somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের দেশে কবে সেই ছেলে হবে।

০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০০৯ সকাল ৯:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সদ্যাগত এক পরলোকবাসীকে ঘুরে ঘুরে নরক দেখাচ্ছে নরকের প্রহরী।
বিশাল বিশাল হাড়িতে ফুটানো হচ্ছে তেল, টগবগ করে ফুটছে তেল। প্রতিটি হাড়ির সামনে লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছে একজন করে প্রহরী আর কিছুক্ষণ পর পর লাঠি দিয়ে ধমাধম বাড়ি দিচ্ছে হাড়ির ভিতরে। আগন্তুক জানতে চাইল,’ওখানে কি হচ্ছে?’
জবাবে
:ও কিছুনা।নরক যন্ত্রণা থেকে রেহাই পেতে মানুষ বের হয়ে আসতে চাইছে।আর তখুনি লাঠির আঘাতে তাকে ভিতরে পাঠানো হচ্ছে।‘
যা হোক, ঘুরে ঘুরে দেখছে আগন্তুক।হঠাৎ সে থমকে দাঁড়ালো।
:একি !এ হাড়ির জন্য তো কোন প্রহরীই নেই।জিজ্ঞেস করতেই জানতে পারল,’
:ওখানে প্রহরীর দরকার নেই।একজন উঠতে চেষ্টা করলেই পাশের জন তাকে টেনে নামিয়ে নিয়ে আসে’।
:ও হাড়িতে কারা আছে? প্রহরী হেসে জবাব দিল,
:’বাঙালী’।
হাসছেন? ভাবছেন, এ আবার নতুন কি? আপনি তো জানেনই আমার কাছ থেকে শুনতে হবে? কি আর করব ! আমাদের গর্ব নোবেল বিযয়ী ডঃ ইউনুস কে ,কিছু সংখ্যক বাঙালী টেনে নামানোর যে ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে তা দেখে ইদানিং বেশ ক’দিন ধরেই মাথার ভিতর ঘুরপাক খাচ্ছে বহুবার শোনা একটি পুরোণো কোতুকটি।কে লিখেছিল এ কোতুকটি? সে যে ই হোক। অসাধারণ। রবীন্দ্রনাথ যখন নোবেল পুরস্কার পেয়াছিলেন ঠিক একই দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল।উনি নোবেল কিনে এনেছিলেন বলে তিরস্কৃত হ’য়েছিলেন। ১৯১৩ থেকে ২০০৬ ।একই বাঙালী আমরা এবং সত্য ও সে একই নোবেল কখনো কিনে আনা যায়না।সময় তা প্রমাণ করেছে এবং করবে।

হ্যাঁ, ঐ আগন্তুক তখন না জানলে ও এতদিনে পৃথিবীর আনাচে কানাচে ছড়ানো বাঙালীদের সুবাদে মোটামোটি সবাই জেনে গিয়েছে আমাদের বাঙালীদের মজ্জাগত এ বৈশিষ্টের কথা।তা দেশ থেকে যতদুরেই যাইনা কেন আমরা,’ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাণে’,এই আর কি।আবেগ প্রবণ এ জাতি অন্যের ভালো সহ্য করতে পারেনা, সহজ়েই ঈর্ষাণ্বিত হয়।একটি মানুষের ভালো গুণের থেকে দোষের দিকেই তাদের মনযোগ বেশী।হীণমন্য এ জাতি নিজেকে পরাধীন বা ক্রিতদাস ভাবতেই বেশী পছন্দ করে।তাই সহজাত ভাই যখন গগনচুম্বী সাফল্য দিয়ে জগৎকে চমক লাগিয়ে দেয় তখন তার সেই সত্বায় লাগে আঘাত।বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যে আর অনুসরণ নয়, তারই মত একজন পৃথিবীর বুকে সৃষ্টি করতে পারে উদাহরণ।নিজের প্রতিবিম্ব ফুটে উঠে যার মাঝে, তাকেই হেয় প্রতিপন্ন করায় ব্যস্ত তখন সে,তবেই অক্ষুন্ন থাকে তার হীণমন্য ও পরাধীন সত্বা।খুব কিছু সংখ্যক লোকই এই দাসত্বের শৃঙ্খল থেকে বের হ’য়ে এসেছেন। আর বলতে পেরেছেন হ্যাঁ ‘আমরা ও পারি’। এই যে কিছুদিন আগে হোয়াইট হাউসে জ্বলজ্বল করে জ্বলেছে বাংলাদেশ। আমদের গর্ব ড:ইউনুস।আমেরিকার সর্বোচ্চ এওয়ার্ড’প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অফ ফ্রিডম’পেলেন তিঁনি। সেখানে প্রেসিডেন্ট ওবামা তাঁকে পরিবর্তনের নায়ক হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন।
বাংলাদেশের মিডিয়া গুলো ততটা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেনি। অনেক কে আবার বলতে শুনাছি , যতদিন হিলারী আছে আরো কত কি পাবেন।আর অন্যান্য যাঁরা এ পদক পেয়েছেন তারা যোগ্যতার বলেই পেয়েছন। হায়রে বাঙালি। ঐ যে বললাম নিজেরই মত কাউকে দেখে আমরা শিউরে উঠি।
ডঃ ইউনুস ও বাংলাদেশী মিডিয়া কে এড়িয়ে চলেন। কিন্তু হাল ছাড়েন নি। এখন ও স্বপ্ন দেখেন। তার সোনার দেশ নিয়ে, সমগ্র পৃথিবী নিয়ে।সামাজিক ব্যাবসা নিয়ে আবার স্লোগান তুলেছেন। হায়রে বাঙালী ! মক্কার মানুষ হজ্জ্ব পায়না।তাঁরা ইউনুসের কথা শুনতে আগ্রহী না। তাঁর কথা শুনতে আসছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্ত থেকে জ্ঞানী গুণী জন।দাওয়াত করে নিয়ে যাচ্ছেন, শুধু মাত্র পরামর্শ করবার জন্য।পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে শুরু হয়েছে গ্রামীণ ব্যাংকের উদ্ভোধন।২০০৬ সালে নোবেল প্রাপ্তির পর, এর আসাধারণ সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে ‘গ্রামীণ আমেরিকা’ নামে নিউইয়র্কের কুইন্সে শুরূ হয়েছে মাইক্রোক্রেডিটের আর এক প্রকল্প।ডঃ ইউনুস তার ডিরেক্টর।

বাংলাদেশে ভিক্ষুকদের কে কেন্দ্র করে হয়েছে কত শিল্প। কত কাব্য, কত চিত্রকর্ম, ব্যবসা, কত রাজনীতি কত কি?কেউবা দু’টাকা, পাঁচ টাকা দিয়ে নিজেকে মহৎ ভেবে পায় স্বস্তি।কেউ বা জাকাত ফেতরা দিয়ে উন্মুক্ত করে আখেরাতের পথ।কেউ বা দূর দূর করে তাড়িয়ে দেয়।বলে আপদ। বলে যা কাজ করে খা। কিন্তু কাজ কি দিয়েছে কেউ? হ্যাঁ। গ্রামীণ ব্যাংক। ভিক্ষুকদেরকে ভিক্ষাবৃত্তি নয়, সণ্মানের সাথে দারে দারে যাবার উপায় বের করে দিয়েছে ।ওরা এখন গ্রামীণ ব্যাঙ্কের সেলস পারসন। দারে দারে ঠিকই যায় তবে ভিক্ষা করতে নয়, কোম্পাণীর পণ্য বিক্রি করতে।এটা তার নিজেরই কোম্পাণী।গ্রামীণ ব্যাঙ্কের ৯৫% মালিক ঋণ গ্রহীতারা।যেখান থেকে ভিক্ষুকদের কেও লোন দেয়া হয় ।যার সুদের হার ০%।আমরা যারা গ্রামীন ব্যাঙ্কের সুদের হার বেশী বলে বলে মুখে ফেণা তুলে ফেলছি তারা কি একটিবার ও ভিক্ষূকদের সুদের কথাটা উল্লেখ করেছি।

গ্রামীণ আমেরিকা যেমন শুধু মাত্র ব্যাবসা বা আয় নির্ভর প্রকল্পের জন্য লোন দেয়। বাংলাদেশ সে দিক থেকে অনেক এগিয়ে আছে।হাউসিং এবং শিক্ষা লোন ও এরা দিয়ে থাকে।সুদের হার ব্যাবসা ২০%,হউসিং৮%, শিক্ষা ৫%,ভিক্ষুক ০%।যা কিনা বাংলাদেশের গতানুগতিক ব্যাঙ্কের(১১%-২২%) চেয়ে কম।আর সুদের হারের কারণেই যদি দুস্থ মহিলাকে ভিটে মাটি ছেড়ে শহরে আসতে হ’ত তাহলে গ্রামীন ব্যাঙ্কের সদস্য সংখ্যা এখন ৭’৯৩ প্রায় ৮ মিলিয়ন হতনা। এদের ৯৭%ই অবশ্য মহিলা।মহিলাদের এভাবে ঘর থেকে বের হ’য়ে স্বাবলম্বি হতে দেখে আমাদের মোলবাদীদের চোখ তো কপালে তুলবেই কিন্তু আমাদের তথাকথিত প্রগতিশীল সুশীল সমাজ থেকে ও যখন সমালোচনা আসে অবাক না হ’য়ে আর যাই কই! তাও যদি গঠণমূলক কিছু হ’ত। এই যে বাংলাদেশের ৮,৪,‌৫৭৩ টি গ্রামে গ্রামীণ ব্যাংকের ২,৫৫৮ টি শাখায় ২৩,৩৩৮ জন কর্মচারী কাজ় করছেন।বেকার সমস্যা সমাধানে ও এ ভূমিকা রাখছে। গ্রামীন ব্যাংকের শিক্ষা লোনে শিক্ষিত যুবকদের কর্ম সংস্থানে ও সাহয্য করছে লোন দিয়ে।

ডঃ ইউনুসের ধৈর্যের প্রশংসা না করে পারছিনা।উনি এখন ও হাল ছাড়েননি। সামাজিক ব্যাবসার নতুন আইডিয়া নিয়ে এসেছেন।কী অসাধারণ! আমাদের সবার ভিতরে সার্থপর ভোগী সত্বার পাশাপাশি স্বার্থহীন ত্যাগী সত্বা ও বিরাজ করে।এই প্রকল্পের মাধ্যমে সেই লুকিয়ে থাকা লালন পালনের অভাবে মৃত অর্ধমৃত সে আত্মার জাগরণ হবে। দাতা গ্রহীতা দুপক্ষই লাভবাণ হবে।আমার দৃঢ় বিশ্বাস উঁনি প্রচুর সাড়া পাবেন।

ত্রিশ বছরের ও আগের কথা যখন গ্রামীন ব্যাঙ্কের প্রস্তাব রেখেছিলেন তখ্ন কোন ব্যাঙ্কই রাজী হয়নি জামানত বিহীন লোন দিত। আজ সেই গ্রামীন ব্যাঙ্ক কোথায় এসেছে। এমন একজন ব্যক্তির ওপর আমাদের আস্থা থাকা উচিৎ। বিশ্ববাসীর কাছে উঁনার সেই আস্থার অবস্থান হ’য়ে গিয়েছে। নিজের ঘরেই শুধু সমালোচনার ঝড়।তা শুরুতেই যা বলছিলাম।এটা আমদের মজ্জার সাথে মিশে আছে।

আমরা গর্বিত এমন একজন মেধাবী জ়নদরদী বাংলাদেশীকে আমাদের পাশে পেয়ে। কোটি কোটি শান্তিপ্রিয় মানুষ আছি তাঁর সাথে। নোবেল প্রাপ্তির প্রথম সংবাদ যেমন কিছু সংখ্যকের কাছে কারো মৃত্যু সংবাদের মত এসেছে।অনেকের কাছেই এসেছে আনন্দের কাণ্ণা হ’য়ে। যেন নিজেই পেয়েছে একটি নোবেল। তাঁর সামনে এগিয়ে যাওয়া ,স্বপ্ন পুরণ হওয়া যেন সমগ্র জাতির স্বপ্ন পূরণ হওয়া।

যারা শুধু সমালোচনাই করছেন। শুধু দোষ খুঁজে বেড়াচ্ছেন। তাদের প্রতি অনুরোধ, এই যে সারা পৃথিবী জুড়ে হতাশা,তখন আলোর দিশারী হয়ে কেউ পথ দেখচ্ছেন,আশার বাণী শোনাচ্ছেন,যার কিনা আস্থা আছে মানুষের ওপর এবং নিজের ওপর,এমনকি যে কিনা নিজের জাতীয়তাবাদ বাঙালীত্বের মত পোষাক নিয়ে ও এত গর্বিত এমন একজন মানুষকে নিয়ে টানা হেঁচরা না করে ,শুধুই কথার ফুলঝুড়ি না ঝরিয়ে আপনারা ও কিছু করে দেখান। কি বললেন ? আপনরা বুদ্ধিজিবী।আপনারা কেন কাজ করবেন?বেশ তো তাহ’লে অন্ততঃএকটি নতুন থিউরী বের করুন।ধন্য ধন্য কামিনী দাস লিখছিলে তুমি; ‘আমাদের দেশে কবে সেই ছেলে হবে,
কথায় না বড় হ’য়ে কাজ়ে বড় হবে’।



সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ২:৫২
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×