somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

তারেক_মাহমুদ
আমি লেখক নই, মাঝে মাঝে নিজের মনের ভাবনাগুলো লিখতে ভাল লাগে। যা মনে আসে তাই লিখি,নিজের ভাললাগার জন্য লিখি। বর্তমানের এই ভাবনাগুলোর সাথে ভবিষ্যতের আমাকে মেলানোর জন্যই এই টুকটাক লেখালেখি।

বুক রিভিউ : চেনা অচেনা সুচিত্রা সেন

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মহানায়িকা সুচিত্রা সেনকে নিয়ে আজও আগ্রহের কমতি নেই। আমি সুচিত্রা সেনের এমন একজন ভক্তকে চিনি যিনি কলকাতায় গিয়ে প্রায় ২০ কি. মি. পথ পাড়ি দিয়েছিলেন শুধুমাত্র সর্বশেষ সুচিত্রা সেন যে হাসপাতালে মৃত্যু বরন করেছিলেন সেই বেলভিউ হসপিটালকে এক নজর দেখার জন্য। এবারের বইমেলায় চেনাঅচেনা সুচিত্রা সেন বইটি সুচিত্রা সেনের সেই ভক্তর জন্যই কিনেছিলাম। উনাকে দেওয়ার আগে নিজেই একবার পড়ে নিলাম। তাই এই বইটি সম্পর্কে কিছু কথা লিখতে চাই।

রেহানা আশিকুর রহমান সম্পাদিত চেনা অচেনা সুচিত্রা সেন বইটি ২০১৪ সালে সুচিত্রা সেনের মৃত্যুর পরই প্রকাশিত হয়। সুচিত্রা সেনের জীবনে কিছু জানা অজানা অধ্যায় তুলে ধরা হয়েছে বইটিতে । যেমন সুচিত্রা সেনের জন্ম, বিবাহ, সিনেমা জগত, মৃত্যু,তার প্রিয় মানুষের বর্ণনায় এই অধ্যায় গুলো গভীরভাবে ফুটে উঠেছে।

ব্যক্তিজীবন ও সিনেমায় আগমন:

১৯৩১ সালের ৬ই এপ্রিল মহানায়িকা জন্ম গ্রহণ করেন। তখন তিনি সুচিত্রা নন সেই সময় তার নাম ছিল রমাদাশ গুপ্ত। বাংলাদেশের পাবনা জেলায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি। পাবনার সবার কাছেই রমা নামে পরিচিত ছিলেন তিনি। করুণাময় দাশগুপ্ত ও ইন্দিরা দেবীর ৫ম সন্তান ছিলেন সুচিত্রা। পাবনা জেলার একটি সাধারণ স্কুলেই কাটে তার শিক্ষাজীবন। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তখনকার বিখ্যাত শিল্পপতি আদিনাথ সেনের ছেলে দিবানাথ সেনের সাথে ১৯৪৭ সালে।
মাত্র ১০ মিনিটের সিদ্ধান্তে রমাদাস গুপ্তের বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। আদিনাথ সেন দেখামাত্রই ছেলের জন্য এমন সুন্দরী মেয়ে ঠিক করেছিলেন। বিয়ের পর শ্বশুর আদিনাথ সেন বাংলা চলচ্চিত্রে আসার ব্যাপারে সুচিত্রাকে সহযোগিতা করেন। কারণ তখনকার খ্যাতিমান চলচ্চিত্রকার বিমল রায় ছিলেন আদিনাথ সেনের শ্যালক। তাছাড়া স্বামী দিবানাথ সেনও স্ত্রীকে চলচ্চিত্রে কাজ করার ব্যাপারে উৎসহ দেন। ১৬ বছর দাম্পত্য জীবন শেষে সুচিত্রা ও দিবানাথ সেন আলাদা হয়ে যান। তাদের দুজনের একমাত্র কন্যা মুনমুন সেন।মুনমুন সেনের দুই কন্যা রিয়া সেন ও রাইমা সেন ও চলচ্চিত্র অভিনেত্রী। বিবাহ বিচ্ছেদের পর সুচিত্রা সেন আর বিবাহ করেননি। সুচিত্রা সংসার জীবনের শুরুতে গেণ্ডারিয়ায় দিবানাথ সেনের বাড়িতে ছিলেন, পরিবারটি পরবর্তীতে কলিকাতার বালিগঞ্জে স্থায়ী হয়ে গিয়েছিলেন।

সুচিত্রা-উওম ক্যামিস্ট্রি :

বইটিতে কৌশিক পাল বলেছেন : সুচিত্রা-উওম প্রেম করাটাকে এত সুন্দর এত বিশ্বাসযোগ্যভাবে দেখিয়েছেন যে -আসলে বাঙালী চিরকাল উইশফুল প্রেমটাকে বেশী পছন্দ করে। ওদের সেই চাহনি একে অপকে জড়িয়ে ধরার মাধুর্য.
বাঙালী পর্দায় উওম সুচিত্রাকে দেখে ভাবতো ইস আমিও যদি ওভাবে প্রেম করতে পারতাম। ২৫ বছর অভিনয় জীবনে সুচিত্রা ৬০টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন তার মধ্যে ২৯টি ছবিতেই তিনি উওমের নায়িকা ছিলেন। উওমকুমার নিজেই স্বীকার করেছেন সুচিত্রা না থাকলে উওমের জন্মই হতো না। এক সাংবাদিক একবার উওমকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন সবাইতো আপনাকে ফ্লপ মাস্টার জেনারেল বলতো আপনি প্রতিবাদ করেননি? উওম তখন বলেছিল, তাইতো যাচ্ছিল, রমা এসে আমাকে বাঁচিয়ে দিল। উওম আরো বলেছিলেন, তার আগেতো অন্য নায়িকার সাথে প্রেমের ডায়লগ দিতে গিয়ে উত্তাপবোধ করতাম না, সাড়ে চুয়াত্তুর এ সুচিত্রার সাথে অভিনয় করতে গিয়ে বুঝলাম নায়িকা এসে গেছে। সুচিত্রা উওমের সম্পর্ক ছিল যতটা ভালবাসার ঠিক ততটাই শ্রদ্ধার। তাইতো উওম স্বয়ং মেনে নিয়েছিলেন তাদের জুটিটার নাম উওম সুচিত্র নয়, সুচিত্রা উওম। উওম কুমারের মৃত্যুর পর সুচিত্রা শেষ শ্রদ্ধা জানানো জন্য গিয়েছিলেন সমাধি পাশে সেদিন উওমের স্ত্রী সুচিত্রাকে বলেছিলেন, আজও মালাটা তুমিই দেও সারাজীবনতো মালাটা তুমিই দিয়ে এসেছো।

স্বেচ্ছা নির্বাসন:
১৯৭৮ সালে চোখ ধাঁধানো অভিনয়জীবনকে বিদায় জানিয়ে স্বেচ্ছা অবসর নেন সুচিত্রা সেন। ১৯৭৮ সালে তার প্রনয়পাশা ছবিটি মুক্তি পায় ছবিটি তেমন সফল ছিল না। এরপর থেকেই মুলত স্বেচ্ছা নির্বাসনে চলে যান এই মহা নায়িকা। ৩ যুগ ধরে অন্তরালে থাকার সময় যে কয়জন সুচিত্রা সেনের সাথে দেখা করতে পারেন তাদের মধ্যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যতম,এছাড়া মমতা বন্দোপ্যাধায়সহ খুব অল্প সংখ্যক মানুষের সাথেই দেখা করেন তিনি।

মৃত্যু : ১৭ই জানুয়ারি ২০১৪ সালে সুচিত্রা সেন কলকাতায় মৃত্যু বরণ করেন। তার মৃত্যুতে চলচ্চিত্র অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে আসে।

বইটিতে অনেক বিস্তারিতভাবে সুচিত্রা সেন সম্পর্কে লেখা আছে। বেশী দীর্ঘ লিখলে আপনাদের ধৈর্যচ্যুতি ঘটবে তাই বইটির চুম্বক অংশ তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।

সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ দুপুর ১২:২৬
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামাত কি দেশটাকে আবার পূর্ব পাকিস্তান বানাতে চায়? পারবে?

লিখেছেন ঋণাত্মক শূণ্য, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২৮

অন্য যে কোন সময়ে জামাতকে নিয়ে মানুষ যতটা চিন্তিত ছিলো, বর্তমানে তার থেকে অনেক বেশী চিন্তিত বলেই মনে করি।



১৯৭১ এ জামাতের যে অবস্থান, তা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের অস্তিত্বের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

=যাচ্ছি হেঁটে, সঙ্গে যাবি?=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:০৬


যাচ্ছি হেঁটে দূরের বনে
তুই কি আমার সঙ্গি হবি?
পাশাপাশি হেঁটে কি তুই
দুঃখ সুখের কথা ক'বি?

যাচ্ছি একা অন্য কোথাও,
যেখানটাতে সবুজ আলো
এই শহরে পেরেশানি
আর লাগে না আমার ভালো!

যাবি কি তুই সঙ্গে আমার
যেথায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগামী নির্বাচন কি জাতিকে সাহায্য করবে, নাকি আরো বিপদের দিকে ঠেলে দিবে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১২



আগামী নির্বচন জাতিকে আরো কমপ্লেক্স সমস্যার মাঝে ঠেলে দিবে; জাতির সমস্যাগুলো কঠিন থেকে কঠিনতর হবে। এই নির্বাচনটা মুলত করা হচ্ছে আমেরিকান দুতাবাসের প্রয়োজনে, আমাদের দেশের কি হবে, সেটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×