somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

তারেক_মাহমুদ
আমি লেখক নই, মাঝে মাঝে নিজের মনের ভাবনাগুলো লিখতে ভাল লাগে। যা মনে আসে তাই লিখি,নিজের ভাললাগার জন্য লিখি। বর্তমানের এই ভাবনাগুলোর সাথে ভবিষ্যতের আমাকে মেলানোর জন্যই এই টুকটাক লেখালেখি।

ঘৃণা

০৮ ই জুন, ২০১৮ রাত ৮:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(এই গল্পটি সেফ হওয়ার আগে পোষ্ট করেছিলাম, তখন এই গল্পে মন্তব্য করেছিলেন, প্রামাণিক ভাই, মাহমুদুর রহমান সুজন ভাই,মোস্তাফা সোহেল ভাই, মোঃ মাইদুল ইসলাম ভাই, ও হাসু মামা)

ফজলুল হক সাহেব হুংকার দিয়ে উঠলেন
-এককাপ চা বানাইতেই এত দেরী হয়?
-ময়নার মা এক চুলায় ভাত, এক চুলায় তরকারী বসাইছিল তাই চুলা খালি ছিল না, এইজন্য চা বানাতে দেরী হয়ে গেল বললেন আমেনা বেগম।

গত ৪০ বছর এমন আচরণ সহ্য করতে করতে অভ্যস্ত হয়ে উঠেছেন আমেনা বেগম তাই এখন আর খারাপ লাগেনা। প্রথম দশ বছর ভিশন কষ্ট পেতেন । অনেক স্মৃতি মনে পড়ে গেল আমেনা বেগমের :
আমেনা গ্রামের মেয়ে, অল্প শিক্ষিত, এস এস সি পাস করেছিলেন সেকেন্ড ডিভিশনে। ওই সময় সেকেন্ড ডিভিশনে এস এস সি পাশ করা খুবই ভাল রেজাল্ট। তারপরই হক সাহেবের সাথে বিয়ে হয়ে যায় আমেনার । আর পড়াশুনা হয়নি। পাড়ার সবাই আমেনার বাবারে বলতো --তোমার মেয়েরতো রাজ কপাল এত ভাল ছেলের সাথে বিয়ে হয়েছে, কত বড় চাকুরী করে।
বিয়ের কিছুদিনের মধ্যেই আমেনা বুঝলো হক সাহেব মানুষ ভাল হলেও অতিমাত্রায় অহংকারী, এবং কথায় কথায় সবার সাথে দূরব্যবহার করা উনার অভ্যাস। অবশ্য কাজটি করার কিছুক্ষণের মধ্যেই বুঝতে পারেন কাজটি ঠিক হয়নি তখনি সরি টরি বলে পার পেতে চান।

বিয়ের প্রথম এক বছরের মাথায় একদিন ইত্তেফাক পত্রিকায় আমেনা রাজ্জাক কবরীর একটা সিনেমার বিজ্ঞাপন দেখে খুব শখ হল সিনেমা দেখার। গ্রামে থাকার সময় আমেনাদের বাড়ির পাশের ওয়ালে সিনেমার পোষ্টার দেখে তারও মন চাইতো সিনেমা দেখতে। পাড়ার ছেলেরা সব দলবেঁধে শহরে যেতো সিনেমা দেখতে। সিনেমা দেখে এসে আমেনার চাচতো ভাই মিলন রসিয়ে রসিয়ে সিনেমার গল্প করতো। সেই থেকে আমেনার হলে গিয়ে সিনেমা দেখার খুব শখ। আমেনা স্বামীকে সাহস করে বলেই ফেললেন নিজের সিনেমা দেখার শখের কথা,শুনে হক সাহেব তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন। বললেন
-তোমাদের মত ছোটলোকের মেয়েদের এরচেয়ে আর কি ভাল শখ হবে। কথাটি শুনে আমেনা ভিশন কষ্ট পেলেন। কোন কথা না বলে রান্নাঘরে গিয়ে কিছুক্ষণ ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদলেন। তারপর চোখ মুছে আবার ঘরের কাজে মনোনিবেশ করলেন। বিকেল বেলা হক সাহেব হাসি হাসি মুখ নিয়ে বাসায় আসলেন, আমেনা বেগমকে বললেন তাড়াতাড়ি রেডি হও, বাইরে যেতে হবে। উনাদের গাড়ি মধুমিতা সিনেমা হলের সামনে থামলো। সেদিনই আমেনা প্রথম সিনেমা দেখেন। পরে হক সাহেব বাসায় এসে অনেক দু:খপ্রকাশ করেন। সেদিনই আমেনা বুঝতে পারেন হক সাহেব কথায় কথায় দুর্ব্যবহার করলেও মানুষ খারাপ না।

গত পনের বছর যাবত হক সাহেব বাইরের কোন মানুষের সাথে খারাপ ব্যবহার করেন না । শুধুমাত্র আমেনা ব্যতিক্রম, একদিন রাত দুটোর সময় আমেনা কান্নার শব্দ পেলেন। আমেনা চোখ ডলতে ডলতে ঘুম থেকে উঠে দেখলেন হক সাহেব ছোট্ট শিশুর মত কাঁদছে। তখন আমেনা জিজ্ঞাসা করলেন
-কি হয়েছে আপনার?
হক সাহেব বললেন
-আমি কি খুবই খারাপ মানুষ?
-হঠাৎ এমন প্রশ্ন? এরপর হক সাহেব যা বললেন তা শুনে আমেনা আকাশ থেকে পড়লেন :

হক সাহেবের বাসায় এর আগে হালিমা নামের একজন বুয়া ছিলেন।সেদিন আমেনা বাপের বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন। হালিমা বুয়ার একটা পাচ বছরের ছেলে ছিল তার নাম করিম। করিমও মায়ের সাথে হক সাহেবের বাসায় থাকতো। একদিন হক সাহেব অফিস থেকে এসে দেখলেন করিম ড্রইংরুমের সোফায় ঘুমাচ্ছে। হক সাহেব চিৎকার দিয়ে উঠলেন,
-এই বান্দির পোলা সোফায় ঘুমাচ্ছিস ক্যান? যা আমার জন্য একগ্লাস পানি নিয়ে আয় । করিম পানি নিয়ে এলো। পানির গ্লাস নোংরা ছিল,তাই হক সাহেব আরো ক্ষেপে গেলেন, প্রচণ্ড জোরে চড় কশে দিলেন করিমের গালে। এবং বললেন যা ভাল করে গ্লাস ধুয়ে পানি নিয়ে আয়। করিম পানি আনতে চলে গেল। হক সাহেব সাথে সাথে নিজের ভুল বুঝতে পারলেন। এত ছোট বাচ্চার সাথে এতটা খারাফ ব্যবহার করা উচিৎ হয়নি। ভাললেন ছেলেটার কাছে গিয়ে ওকে আদর করে দুটো টাকা দেই চকলেট খাওয়ার জন্য। কি মনে বাইরে দাঁড়ালেন এবং জানালা দিয়ে দেখলেন করিম খুব যত্ন করে গ্লাস পরিষ্কার করছে, ছেলেটার জন্য খুব মায়া হল হক সাহেবের ভাবলেন ওকে স্কুলে ভর্তি করে দিবেন। এরপর করিম গ্লাসে পানি ভরলো। তারপর যা করলো সেটা হক সাহেব কোনদিন স্বপ্নেও ভাবেন নি। ছেলেটা প্যান্টের জিপার খুলে ছোট্ট নুনু বের করে গ্লাসে ডুবালো তারপর  গ্লাসটি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে গেল।

হক সাহেব সেদিন দেখলেন একটা পাচ বছরের বাচ্চা কিভাবে ঘৃনার বহিঃপ্রকাশ। এই ঘটনার পর থেকে হক সাহেব সম্পুর্ণ অন্য মানুষ। কারো সাথে খারাপ ব্যবহার করেন না। এখন আর সেই অহংকারও নেই, তবে আমেনা বেগমের সাথে উনার ব্যবহার আগের মতই। আমেনারও  গা সওয়া হয়ে গেছে। স্বামী বরং ভাল ব্যবহার করলে উনার সন্দেহ হয় স্বামীর শরীর ঠিক আছেতো!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই জুন, ২০১৮ রাত ৯:১৪
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×