somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাদীসে রাসূল (সাঃ) নিয়ে কেন এই সংশয়? (প্রথম পর্ব)

১৬ ই মার্চ, ২০০৮ রাত ১১:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ মুসলিম উম্মাহর বড় দুর্দিন যাচ্ছে। শত্রুর হাতে আমরা বারবার মার খাচ্ছি। শুধুমাত্র রাজনৈতিক ময়দানে যে আমরা মার খাচ্ছি তা নয়; বরং আমাদেরকে আঘাত করা হচ্ছে আমাদের আকীদা-বিশ্বাসে, শিল্প-সংস্কৃতিতে, জ্ঞান-বিজ্ঞানে, আমাদের সম্মান ও শক্তির উৎসসমূহে। মুসলিম উম্মাহর কোন ব্যক্তির বা সমষ্টির জান-মালের ক্ষতি করার চেয়ে ইসলামী আকীদা-বিশ্বাস, ইতিহাস-ঐতিহ্য, শিল্প-সংস্কৃতি, কৃষ্টি-কালচার এবং ইসলামী জ্ঞানের উৎসসমূহে আঘাত হানা এবং মুসলিম মননে এ সম্পর্কে সংশয় ও অনাস্থা জাগিয়ে তোলা অনেক বেশী ক্ষতিকর। কিন্তু আফসোস মুসলিম উম্মাহর একটা বড় অংশ এ সম্পর্কে ওয়াকিফহাল নন; যার ফলে তারা বাতিলের খুঁড়ে রাখা ভ্রান্তির খাদগুলোতে পা দিয়ে বার বার হোঁচট খায়। আর আড়ালে থেকে বাতিলশক্তি অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।

সামহ্যোয়ার ইন ব্লগে হাদীসে রাসূল নিয়ে সংশয়পূর্ণ কিছু লেখা ও মন্তব্য পড়ে একেবারে 'থ' হয়ে গেলাম। কিভাবে একজন মুসলমান হাদীসে রাসূল নিয়ে এধরনের সংশয় প্রকাশ করতে পারেন। অথচ একজন মুসলিমের বিশ্বাস হল-"মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর বার্তাবাহক (রাসূল)"। সুতরাং বার্তাবাহককে বিশ্বাস করা মানে প্রেরিত বার্তাকে বিশ্বাস করা। আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর পক্ষ থেকে যেসব বার্তা নিয়ে এসেছেন তা দু ধরণের- এক ধরণের বার্তা জিব্রাইল (আঃ) পড়ে শুনাতেন; তা হল কুরআন। আর এক ধরনের বার্তা পড়ে শুনানো হত না; বরং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখ দিয়ে বের হত; তা হল হাদীস। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন- "তিনি মন খোদ মত কথা বলেন না। বরং তা প্রত্যাদেশ।" [সূরা নাজম ৫৩:৩,৪] হযরত হাস্সান বিন আতিয়্যাহ বলেন, "জিব্রাইল (আঃ) সুন্নাহ (হাদীসের অপর নাম) নিয়েও নবীজির কাছে অবতরণ করতেন যেভাবে তিনি কুরআন নিয়ে অবতরণ করতেন।" সুতরাং সুন্নাহর প্রতি সকল মুসলিমের ঈমান আনা অপরিহার্য।

ইসলামের শত্রুরা অতি প্রাচীন কাল থেকে ইসলামী জ্ঞানের প্রধান দুটি উৎস কুরআন ও সুন্নাহকে বিকৃত করার জন্য যুগে যুগে অনেক প্রয়াশ চালিয়েছে। কিন্তু সে চেষ্টায় তারা কখনো সফল হয়নি। যখনি প্রয়োজন দেখা দিয়েছে ইসলামী জ্ঞানের বাহক আলেমসমাজ সত্যকে মুসলমানদের সামনে দিবালোকের মত নিটোল সচ্ছভাবে তুলে ধরেছেন এবং বাতিল সব মত ও পথ থেকে উম্মাহকে সতর্ক করেছেন। তাদের সেসব লেখনীকে পুঁজি করে তাদের অনুসরণে হাদীসের মর্যাদা এবং হাদীসশাস্ত্রের গ্রন্থায়ন, সংকলন ও হাদীস সংকলনে আলেমদের সতর্কতার ইতিহাস সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ এ প্রবন্ধে তুলে ধরছি; যেন সাধারণ মুসলিমরা এ ধরণের বিপজ্জনক ও গোমরাহীর পথ থেকে নিজেদেরকে বাঁচাতে পারেন।
হাদীসের পরিচয়:
হাদীস আরবী শব্দ। শব্দটির আভিধানিক অর্থ হল - কথা, বাণী speech, word(s) [দেখুন, আরবী-বাংলা অভিধান, ডঃ ফজলুর রহমান, পৃষ্ঠা ২৮০; আল মাওরিদ, (আরবী-ইংরেজী অভিধান) মুনির বাআলবাকী]
হাদীস বিশারদদের পরিভাষায় "রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা, কাজ, মৌন সম্মতি এবং তাঁর শারীরিক ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যকে হাদীস বলে। "

হাদীস শরীফে 'হাদীস' শব্দটির ব্যবহার যেমন রয়েছে তেমনি সুন্নাহ শব্দটির ব্যবহারও রয়েছে। হাদীস শব্দের ব্যবহারের উদাহরণ হল: (مَنْ حَدَّثَ عَنِّي بِـ حَدِيْثٍ يُرَى أَنَّهُ كَذِبٌ فَهُوَ أَحَدُ الْكَذَّابِيْن) অর্থ: "যে ব্যক্তি কোন একটা বাণীকে আমার বাণী বলে প্রচার করে; অথচ প্রচারকালে তার সন্দেহ হয়-এটা রাসূলের নামে মিথ্যা কথা, তারপরও প্রচার করে সে মিথ্যাবাদীদের একজন।" [মুসলিম শরীফের ভূমিকা (১/৮)] আর সুন্নাহ শব্দের ব্যবহারের উদাহরণ হল: (عليكم بـ سنتي وسنة الخلفاء الراشدين المهديين...) অর্থ: "তোমাদের উপর আমার সুন্নাহর অনুসরণ করা এবং খুলাফায়ে রাশেদার সুন্নাহ অনুসরণ করা অপরিহার্য।" [মুসনাদে আহমদ ৪/১২৬, সুনানু আবু দাউদ ৫/১৩, তিরমিজী ৫/৪৪] তবে সুন্নাহ শব্দটির অর্থের পরিসর আরো ব্যাপক। সুন্নাহ দ্বারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা, কাজ, অনুমোদনকে যেমন বুঝানো হয়, তেমনি তাঁর সাহাবাদের কথা কাজ, অনুমোদনকেও বুঝায়। যেমন পূর্বের হাদীসটিতে খলিফাদের সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরতে বলা হয়েছে।

হাদীসের মর্যাদা:
হাদীসের যে সংজ্ঞা উল্লেখ করা হয়েছে সে হিসেবে হাদীস অহীর একটি প্রকার। অহীর অন্য প্রকার হল কুরআন। পার্থক্য হল এই কুরআন পঠিত অহী, আর হাদীস অপঠিত অহী। অর্থ্যাৎ কুরআনের শব্দগুলো আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে জিব্রাইল (আঃ) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে পড়ে শুনিয়েছেন। আর হাদীসের শব্দগুলো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখ থেকে নিঃসৃত। আল্লাহ তাআলা বলেন, "তিনি মনগড়া কথা বলেন না। বরং তা প্রত্যাদেশ।" [সূরা নাজম ৫৩:৩,৪]
তবে হাদীসের উপর কুরআনের মর্যাদা হল কয়েকটি দিক থেকে। যেমন, কুরআনের অনুরূপ বাক্য যোজনা দিয়ে তিন আয়াতের ছোট্ট একটি সূরা বানিয়ে আনার চিরন্তর চ্যালেঞ্জ আল্লাহ পাক বিশ্ববাসীর প্রতি ছুড়ে দিয়েছেন শুধুমাত্র কুরআনের ক্ষেত্রে। কিন্তু হাদীসের ক্ষেত্রে এই চ্যালেঞ্জ দেয়া হয়নি। নামাজে কুরআনের কিছু অংশ না পড়লে নামাজ শুদ্ধ হবে না; কিন্তু হাদীস এমন নয়। কুরআন তেলাওয়াতে প্রতি হরফে দশ নেকীর প্রতিশ্রুতি এসেছে; কিন্তু হাদীসের বেলায় এমন কোন প্রতিশ্রুতি নেই।

কিন্তু ইসলামী আইনের উৎস গ্রন্থ হিসেবে কুরআন ও হাদীস একই স্তরে। অর্থ্যাৎ কুরআন দিয়ে যেমন হালাল-হারাম সাব্যস্ত হয় ঠিক তেমনি এককভাবে হাদীস দ্বারাও হালাল-হারাম সাব্যস্ত হয়। এক্ষেত্রে হাদীসের দলীলকে কম জোর বিবেচনা করা যাবে না। কুরআন ও হাদীসে এ সংক্রান্ত অসংখ্য প্রমাণাদি বিদ্যমান।

কুরআনের দলীলসমূহ:
1. আল্লাহ্ তাআলা বলেন, "অতএব আপনার প্রতিপালকের শপথ! তারা কখনও ঈমানদার হতে পারবে না, যে পর্যন্ত না তারা পরস্পরের মাঝে বিবাদমান বিষয়ে আপনাকে বিচারক মানে এবং দ্বিধাহীন চিত্তে আপনার ফয়সালার প্রতি নতি স্বীকার করে।" [সূরা নিসা ৪:৬৫] রাসূল (সাঃ) এর বিচার, ফয়সালা, অভিমত, অনুমোদন এ সবকিছুকে অন্তর্ভূক্ত করেছে হাদীস।
2. অন্য আয়াতে বলেন, " (এই কল্যাণ তাদেরই প্রাপ্য) যারা এই নিরক্ষর রাসূল নবীর অনুসরণ করে চলে, যার কথা তারা তাদের নিকট রক্ষিত তাওরাত ও ইঞ্জিল কিতাবে লিখিত পায় (সেই নিরক্ষর নবী) তাদেরকে সৎকাজের আদেশ দেন ও অন্যায় কাজ করতে নিষধ করেন, আর তাদের জন্য পবিত্র বস্তুসমূহ হালাল ঘোষণা করে এবং অপবিত্র বস্তুকে হারাম ঘোষণা করে, আর তাদের উপর চাপানো বোঝা ও বন্ধন হতে তাদেরকে মুক্ত করে…" [সূরা আরাফ, ৭:১৫৭] আয়াতে কারীমা থেকে জানা গেল রাসূল (সাঃ) কে আল্লাহ পাক হালাল ও হারাম ঘোষণা করার অধিকার দিয়েছেন।
হাদীসের দলীলসমূহ:
1. "হযরত মাদি কারিব রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- জেনে রাখো, আমাকে কুরআন দেয়া হয়েছে এবং তার (কুরআনের) সম পর্যায়ের আরো কিছু দেয়া হয়েছে। (আমার) আশাংকা হচ্ছে, এমন লোক পাওয়া যাবে যে ভরা পেটে তার গদিতে বসে বলবে- তোমরা এ কুরআনকে আকঁড়ে ধর। কুরআনে যা হালাল পাবে তা হালাল হিসেবে গণ্য করবে, আর যা হারাম পাবে তা হারাম হিসেবে গণ্য করবে। (এ কথা ঠিক নয়) জেনে রাখো, আল্লাহর রাসূল যা কিছু হারাম ঘোষণা করেছেন তা আল্লাহ যা কিছু হারাম ঘোষণা করেছেন তার সমপর্যায়ের।" [সুনানু আবু দাউদ, ৫/১০, হাদীস নং ৪৬০৪, তিরমিজী ৫/৩৮, হাদীস নং ২৬৬৪।]
2. হযরত আবু রাফে (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আযাদকৃত দাস) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- "তোমাদের কারো অবস্থা যেন এমন না হয় যে, সে তার গদিতে হেলান দিয়ে বসে থাকা অবস্থায় তার কাছে আমার আদেশ বা নিষেধের কোন একটি বিষয় পৌঁছবে তখন সে বলবে, আমি এত কিছু জানি না, আমরা আল্লাহর কিতাবে যা পাই তার অনুসরণ করি।" [সুনানু আবু দাউদ, ৫/১২, হাদীস নং ৪৬০৫; জামে তিরমিজী, ৫/৩৭, হাদীস নং ১৬৬৩ এবং তিনি হাদীসটিকে হাসান বলেছেন।
এ সংক্রান্ত আলেমদের বাণী:
হযরত হাসান বসরী থেকে বর্ণিত আছে যে, ইমরান বিন হুছাইন তার ছাত্রদের নিয়ে বসা ছিলেন। এক লোক বলে উঠল: আমাদের কাছে কুরআন ছাড়া কোন হাদীস বর্ণনা করবেন না। "তখন তিনি ঐ ব্যক্তিকে বললেন, কাছে আস। সে কাছে আসল। তখন তিনি বললেন, যদি তুমি এবং তোমার মতাবলম্বীদেরকে দায়িত্ব দেয়া কুরআনের কোথায় লেখা আছে খুঁজে বের কর যোহরের নামাজ চার রাকাত, আসরের নামাজ চার রাকাত, মাগরিবের নামাজ তিন রাকাত- প্রথম দুই রাকাতে উচ্চস্বরে কেরাত পড়তে হয়-। পারবা খুঁজে বের করতে?! যদি তোমাদেরকে দায়িত্ব দেয়া কুরআনের কোথায় লেখা আছে (বায়তুল্লাহ) তাওয়াফ করতে হবে সাত চক্কর, সাফা-মারওয়ায় সায়ী করতে হবে সাত চক্কর, তোমরা খুঁজে বের করতে পারবে?! এরপর বললেন, আপনারা আমাদের কাছ থেকে হাদীস গ্রহন করুন; যদি না করেন তবে আল্লাহর কসম, আপনারা পথভ্রষ্ট হবেন।"
কিয়ামত পর্যন্ত হাদীসে রাসূল অবিকৃত থাকবে:
আল্লাহ তাআলা এ উম্মতকে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মত হিসেবে মনোনীত করেছেন। আর মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে শেষ নবী হিসেবে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। কিয়ামত পর্যন্ত আর কোন নবী বা রাসূল আগমন করবেন না। বরং কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ জন্ম গ্রহন করবে সকলে মক্কার কুরাইশ বংশে জন্ম নেয়া মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল মুত্তালিবের উম্মত হিসেবে বিবেচিত হবে। আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন "মুহাম্মদ কোন ছেলের পিতা নন; বরং তিনি আল্লাহর রাসূল (বার্তাবাহক) এবং শেষ নবী।"[সূরা আহযাব ৩৩:৪০] তাঁর আনীত ধর্ম কিয়ামত পর্যন্ত আগত সকল মানুষের জন্য, সকল যুগের জন্য উপযুক্ত এবং আল্লাহ পাকের মনোনীত ধর্ম হিসেবে বলবৎ থাকবে। "আর যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম গ্রহন করবে, তা কক্ষনো গৃহীত হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্তদের কাতারে থাকবে।"[সূরা আলে ইমরান, ৩:৮৫] এই ধর্মকে অবিকৃতভাবে কিয়ামত পর্যন্ত টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব আল্লাহ পাক নিজেই নিয়েছেন। সেজন্য তিনি ইসলামী আইনের রেফারেন্সসমূহকে হেফাযত করার দিয়ে ঘোষণা দিয়ে বলেন, "আমিই কুরআন নাযিল করেছি এবং আমি এর (কুরআনের) হেফাযতকারী।" [সূরা হিজর ১৫:৯] অতএব আয়াতে কারীমা থেকে একথা সুস্পষ্টভাবে জানা গেল আল্লাহ পাক কুরআনে কারীমকে যে কোন ধরনের বিকৃতি থেকে হেফাযত করবেন। চাই কুরআনের শব্দের বিকৃতি হোক অথবা অর্থ ও ব্যাখ্যার মধ্যে বিকৃতি হোক। আর কুরআনের অর্থ ও ব্যাখ্যাকে বিকৃতি থেকে হেফাজত করা মানে হাদীসে রাসূলকে বিকৃতি থেকে রক্ষা করা। যেহেতু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার উপর অবতীর্ণ কুরআনের ব্যাখ্যাদাতা এবং তাঁর 'হাদীস' হল কুরআনের ব্যাখ্যা। আল্লাহ্ তাআলা বলেন, "এবং তোমার প্রতি কুরআন অবতীর্ণ করেছি, মানুষকে স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দেয়ার জন্য যা তাদের উদ্দেশ্য নাযিল করা হয়েছে। যাতে তারা চিন্তা করে।" [সূরা নাহল ১৬:৪৪]

হাদীসে রাসূল যে কুরআনের ব্যাখ্যা তার উদাহরণ হাদীসের গ্রন্থগুলোতে ভরপুর। যেমন- হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন وَلَمْ يَلْبِسُوا إِيمَانَهُمْ بِظُلْمٍ } অর্থ: যাদের ঈমানের সাথে জুলুম মিশ্রিত হয়নি।}আয়াতটি নাযিল হল তখন সাহাবায়ে কেরাম ভেঙ্গে পড়লেন। তারা বললেন, আমাদের মধ্যে এমন কে আছে যে নিজের আত্মার উপর জুলুম করে না!? তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন তোমরা যে অর্থ বুঝেছ তা নয়। তোমরা কি নেককার বান্দার বাণী শুননি – { يَا بُنَيَّ لا تُشْرِكْ بِاللَّهِ إِنَّ الشِّرْكَ لَظُلْمٌ عَظِيمٌ অর্থ: হে বৎস, তুমি (কোন কিছুকে) আল্লাহর সমকক্ষ বানিও না। নিশ্চয় (কোন কিছুকে) আল্লাহর সমকক্ষ বানানো জঘন্য জুলুম। অর্থ্যাৎ আয়াতে কারীমাতে জুলুম দ্বারা উদ্দেশ্য হল (আল্লাহর সাথে) সমকক্ষ দাঁড় করানো" [মুসনাদে আহমদ ১/৩৭৮]

কুরআনে কারীম একদিকে যেমন লৌহ মাহফুজে সংরক্ষিত আছে তেমনি এ পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ হাফেজে কুরআনের বুকে সংরক্ষিত আছে। আবার গ্রন্থের বুকেও সংরক্ষিত আছে। তদ্রুপ হাদীসে রাসূল গ্রন্থায়নের পূর্ব পর্যন্ত হাজার হাজার আলেমের বুকে সংরক্ষিত ছিল। বর্তমানেও আলেমদের বুকে যেমন সংরক্ষিত আছে তেমনি হাজার হাজার গ্রন্থের বুকে হাদীসে রাসূল সম্পূর্ণ অবিকৃত অবস্থায় সংরক্ষিত আছে।

হাদীস সংকলন ও গ্রন্থায়ন
হাদীসের উৎপত্তি:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর যেদিন থেকে কুরআন নাযিল শুরু হয় সেদিন থেকে হাদীসে রাসূলেরও জন্ম হয়। 'হেরা গুহাতে' যখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সূরা আলাকের প্রথম পাঁচ আয়াত নাযিল হয় এবং এ সময় তিনি জিব্রাইলকে দেখে প্রচণ্ড ভয় পান। তখন দ্রুত ঘরে ফিরে খাদিজা রাদিআল্লাহু আনহাকে বলেন, "যাম্মিলুনি, যাম্মিলুনি' অর্থ: আমাকে কম্বল দিয়ে জড়িয়ে ধর, আমাকে কম্বল দিয়ে জড়িয়ে ধর," এই ঘটনা সহীহ বোখারীতে উল্লেখ করা হয়েছে এবং এটি সহীহ বোখারীর তৃতীয় হাদীস। এভাবে রাসূল (সাঃ) এর নবুয়তের সুদীর্ঘ ২৩ বছর জিন্দেগীতে নানা প্রেক্ষাপটে, নানান স্থানে, উদ্ভূত পরিস্থিতির আলোকে নানা কথা বলেছেন, নানান কাজ করেছেন, অনেক বিষয়ের অনুমোদন দিয়েছেন, অনেক বিষয়ের অনুমোদন দেননি। আর এভাবে হাদীসের ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়েছে।

রাসূলের (সাঃ) যুগে হাদীস:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবারা তাঁকে ছায়ার মতো অনুসরণ করতেন। সফরে-সংসারে সর্বদা তাঁর সাথে থাকতেন। তীব্র আগ্রহ নিয়ে তাঁর বাণী শ্রবণ করতেন এবং মুখস্ত রাখতেন। যেহেতু তারা রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মুখে শুনেছেন - "আল্লাহ সে ব্যক্তিকে উজ্জল করুন যে আমার বক্তব্য শুনল এবং মনে রাখল এরপর ঠিক যেভাবে শুনেছে ঐভাবে অন্যের কাছে পৌঁছিয়ে দিল। হতে পারে প্রথম শ্রোতার চেয়ে পরবর্তী শ্রোতা আরো বেশী ধী শক্তির অধিকারী।" [আবু দাউদ, ইলম অধ্যায়, ইলমের ফজিলত শীর্ষক পরিচ্ছেদ (৪/৬৮) হাদীস নং ৩৬৬০।] শুধুমাত্র মুখস্ত করেই ক্ষান্ত হতেন না, বরং মুখস্তকৃত হাদীস একে অপরকে শুনানোর মাধ্যমে মুখস্তকে মজবুত করতেন। "রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবারা যখনই একত্রিত হতেন তখনই তারা ইলম নিয়ে আলোচনা করতেন। এবং কোন একটি সূরা পাঠ করতেন।" স্বয়ং রাসূল (সাঃ) যৌথভাবে ইলম নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করার প্রতি সাহাবাদের উৎসাহ দিতেন। তিনি বলেছেন, "রাত্রির একটা সময় ইলম নিয়ে পরস্পর আলোচনা করা সারা রাত ইবাদতে কাটানোর চেয়ে উত্তম।" তাইতো সাহাবাদের একদল সদা-সর্বদা মসজিদে নববীতে পড়ে থাকতেন। তাদের বাড়ী-ঘর ছিল না, ব্যবসা-বাণিজ্য ছিল না। তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী শুনতেন, আর মুখস্ত করতেন। এদেরকে বলা হত আহলুস্ সুফ্ফা। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী আগ্রহী ছিলেন আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহু। তিনি বলেন, "বাজারের ব্যবসা-বাণিজ্যে আমি ব্যস্ত ছিলাম না। রাসূলের কাছে পড়ে থাকতাম। কোন বাণী শিখতাম অথবা কোন খাবার আসলে খেতাম।" উপরন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার জন্য দোয়া করেছিলেন। তিনি বলেন "আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) আমি আপনার মুখে অনেক হাদীস শুনি, কিন্তু ভুলে যাই। তখন রাসূল (সাঃ) বললেন, তোমার চাদর প্রসারিত করো। তিনি বলেন, আমি চাদর প্রসারিত করলাম। তখন তিনি (রাসূল সাঃ) দু হাত ভরে আমাকে কি যেন দিলেন। বললেন, (বুকের সাথে) মিশাও। আমি মিশালাম। এর পর থেকে আমি কোন কিছু ভুলি নাই।" এ কারণে আবু হুরায়রার বর্ণিত হাদীস সংখ্যা সবচেয়ে বেশী। আর যেসব সাহাবী ব্যতি ব্যস্ততার কারণে সব সময় রাসূলের সাথে থাকতে পারতেন না, তারাও চেষ্টা করতেন উপস্থিত হওয়া ব্যক্তিদের কাছ থেকে রাসূলের নতুন বাণীগুলো জেনে নিতে। যেমনটি করতেন উমর রাদিআল্লাহু আনহু।
রাসূলের জীবদ্দশায় মূলত: মুখস্ত করনের মাধ্যমেই হাদীস সংকলিত হত। সেসময় দায়িত্বপ্রাপ্ত কয়েকজন লিপিকর শুধুমাত্র কুরআন লিপিবদ্ধ করতেন। লোকেরা কুরআনের সাথে যেন হাদীসকে মিশিয়ে না ফেলে সেজন্য রাসূল (সাঃ) কুরআন ছাড়া আর অন্য কিছু লিখতে নিষেধ করেছেন। কিন্তু মক্কা বিজয়ের সময় রাসূল (সাঃ) বললেন, "আবু শাহকে লিখে দাও।" এবং আব্দুল্লাহ বিন আমর বলেন আমি রাসূল (সাঃ) থেকে যা কিছু শুনতাম সবকিছু লিখে ফেলতাম। তখন একলোক বলল, রাসূল (সাঃ) (কখনো) রাগ হয়ে কথা বলেন; সুতরাং সবকিছু লিখো না। তখন রাসূল (সাঃ) (আব্দুল্লাহকে) বললেন, তুমি লেখ। আমার মুখ দিয়ে সত্য ছাড়া মিথ্যা কিছু বের হয় না।" এতে বুঝা গেল রাসূল (সাঃ) প্রথমদিকে হাদীস লিখতে নিষেধ করলেও পরবর্তীতে অনুমতি দেন।

সাহাবীদের যুগে হাদীস:
রাসূল (সাঃ) এর মৃত্যুর পর তাঁর সাহাবারা একে অপরের কাছ থেকে রাসূলের বাণী শুনতেন এবং মুখস্ত করতেন । এমনকি দূর-দূরান্ত থেকে পর্যন্ত একটা হাদীস শুনার জন্য এক সাহাবী অন্য সাহাবীর কাছে ছুটে আসতেন। রাসূলের কম বয়সী সাহাবী আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস বলেন, "…আমি রাসূলের (সাঃ) সাহাবাদেরকে হাদীস জিজ্ঞাসা করতাম। যখন শুনতাম কারো কাছে একটা হাদীস জানা আছে আমি তার কাছে আসতাম। এসে হয়তো দেখতাম তিনি ঘুমিয়ে আছেন। তখন আমি নিজের চাদরটাকে বালিশ বানিয়ে ওখানে শুয়ে থাকতাম। বাতাসে ধুলা-বালি উড়ে আমার শরীর ভরে যেত। অতপর যখন তিনি বের হতেন, আমাকে দেখে বলতেন- হে আল্লাহর রাসূলের চাচাতো ভাই, আপনি কেন কষ্টকরে এসেছেন। কোন প্রয়োজন থাকলে লোক পাঠাতেন আমি আপনার কাছে যেতাম। তখন আমি বলতাম- না, আমারই আসা উচিত। তারপর আমি তাকে হাদীসটি জিজ্ঞেস করতাম…।" এভাবে অনেক ত্যাগ ও কুরবানীর বিনিময়ে সাহাবায়ে কেরাম হাদীসে রাসূল উম্মার কাছে সঠিকভাবে তুলে ধরেছেন।

আল্লাহর রাসূলের অসংখ্য সাহাবী তার কাছ থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। প্রত্যেকে ঠিক যা কিছু শুনেতেন এবং তার যতটুকু মনে রাখতে পারতেন ততটুকুই বর্ণনা করতেন। সাহাবাদের মধ্যে বেশী হাদীস বর্ণনাকারী হচ্ছেন সাতজন। তাদের বর্ণিত হাদীস সংখ্যা - আবু হুরায়রা (রাঃ) (৫৩৭৪টি), আব্দুল্লাহ বিন উমর (রাঃ) (২৬৩০টি), আনাস বিন মালেক (রাঃ) (২২৮৬টি), আয়েশা (রাঃ) (২২১০টি), আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রাঃ) (১৬৬০টি), আব্দুল্লাহ বিন জাবের (রাঃ) (১৫৪০টি) এবং আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) (১১৭০টি)। এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী হাদীস বর্ণনা করেছেন আবু হুরায়রা (রাঃ)। এছাড়া খোলাফায়ে রাশেদীন, আশারায়ে মোবাশশারা সহ রাসূল (সাঃ) এর মৃত্যুর সময় বেঁচে থাকা ১লক্ষ ১৪ হাজার সাহাবী তাঁর বাণী শুনেছেন এবং তাঁর কাছে থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। হাদীসের গ্রন্থগুলো এর উত্তম সাক্ষী।
পূর্বে আলোচনায় গিয়েছে রাসূল (সাঃ) এর কিছু কিছু সাহাবী হাদীস লিখে রাখতেন। কিন্তু তাদের সে লিখে রাখা বর্তমান যুগের গ্রন্থাকারে ছিল না। বরং বিক্ষিপ্তভাবে নোট আকারে লিখে রাখতেন যেন মুখস্ত করা সহজ হয়। যখন তিনি নিশ্চিত হতেন যে তিনি মুখস্ত করতে পেরেছেন তখন তিনি তার সে নোট পুড়িয়ে দিতেন। যেন লিপিকার উপর নির্ভর করতে গিয়ে তার মুখস্তটা দুর্বল হয়ে না যায়। এছাড়াও সাহাবারা একে অপরের কাছে হাদীস লিখে চিঠি পাঠাতেন। এ ধরনের যে সকল লিপিকার বর্ণনা পাওয়া যায় তার কয়েকটি হল -
হযরত আবু বকরের (রাঃ) লিপিকা
হযরত আলী (রাঃ) এর লিপিকা
হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমরের (রাঃ) লিপিকা
হযরত যাবের বিন আব্দুল্লাহ্ (রাঃ) লিপিকা

সাহাবীদের যুগে হাদীস ব্যাপকভাবে হাদীস লিপিবদ্ধ না হওয়ার কারণ:
১. খতীব আলবাগদাদী বলেন, " ইসলামের সূচনা লগ্নে হাদীস লিপিবদ্ধ করা শ্রেয় মনে করা হয়নি এ কারণে যে- হাদীস যেন কুরআনের সাথে মিশে না যায়। অথবা মানুষ যেন কুরআন বাদ দিয়ে শুধু হাদীস নিয়ে ব্যস্ত হয়ে না পড়ে।"
২.ইসলামের প্রথম যুগে "ফকীহ" (হালাল-হারামের জ্ঞানে পারদর্শী আলেম) ছিলেন কম। এমনকি কোনটা কুরআন, কোনটা কুরআন নয় এই পার্থক্য করার যোগ্য ব্যক্তিও কম ছিলেন। যেহেতু যারা মরুবাসী আরব ছিলেন তাদের অধিকাংশ ব্যক্তি তখনো ইসলামী বিধি-বিধানে প্রজ্ঞা অর্জন করেনি, আলেম সাহাবাদের ইলমী মজলিশে বসে তখনো তারা ইলম শিখেনি। সেজন্য এ আশংকা করা হচ্ছিল যে, তারা লিপিকার মধ্যে যা পাবে সবগুলোকে কুরআনের সাথে মিশিয়ে ফেলবে এবং ওগুলোকেও আল্লাহর কালাম মনে করবে।
তাবেয়ীদের যুগে হাদীস:
তাবেয়ী হলেন তারা- 'যারা আল্লাহর রাসূলের সাহাবীদেরকে দেখেছেন'। তাবেয়ীরা সাহাবীদের কাছ থেকে হাদীস গ্রহন করতেন। তাবেয়ীদের যুগে এসে হাদীস সংকলনের কাজ আরো এক ধাপ এগিয়ে যায়। সাহাবাদের যুগে হাদীস মুখস্তকারীদের সংখ্যাই ছিল বেশী; কম সংখ্যক সাহাবীই হাদীস লিখে রাখতেন। কিন্তু তাবেয়ীদের যুগে এসে এ সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। প্রতিটি মজলিসে হাদীস মুখস্ত করার সাথে সাথে হাদীস লিখনের কাজও গুরুত্ব পায়। এ ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম তাদের শিষ্যদেরকে উদ্বুদ্ধ করতেন। ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- "তোমরা লিখনের মাধ্যমে ইলমকে বেঁধে রাখ।" অনুরূপ বাণী উমর (রাঃ) ও আনাস (রাঃ) থেকেও বর্ণিত আছে।

এছাড়া বিশিষ্ট তাবেয়ী ইসলামের পঞ্চম খলিফা উমর বিন আব্দুল আযিয (মৃ ৯৯হিঃ) তাঁর খিলাফতকালে এ ব্যাপারে খুবই গুরুত্ব দেন। তিনি আবু বকর ইবনে হাযম, ইবনে শিহাব যুহরীসহ বড় বড় মুহাদ্দিসদের কাছে চিঠি লেখেন- তারা যেন হাদীস সংকলন করেন। আবু বকর ইবনে হাযমকে লেখেন- "খুঁজে খুঁজে রাসূলের বাণী লিপিবদ্ধ করুন। আমার আশংকা হচ্ছে ইলম বিরান হয়ে যাবে, আলেমরা মারা যাচ্ছেন। ব্যাপক যাচাই-বাছাই করুন; শুধুমাত্র রাসূলের হাদীস হলে গ্রহন করবেন।…" ইবনে শিহাব যুহরী বলেন, "উমর বিন আব্দুল আযিয আমাকে সুন্নাহ লিপিবদ্ধ করার আদেশ দেন। তার আদেশে আমি একটি একটি করে লিপিকা তৈরী করেছি। এরপর তিনি তার শাসনাধীন প্রতিটি অঞ্চলে এর একটি করে কপি পাঠিয়ে দেন।"

তাবেয়ীদের যুগে যাদের লিপিকার কথা জানা গেছে তারা হলেন-
১. ইবনে আব্বাসের ছাত্র সাঈদ ইবনে যুবাইরের লিপিকা
২.আবু হুরায়রার ছাত্র বাশির ইবনে নাহিকের লিপিকা
৩.ইবনে আব্বাসের ছাত্র মুজাহিদ বিন জাবরের লিপিকা
৪.জাবের বিন আব্দুল্লাহর ছাত্র মুহাম্মদ বিন মুসলিম বিন তাদরুসের লিপিকা
৫.হিশাম বিন উরউয়ার লিপিকা
৬.আউয়ুব বিন আবি তামিমা আস্ সিখতিয়ানীর লিপিকা
এ ছাড়াও রয়েছেন আরো অনেকে।

হিজরী দ্বিতীয় শতকে হাদীস সংকলন:
এ যুগ ছিল বেঁচে থাকা অবশিষ্ট তাবেয়ী ও তাবে-তাবেয়ীনদের নিয়ে। এ যুগে হাদীসের সংকলন ও গ্রন্থায়নের কাজ আরো এক ধাপ এগিয়ে যায়। এর আগ পর্যন্ত সময়ে হাদীস বিক্ষিপ্তাকারে বিভিন্ন লিপিকাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। বরং কোন কোনটি ছিল ব্যক্তিগত নোট আকারে। কিন্তু এ যুগে এসে হাদীসের সংকলন সুবিন্যস্ত গ্রন্থের রূপ ধারন করে। সুবিশেষ অধ্যায় ও পরিচ্ছেদের অধীনে হাদীসগুলোকে বিন্যস্ত করা হয়।
গ্রন্থাকারে এ যুগে যারা হাদীসের সংকলন করেছেন তাদের সংখ্যা অনেক। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেন-
মক্কায়- ইবনে জুরাইজের (মৃত্যু ১৫০হিঃ)
মদীনায়- মুহাম্মদ ইবনে ইসহাক (মৃ ১৫১হিঃ)
ইয়ামেনে- মা'মার বিন রাশেদ (মৃ ১৫৩ হিঃ)
বসরাতে- সাঈদ বিন আবি আরুবা (মৃ ১৫৬হিঃ)
শামে- আল আওযায়ী (মৃ ১৫৬হিঃ)
বসরাতে- শু'বাহ বিন হাজ্জাজ (মৃ ১৬০হিঃ)
কুফাতে- সুফিয়ান ছাওরী (মৃ ১৬১ হিঃ)
মদীনাতে- ইমাম মালেক (মৃ ১৭৯ হিঃ) তার গ্রন্থের নাম "মুয়াত্তা"
মিশরে – ইমাম শাফেয়ী (মৃ ২০৪ হিঃ) তার গ্রন্থের নাম "মুসনাদ"
তবে এ সময়ে সংকলিত গ্রন্থগুলোতে রাসূলের বাণীর সাথে সাহাবায়ে কেরামের বাণীগুলোও মিশ্রিত ছিল।

হিজরী তৃতীয় শতকে হাদীস সংকলন:
এ শতকে এসে হাদীস সংকলনে নতুন মাত্রা যোগ হয়। এ যাবৎ কালে যেসব গ্রন্থ রচিত হয় সেগুলোতে রাসূলের বাণীগুলো অন্যদের বাণীর সাথে মিশ্রিত ছিল। এ যুগে এসে রাসূলের বাণীগুলোকে সম্পূর্ণ আলাদা করা হয়। তেমনিভাবে বর্ণনাকারীদের মুখস্ত শক্তি ও অন্যান্য গুণাগুণ বিশ্লেষন করে হাদীসগুলোকে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় স্তরে বিভক্ত করা হয়। প্রথম স্তরের হাদীসকে সহীহ, দ্বিতীয় স্তরের হাদীসকে হাসান এবং তৃতীয় স্তরের হাদীসকে যয়ীফ নামে আখ্যায়িত করা হয়। এবং বিভাজনকে সামনে রেখে গ্রন্থ সংকলিত হয়। শুধুমাত্র সহীহ নিয়ে একাধিক স্বতন্ত্র গ্রন্থ সংকলিত হয়। আর এ গ্রন্থগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বিশুদ্ধ ও সবচেয়ে গ্রহনযোগ্য গ্রন্থ হল ইমাম বোখারীর (মৃ ২৫৬হিঃ) সংকলিত "সহীহ বোখারী"। এতে হাদীস সংখ্যা পুনঃ উল্লেখের হিসাব বাদ দিয়ে ২৭৬১টি। গ্রহনযোগ্যতার বিবেচনায় এর পরের স্থানে রয়েছে ইমাম মুসলিমের (মৃ ২৬১ হিঃ) সংকলিত "সহীহ মুসলিম"। এতে হাদীস সংখ্যা পুনঃ উল্লেখের হিসাব বাদ দিয়ে প্রায় ৪০০০টি। এ দুটো ছাড়াও এ শতাব্দীতে আরো চারটি গ্রন্থ রচিত হয়। যেগুলো সুনান নামে খ্যাত। সুনানের সংকলকদের মূল উদ্দেশ্য ছিল বিধি-বিধান সংক্রান্ত হাদীসগুলোকে একত্র করা। এ গ্রন্থগুলোর অধিকাংশ হাদীস "সহীহ"। কিন্তু এগুলোতে কিছু হাসান ও যয়ীফ হাদীসও সন্নিবেশিত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- ইমাম আবু দাউদের (মৃ ২৭৫হিঃ) "সুনানু আবু দাউদ"; ইমাম তিরমিজীর (মৃ ২৭৯হিঃ) "সুনানু তিরমিজী"; ইমাম নাসায়ীর (মৃ ৩০৩হিঃ) "সুনানু নাসায়ী"; ইমাম ইবনে মাজাহর (মৃ ২৭৩হিঃ) "সুনানু ইবনে মাজাহ"। উল্লেখিত এ ছ'টি গ্রন্থকে একত্রে সিহাহ সিত্তাহ বলা হয়। অর্থ্যাৎ ছ'টি বিশুদ্ধ গ্রন্থ। কেউ কেউ সুনানু ইবনে মাজার পরিবর্তে দ্বিতীয় শতাব্দীতে সংকলিত হওয়া ইমাম মালেকের "মুয়াত্তা"কে সিহাহ সিত্তার অন্র্তভূক্ত করে থাকেন। যেহেতু মুয়াত্তার মধ্যেও অধিকাংশ হাদীস সহীহ। তদুপরি উল্লেখিত এ ছয়টি গ্রন্থই সহীহ হিসেবে উম্মতে মুহাম্মদীর কাছে খ্যাতি পেয়েছে।
সহীহ বোখারীর মর্যাদা অন্যকোন হাদীসের সংকলনের উপর এ জন্যই বেশী যে তিনি অত্যন্ত যাচাই-বাছাই করে যখন কোন হাদীসের সত্যতার ব্যাপারে পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার পর অন্তরে প্রশান্তি অনুভব করতেন শুধু তখনি কোন একটা হাদীসকে তার গ্রন্থে সংকলন করতেন। তিনি বলেন, "আমার ১লক্ষ সহীহ হাদীস মুখস্ত আছে। আর সহীহ নয় এমন ২ লক্ষ হাদীস মুখস্ত আছে। এই বিশাল ভাণ্ডার থেকে বাছাই করা কিছু হাদীসকে তিনি তাঁর গ্রন্থে স্থান দেন। বাছাই করতে গিয়ে হাদীস "সহীহ" হওয়ার জন্য যে পাঁচটি শর্ত আলেমরা বিবেচনা করে থাকেন তার সাথে তিনি অতিরিক্ত আরো দুটো শর্ত যোগ করেন। সাধারণত আলেমরা হাদীস সহীহ হওয়ার জন্য যে শর্তগুলো করে থাকেন তা হলো- ১.বর্ণনাকারী থেকে রাসূল (সাঃ) পর্যন্ত সনদের (বর্ণনাকারীদের পরম্পরা) মাঝখানে ছেদ না থাকা, ২.বর্ণনাকারী সত্যবাদী ও দ্বীনদার হওয়া, ৩.বর্ণনাকারীর মুখস্ত শক্তিতে কোনরূপ ত্রুটি না থাকা, ৪.হাদীসের বর্ণনাসূত্রে অথবা মূল কথাতে কোন মুহাদ্দিসের নির্ভরযোগ্য ছাত্রদের বর্ণিত রেওয়াতের সাথে বৈরিতা না থাকা, ৫.হাদীসের বর্ণনাসূত্র অথবা মূল কথার মধ্যে সূক্ষ্ম কোন ত্রুটি না থাকা। ইমাম বোখারী এই পাঁচটির সাথে অতিরিক্ত যে দুটি শর্ত জুড়ে দেন তা হলো- বর্ণনাকারীর নির্ভরযোগ্যতার ব্যাপারে "রাবী বিশ্লেষক" সকলে একমত হওয়া এবং রাবী তার শিক্ষকের শিষ্যত্বে দীর্ঘ সময় কাটানো। এ শর্তগুলোতে উত্তীর্ণ হওয়ার পর তিনি কোন একটি হাদীসকে তার গ্রন্থে স্থান দিতেন।

উপরে উল্লেখিত গ্রন্থাবলী ছাড়াও এ যুগে "মুসনাদ" শ্রেণীর গ্রন্থ রচিত হয়। যেমন- ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের (মৃ ২৪১হিঃ) "মুসনাদে আহমদ"। বলা যায় ইমাম আহমদের "মুসনাদ" হাদীসের সবচেয়ে বড় সংকলন। এতে সন্নিবেশিত হাদীসের সংখ্যা ৩০,০০০টি। এ গ্রন্থের হাদীসগুলোকে সাহাবীদের নামের অধীনে সাজানো হয়। প্রত্যেক সাহাবীর হাদীস আলাদা অধ্যায়ে রাখা হয়। আর নামগুলোকে আলিফ, বা, জীম এর সিরিয়াল হিসেবে সাজানো হয়। মুসনাদে আহমদ ছাড়াও এ শতাব্দীতে আরো যেসব গ্রন্থ রচিত হয় তার মধ্যে রয়েছে- পরস্পর বিরোধী হাদীসগুলোকে একক গ্রন্থে সন্নিবেশকারী সংকলন এবং হাদীসের দুর্বোধ্য শব্দগুলোর মর্মার্থকে নিয়ে স্বতন্ত্র গ্রন্থ। যেমন, ইমাম শাফেয়ীর (মৃ ২০৪হিঃ) "ইখতিলাফুল হাদীস", একই নামে আলী ইবনে মাদিনী (মৃ ২৩৪হিঃ)ও একটি গ্রন্থ লিপিবদ্ধ করেন।

হিজরী চতুর্থ শতাব্দীতে হাদীস:
বলা যায় তৃতীয় শতাব্দীতে হাদীসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থগুলোর রচনা সমাপিত হয়। কিন্তু সবগুলো হাদীস এ গ্রন্থগুলোতে সন্নিবেশিত হয়েছে তা বলা যাবে না। বরঞ্চ আহমদ বিন হাম্বল বলেন, " আমি ৭লক্ষ ৫০ হাজার হাদীস থেকে বেছে বেছে কিছু হাদীস নিয়ে আমার গ্রন্থটি সংকলন করেছি।" তাই হাদীস নিয়ে কাজ শেষ হয়ে যায়নি। বরং হাদীস সংক্রান্ত নতুন নতুন গ্রন্থ সংকলন চালু থাকে। এবং আলেমরা সুন্নাহকে উম্মার কাছে সঠিকভাবে পৌঁছানোর জন্য চেষ্টা-সাধনা চালিয়ে যেতে থাকেন। এ সময়ে যেসব গ্রন্থ রচিত হয় তার কোনটি ছিল সহীহ বোখারী ও সহীহ মুসলিমের আদলে। আর কোনটি ছিল সুনান গ্রন্থগুলোর আদলে।
বোখারী ও মুসলিমের অনুকরনে সংকলিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- ইবনে খুজাইমা (৩১১হিঃ) সহীহ, ইবনে হিব্বানের (মৃ ৩৫৪হিঃ) সহীহ, ইবনে সাকানের (মৃ ৩৫৩হিঃ) সহীহ ও হাকেমের (মৃ ৪০৫হিঃ)"আল মুসতাদরিক"।
সুনান গ্রন্থসমূহের আদলে রচিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে- ইবনে জারুদের (মৃ ৩০৭হিঃ) "আল মুনতাকা", দারা কুতনীর (মৃ ৩৮৫হিঃ) সুনান, বায়হাকীর (মৃ ৪৫৮হিঃ) সুনান।
এছাড়া এ যুগে হাদীসের ব্যাখ্যা, বাহ্যিকভাবে দুটি মতবিরোধ পূর্ণ হাদীসের সমাধান কিভাবে হবে এ নিয়ে ইমাম তাহাবী (মৃ ৩২১হিঃ) লিখেন "মুশকিলুল আছার" এবং তার লিখিত গ্রন্থকে আবার তিনি নিজেই ব্যাখ্যা করেন "শারহু মুশকিলুল আছার" নামক গ্রন্থে।
এছাড়া এ যুগে গ্রন্থ রচনার নতুন দুটি ধারা চালু হয়। একটি হচ্ছে- পূর্ববর্তীতে সংকলিত বিশেষ কোন সংকলক তার গ্রন্থে যেসব সনদের (বর্ণনাসূত্রের) মাধ্যমে বিশেষ কোন হাদীস উল্লেখ করেছেন সেসব বর্ণনা সূত্র ব্যবহার না করে ভিন্ন কোন সনদ (বর্ণনাসূত্র) ব্যবহার করে একই হাদিস মূল সংকলকের শিক্ষক থেকে বর্ণনা করা। এ ধরণের গ্রন্থকে "মুসতাখরিজ" আখ্যায়িত করা হয়। যেমন- আবু বকর ঈসমাইলীর (মৃ ৩৭১হিঃ) "সহীহ বোখারীর উপর "মুসতাখরাজ"। তদ্রুপ আবু আওয়ানার সহীহ মুসলিমের উপর "মুসতাখরিজ"।
এছাড়া এ যুগে দ্বিতীয় যে ধারার উৎপত্তি হয় তাহল- হাদীস বিশারদদের ব্যবহৃত পরিভাষা নিয়ে গ্রন্থ রচনা। যেমন- রামাহুরমুজির (মৃ ৩৬০হিঃ) "আল মুহাদ্দিসুল ফাছেল"।

পঞ্চম হিজরী ও এর পরবর্তীতে হাদীস:
বলা যায় চতুর্থ হিজরীতে হাদীসের মৌলিক গ্রন্থগুলোর সংকলন শেষ হয়ে যায়। মুহাদ্দিসদের বুকে যেসব হাদীস সংরক্ষিত ছিল সেগুলো কাগজের পাতায় লিপিবদ্ধ হয়ে যায়। এরপর পূর্ববর্তীতে সংকলিত বড় বড় গ্রন্থগুলোকে পরিশীলিত ও পরিমার্জিত করা, সনদ (বর্ণনা সূত্র) বিলুপ্ত করে আকার ছোট করার মাধ্যমে একাধিক গ্রন্থকে এক গ্রন্থে আবদ্ধ করা , বিষয় ভিত্তিক সংকলন বের করা এবং হাদীসের সাথে সম্পৃক্ত জ্ঞানের অন্যান্য শাখাকে সমৃদ্ধ করার খেদমত চালু থাকে। যেমন- পঞ্চম হিজরীতে সহীহ বোখারী ও সহীহ মুসলিমকে একত্রে এক গ্রন্থে আবদ্ধ করে একাধিক গ্রন্থ সংকলিত হয়। যেমন- আবু মাসউদ দিমাসকীর (মৃ ৪০১হিঃ) সংকলিত "আল জামউ বায়নাস সহীহায়ন", ইমাম বাগাবীর (মৃ ৫১৬হিঃ) "আল জামউ বায়নাস সহীহায়ন", ইমাম সাগানীর ""আল জামউ বায়নাস সহীহায়ন", ইত্যাদি।
সহীহ বোখারী ও সহীহ মুসলিম নিয়ে যেমন একক সংকলন তৈরী হয় ঠিক তেমনি ছয়টি বিশুদ্ধ গ্রন্থকে নিয়েও একক সংকলন তৈরী হয়। যেমন- ইমাম বাগাবীর (মৃ ৫১৬হিঃ) "শারহুস সুন্নাহ "।
এ সময়ে বিষয় ভিত্তিক যেসব গ্রন্থ সংকলিত হয় তার মধ্যে "মাউজু হাদীসের" সংকলন অন্যতম। মাউজু হাদীস মানে বানোয়াট কথা। অর্থ্যাৎ লোক মুখে অথবা কোন গ্রন্থে যেগুলোকে হাদীস হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে অথচ এগুলো রাসূলের বাণী নয়, এ ধরণের বাণীর সংকলন।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে মার্চ, ২০০৮ দুপুর ১:৩৪
৬টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×