somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

তারেক_মাহমুদ
আমি লেখক নই, মাঝে মাঝে নিজের মনের ভাবনাগুলো লিখতে ভাল লাগে। যা মনে আসে তাই লিখি,নিজের ভাললাগার জন্য লিখি। বর্তমানের এই ভাবনাগুলোর সাথে ভবিষ্যতের আমাকে মেলানোর জন্যই এই টুকটাক লেখালেখি।

ভৌতিক গল্প : সাদা শাড়ী পরিহিতা নারী

২৩ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১০:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কয়েকয়েকটা দিন সে যশোর এম এম কলেজের ছাত্র ছিল।একটি হিন্দু মেসে থাকতো।একদিন রাত ১০টার দিকে ছাত্র পড়িয়ে মেসে ফিরছিল, আম বাগানের মধ্যে একটি শটকাট রাস্তা দিয়ে।একঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বাগানের মধ্যদিয়ে হাটেই চলছে কিন্তু পথই শেষ হচ্ছে না। হঠাৎ করেই সাদা শাড়িপরিহিতা একটি নারীকে দেখে থমকে গেল সে, তার দিকে তাকিয়ে খিল খিল করে হাসছে। সাথে সাথে ভয়ে জ্ঞান হারালো । এরপর আর কিছু মনে নেই, পরের দিন সকালে নিজেকে একটি ক্লিনিকের বেডে আবিষ্কার করলো। পরে জানতে পারলো তার মেস থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার দূরে একটি আম বাগানে তাকে অজ্ঞান অবস্থায় পাওয়া গেছে। বাগানের মালিক হসপিটালে ভর্তি করে গেছেন।

এর একমাস পর শোভনের ইয়ার ফাইনাল পরিক্ষা সমাগত, তার আশা ফাস্টক্লাস পাওয়ার। পরিক্ষার আগের দিন অনেক রাত পর্যন্ত পড়াশুনা করে ঘুমিয়ে পড়েছিল। স্বপ্ন দেখলো, সে রিকাশায় করে পরিক্ষা দিতে যাচ্ছে, হঠাৎ করেই সেই আম বাগানের সেই সাদা শাড়ি পরিহিত নারী হাজির। রিকশা দাড় করিয়ে বলছে তুই যতই পড়াশুনা করিস ফাস্টক্লাশ মার্কস তুলতে পারবি না। এরপর রিকশাচালক ও সেই নারী দুজনই হো হো করে হাসছে। ঘুম ভেঙে গেল তার, ঘুম থেকে উঠে ফ্রেস হয়ে পরিক্ষা দেওয়া উদ্দেশ্যে রিকশায় করে কলেজের দিকে রওনা দিল।

মেস থেকে কলেজে যেতে ২০ মিনিট মত সময় লাগে। রিকশায় বসে ভাবলো হাতে একঘণ্টা সময় আছে শর্টনোটগুলো চোখ বুলাতে থাকি। হঠাৎ করেই খেয়াল করলো রিকশাওয়ালা তাকে কলেজের পথে নয় অন্য পথে নিয়ে যাচ্ছে। রিকশাচালকে ধমক দিবে ভাবলো। খেয়াল করলো কালরাতে স্বপ্ন দেখা সেই রিকশাওয়ালাই এইলোক, কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো শোভন। এরই মধ্যে অন্য আর একটি ঘটনা ঘটে গেল, ঠিক তার পাশেই একটি ট্রাকের সাথে একটি রিকশার সংঘর্ষ হল। একটি মেয়ে রিকশা থেকে ছিটকে পড়ে গেল, শোভন কোনকিছু না ভেবেই মেয়েটিকে বাঁচাতে এগিয়ে গেল। মেয়েটি তার আঙুল চেপে ধরলো এবং বলতে লাগলো ভাই আপনি আমাকে বাচান।

শোভন তখন নিজের পরিক্ষার কথাও ভুলে গেল, মেয়েটিকে দ্রুতগতিতে হাসপাতালে নিয়ে গেল। একসময় তার মনে হল, আরে আমিতো পরীক্ষা দিতে যাচ্ছিলাম। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সাড়ে নয়টা বাজে, সে ভাবলো পরীক্ষাতো দশটায় হাতে আধাঘণ্টা সময় আছে, কোন সমস্যা নয় এখান থেকে দশ মিনিট লাগবে কলেজে যেতে। দ্রুত কলেজে পৌঁছাল শোভন, কলেজে গিয়ে দেখলো তার সহপাঠীরা কেউই বাইরে নেই। ঘড়ির দিকে তাকালো সে, না এখনো ১৫ মিনিট দেরী আছে পরীক্ষা শুরু হওয়ার।

পরীক্ষার হলে ঢুকে দেখলো সবাই আপন মনে পরীক্ষা দিচ্ছে, হল পরিদর্শক জিজ্ঞাস করলেন এত দেরী কেন? শোভন অবাক হয়ে ঘড়ির দিকে তাকালো, এখনো দশটা বাজতে ৫মিনিট বাকী। কোন কথা না বলে খাতা নিয়ে পরীক্ষায় মন দিল। ৪ঘন্টার পরীক্ষা, শোভনে ঘড়িতে যখন পৌনে বারোটা তখন হল পরিদর্শক বললেন আর মাত্র ১৫ মিনিট টাইম সবাই খাতা সেলাই করে নাও। শোভন অবাক হয়ে আবার নিজের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো ২টা বাজতে ১৫ মিনিট বাকী এটা কি করে সম্ভব মাত্রইতো দেখলাম ১২ বাজতে ১৫ মিনিট বাকী! মাত্র ৫৫ মার্কের উওর দিয়েছে কিন্তু কিছুই করার নেই। তাড়াহুড়ো করে ১৫ মিনিটে আরো ১৫ মার্কের উওর দিতে দিতে সময় শেষ। সে হল থেকে সে বেরিয়ে এল। হল থেকে বেরিয়ে গতকালের স্বপ্নের সেই নারীর কথা, রিকশাচালকের কথা, এবং এক্সিডেন্ট করা মেয়েটার কথাও মনে পড়ে গেল। শোভন ভাবলো যাই একটু হসপিটালে গিয়ে দেখে আসি। হসপিটালে গিয়ে শুনতে পেল মেয়েটি মারা গেছে। কি নিষ্পাপ চেহারার মেয়েটি! শোভনের মনটা কেঁদে ওঠলো।

শোভনের পরিক্ষা শেষ, বাবা মাকে দেখার জন্য শোভনের মন ছুটে যায় বাড়িতে। তাদের বাড়ি কোটচাঁদপুর, যশোর থেকে খুব বেশি দূরে নয়। রাত দশটার ট্রেনে চেপে বসে সে। ট্রেনে উঠে বুঝতে পারে কামরাতে সে ছাড়া আর দ্বিতীয় কোন মানুষ নেই। এটা এমন একটি কামরা যেটা থেকে চলন্ত অবস্থায় অন্য কামরায় যাওয়ার সুযোগ নেই। ট্রেন ইতিমধ্যে চলতে শুরু করেছে। এক কামরায় একা একা গা ছমছম করছিল তার। ট্রেনের আলো খুবই টিমটিমে তাই বই পড়াও সম্ভব নয়। তাই চুমচাপ একাএকা বসে বিভিন্ন ভাবনায় নিমজ্জিত হয়। হঠাৎ করেই খেয়াল করলো ট্রেন থেমে পড়েছে,সে ভাবলো ট্রেন কোটচাঁদপুর এসে পড়েছে। যখনি নামতে যাবে তখনি সে খেয়াল করলো ট্রেনের জানালার কাছে একটি সাদা কাপড় নড়ছে।সে ভাবলো রেল লাইনে পাশে কেউ কাপড় শুকাতে দিয়েছিল নিতে ভুলে গিয়েছে। দরজার কাছে গিয়ে দেখলো এটা কোন ষ্টেশন নয়, পাশে বিরাট বন, জানালার কাছে তাকাতেই খেয়াল করলো সেই সাদা শাড়ি পরিহিতা নারী যাকে যে সেই আম বাগানের মধ্যে দেখেছিল। শোভন ভয়ে জ্ঞান হারালো। যখন জ্ঞান ফিরলো বাইরে তাকিয়ে দেখলো ট্রেন কোটচাঁদপুর ষ্টেশনে পৌঁছে গেছে।

সমস্ত সাহস সঞ্চয় সে রেলষ্টশনে নেমে পড়লো। রেলষ্টেশন থেকে দশ মিনিটে পথ তাদের বাড়ি, কিন্তু এই পথটুকু একা একা চলার শক্তি পেল না। রেলষ্টেশনের চায়ের দোকানদার করিম চাচা শোভনের পরিচিত। উনাকে পুরো ঘটনাটা খুলে বললো শোভন। করিম চাচা তার ছেলেকে শোভনের সাথে দিলেন, অবশেষে সে বাড়ি পৌঁছাল। বাড়িতে পৌঁছে দেখে তার মা দিদি সবাই মামাবাড়ি বেড়াতে গেছে। বাড়িতে শুধু বাবা একাই আছেন। একটু ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো সে, ঘুমের মধ্য অদ্ভুত সব স্বপ্ন দেখতে লাগলো। প্রথমে সেই মেয়েটিকে স্বপ্ন দেখলো যাকে সে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল, সে বলছে দাদা তুমি আমাকে বাঁচাতে পারলে না। এরপরই সেই নারী হাজির, এবার সে শোভনের গলা চেপে ধরলো। শোভনের দম বন্দ হয়ে আসছে সে ঠাকুর দেবতাদের নাম জপতে লাগলো। এবার হাত পা সব কিছুই চেপে ধরেছে সেই নারী। শোভন নড়াচড়ার শক্তি হারিয়ে ফেললো। শোভন মৃত্যু প্রায় দ্বারপপ্রান্তে পৌঁছানো মানুষের মত গোঙাড়ানির মত আওয়াজ করতে লাগলো।

শোভনের গোঙড়ানোর শব্দে পাশের রুম থেকে তার বাবা এসে জোরে জোরে দরজায় ধাক্কা দিতে লাগলেন।কিছুক্ষণের মধ্যে শোভন শরীরে শক্তি ফিরে পেলো। একসময় দরজা খুলে দিল। তখনো নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছিল তার। বাবাকে সব ঘটনা খুলে বললো। সেই রাতটা বাবাছেলে একই বিছানায় কাটিয়ে দিল।

শোভনরা হিন্দু হলেও এলাকাতে জিন ভুত নিজে কাজ করে এমন কোন পুরোহিত না থাকায় তারা একজন হুজুরের কাছে গেলো। হুজুর শোভনের পুরো গল্পটা শুনে একটি কাগজে আরবিতে কিছু লিখে শোভনের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললো তাবিজটি সাথে রাখতে, অন্তত ছয় মাস।এরপর থেকেই শোভন সেই তাবিজটি ধারণ করছে, আর কোনদিন সেই নারী আর আসেনি শোভনের কাছে বাস্তবে বা স্বপ্নে।
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৩৭
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

Testimony of Sixty- By Edward Kennedy বাংলাদেশের রক্তাক্ত সত্যের এক আন্তর্জাতিক স্বীকারোক্তি

লিখেছেন কিরকুট, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৩




১৯৭১ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর বৈপরীত্যের বছর। এটি যেমন ছিল অন্ধকার ও রক্তাক্ত, তেমনি ছিল সত্যের প্রতি অবিচল এক সময়কাল। এই বছরের গণহত্যা, শরণার্থী স্রোত ও মানবিক বিপর্যয়ের বিবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×