somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সৌদি আরবের বাদশাহ ফয়সাল বিন আবদুল আজিজের সময়কার কথা ( পর্ব ১ )

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ আল ছিলেন সৌদি আরবের একজন বাদশাহ । ১৯৬৪ সাল থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্বপালন করেন । বাদশাহ হিসেবে তিনি দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার ও আধুনিকীকরণ এবং সংস্কারে সফল হয়েছেন । তার বৈদেশিক নীতির মূল দিক ছিল প্যান ইসলামিজম ও কমিউনিজম বিরোধীতা এবং ফিলিস্তিনি দাবির সমর্থন । তিনি দেশের আমলাতন্ত্রকে সফলভাবে সংহত করেন । তিনি সৌদি আরবের জনতার মধ্যে তার শাসন জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন ।

১৯০৬ সালে ১৪ই এপ্রিল ফয়সাল বিন আবদুল আজিজ জন্মগ্রহণ করেন । এবং ১৯৭৫ সালে তার ভাইপো ফয়সাল বিন মুসাইদের হাতে তার মৃত্যুর ঘটনা ঘটে । তিনি ছিলেন তার বাবার তৃতীয় সন্তান । তার মা তারফা বিনতে আবদুল্লাহ বিন আবদুল লতিফ আল শাইখ । ১৯০২ সালে রিয়াদ জয়ের পর আবদুল আজিজ তাকে বিয়ে করেন । ফয়সালের মা ছিলেন আল আশ শাইখ পরিবারের সদস্য যা ছিল মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওয়াহাবের বংশধর । ফয়সালের নানা আবদুল্লাহ বিন আবদুল লতিফ ছিলেন আবদুল আজিজের অন্যতম ধর্মীয় শিক্ষক এবং উপদেষ্টা ।

১৯১২ সালে ফয়সালের মা মারা যান । তারপর তিনি তার নানার কাছে প্রতিপালিত হন । নানার কাছে তিনি কুরআন এবং ইসলামের মৌলিক বিষয়াদি শিক্ষা নেন । এই শিক্ষা তাকে আজীবন প্রভাবিত করে । ফয়সালের একমাত্র বোন নুরাহর সাথে তার এক চাচাত ভাই খালিদ বিন মুহাম্মদের বিয়ে দেওয়া হয় ।সাহসিকতাকে প্রচুর মূল্য এবং সম্মান দেওয়া হয় এমন এক পরিবেশে ফয়সাল বেড়ে উঠেন । অন্যান্য সৎভাইদের তুলনায় এ দিক থেকে তিনি ব্যতিক্রমও ছিলেন । তার মায়ের কাছ থেকে তিনি গোত্রীয় নেতৃত্ব বিকাশের উৎসাহ পান । ১৯১৯ সালে ব্রিটিশ সরকার বাদশাহ আবদুল আজিজকে লন্ডন আমন্ত্রণ জানান । তিনি যেতে না পারার কারনে তিনি ১৪ বছর বয়সী ফয়সালকে পাঠান । যুক্তরাজ্য ভ্রমণে যাওয়া তিনি প্রথম সৌদি রাজকীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন । তিনি সেখানে পাঁচ মাস অবস্থান করেন এবং বিভিন্ন ব্রিটিশ কর্মকর্তাদের সাথে সাক্ষাত করেছিলেন । একই সময়ে তিনি ফ্রান্স সহ সফর করেন । রাষ্ট্রীয় সফরে ফ্রান্সে আসা সৌদি রাজকীয় ব্যক্তি হিসেবেও তিনিই সর্বপ্রথম ছিলেন ।


বাদশাহ আবদুল আজিজ ইবনে সৌদের জ্যেষ্ঠ সন্তানদের অন্যতম হওয়ায় ফয়সাল বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বপালন করেন । হাইল বিজয় এবং আসিরের উপর প্রাথমিক নিয়ন্ত্রণের পর ১৯২২ সালে তাকে ছয় হাজার যোদ্ধার সাথে এই সকল প্রদেশে পাঠানো হয়েছিল । বছরের শেষনাগাদ তিনি আসিরের উপর পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করেন । ১৯২৫ সালে ফয়সাল হেজাজে বিজয় অর্জন করেছিলেন । পরে তাকে এবং মুহাম্মদ বিন আবদুল আজিজকে ইখওয়ানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল । ১৯২৬ সালে ফয়সাল হেজাজের শাসক নিয়োগ হন । তখন শাসনামলে তিনি প্রায়ই স্থানীয় নেতাদের সাথে আলোচনা করতেন । ১৯৩০ সালে ফয়সাল পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলেন । এবং বাদশাহ হওয়ার পরও এই দায়িত্ব পালন করেন । সেসময় তিনি কয়েকবার ইউরোপ সফর করেন । ১৯৩২ সালে তিনি পোল্যান্ড এবং ১৯৩৩ সালে রাশিয়া সফর করেন ।

ফয়সালের বড় ভাই সৌদি বিন আবদুল আজিজ বাদশাহ হওয়ার পর ফয়সালকে যুবরাজ হিসেবে ঘোষণা করেন । বাদশাহ সৌদি ব্যয়বহুল কাজে হাত দিয়েছিলেন যার মধ্যে ছিল রাজধানী রিয়াদে প্রান্তে বিলাসবহুল রাজপ্রাসাদ নির্মাণ করা । মিশরের দিক থেকেও সৌদি হুমকি অনুভব করছিলেন । জামাল আবদেল নাসের ১৯৫২ সালে মিশরের রাজতন্ত্র বিলুপ্ত করেন । মিশরে পালিয়ে যাওয়া তালাল বিন আবদুল আজিজ এবং তালালের প্রভাবিত প্রিন্সদেরকে নাসের ব্যবহার করতে সক্ষম ছিলেন । সৌদের ব্যয়বহুল নীতির কারণে এবং বৈদেশিক নীতির ব্যাপারে তার অসফলতার জন্য রাজপরিবারের সিনিয়র সদস্য এবং উলামারা ফয়সালকে প্রধানমন্ত্রী করার জন্য সৌদের উপর চাপ সৃষ্টি করেন । এই নতুন অবস্থানে ফয়সাল অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের জন্য ব্যয় কমিয়ে আনেন । অর্থনীতিতে তার এই পদক্ষেপ তার আমলের গুরুত্বপূর্ণ ছাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল এবং জনগণের মধ্যে তার জনপ্রিয়তা আরো বৃদ্ধি করে তুলেছিল । বাদশাহ সৌদি এবং যুবরাজ ফয়সালের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব বৃদ্ধি পায় । ১৯৬০ সালের ১৮ই ডিসেম্বর ফয়সাল প্রতিবাদ হিসেবে পদত্যাগ করেন। বাদশাহ সৌদ ফয়সালের নির্বাহী ক্ষমতা ফিরিয়ে নেন এবং প্রিন্স তালালকে মিশর থেকে ফিরিয়ে এনে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল । ১৯৬২ সালে ফয়সাল রাজপরিবারের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন লাভ করেন এবং দ্বিতীয় দফায় প্রধানমন্ত্রী হলেন ।এসময় যুবরাজ ফয়সাল সংস্কার এবং আধুনিকীকরণকারী হিসেবে সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিলেন । রক্ষণশীল মহলের অসন্তুষ্টি সত্ত্বেও তিনি নারীশিক্ষার বিস্তার ঘটিয়ে ছিলেন । সমস্যা সৃষ্টি না হওয়ার জন্য তিনি ধর্মীয় নেতাদের মাধ্যমে নারী শিক্ষার কারিকুলাম লিপিবদ্ধ ও তদারক করান । এবং এই নীতি তার মৃত্যুর অনেক পরও পর্যন্ত টিকে ছিল । ১৯৬৩ সালে যুবরাজ ফয়সাল দেশে প্রথমবারের মত টেলিভিশন স্টেশন স্থাপন করেছিন । তবে মূল প্রচার শুরু হতে আরো দুই বছর সময় লেগে যায় । আর অন্যান্য অনেক নীতির মত দেশের ধর্মীয় এবং রক্ষণশীল অংশ এর প্রতি অসন্তুষ্ট ছিল । ফয়সাল তাদের নিশ্চিত করেন যে ইসলামের নৈতিকতার মাপকাঠি কঠোরভাবে মেনে চলা হবে এবং বেশি মাত্রায় ধর্মীয় অনুষ্ঠান প্রচার করা হবে । যুবরাজ ফয়সাল ১৯৬১ সালে মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেছিলেন । ১৯৬২ সালে তিনি মুসলিম ওয়ার্ল্ড লীগ প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করেন । এটি একটি বৈশ্বিক দাতব্য সংস্থা ছিল । সৌদি রাজপরিবার এতে বিলিয়ন ডলারেরও বেশি দান করেছেন বলে ধারণা করা হয় ।

তথ্য নেট
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১২:১০
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:০২



ইউটিউব হুজুর বললেন, মৃত্যুর আগে ইবলিশ ঈমান নিয়ে টানাটানি করে। তখন নাকি নিজ যোগ্যতায় ঈমান রক্ষা করতে হয়। আল্লাহ নাকি তখন মুমিনের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তাই শুনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×