসার মানুষদুটির নৈমিত্তিক কথাবার্তা, আচার –আচরন, পারস্পরিক বিশ্বাস এসব থেকেই প্রত্যাশা বেড়ে উঠে। বিশেষ প্রত্যাশাগুলোর প্রাপ্তিগুলোও অসাধারণ হবে এমনটাই অবচেতন মনে চায় ভালোবাসার মানুষেরা। আর এভাবেই প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি মিলিয়ে একটা ভালোবাসার সম্পর্ক টিকে থাকে।

আসলে বিষয়টাকে নানা দৃষ্টিকোন থেকে ব্যাখ্যা করা যায়। আমি বললাম।
তা ঠিক। তবে আমি আমার ভাবনাটা বললাম। একে আমার হাইপোথিসিস বলতে পারেন। অবন্তীর জবাব।

বেশ কিছুক্ষণ পর বেশ জমকালো এক শপিংমলের সামনে রিক্সা থামলো। অবন্তী কিছু শপিং করবে তারপর শপিংমলের ফুড কোর্টে কিছু খাবো, এমনটাই প্ল্যান হলো। বেশ ঘুরে অবন্তী কিছু কাপড় কিনলো। একটা দোকান থেকে রং কিনলো। পেইন্টিং এর বেশ কিছু কাজ নাকি করতে হবে। শপিং শেষে খাবারের দোকানগুলোর দিকে যাচ্ছিলাম। এমন সময় দেখি আমার ছাত্রী সঙ্গে কিছু বান্ধবী নিয়ে ফুড কোর্ট থেকে বের হয়ে আসছে। মনে মনে প্রমাদ গুনলাম। সামনাসামনি হয়ে যাওয়ার মতো। ছাত্রী দুর থেকে একবার আমার দিকে তাকায়, আরেকবার তাকায় অবন্তীর দিকে। ছাত্রীর মুখের দিকে একবার তাকিয়েই বুঝলাম ভীষণ মন খারাপ করে ফেলেছে সে। পাশকাটিয়ে খাবারের দোকানের দিকে চলে গেলাম।

(চলবে......)

প্রথম পর্ব

দ্বিতীয় পর্ব

তৃতীয় পর্ব

চতুর্থ পর্ব

পঞ্চম পর্ব
৪৩টি মন্তব্য ৪৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×