ফারিহান মাহমুদ সম্প্রতি 'নবীন লেখকলেখিকাদের জন্য :: কিভাবে বই বের করবেন' -এর ১ম পর্ব প্রকাশ করেছেন। পোস্টটিতে বেশ দরকারি টিপস আছে। কিন্তু এর বিপরীত সত্যও আছে। সেরকম চিন্তা থেকে আমি নতুন লেখেকের বই বের করার অভিজ্ঞতা প্রকাশ করছি। বিষয়টি ব্যক্তিগত হলেও একে একটি কেসস্টাডি হিসেবে বিবেচনা করা যায়।
...
আমার এযাবত ২৫টির বেশি বই বেরিয়েছে। কিন্তু কোনও টাকা পকেট থেকে খরচ হয়নি। বরং এর মধ্যে ৮টিতে রয়্যালটি পেয়েছি।
প্রথম বই বেরুল ১৯৯৩ সালে। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের ছড়াগুলো নিয়ে একটা সংকলন করতে চেয়েঠিলাম। সারা দেশে প্রায় ১০০ ছড়কারকে চিঠি লিখেছি। এর মধ্যে চট্টগ্রামের এক ছড়াকার উল্টো আমার কাছে একগুচ্ছ প্রতিবাদী ছড়া চেয়ে চিঠি পাঠালেন। আমি ১০টি ছড়া পাঠিয়ে দিই। ওই ছড়াকারের নাম সুখময় চক্রবর্তী। ওকালতি করেন। থাকনে চট্টগ্রাম সদরঘাট কালীবাড়ি রোড। তো পাঠিয়ে দিলাম। উনি সাপ্তাহিক কর্ণফুলীর দেশ পত্রিকায় ছাপালেন। পরে আরো একগুচ্ছ চাইলেন। তা-ও পাঠালাম। এরপর উনি বললেন আপনার আর কিছু ছড়া হলে একটা বই হতে পারে। আমি তো অবাক। মেঘ না চাইতে জল! বিনাদ্বিধায় পাঠিয়ে দিলাম। উনি 'কর্ণফুলীর দেশ প্রকাশন' নামের প্রতিষ্ঠান তেকে আমার ছড়ার বই ছাপবেন বলে পোস্টকার্ড লিখে জানালেন। আমি তো খুশীতে আত্মহারা। একদিন চিঠি পেলাম, উনি ঢাকায় এসে সেগুনবাগিচার চট্টগ্রাম হোটেলে উঠবেন। আমি যেন দেখা করি। ভদ্রলোককে আগে কখনো দেখিনি। তাই দেখা করতে যাই। উনি হোটেলে খাওয়ালেন। তারপর রুমে গিয়ে আমার বইয়ের ফাইনাল প্রুফ দেখালেন। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের 'হলে' নিয়ে এসে সারারাত জেগে প্রুফ ঠিক করে দিই। ১৯৯৩ সালে বইমেলার সময় কুরিয়ারে এল ১০০ কপি 'রুখে দাঁড়াই বর্গী তাড়াই' ছড়াগ্রন্থ। চট্টগ্রামের প্রচ্ছদশিল্পী বিশ্বজিৎ তলাপাত্রকে এখনো দেখিনি। আমি তখন ছাত্র। আননন্দের পাশাপশি আমার আতঙ্ক- এতগুলো বইয়ের দাম দেব কী করে? কিন্তু দেখি বইয়ের প্যাকেটের সঙ্গে একটা চিঠি। তাতে লেখা রয়্যালটি বাবদ যেন ১০০ কপি গ্রহণ করি। আমার সকল আতঙ্ক উবে যায়! আমি বলে প্রকাশককে কৃতজ্ঞতা জানাবো, ভেবে পাই না।
পরের বছর কবিতার পাণ্ডুলিপি নিয়ে যাই বাংলাবাজার। মেলায় পরিচয়সূত্রে যাই জ্যোৎস্না পাবলিশার্সে। প্রকাশক বললেন, কবিতার বই তো চলে না। বাচ্চাদের গল্পের বই হলে ছাপতে পারে। তখন খেলাঘর আসরে পড়ার জন্যে ২টি মাত্র কিশোরগল্প লিখেছি। ওতে তো আর বই হবে না। আরো ৪/৫টা গল্প লাগে! তবু রাজি হয়ে যাই। পরের দিন পাণ্ডুলিপি রেখে আসি। নতুন বইয়ের মুখ দেখার নেশায় একরাতেই লিখে ফেলি আরো ২টি গল্প। পরের দিন বাংলাবাজারে যাই। প্রকাশক বলেন, আরে ভাই ২টা গল্প দিয়ে কি বই হয়! আমি বলি এই তো আরো ২টা আছে। আর কয়েকটা খুঁজে পাচ্ছি না। আপিন কম্পোজে দিন। আমি নিয়ে আসবো। আমি সপ্তাহ খানেকের মধ্যে আরো ৩টি গল্প লিখি। আর এভাবেই হয়ে যাই আমার ২য় বই 'শুভর শখের গোয়েন্দাগিরি'। প্রচ্ছদ এঁকেছেন শামিনুর রহমান (পরে তিনি বাংলা একাডেমীতে যোগ দেন)। বইটির তৃতীয় সংস্করণ এখন বাজারে।
আমি ভাগ্যবান, পয়সা বিনিয়োগ ছাড়াই আমার সকল বই বের হয়েছে। বাংলা একাডেমীই ছেপেছে আমার ৪টি বই। তাই তরুণদের (আমিসহ) ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বাজারে কত প্রকাশক! একজন না একজন পাওয়া যাবেই।