"আস্থাহীনতার দিন, থেকে যায় অমলিন
ফিরে আসেনা সেই সোনালী সকাল
তবুও হাঁটছি পথ, এ শহর জনপদ
মুখরতা নেই শুধু আছে দাহকাল।”
গল্পের ছলে হয়তো অনেক কিছুই বলা যায়।বলা যায় কি পেয়েছি- কি পাইনি।জীবনের এতটা ক্ষন পেরিয়ে এসেও মনে না পাওয়ার ব্যাথা গুলো কুড়ে কুড়ে খায়।প্রিয় কিছুক্ষন, প্রিয় কিছু মানুষ যাদের পৃথিবীর সর্বোচ্চ প্রশংসা করলেও কম হয়ে যায়।পাইকপাড়া জন কল্যাণ মাধ্যমিক বিদ্যালয় ভর্তী হবার আগেও বুঝিনি আমার মত অযোগ্যকে কিভাবে এই বিদ্যাপিঠ ও এর সেবায় নিয়োজিত মানুষ গুলো যোগ্য করে তুলবে ।আমার জীবন যাপনে পরিবর্তন আনবে।
বাবার কাছে তিনার স্কুল জীবনের কথা শুনতাম। ভাবতাম কখন প্রাথমিকের গন্ডী পেড়িয়ে ওইখানে যেতে পারবো। কালের আবর্তে বাবার হাত ধরে এই বিদ্যাপিঠ এ ভর্তী হলাম।তখনও কোন শিক্ষককে চিনি না।তবে স্কুলজীবনের কথা বলতে গেলেই দুইজন প্রিয় মানুষ মোফাজ্জাল হোসেন ও আব্দুল কাদির স্যার এর কথা বলতেন।
তখনও ভাবতে শিখিনি একজন শিক্ষক কিভাবে অভিভাবক ও বন্ধুত্বের মায়াজালে ছাত্রদের আবদ্ধ করতে পারেন।আর তাদের শেখানো পথ কিভাবে আমার মত ছাত্রদের চলার পথকে মসৃন করতে পারে।ভর্তী হবার কিছুদিন পর আজিজুল ভাই এর কাছে ধরা খেলাম নারিকেল গাছের পাতা ছিড়ে।সোজা তলব প্রধান শিক্ষক এর রুমে। ভাগ্যগুনে তখন স্যার রুমে ছিলেন না। তবে অন্য একজন স্যার আমার বিচার করবেন শুনে আত্মারাম খাচা ছাড়ার দশা।ভয়ে ভয়ে হাজির হলাম স্যার এর সামনে।পরিচিত হলাম অসাধারন এক মানুষের সাথে, যার কথা বাবার কাছে আনেক শুনেছি। স্যার আমার নাম,বাবার নাম জানতে চাইলেন আমি বললাম শুনে হাসতে হাসতে বললেন “তুই তো আমার নাতী ছাত্র হয়ে গেলি তোর বাবা ও আমার ছাত্র ছিল ।” এরপর স্যার আমাকে বকা না দিয়ে সুন্দর করে বোঝালেন আর দোতলার কার্ণীশে যেতে নিশেধ করলেন। আমি এর পর থেকে আর কখনও কার্ণীশে যায় নি নারিকেল গাছের পাতা ছিড়িনি।
স্যার আমাকে শিখিয়েছেন কিভাবে কঠিন বিষয় গুলো সহজে মনে রাখা যায়।একদিন কোন একটি বিষয় নিয়ে তিনি বলেছিলেন “শোন জীবনে গুরুকে মানবি কিন্তু গুরুর খাছলত মানবি না।” আমি প্রশ্ন করেছিলাম স্যার যদি আপনি হন তবে, তিনি হেসে বলেছিলেন ”কথাটা আমার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তুই সবাইকে সম্মান করবি দেখবি তুইও সম্মান পাবি আমার থেকেও বড় হবি”।স্যার সময় বেধে দিতেন যে কোন বিষয়ের উপর কিছু লেখার জন্য আমরা লিখতাম । স্যার লেখালিখির উপর উৎসাহ দিতেন । আমার কবিতা পড়ে কবিতা লেখার জন্য খুব উৎসাহ দিতেন । আমি আজও না বলা সময়ের হাতে নিজেকে সমর্পন করে লিখতে চেষ্টা করি ।শুধু স্যার এর উৎসাহ পাইনা।তিনার জীবদ্দশায় কখনও কোন বিষয় নিয়ে স্যার এর কাছে গেলে তিনি সুন্দর ভাবে সমাধান করে দিতেন।আজ যখন ভাবি স্যার নেই তখন আমার পৃথিবীটা সংকুচিত হয়ে আসে।আজ চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে হয় স্যার আমি আপনার স্পর্শ পেয়েছি আমার জীবন ধন্য হয়েছে। আমার সকল সংকটে আমি আপনাকে খুব মিসকরি।
মাওলানা স্যার আপনাকে আবার জ্বালাতন করতে খুব ইচ্ছা হয় ।ইচ্ছা হয় আবার শুনি আপনার দড়াজ কন্ঠের পবিত্র কোরআন তেলওয়াত শুনি।ইচ্ছা হয় আবার আপনার কাছে বকা শুনি, নুরুল ইসলাম স্যার এর কাছে কোন জীবন ঘনিষ্ঠ উপদেশ শুনি ।
মাঝে মাঝে নষ্টালজিক হয়ে পড়ি , মনে পড়ে রহমান স্যার এর ক্লাস শুরুর আগে পিঠের উপর আলতো করে মার,সায়েম স্যার এর বুক কাপানো হুংকার, আব্দুলাহেল বাকী স্যার এর ক্লাস, জমীর স্যার এর বাংলা পড়ানো,মাহফুজ স্যার, তৌহীদ স্যার,কাশেম স্যার,হুসেন স্যার এর ক্লাস। বার বার ফিরে যেতে ইচ্ছে হয় সেই দিনগুলোর কাছে।তাই মহাকালের কাছে বারবার বলতে ইচ্ছে হয়...............
"আমার রঙীন কতোগুলো দিন
রয়েছে তোমার কাছে- ফিরিয়ে দাও
না হয় আমার হৃদয়ের যে ব্যথা
বুকের মাঝে জমে আছে- ফিরিয়ে নাও
এরপর যাও, চলে যাও, যেখানে যেতে চাও”