somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা অ্যাকিলিস ( প্রথম পর্ব )

০১ লা আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অ্যাকিলিস গ্রিক পুরাণের একটি চরিত্র। হোমারের ট্রয় যুদ্ধের পটভূমিকার রচিত ইলিয়াড মহাকাব্যের কেন্দ্রীয় চরিত্র অ্যাকিলিস উক্ত যুদ্ধের নায়ক তথা শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা।মনে করা হয়, ট্রয়ের বিরুদ্ধে সম্মিলিত যোদ্ধৃবর্গের মধ্যে অ্যাকিলিস ছিলেন সর্বাপেক্ষা সুদর্শন।পরবর্তীকালে রচিত কিংবদন্তি অনুসারে, গোড়ালি ছাড়া অ্যাকিলিসের সমগ্র শরীর ছিল অপরাজেয়। গোড়ালির এই দুর্বলতা সত্ত্বেও এই কিংবদন্তিতে অ্যাকিলিসকে অর্ধ অবিনশ্বর বলে উল্লেখ করেছে। গোড়ালিতেই বিষাক্ত তির বিঁধে অ্যাকিলিসের মৃত্যু ঘটে। এই কারণে অ্যাকিলিস হিল শব্দবন্ধটির দ্বারা কোনো ব্যক্তির প্রধান দুর্বলতাকে নির্দেশিত করার রীতি প্রচলিত হয়।


অ্যাকিলিস ছিলেন নিম্ফ থেটিস এবং মিরমিডন রাজ পেলেউসের সন্তান। জিউস ও পসেইডন দুজনেই থেটিসের পাণিপ্রার্থী ছিলেন। এই কারণে উভয়ের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাও ছিল। আরেকদিকে ভবিষদ্বাণী করা হয়েছিল যে থেটিস এমন এক সন্তানের জন্ম দেবেন যে তার পিতার তুলনায় অনেক বেশি শক্তিমান হবে। অগ্নি আনয়নকারী প্রমিথিউস এই ভবিষদ্বাণী সম্পর্কে জিউসকে সতর্ক করে দিলে উভয় দেবতাই থেটিসকে বিবাহ করার সংকল্প পরিত্যাগ করেন এবং পেলেউসের সঙ্গে তার বিবাহ দেন।অধিকাংশ পুরানকথার মতোই এই ঘটনাসমূহ অপর একটি উপকথায় ভিন্নভাবে বর্ণিত হয়েছে অ্যার্গোনটিকা গ্রন্থে বলা হয়েছে হেরা পরোক্ষভাবে থেটিসের কৌমার্যব্রতকে জিউসের কামলোলুপতার সম্মুখে এনেছিলেন কিন্তু থেটিস হেরার বৈবাহিক বন্ধনটির প্রতি অত্যন্ত আনুগত্যপরায়ণা ছিলেন বলে তিনি ঠাণ্ডা মাথায় জিউসকে প্রত্যাখ্যান করেন ।

খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে স্ট্যাটিয়াস রচিত অ্যাকিলেইড এর অ্যাকিলেইস খণ্ডাংশ থেকে জানা যায় অ্যাকিলিসের জন্ম হলে সদ্যোজাতকে অবিনশ্বর করার মানসে থেটিস তাকে স্টিক্স নদীতে একবার নিমজ্জিত করেন। কিন্তু গোড়ালির যে অংশ ধরে থেটিস অ্যাকিলিসকে জলে ডুবিয়েছিলেন সেই অংশটি জেয়ই থেকে যায়। তবে অন্য কোনো সূত্র থেকে এই কাহিনির সমর্থন পাওয়া যায়নি। আর এটাও পরিষ্কার নয় যে পূর্বে উক্ত ঘটনার ব্যাখ্যানটি পরিচিত ছিল কিনা। অন্য একটি বিবরণী অনুসারে থেটিস শিশু অ্যাকিলিসের সারা শরীরে অ্যামব্রোজিয়া মাখিয়ে তাকে আগুনের উপর ধরেন যাতে তার দেহের সমস্ত নশ্বর অংশ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। কিন্তু পেলেউস তাকে বাধা দিলে ক্রুদ্ধ থেটিস পিতা এবং পুত্র উভয়কেই পরিত্যাগ করে চলে যান।যদিও স্ট্যাটিয়াসের আগে কেউই অ্যাকিলিসের এই অজেয়ত্বের কাহিনি শোনাননি। অপরপক্ষে, হোমার ইলিয়াড মহাকাব্যে অ্যাকিলিসের আহত হওয়ার যে বর্ণনা দিয়েছেন তা এইরূপ একবিংশতি পর্বে পেলাগনের পুত্র পিয়োনিয়ান যোদ্ধা অ্যাসটারোপায়ুস স্ক্যামান্ডার নদীর তীরে অ্যাকিলিসকে যুদ্ধে আহ্বান করেন। তিনি যুগপৎ দুটি বর্শা নিক্ষেপ করেন যার একটি অ্যাকিলিসের কনুই ছুঁয়ে যায় ও ফিনকি দিয়ে রক্ত বেরিয়ে আসে।

তাছাড়াও মহাকাব্য চক্রের যেসকল খণ্ডকাব্যে অ্যাকিলিসের মৃত্যুবৃত্তান্ত পাওয়া যায় সেগুলি হল সাইপ্রিয়া আর্কটিনাস অফ মিলেটাস রচিত আইথিওপিস ও ইলিউ পারসিস এবং লেচে অফ মিটিলেন রচিত লিটল ইলিয়াড। তবে তার সাধারণ অজেয়ত্ব বা তার বিখ্যাত দুর্বলতার উল্লেখ কোথাও পাওয়া যায় না। পরবর্তীকালের কলস চিত্রকলায় অ্যাকিলিসের যে মৃত্যুদৃশ্য অঙ্কিত হয় সেখানে দেখানো হয় এক তির দেহে বিঁধে তার মৃত্যু হচ্ছে।পেলেউস পেলিয়ন পর্বতনিবাসী সেন্ট্যুর চিরনের হাতে অ্যাকিলিসের লালনপালনের ভার অর্পণ করেছিলেন।



গাও, দেবী, পেলিউস-তনয় অ্যাকিলিসের দুর্বার ক্রোধের গাথা
যে অভিশপ্ত ক্রোধ সহস্রাধিক এচিয়নের দুঃখের নিমিত্ত হয়।
অ্যাকিলিস ছিলেন একমাত্র নশ্বর যিনি দুর্বার ক্রোধ অনুভব করতেন। কখনও কখনও তার ক্রোধ ছিল অস্থিরমতি। কিন্তু অন্যান্য সময় তা সহজে জুড়াতে চাইত না। যুদ্ধের ঘটনাবলির দ্বারা অ্যাকিলিসের মানবীকরণ আখ্যায়িকার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়বস্তু।
ট্রয়যুদ্ধের পথে যাত্রা করে একবার পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই গ্রিকদের থামতে হয় রাজা টেলিফাস শাসিত রাজ্য মাইসিয়ায়। ফলে উভয়পক্ষে যুদ্ধ হয় এবং সেই যুদ্ধে টেলিফাস অ্যাকিলিসের হাতে জখম হন। বহু চেষ্টাতেও তার জখম না সারলে রাজা ওরাকল বা ভবিষ্যদ্বক্তার শরণাপন্ন হন। ভবিষ্যদ্বক্তা বলেন, যেই আঘাত করেছে সেই আঘাত সারাবে। ভবিষ্যদ্বক্তার কথা শুনে রাজা টেলিফাস আর্গোয় উপস্থিত হন। সেখানে অ্যাকিলিস এই শর্তে রাজাকে সারিয়ে তোলেন যে তিনি ট্রয়ের পথে তাদের পথপ্রদর্শক হবেন।
টেলিফাস সম্পর্কে ইউরিপিডস রচিত একটি হারানো নাটক সম্পর্কিত কয়েকটি বর্ণনা থেকে জানা যায় টেলিফাস ভিখারির ছদ্মবেশে অলিসে উপস্থিত হন এবং অ্যাকিলিসের কাছে প্রার্থনা করেন তার ক্ষত নিরাময় করার জন্য। অ্যাকিলিস চিকিৎসাবিদ্যায় নিজের অজ্ঞতার কথা বলে তাকে সহায়তা করতে অস্বীকার করেন। তখন টেলিফাস অরেস্টেসকে পণবন্দী করেন। তার মুক্তির বিনিময়ে তিনি দাবি করেন নিজের ক্ষত নিরাময়ে অ্যাকিলিসের সাহায্য। ওডিসিয়াস মতপ্রকাশ করেন যেহেতু বর্শার ফলায় ওই ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল তাই নিশ্চয়ই বর্শাই তা নিরাময় করতে পারবে। বর্শার কয়েকটি টুকরো ক্ষতস্থানের উপর বুলিয়ে দেয়া হলে টেলিফাস সুস্থ হয়ে যান।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা আগস্ট, ২০১৬ দুপুর ১২:১৮
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×