বিশ্ববিদ্যালয় এ ভর্তির একসপ্তাহের মধ্যেই বুঝলাম ক্লাশে একজন অসম্ভব সুন্দরী মেয়ে আছে। অনেক ছেলেরাই তার দৃষ্টি আকর্শনের চেষ্টা করছে। কেউ চাইছে তার বন্ধুত্ব আবার কেউ ভালবাসা। ভর্তির কয়েকদিনের মধ্যে ভর্তি সংক্রান্ত কিছু ফর্মালিটিজ বাকী থাকায় আমার নতুন বন্ধু মিলনকে বললাম
- চল আমরা প্রশাসনিক ভবনে যাই। হঠাৎ একটি মেয়ে কষ্ঠ বলে উঠলো 'আমিও যেতে চাই'। তাকিয়ে দেখি ক্লাশের সেই সবচেয়ে সুন্দর মেয়েটি, কোন দ্বিধা না করে হাত বাড়িয়ে দিল, ---আমি প্রান্তি, আমরা বন্ধু হতে পারি? এমন সুন্দর একটা মেয়ের বন্ধুত্ব পাওয়াতো ভাগ্যের ব্যাপার। আমরা সাদরে গ্রহণ করলাম আমাদের এই নতুন বন্ধুকে।
কিছুদিনের মধ্যে আমাদের এক বন্ধু সায়েম প্রান্তির প্রেমে হাবুডুবু খেতে লাগলো। প্রান্তিও দেখলাম ওর সাথে একটু বেশিই মিশছে। আমরা ধরে নিলাম সায়েমের সাথে প্রান্তির কিছু একটা চলছে। ভ্যালেন্টাইন ডের দিনে প্রান্তি জানালো তার কাছে বিশাল সাইজের একটা কুরিয়ার এসেছে। যাতে ৫০টা গোলাপ ফুল, এক ডজন গল্পের বই, একটা ভ্যালেন্টাইন কার্ড,একটা টেডিবিয়ার আছে। শুধুমাত্র প্রেরকের নাম লেখা আছে নিহাল, আর কোন ঠিকানা দেওয়া নেই। ভাবলাম সুন্দরী মেয়েদের কতই সুবিধা, এত এত গিফট! বন্ধু সায়েমের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ওর মুখে কালো মেঘ,প্রান্তিকে হারানোর বেদনা ফুটে উঠেছে।
একদিন সন্ধ্যায় হলের এক খালা জোরে জোরে চিৎকার করছে
-৩০২ প্রান্তি খালা আপনার ফোন(তখন মোবাইলের যুগ না হওয়ায় হলের টি এন্ড টি ফোনে ছাত্রীদের কল আসতো)। প্রান্তি অবাক হল, হলের টি এন্ড টি ফোনে কল করার মততো কেউ নেই তার? ফোন ধরতেই অপর প্রান্ত থেকে একটা ছেলে কন্ঠ,
-আমি নিহাল আমার গিফটটা কি আপনার ভাল লেগেছে?প্রান্তি বুঝলো এটাই সেই ছেলে যে তাকে ওই বিশাল সাইজের গিফট পাঠিয়েছে। প্রান্তি রেগে গিয়ে বললো
-কাজটা আপনি মোটেই ভাল করেননি, কালই এসে আপনার গিফট ফেরত নিয়ে যান। ছেলেটি বললো,
-গিফটগুলো আপনার, ফেরত নেওয়ার জন্যতো দেইনি।
প্রান্তি তখন বললো আপনি ফেরত না নিলে আমি ওগুলো ছিড়ে কুটিকুটি করে, ডাস্টবিনে ফেলে দেবো। নিহাল বললো
-গিফটগুলো আপনি গিফটগুলো গ্রহণ করলে আমি খুব খুশি হবো।
-আপনাকে চিনি না জানি না আপনার গিফট কেন নিবো?
নিহাল বললো
-চেনাজানা হতেইতো চাই, সেজন্যই এই গিফট।
নিহালের পাঠানো গিফটগুলোর মধ্যে একডজনই হুমায়ুন আহম্মেদের বই। বইগুলোর মধ্যে দুইটা আগে পড়া থাকলেও বাকীগুলো নতুন তাই পড়ার লোভ সামলাতে পারেনি প্রান্তি । ভেবেছে বইগুলোতো ফেরতই দিয়ে দিবো তাই তাড়াতাড়ি পড়ে ফেলি। ৩দিনের মধ্যেই দশটা বই পড়া শেষ।
ফুল কিংবা টেডিবিয়ারের চেয়ে বইগুলো পেয়েই বেশি খুশি হয়েছে প্রান্তি। কিছুদিনের মধ্যেই বুঝলাম নিহাল নামের ছেলেটির সাথে প্রান্তির প্রেমের তরি বেশ ভালই চলছে। আমাদের বন্ধু সায়েমকে শান্তনা দেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকলো না আমাদের। প্রথমদিকে ক্লাশের ফাঁকেফাঁকে এবং বিকেলবেলা আমি প্রান্তিসহ অন্য বন্ধুরা একসাথে ক্যাম্পাসে আড্ডা দিলেও ইদানীং প্রান্তি বিকেলবেলা আমাদেরকে আর সময় দিচ্ছে না। এখন আর বিকেলবেলা প্রান্তির রান্নাকরা নুড়ুলস আমরা খেতে পাচ্ছি না। বুঝলাম আমাদের ভাগের নুড়ুলসটা নিহাল নামের ছেলেটি খেয়ে নিচ্ছে।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১:৪৩