somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাদীসে রাসূল (সাঃ) নিয়ে কেন এই সংশয়? (সমাপ্তি পর্ব)

১৯ শে মার্চ, ২০০৮ সন্ধ্যা ৭:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সাহাবীদের পর থেকে হাদীস গ্রন্থায়িত হওয়া পর্যন্ত সময়ে হাদীস গ্রহনে আলেমদের সাবধানতা:

সাহাবায়ে কেরামের প্রজন্ম ছিল উম্মতের সবচেয়ে উত্তম প্রজন্ম। দ্বীনদারী ও পরহেজগারী ছিল তাদের সমাজের মৌলিক বৈশিষ্ট্য। কিন্তু ইসলামের বিজয় অভিযানের সাথে সাথে বিজিত অঞ্চলের লোকেরা ইসলামে প্রবেশ শুরু করল। তাদের মধ্যে এমন লোকও ইসলাম গ্রহন করল যাদের উদ্দেশ্য ছিল নিজেকে মুসলিম হিসেবে জাহির করে ইসলামের ক্ষতি করা। যেমন করছিল অগ্নি উপাসক আব্দুলাহ বিন সাবা ও তার সাঙ্গ-পাঙ্গরা। এ শ্রেণীর লোকেরা তাদের অশুভ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য কিছু কিছু বানোয়াট বাণী রাসূল (সাঃ) এর নামে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করল। আর এই ষড়যন্ত্রকে মোকাবিলা করার জন্য মুহাদ্দিসরা এক নতুন অস্ত্র গ্রহন করলেন। যখনি কোন ব্যক্তি বলত, রাসূল (সাঃ) হাদীসে এ কথা বলেছেন, সঙ্গে সঙ্গে তাকে জিজ্ঞেস করা হত তুমি কার কাছ থেকে শুনেছ। যদি সে কোন বর্ণনাসূত্র উল্লেখ করতে পারত এবং তার উল্লেখিত বর্ণনাকারীরা সত্যবাদী, দ্বীনদার ও সুন্নতের অনুসারী হতো তাহলে তার হাদীস গ্রহন করা হত। আর যদি তাকে বর্ণকারীরা মিথ্যাবাদী হত অথবা বিদআতী হত তখন তার হাদীস প্রত্যাখান করা হত। মুহাম্মদ ইবনে সিরীন বলেন, "সনদ হচ্ছে দ্বীনকে রক্ষাকারী। যদি সনদ জিজ্ঞেস করা না হত তাহলে যার যা ইচ্ছা সে ওটাকে দ্বীন বলে চালিয়ে দিত।" [সহীহ মুসলিমের ভূমিকা, ১/১৫]

অন্যদিকে সময়ের ব্যবধানে রাসূল (সাঃ) ও পরবর্তীতে আগত মুহাদ্দিসদের মাঝখানে সেতু স্থাপনকারী রাবীদের (বর্ণনাকারী) সংখ্যা বেড়ে গেল। আর মানুষ মাত্রই সকলের মুখস্ত শক্তি সমান নয়। বরং কারো কারো মুখস্ত শক্তি অত্যন্ত দূর্বল। সেজন্য হাদীসের সাথে সনদ উল্লেখ করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। যেন সংশ্লিষ্ট রাবীদের (বর্ণনাকারীদের) গুণাগুণ বিশ্লেষণ করা যায়। তারা কি দ্বীনদার, না দ্বীনদার নয়। তাদের মুখস্ত শক্তি কি মজবুত, না দূর্বল। এ কারণে ওসমান (রাঃ) নিহত হওয়ার পর থেকে সনদ ছাড়া কোন হাদীস গ্রহন করা হত না। যার ফলে মুহাদ্দিসদেরকে যেমন রাসূলের (সাঃ) বাণীটা মুখস্ত করতে হত ঠিক তেমনি বর্ণনাকারীদের নাম ও ক্রমধারা মুখস্ত করতে হত। বিশিষ্ট তাবেয়ী ইবনে সিরীন বলেন, "পূর্বে হাদীসের সনদ (বর্ণনাকারীদের সিলসিলা) জিজ্ঞেস করা হত না। আর যখন থেকে ফিতনা শুরু হল (ওসমান (রাঃ) হত্যার পর) তখন থেকে মুহাদ্দিসরা বলা শুরু করলেন, তোমাদের বর্ণনাকারীদের নাম বল। তখন বর্ণনাকারীদের অবস্থা পর্যালোচনা করা হত যদি তারা সুন্নতের অনুসারী হতেন তাদের হাদীস গ্রহন করা হত। আর যদি তারা বিদআতী হতেন তখন তাদের হাদীস গ্রহন করা হত না।" [সহীহ মুসলিমের ভূমিক, পৃষ্ঠা ১/১৫]

এভাবে হাদীসকে রক্ষা করার জন্য নতুন দুটি জ্ঞানের উদ্ভব হয়। একটিকে বলা হয় "ইলমুল রিজাল"(বর্ণনাকারীদের পরিচয় সংক্রান্ত) অন্যটিকে বলা হয় "আল জারহ ওয়াত তাদীল" (রাবীদের সমালোচনা বা তাদের গুণাবলী নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ)।

সনদ বলতে সেসব ব্যক্তিদের পরম্পরাকে বুঝানো হয় যাদের মাধ্যমে হাদীসটি রাসূল (সাঃ) থেকে শুরু হয়ে পরবর্তী বর্ণনাকারীর কাছে এসে পৌঁছেছে।" হিজরী পঞ্চম শতাব্দী পর্যন্ত, এমনকি এরপরেও হাদীসের যত মৌলিক গ্রন্থ রচিত হয় সবগুলোতে হাদীসের সাথে সনদ উল্লেখ করা হয়। কোন পাঠক হয়তো প্রশ্ন করবেন কোথায় আমরা তো অনুদিত সহীহ বোখারী ও সহীহ মুসলিম বা অন্য কোন হাদীসের গ্রন্থে বর্ণনাকারীদের কোন সিলসিলা দেখি না; শুধু সাহাবীর নাম দেখি। জবাব হল, আপনারা যদি আরবীতে মূল কিতাবগুলো দেখতেন তাতে সনদ দেখতেন পেতেন। যেমন আপনি যদি সহীহ বোখারীর মূল আরবী কিতাবে প্রথম হাদীসটা খোলেন, দেখতে পাবেন সেখানে লেখা আছে-
حَدَّثَنَا الْحُمَيْدِىُّ عَبْدُ اللَّهِ بْنُ الزُّبَيْرِ قَالَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ قَالَ حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ الأَنْصَارِىُّ قَالَ أَخْبَرَنِى مُحَمَّدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ التَّيْمِىُّ أَنَّهُ سَمِعَ عَلْقَمَةَ بْنَ وَقَّاصٍ اللَّيْثِىَّ يَقُولُ سَمِعْتُ عُمَرَ بْنَ الْخَطَّابِ - رضى الله عنه - عَلَى الْمِنْبَرِ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم – يَقُولُ.......
অর্থ: আব্দুল্লাহ বিন যুবাইর আলহুমাইদী আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন: সুফিয়ান আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: ইয়াহইয়া বিন সাঈদ আল আনসারী আমাদের কাছে হাদীস বর্ণনা করেন, তিনি বলেন: মুহাম্মদ বিন ইব্রাহীম তাইমী তাকে সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি "আলকামা বিন ওক্কাছ লাইছিকে" বলতে শুনেছেন এবং তিনি (আলকামা) বলেন, আমি উমর (রাঃ) কে মিম্বরে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছি যে, তিনি বলেন: রাসূল (সাঃ) বলেছেন: "……."[সহীহ বোখারী, ১/৪]

কিন্তু বাংলা ও ইংরেজীতে অনুদিত অধিকাংশ গ্রন্থগুলোতে এ দীর্ঘ সনদ উল্লেখ করা হয়নি। শুধুমাত্র সাহাবীর নাম ও হাদীসের মূল কথাটা রাখা হয়েছে। যেন অনুদিত গ্রন্থের কলেবর বেড়ে না যায়। তার স
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে এপ্রিল, ২০০৮ সন্ধ্যা ৬:২১
৪টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদিকে গুলি করলো কে?

লিখেছেন নতুন নকিব, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৬

হাদিকে গুলি করলো কে?

ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা ৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী রাজপথের অকুতোভয় লড়াকু সৈনিক ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জীবনের চেয়ে তরকারিতে আলুর সংখ্যা গণনা বেশি জরুরি !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:১৭


বিজিবির সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে দেশবাসী একটা নতুন শব্দ শিখেছে: রুট ভেজিটেবল ডিপ্লোম্যাসি। জুলাই আন্দোলনের পর যখন সবাই ভাবছিল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইতিহাসের সেরা ম‍্যাটিকুলাস ডিজাইনের নির্বাচনের কর্মযজ্ঞ চলছে। দলে দলে সব সন্ত্রাসীরা যোগদান করুন‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ ভোর ৪:৪৪



বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্ব নিকৃষ্ট দখলদার দেশ পরিচালনা করছে । ২০২৪-এর পর যারা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী দিয়ে দেশ পরিচালনা করছে । তাদের প্রত‍্যেকের বিচার হবে এই বাংলার মাটিতে। আর শুধুমাত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×