somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিল বাঘিয়ার ঐতিহ্য ফিরে আসুক ্্ তপন বাগচী

২৮ শে মার্চ, ২০১০ দুপুর ১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিল বাঘিয়ার ঐতিহ্য ফিরে আসুক
তপন বাগচী

পেশায় জেলে না হলেও মাছ ধরে আর মাছ বেচেই জীবন চলে তাঁদের। কিন্তু বিলে এখন মাছ কমে গেছে। বিলের শামুক ধরেও কেউ কেউ দু-পয়সা আয় করত। দূরের চিংড়ি ঘেরে বেচত সেই শামুক। শামুকও এখন ফুরিয়ে যাচ্ছে। এই বিলের নাম বাঘিয়া। একসময়ে জলজ প্রাণবৈচিত্রে ভরা ছিল বিল। পরিবেশ ও প্রকৃতির পরিবর্তনের কারণে এখন তা বিলুপ্তির পথে।
বিল বাঘিয়ার অবস্থান গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়া উপজেলার কলাবাড়ি ইউনিয়নে। এই বিলে প্রায় দুই শ বছর আগে থেকেই চলে আসছে নৌকাবাইচ। দুর্গাপূজার পরে পূর্ণিমায় এই নৌকা বাইচে বৃহত্তর ফরিদপুর ও বৃহত্তর বরিশালের অসংখ্য বাচারী নৌকা অংশ নেয়। নৌকাবাইচকে ঘিরে নৌকায় বসে ভাসমান মেলা। বিলের পাশের ছোট্ট খালে এখনো নৌকাবাইচ হয়। বিল শুকিয়ে যাওয়ায় সেই মেলা এখন ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।
বিলের উত্তর কোণের গ্রাম রামনগরের অধিবাসী প্রকৌশলী গোপালকৃষ্ণ বাগচী ঢাকায় থাকেন। সুযোগ পেলেই বাড়ি আসেন। বিলের এই দুর্যোগ মোকাবেলার কর্মপন্থা নিয়ে তিনি ভাবছেন। তিনি বলেন, ‘বর্ষার শুরু থেকেই কিছু লোক শামুকের সন্ধানে সারা বিল চষে বেড়ায় ফলে শামুক এখন দুষ্প্র্রাপ্য হয়ে ওঠেছে। আবার বর্ষার শুরুতেই পোনা মাছ শিকার ও শীতে পাখি শিকার চলে নির্বিচারে। হয়ত দু’পয়সা রোজগার করছে তাঁরা। কিন্তু পরিবেশের তির বিষয়টি তারা বুঝতে পারছেন না বা আমলেই নিচ্ছেন না।’ তিনি আরো বলেন, ‘যেহেতু একাজ করে আয়-উপার্জন হচ্ছে তাই নিষেধ করে একাজ থেকে তাঁদের বিরত রাখা কঠিন। বরং এদের জন্য বিকল্প কাজের ব্যবস্থা করাই উত্তম।’
রামনগর গ্রামের বািসন্দা, সরকাির হাসপাতােলর ডা. হরষিত হালদার বলেন, ‘এলাকায় যোগাযোগব্যবস্থা খারাপ থাকার কারণে লোকজন স্বাস্থ্যসেবা এবং শিাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। লোকজনের মধ্যে সচেতনার অভাবে এখানে বাল্যবিবাহ এবং যৌতুক প্রথাও চালু রয়েছে। এঁদের সচেতন করার কর্মসূচি জোরদার করা দরকার।’
গ্রামের প্রবীণ মানুষদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এ বিলে এক সময় শাপলা, শালুক, শোলা, ধইঞ্চা, কলমি, বাদাবন, ঘাস, আজালিঘাস, ধাপদল, কচুরিপানা, মালঞ্চ, হেলেঞ্চা, ডুটকুরা, শেওলা, বলজগাছ, বন্যাগাছ, বিষকাটালি, ঘেচু, নলখাগড়া, বলুঙ্গা-সহ নানা গুল্ম ও জলজ উদ্ভিদ ছিল। মাছের মধ্যে বড় কৈ, শিং, মাগুর, চিতল, শোল, গজার, ভেইলসা, খইলসা, পুটি ও সরপুটিসহ নানা জাতের মাছ ছিল। পাখি ছিল সারাবছর ধরেই। পাখির মধ্যে ছিল চিল, শালিখ, বাবুই, টুনটুনি, বক, কোড়া, কাইম, কাঁদাখোচা, মাছরাঙা, কাজলা, বুনোহাঁস, পানকৌড়ি, সূইচড়া, নলঘোঙরা, কাক্কু, ডাহুক ইত্যাদি।
কলাবাড়ী গ্রামের কবি ও সাংবাদিক রবীন্দ্রনাথ অধিকারী বলেন, ‘বিল বাঘিয়ার আয়তন প্রায় ৪ হাজার হেক্টর। বছরের জ্যৈষ্ঠ থেকে মাঘ মাস পর্যন্ত অর্থাৎ নয় মাস এ বিলে পানি থাকে। বাঘিয়াকে ঘিরে প্রায় ২০ হাজার লোকের জীবন জীবিকা নির্বাহ হয়। রামনগর, কলাবাড়ী, কাফুলাবাড়ী, হাজড়াবাড়ী, কদমবাড়ী, লখণ্ডা, গোবিন্দপুর, বৈকুণ্ঠপুরসহ ছোট ছোট গ্রামের ভূমিহীন কৃষক আর দিনমজুরদের একমাত্র আয়ের উৎস এই বিল। কিন্তু এখন আর সেই আগের অবস্থা নেই।
বিলের পশ্চিম পাশ দিয়ে গেছে রাজৈর-কোটালীপাড়া পাকা সড়ক। বাকি তিন দিকে বিল, সরু খাল ও নিচু জমি। বিলে একসময় সাপ, গুইসাপ, কাঁকড়া, ব্যাঙ, আরজিনা, কাঙলাস (গিরগিটি প্রজাতির), কেঁচো, জোঁক, বিছা, জারাইল, ঘুঘরা ও অন্যান্য পোকা-মাকড়, শামুক, ঝিনুক, ফড়িং, কচ্ছপসহ নানা ুদ্র প্রাণীর বসবাস ছিল যা প্রকৃতিগতভাবেই পরিবেশের ভারসাম্য রা হত। এখানে মাটির উর্বরতার কারণে রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার ছাড়াই ধান, শাক-সব্জি, মসল্লা ও মাছ চাষ হয়ে থাকে বলে এর স্বাদও অন্যরকম।
দিনদিন বিলটি তার ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। মাছের প্রাচুর্য নেই, কর্মহীন হয়ে পড়েছে লোকজন, হারিয়ে ফেলেছে তাদের পৈত্রিক পেশা ও উপার্জনের পথ। বছরের ৯ মাস পানি থাকে। তাই এক বার বোরো ধান ছাড়া অন্য কোনো ফসলের আবাদ করা যায় না। সে জন্য বছরের ৬ মাসই অধিকাংশ লোকের কোন কাজ থাকে না।
বিকল্প হিসেবে বিভিন্ন কাজ বিবেচনায় আনা যেতে পারে। তা হলো, বর্ষাকালে কচুরিপানা দিয়ে ২৫-৩০ হাত লম্বা ও ৮-১০ হাত চওড়া আইল বা ধাপ (স্থানীয় ভাষায় বাইড়া) তৈরি করে তাতে মসল্লা ও সবজি চাষ করা। ভাসমান এ ধাপে উচ্ছে, ঢেড়স, শসা, ঝিঙে, চিচিঙ্গা, তরই, ডাটা, বরবটি, শিম, পুইশাক, চুপরিশাক, কচু, বাঙ্গি, হলুদ চাষ করা যায়। নিজেদের প্রয়োজন মিটিয়েও লোকজন স্থানীয় বাজারে সবজি বিক্রি করে লাভবান হতে পারে। সবজির দাম ভালো থাকায় এর থেকে যা আয় হবে তা শামুক বিক্রি থেকে বেশিই হবে। বস্তুত এ পদ্ধতিতে সবজি চাষ আগের থেকে প্রচলিত থাকলেও ব্যপকভাবে তা হচ্ছে না। প্রকৌশলী গোপালকৃষ্ণ বাগচী জানান, ‘খাচাঁয় মাছচাষ, ঘরে বসে জালবোনা, মহিলাদের জন্য সূঁচিশিল্প ও গবাদিপশু পালনসহ নানা প্রকল্প গ্রহণের মাধ্যমে বিকল্প আয়ের ব্যবস্থা করে দিলে এলাকাবাসী সচেতন হবে ও পরিবেশ ধ্বংসকারী কাজ করা থেকে বিরত থাকবে।’

বি.দ্র. লেখাটি আজকের দৈনিক প্রথম আলো-য় ছাপা হয়েছে। এখানেও পড়তে পারেন: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মার্চ, ২০১০ দুপুর ১:৪২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশে কোন প্রজন্ম সবচেয়ে দুর্নীতিগ্রস্ত? ১৯৭১ থেকে একটি সংক্ষিপ্ত ভাবনা

লিখেছেন মুনতাসির, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৩

বাংলাদেশে দুর্নীতির প্রশ্নটি প্রায়ই ব্যক্তি বা দলের দিকে ছুড়ে দেওয়া হয়। কিন্তু একটু গভীরে গেলে দেখা যায়, এটি অনেক বেশি প্রজন্মভিত্তিক রাজনৈতিক - অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭১ এর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭



আমাদের ব্রেইন বা মস্তিষ্ক কিভাবে কাজ করে লেখাটি সে বিষয়ে। এখানে এক শিম্পাঞ্জির কথা উদাহরণ হিসেবে টেনেছি মাত্র।

ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×