সময় খুব দ্রুত চলে যায়। মনে হয় এইতো সেদিন বাবার হাত ধরে গ্রামের হাটে যেতাম। বাজার শেষে বাবা এক পোঁটলা বাদাম,চানাচুর কিনে দিতেন খেতে খেতে বাড়ি ফিরে আসতাম। সবুজ ধানক্ষেতের পাশ দিয়ে কাধে বই নিয়ে স্কুলে যেতাম(তখন ব্যাগ ছিল না)। ধুলোয়ঢাকা পথে পায়ের ছেন্ডেল দিয়ে ধুলো উড়াতে উড়াতে বাড়ি ফিরতাম। নিজেদের বাড়িতে আম গাছ থাকলেও রাস্তায় অন্যের গাছের পাকা আমের দিকে লোভির দৃষ্টিতে তাকাতাম। মাঝেমধ্যে ঢিল ছুড়ে দিয়ে ভোদৌড়। একবার একজনের বরই গাছে ঢিল মেরে ধরা খেয়েছিলাম। ওই বাড়ির এক বড়ভাইয়ের হাতে মার খেয়ে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম আমিও বড় হলে ওকে একদিন পেটাবো। আমি বড় হওয়ার আগেই বেচারা পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে।আমি ওনাকে মাফ করে দিয়েছি।
স্কুল থেকে ফেরার পথে বন্ধুদের সাথে সারারাস্তা পাখির বাসা খুঁজে বেড়াতাম, ছোটবেলায় শখছিল একটা পাখি পোষার কিন্তু এই শখটা পুরুণ হয়নি, কারণ আমি গাছে উঠতেই পারতাম না। গাছে না উঠতে পেরে একদিকে ভালই হয়েছে আমার দ্বারা কোন পাখির বাসা বা তাদের বাচ্চারা আক্রান্ত হয়নি। রাস্তায় দুষ্টু কাঠবেড়ালীটাকে দৌড়াতে দেখলে ওর পিছনে দৌড়ানো ছিল অনেকটা নেশার মত, জানতাম দৌড়ে কাঠবেড়ালী ধরা আদৌ সম্ভব নয়। তবুও ওর পিছনে দৌড়াতে ভাল লাগতো।
বৃষ্টির দিনে বাড়ির আশপাশের ডোবা থেকে বড় বড় কৈ মাছগুলো উপরে উঠে আসতো। একবার রাস্তার পাশ থেকে অনেকগুলো কই মাছ ধরেছিলাম মাছগুলো ধরার পর সেকি আনন্দ! তাছাড়া পুকুর থেকে ডোবা থেকে ছিপ দিয়ে পুটি মাছ ধরার আনন্দ বলে বোঝানো না । একবার বর্ষাকালে কলার ভেলায় চড়ে বন্ধুদের সাথে বিলের গভীরে চলে গিয়েছিলাম শাপলা তুলতে। আমি সাতার জানতাম না, পরে আম্মার হাতে প্রচুর মার খেতে হয়েছিল এই কাজের জন্য। একবার ছোট্ট একটা গাছ থেকে পড়েগিয়ে আমার হাত ভেঙ্গে গিয়েছিল, আম্মাকে বলেছিলাম খেলতে গিয়ে পড়ে হাত ভেঙ্গেছে,ভয়ছিল যদি সত্যি কথা বলি তাহলে আরো কয়েকটি উওম মধ্যম লাগাবেন।
একসময় আমিও সাতার শিখে গেলাম।তখন পুকুরে একবার গোছল করতে নামলে তিন চার ঘন্টার কম উঠতাম না। মাছধরা পানিতে ছুঁয়াছুঁয়ি খেলা আরো কত কি?পুকুরে ডুব দিতে দিতে একসময় চোখ লাল হয়ে যেতে। শেষমেশ আম্মা যখন লাঠি নিয়ে পুকুর পাড়ে হাজির হতেন তখনই পানি থেকেই উপরে উঠতাম।
শৈশবের স্মৃতিচারণ করতে অদ্ভুত ভাললাগা কাজ করে। মনে হয় এইতো সেদিনের কথা, প্রত্যকটি স্মৃতি এখনো মনের কোনে উজ্জ্বল হয়ে আছে, খুব বেশি হাতড়াতে হচ্ছে না এমনিতেই স্মৃতিরা এসে ধরা দিচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৮ রাত ৯:১১