somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইরান আর ইরাকের যুদ্ধের সে ইতিহাস (১ম পর্ব )

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঘড়ির কাঁটার আবর্তনের দিক অনুযায়ী গ্যাস মাস্ক পরিহিত অবস্থায় যুদ্ধক্ষেত্রে ইরানী সৈন্য খোররামশাহরকে মুক্ত করার পর ইরানি সৈন্যদের উল্লাস ইরান ইরাক যুদ্ধে ইরাককে মার্কিন সহায়তা করার ব্যাপারে ডোনাল্ড রামসফেল্ড এবং সাদ্দাম এর আলোচনা অপারেশন নিম্বল আর্চার মার্কিন নৌবাহিনীর আক্রমণে সমুদ্রবক্ষে ইরানি তৈল স্থাপনায় আগুন ইত্যাদি বিষয়ে অনেকের জানা আছে ।

ইরান আর ইরাকের যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল ১৯৮০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে । জাতিসংঘের মধ্যস্ততায় ১৯৮৮ সালের আগস্টে যুদ্ধবিরতির মধ্যে এর অবসান ঘটে । ইরানের কাছে এই যুদ্ধ অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দেওয়া একটি যুদ্ধ ও জাংগে তাহমিলি এবং পবিত্র প্রতিরোধ দেফা এ মাক্বাদ্দাস হিসেবে পরিচিত হয়ে আছে । অন্যদিকে ইরাকের সাদ্দাম হোসেন এই যুদ্ধকে ব্যাটল অব ক্বাদেসিয়া নামে অভিহিত করে গেছেন । সীমান্ত বিরোধ এবং ইরাকের অভ্যন্তরে শিয়া জংগীদের ইরানি মদদ দেওয়ার অভিযোগে ১৯৮০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ইরাকি বাহিনী পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই অবৈধভাবে ইরানি ভূ খন্ডে আক্রমণ এবং অনুপ্রবেশ করেন । সদ্য ঘটে যাওয়া ইরানি ইসলামি বিপ্লবের নাজুক অবস্থাকে ব্যবহার করে ইরাক যুদ্ধে দ্রুত অগ্রগতি অর্জনের চেষ্টা চালানো হয় । কিন্তু তাতে কার্যত সে চেষ্টায় ব্যর্থতা পর্যবসিত হয় । ১৯৮২ সালের জুন মাসের মধ্যে ইরান তার হারানো সমস্ত ভূ খন্ডকে পুনরুদ্ধার করেন । এর পরের ৬ বছর ইরানি বাহিনী যুদ্ধে অগ্রসর ভূমিকায় ছিল । জাতিসংঘের বারবার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও ১৯৮৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হয়েছিল । ২০০৩ সালে দু'দেশের মধ্যে সর্বশেষ যুদ্ধবন্দীর বিনিময় ঘটেছিল । প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কৌশলের সাথে এই যুদ্ধের বেশ মিল খুঁজে পাওয়া যায় । কাঁটাতার এবং মানব স্রোত, বেয়নেট চার্জ এই যুদ্ধে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয় । ইরাকি বাহিনী ইরানি সৈন্য ও বেসামরিক নাগরিক এবং ইরাকি কুর্দদের উপর রাসায়নিক গ্যাস এবং মাস্টারড গ্যাস প্রয়োগ করেন ।


যুদ্ধের নামকরণের ইতিহাসঃ
ইরাকের কুয়েত দখলকে কেন্দ্র করে ১৯৯১ সালের উপসাগরীয় যুদ্ধের আগে সাধারণভাবে ইরাক ও ইরান যুদ্ধকেই উপসাগরীয় যুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করা হত । পরবর্তিতে কেউ কেউ একে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধ হিসেবে উল্লেখ করেন । যুদ্ধের শুরুর দিনগুলিতে সাদ্দাম হোসেন একে ঘূর্ণিবায়ুর যুদ্ধ হিসেবে উল্লেখ করতেন ।


পারস্য উপসাগরীয় যুদ্ধের সূচনা ২রা আগস্ট ১৯৯০ সালে । ১৯৯১ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী এর আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘটে । অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম নামে সমধিক পরিচিত এই যুদ্ধের সংঘটিত হয় ইরাক এবং ৩৪টি দেশের জাতিসংঘ অনুমোদিত যৌথ বাহিনীর মধ্যে । ১৯৯০ সালের আগস্ট মাসে ইরাকের কুয়েত আগ্রাসন এবং কুয়েতি ভূ-খন্ড দখলের প্রেক্ষিতে ইরাকী বাহিনীর হাত থেকে কুয়েতকে মুক্ত করাই ছিল এ যুদ্ধের উদ্দেশ্য ।
যুদ্ধের শুরুর ব্যাপারে ইরাকী অজুহাত এবং ইরাকী আক্রমণের যে উদ্দেশ্য ছিল ।


খোররামশাহর মুক্ত হওয়ার প্রাক্কালে গ্রেফতার হওয়ার ইরাকি সৈন্য

ইরাক যুদ্ধ শুরুর কারণ হিসেবে দক্ষিণ ইরাকে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তারিক আজিজের হত্যা প্রচেষ্টার কথা উল্লেখ করেন । সাদ্দাম হোসেনের ভাষায় ইরানী এজেন্ট রাই এই হামলার পেছনে দায়ী ছিল । ১৯৮০ সালের মার্চ মাসের মধ্যে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে । ইরান ইরাকের থেকে তার রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নিয়ে কূটনৈতিক সম্পর্ক শার্জ দ্যা অ্যাফেয়ার্স পর্যায়ে নামিয়ে আনেন । একই সাথে ইরান তার দেশ থেকে ইরাকী রাষ্ট্রদূতের প্রত্যাহার দাবী করেন । তারিক আজিজকে হত্যা প্রচেষ্টার তিনদিন পরেই এক নিহত ছাত্রের শেষকৃত্য অনুষ্ঠানে পুনরায় হামলার ঘটনা ঘটে ।ইরাক ইরানকে দোষারোপ করেন । সেপ্টেম্বরের ১৯৮০সালে ইরানের উপর হামলা চালানো হয় । ইরাকী দখলে চলে যাওয়া ইরানী শহর খোররাম শাহর এ অস্ত্র হাতে এক ইরানী মহিলা প্রতিরোধ যোদ্ধা তৈরি করেন ।
১৯৮০ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর পার্লামেন্টে এক ভাষণে সাদ্দাম হোসেন বলেন ইরাকী সার্বভৌমত্বে উপর্যুপরি এবং নির্লজ্জ ইরানী হস্তক্ষেপ করেন । ১৯৭৫ সালে স্বাক্ষরিত আলজিয়ার্স চুক্তিকে ইতিমধ্যে বাতিল করে দেওয় হয়েছে । শাতিল আরব নদী ঐতিহাসিক এবং নামকরণের দিক থেকে ইরাকের এবং আরবদের একচ্ছত্র অধিকারে ছিল এবং এর উপর ইরাকের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা হবে তাই । ইরান আগ্রাসনের পেছনে ইরাকের নিম্নোক্ত কারণগুলো ছিলঃ

শাতিল আরব নদীর মোহনা নিজেদের দখলে নেয়া
সংযুক্ত আরব আমিরাতের পক্ষ থেকে তিনটি ইরানী দ্বীপ আবু মুসা , গ্রেটার টুনব এবং লেসার টুনব দখল করে নেয়া
ইরানের খুজেস্তান প্রদেশ ইরাকে অন্তর্ভূক্ত করে নেয়া
তেহরানের ইসলামী সরকারকে উৎখাত করা ।
এবং ওই অঞ্চলে ইসলামী বিপ্লব ছড়িয়ে যাবার সম্ভাবনাকে উৎপাদন করা ।


১৯৮০সালে ইরাকী আগ্রাসন
১৯৮০ সালের ২২ সেপ্টেম্বর ইরাকি বিমান বাহিনী ইরানের ১০ টি বিমানবাহিনী ঘাঁটির উপর অতর্কিত পূর্ণমাত্রার আক্রমণ চালানো হয় । আক্রমণের ফলে ইরানের বিমানঘাঁটিগুলোর অবকাঠামো ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হলেও খুব বেশি বিমান ধ্বংস হয় নাই । ইরাকি বাহিনী কিছু মিগ 23BN ও Tu-22 এবং Su-20 যুদ্ধবিমান ধ্বংস করতে হয় । কিন্তু ইরানি বিমানবহরে অন্যান্য বিমানের সংখ্যাধিক্যের কারণে এই ক্ষতি খুব একটা তাৎপর্যপূর্ণ ছিল না । একই সময় তিনটি মিগ 23s তেহরান বিমানবন্দরে হামলা পরিচালনা করে কেবল স্বল্পমাত্রার ক্ষতিসাধনে সক্ষম হন । পরের দিন ইরাকি বাহিনী ৬৪৪ কিলোমিটার সীমান্ত ফ্রন্ট জুড়ে ত্রিমুখী স্থল আক্রমণের সূচনা করেন । সাদ্দাম হোসেন দাবী করেন যে অন্যান্য আরব এবং উপসাগরীয় রাষ্ট্রে ইরান তাদের বিপ্ল ছড়িয়ে দেওয়ার যে ষড়যন্ত্র করছেন তা রুখতেই মূলত এই অভিযান চালানো হয় । ইরানের তেল সমৃদ্ধ খুজেস্তান প্রদেশের ইরাকের দখল করে নেওয়ার মাধ্যমে ইরান চরমভাবে বিপর্যস্ত হবে এবং এই বিপর্যয় তেহরানের সরকারের পতন ত্বরান্বিত করবে এমন ভাবনা থেকেই সাদ্দাম হোসেন খুজেস্তানের উপর পূর্ণমাত্রার অভিযান শুরু করেন ।

ছবি এবং তথ্য বিভিন্ন ওয়েব সাইট এবং ইন্টারনেট থেকে তুলে ধরা ।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:৪৩
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দেশ এগিয়ে যাচ্ছে; ভাবতে ভালই লাগে

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৩


বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল নেতিবাচক। একই বছরে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার ছিল প্রায় ১ শতাংশ। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবৃদ্ধি ছিল ৭... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×