মুনিয়া আজ তার সারাজীবনের পরিশ্রমের ফল পেয়েছে । সে এখন বিসিএস ক্যাডার, একটি নামকরা সরকারি কলেজের সহকারী অধ্যাপক । যেদিন বিসিএস পরিক্ষার রেজাল্ট প্রকাশিত হয় সেইদিনটা মুনিয়ার জীবনের সেরা আনন্দের দিন। সারাজীবনের কষ্ট তার সার্থক হয়েছে। সে এখন যে পরিমান বেতন পায় তা তার একার জন্য অনেক বেশি। একদিন তার চাইনিজ খেতে ইচ্ছা হয়, সঙ্গী না থাকায় একাই গিয়েছিল সেদিন। মোটেই ভাল লাগেনি, খাবার অর্ডার দিয়ে চারভাগের একভাগ খেয়ে বাকীটা ফেলে রেখে এসেছিল। নিজেকে ওই পরিবেশে বড়ই বেমানান মনে হয়েছিল তার কারণ সবাই জোড়ায় জোড়ায় বসেছিল শুধু সেই একা। অন্যদের বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে দেখে তারও বেড়াতে যেতে ইচ্ছে করে,কক্সবাজার,সেন্টমার্টিন,বান্দরবন। কিন্তু একা একা এসব জায়গায় ভাল লাগবে না ভেবে পরিকল্পনা বাতিল করে।
যে সময়টুকু কলেজে থাকে সেটুকু সময় মুনিয়ার আনন্দে কাটে। কলেজের ছাত্রছাত্রীরা তাকে খুবই ভালনাসে। মুনিয়া ম্যাডাম বলতে সবাই অজ্ঞান, মুনিয়াও ছাত্রছাত্রীদের আপনজনের মত ভালবাসে। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনা এবং ব্যক্তিগত যেকোনো সমস্যার কথা শুনে সে, এবং সমাধানের পথ দেখিয়ে দেয়। এজন্যই তার এত জনপ্রিয়তা। কলেজের পিকনিকগুলোতে দারুণ আনন্দের সময় কাটে তার। ছাত্রছাত্রীদের উচ্ছাস সে প্রাণভরে উপভোগ করে।
মুনিয়ার বাবা মা তার জন্য অনেক ছেলে খোজার চেষ্টা করেছে। কিন্তু বিসিএস ক্যাডার মেয়ের জন্য পাত্র পাওয়া কঠিন। যা পাওয়া যায় তাদের ডিমান্ড একটি সুন্দরি অল্প বয়সী মেয়ে। অবশেষে সবাই হাল ছেড়ে দিয়েছে তার বিয়ের ব্যাপারে। তার ছোট ভাইবোনেরা সবাই বিয়েশাদী করে সুখে শান্তিতে আছে।
আজ মুনিয়ার সহপাঠী রাসেলের কথা মনে পড়ছে। রাসেল বেশ কয়েকবারই তার ভালবাসার কথা মুনিয়াকে বলেছে। সে কৌশলে এড়িয়ে গেছে প্রতিবারই। একবার ভ্যালেন্টাইন ডের আগের দিন রাসেল তাকে শাড়ি পরে সেজেগুজে ক্যাম্পাসে আসতে বলেছিল। মুনিয়া সেটা করেনি, সে সাধারণ পোশাকেই ক্যাম্পাসে গিয়েছিল । রাসেল সেদিন পাচটা লাল গোলাপ দিয়ে তাকে ভালবাসার কথা জানিয়েছিল। সেদিন রাসেলকে সরাসরি না করে দিয়েছিল। রাসেলকে বলেছিল
-দেখো রাসেল আমি এখন এসব ভাবতে চাই না। আমার কাছে ভাল রেজাল্ট এবং ভাল জব খুবই জরুরি। তারপর অন্য কিছু ভাববো।
মুনিয়ার আজ সবই হয়েছে শুধু রাসেল আজ অন্যজনের। রাসেল সেদিন খুবই অপমানিত বোধ করে। তার সাথে জিদ করেই তারই বান্ধবী শিখাকে প্রোপজ করেছিল,শিখা আজ রাসেলের বউ। ওরা অনেক সুখে আছে, ফেসবুকের কল্যানে আজ সবার খবরই পায় সে। এই ফেসবুক আজ মুনিয়াকে আরো বেশী বিষণ্ণ করে দেয়। তার মনে হয় পৃথিবীর সব মানুষ সুখে শান্তিতে আছে শুধু তার জীবনটাই অন্যরকম।
শাড়ি পরতে গেলেই মুনিয়ার রাসেলের কথা মনে পড়ে। সেদিন রাসেলের কথামত শাড়ি পড়লে তার জীবনটা অন্যরকম হতো। ঘরের জানালা দিয়ে ওয়ালের উপর একটা শালিক পাখিকে একা বসে থাকতে দেখে তার কষ্ট আরো বেড়ে যায়। আহা ওই শালিকটারও কি আমার মত একা!
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই মার্চ, ২০১৯ দুপুর ১২:০৭