somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ওজু করার পদ্ধতি

২৮ শে অক্টোবর, ২০০৭ রাত ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ওজুর ফজিলত
হযরত উসমান বিন আফ্ফান রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূল সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, যে ব্যক্তি সঠিকভাবে ওজু করে তার দেহের পাপ-পঙ্কিলতা নখের প্রান্তভাগ দিয়ে বেরিয়ে যায়। (মুসলিম)

ওজুর বিবরণ
১.মনে মনে ওজুর নিয়ত করা। মুখে উচ্চারণ করা নিস্প্রয়োজন।
২.“বিসমিল্লাহ” বলে ওজু শুরু করা।
৩. প্রথমেই হাতের কব্জিদ্বয় ধৌত করা।
৪. এরপর গড়গড়া কুলি করা, নাকে পানি দেয়া এবং নাক ঝেড়ে ফেলা।
৫. অতঃপর মুখমণ্ডল ধৌত করা। (মুখের সীমানা: মাথার চুলের অগ্রভাগ থেকে নীচের থুতি পর্যন্ত এবং এক কান থেকে অপর কান পর্যন্ত।)
৬. তারপর আঙ্গুলের ডগা থেকে কনুই পর্যন্ত হস্তদ্বয় ধৌত করা। প্রথমে ডান হাত, তারপর বাম হাত।
৭. এরপর হাত ভিজিয়ে পুরো মাথা ও দুই কান একবার মাসেহ্ করা।
৮. সবশেষে দুই পা টাকনু পর্যন্ত ধৌত করা। প্রথমে ডান পা, তারপর বাম পা।
৯. ওজু শেষে এই দোয়া পড়া
أَََشْهَدُ أَنْ لا إلَه إِلّا الله وَ أَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ

লক্ষনীয়: ওজুর প্রতিটি অঙ্গ তিনবার ধৌত করা সুন্নত। তবে একবার বা দুইবার ধৌত করলেও ফরজ আদায় হবে। কিন্তু মাথা একবার মাসেহ করাই সুন্নত। একাধিক বার মাথা মাসেহ করা শরীয়ত বিরোধী।

ওজু সংক্রান্ত বিভিন্ন ত্রুটি
১. নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা।
২. পানি অপচয় করা।
৩. ওজুর অঙ্গ সমূহের কোন অংশে পানি না পৌঁছানো।
৪. গর্দান মাসেহ করা।
৫. ওজুর কোন একটি অঙ্গ তিনবারের অধিক ধোয়া।
৬. মাথা একাধিক বার মাসেহ্ করা।
৭. বায়ু বের হওয়ার কারণে শৌচ করা। অথচ শৌচ করতে হয় শুধুমাত্র পেশাব বা পায়খানার পর।
৮. ওজুর অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ ধারাবাহিকভাবে না ধোয়া। এতে ওজু পূর্ণতা পায় না।
৯. নখে নেইল-পালিশ বা এ জাতীয় কোন কিছূ লাগানো। যাতে ওজু ও গোসলের পানি যথাস্থানে পৌঁছে না।
১০. অনেকের ধারণা ওজুর শুরুতে হাতের কব্জিদ্বয় ধুয়ে নিলে পরবর্তীতে হাত ধোয়ার সময় কব্জি আর ধোয়া লাগে না। এটি সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। জানা উচিত, ওজুর শুরুতে হাতের কব্জি ধৌত করা সুন্নত। আর মুখমণ্ডল ধোয়ার পর আঙ্গুলের ডগা থেকে কনুই পর্যন্ত সম্পূর্ণ হাত ধৌত করা ওজুর ফরজ। সুন্নত আদায়ের দ্বারা ফরজ আদায় হয় না। সে জন্য মুখ ধোয়ার পর কব্জি সহ পুরো হাত ধুইতে হবে।
১১. পায়ের গোড়ালি ও নিচের পাতায় পানি না পৌঁছানো।
অসুস্থ ব্যক্তির পবিত্রতার পদ্ধতি
১. অপারগ না হলে অসুস্থ ব্যক্তির উপরও পানি দিয়ে পবিত্রতা অর্জন করা ফরজ। অতএব রুগ্নব্যক্তি ছোট অপবিত্রতা ( পায়খানা, পেশাব, বায়ুক্রম ইত্যাদি) থেকে ওজুর মাধ্যমে পবিত্র হবেন। আর বড় অপবিত্রতা (স্ত্রী সহবাস, স্বপ্ন-দোষ ইত্যাদি) থেকে গোসলের মাধ্যমে পবিত্র হবেন।
২. রূগ্নব্যক্তি যদি পানি দিয়ে পবিত্রতা অর্জনে অক্ষম হন তবে পবিত্র মাটি দিয়ে তায়াম্মুম করবেন। বালিযুক্ত দেয়ালেও তায়াম্মুম করতে পারেন।
৩. রোগী যদি একাকি পবিত্রতা অর্জনে অক্ষম হন তবে অন্য কেউ তাকে ওজু বা গোসল অথবা তায়াম্মুম করিয়ে দিবেন।
৪. ওজুর কোন অঙ্গে ক্ষত বা ঘা থাকলে যদি পানি দ্বারা ক্ষতস্থানের কোন ক্ষতির আশংকা না হয় তবে সে স্থানে পানি পৌঁছাতে হবে। আর যদি ক্ষতির আশংকা হয় তবে হাত ভিজিয়ে সে স্থান মাসেহ করে নিবেন। যদি মাসেহর দ্বারাও কোন ক্ষতির আশংকা হয় তবে তিনি তায়াম্মুম করবেন।
৫. যদি ওজুর কোন অঙ্গে ব্যাণ্ডেজ বা প্লাস্টার করা থাকে তাহলে পানি দিয়ে সে অংশ মাসেহ করবেন, তায়াম্মুম করার প্রয়োজন নেই।
৬. সাধ্যমত সকল ধরনের নাজাসা (নাপাকি) থেকে পবিত্র হওয়া রোগীর উপরও ওয়াজিব । যদি অসুস্থ ব্যক্তি পূর্ণাঙ্গ পবিত্রতা অর্জনে অক্ষম হন তবে তিনি যে অবস্থায় আছেন সে অবস্থায় নামাজ আদায় করবেন। এভাবে তার নামাজ সহীহ হবে এবং এ নামাজ পুনঃ আদায় করতে হবে না।
৭. রোগী হলেও অপবিত্রতার অজুহাতে নামাজ আদায়ে বিলম্ব করা নাজায়েয। বরং তিনি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে যথা সম্ভব পবিত্রতা অর্জন করবেন এবং ঐ অবস্থায় নামাজ আদায় করবেন। অপারগতা বশতঃ তার শরীর বা পোশাক-আশাকে কোন নাজাসা (নাপাকি) থাকলেও কোন অসুবিধা নেই।

ফরজ গোসলের দুটো পদ্ধতি[/su
(ক) পূর্ণাঙ্গ পদ্ধতি:
১. মনে মনে জানাবত (স্ত্রী-সঙ্গম, স্বপ্নদোষ,ঋতুস্রাব ও প্রসব ইত্যাদি নিমিত্ত যে নাপাকি) দূর করার নিয়ত করা।
২. শুরুতে লজ্জাস্থানে লেগে থাকা নাপাকি ধুয়ে ফেলা।
৩. তারপর সাবান বা অনুরূপ কিছু দিয়ে হস্তদ্বয় ধৌত করা।
৪. অতঃপর নামাজের অজুর ন্যায় পূর্ণাঙ্গ অজু করা।
৫. এরপর পানি দিয়ে তিনবার মাথা ভিজানো।
৬. তারপর প্রথমে শরীরের ডান অংশে এবং পরে বাম অংশে পানি ঢালা।
৭. অতঃপর সারা দেহে পানি ঢালা।
৮. গোসল শেষে এই দোয়া পড়া
أَشْهَدُ أَنْ لَا إلَهَ إلَّا اللَّه وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُولُهُ
৯. জানাবত (বড় অপবিত্রতা) থেকে পবিত্র হওয়ার গোসলের বিধান নারী- পুরুষ সকলের জন্য সমান। তবে শুধুমাত্র ঋতুস্রাব থেকে পবিত্র হওয়ার গোসলের সময় মহিলারা চুলের বেনী খুলে নিবেন।
(খ) সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি:
১. নিয়ত করা
২. গড়গড়া কুলি করা ও নাকে পানি দেয়া
৩. এরপর সারা দেহে পানি ঢালা।

তায়াম্মুমের পদ্ধতি
তায়াম্মুম: দুই হাত একবার মাটিতে মেরে তা দিয়ে মুখমণ্ডল এবং হাতের কব্জিদ্বয় (একটা দিয়ে অপরটা) মাসেহ করা।
মৌজার উপর মাসেহর বিধান
এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে উম্মতের জন্য বিশেষ অনুগ্রহ। এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লা¬াম থেকে অসংখ্য হাদীস বর্ণিত রয়েছে। সুন্নত হল মৌজার উপরে মাসেহ করা, নীচে নয়। বরং মৌজার নীচে মাসেহ করা রাসূলের সুন্নাহর পরিপন্থী।
মাসেহ করার সময়কাল: মুসাফিরের জন্য তিনদিন তিনরাত। আর গৃহবাসীর জন্য একদিন একরাত। এ সময়ের হিসাব শুরু হবে মৌজা পরার পর অজু ভাঙ্গলে প্রথমবার মাসেহ করার পর থেকে। আর জানাবতের (বড় অপবিত্রতা) কারণে মৌজার উপর মাসেহ করার বিধান বাতিল হয়ে যায়।

বীর্য, মজী ও অদীর হুকুম
নির্গত পদার্থ : বীর্য। কারণ: মিলন বা স্বপ্নদোষ। করণীয়: গোসল। পোশাকের পবিত্রতা: ভিজা হলে কাপড় ধুয়ে ফেলা। আর শুকনা হলে খসে ফেলে দেয়া।

নির্গত পদার্থ : মজী। কারণ: যৌন কামনা-বাসনা মনে জাগ্রত হলে। করণীয়: লিঙ্গ ও অণ্ডকোষদ্বয় ধুয়ে ফেলা এবং অজু করা। পোশাকের পবিত্রতা: যে স্থানে নাপাকি লেগেছে সে স্থানে পানি ছিটিয়ে দেয়া।

নির্গত পদার্থ: অদী। কারণ: পেশাবের পর। করণীয়: লিঙ্গ ধুয়ে ফেলতে হবে এবং অজু করতে হবে।






সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:২৬
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×