somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা অ্যাকিলিস (২য় পর্ব )

০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা অ্যাকিলিস ( প্রথম পর্ব )


ট্রলিয়াস
মহাকাব্য চক্রের যে গ্রন্থে অ্যাকিলিসের মহাক্রোধ বিবরণীর পূর্বের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে সেটি হল সাইপ্রিয়া। সেই গ্রন্থ অনুসারে অ্যাকিয়ানরা ঘরে ফিরতে চাইলে অ্যাকিলিস তাদের সংযত করেন। পরে তিনি ইনিসের পশুর দলকে আক্রমণ করেন প্রতিবেশী শহরগুলিতে লুণ্ঠন চালান এবং ট্রলিয়াসকে হত্যা করেন।ডেয়ার্স ফ্রিজিয়াস-এ বর্ণিত অ্যাকাউন্ট অফ দ্য ডেস্ট্রাকশন অফ ট্রয় নামক একটি লাতিন সারাংশের মাধ্যমে অ্যাকিলিসের কাহিনি মধ্যযুগীয় ইউরোপে পরিচিত হয়ে ওঠে। সেই কাহিনি অনুসারে ট্রলিয়াস ছিলেন এক ট্রোজান রাজপুত্র। তিনি ছিলেন রাজা প্রিয়াম ও হেক্যুবার সর্বকণিষ্ঠ বৈধ সন্তান। বয়সে তরুণ হলেও ট্রলিয়াস ছিলেন প্রধান যোদ্ধাদের অন্যতম। ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে ট্রয়ের নিয়তির সঙ্গে ট্রলিয়াসের নিয়তি অঙ্গাঙ্গী জড়িয়ে ছিল। তাই অপহরণের একটি প্রচেষ্টার পর থেকে তাকে লুকিয়ে রাখা হয়। অ্যাকিলিস ট্রলিয়াস এবং তার ভগিনী পলিজেনা উভয়ের সৌন্দর্যেই বিমোহিত হয়েছিলেন। কামলালসায় জর্জরিত হয়ে তিনি তরুণ ট্রলিয়াসকেই কামনা করে বসেন। কিন্তু ট্রলিয়াস অ্যাকিলিসের ইচ্ছার কাছে আত্মসমর্পণ করতে অস্বীকার করলে অ্যাপোলোর মন্দিরে বেদীর উপর তার শিরোশ্চেদ করা হয়। এই কাহিনির পরবর্তীকালীন পাঠান্তরে বর্ণিত হয়েছে অতিভাবাবেগে আচ্ছন্ন প্রণয়ালিঙ্গনে অ্যাকিলিস ভুলবশত ট্রলিয়াসকে হত্যা করেছিলেন। সেই পাঠ অনুসারে অ্যাকিলিসের মৃত্যু উক্ত অপবিত্রকরণের শাস্তিস্বরূপ নেমে এসেছিল। প্রাচীন লেখকদের রচনায় ট্রলিয়াস ছিলেন সেই মৃত শিশুসন্তানদের উপমা যাদের মৃত্যুতে তাদের পিতামাতারা শোকাচ্ছন্ন হতেন। প্রথম ভ্যাটিকান পুরাণবিদের মতে যদি ট্রলিয়াস বয়ঃপ্রাপ্তি অবধি বেঁচে থাকতেন তবে ট্রয় অপরাজেয় হত।


ইলিয়াড মহাকাব্যে
হোমারের ইলিয়াড ট্রয়যুদ্ধে অ্যাকিলিস কী করেছিলেন তার সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় উপাখ্যান। এই হোমারীয় মহাকাব্যে ট্রয়যুদ্ধের মাত্র কয়েক সপ্তাহের বর্ণনা লিপিবদ্ধ আছে এখানে অ্যাকিলিসের মৃত্যুর বর্ণনাও দেয়া হয়নি। অ্যাকিয়ান বাহিনীর প্রধান সেনাপতি অ্যাগামেনন কর্তৃক অপমানিত হয়ে অ্যাকিলিসের যুদ্ধ থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার কাহিনির মাধ্যমে এর সূত্রপাত । অ্যাগামেনন ক্রিসেইস নামের একটি মেয়েকে ক্রীতদাসী করে রেখেছিলেন। মেয়েটির বাবা ক্রিসেস ছিলেন অ্যাপোলোর পুরোহিত। তিনি অ্যাগামেননের কাছে নিজ কন্যাকে ভিক্ষা চাইলে অ্যাগামেনন তাকে ছেড়ে দিতে অস্বীকার করেন। তাতে অ্যাপোলো ক্রুদ্ধ হয়ে গ্রিকদের মধ্যে মহামারী প্রেরণ করেন। ভবিষ্যদ্বক্তা ক্যালকাস এই দুর্বিপাকের কারণ সঠিকভাবে অনুধাবন করেন। কিন্তু যতক্ষণ না অ্যাকিলিস তাকে নিরাপত্তা দেন ততক্ষণ তিনি মুখ খোলেন না। অ্যাকিলিসের কাছ থেকে নিরাপত্তা পেয়ে ক্যালকাস ঘোষণা করেন যে ক্রিসেইসকে তার পিতার কাছে ফেরত পাঠাতে হবে। অ্যাগামেনন রাজি হন। কিন্তু বদলে আদেশ করেন অ্যাকিলিসের যুদ্ধোপহার ব্রিসেইসকে ক্রিসেইসের বদলে তার কাছে পাঠাতে হবে। এতে অসম্মানিত হয়ে এবং থেটিসের প্ররোচনায় অ্যাকিলিস যুদ্ধ করতে বা তার সেনাদের অন্যান্য গ্রিক সেনাদের সঙ্গে পরিচালনা করতে অস্বীকার করেন।যুদ্ধ গ্রিকদের বিপক্ষে চলে গেলে নেস্টর ঘোষণা করেন যে ট্রোজানরা যুদ্ধে জয়লাভ করতে চলেছে। কারণ অ্যাগামেনন অ্যাকিলিসকে ক্রুদ্ধ করে তুলেছেন। তিনি বলেন যে অ্যাগামেননের উচিত অ্যাকিলিসকে শান্ত করে ফিরিয়ে আনা। অ্যাগামেনন রাজি হন। তিনি ওডিসিয়াস ও অন্য দুই গ্রিক প্রধানকে ব্রিসেইস এবং অন্যান্য উপহার অ্যাকিলিসের কাছে পাঠান। কিন্তু অ্যাকিলিস প্রত্যাখ্যান করেন। তিনি জানান গ্রিকদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তন করা উচিত যেমনটি তিনি করার পরিকল্পনা করছেন।যদিও তারপরই যুদ্ধক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকার জন্য হৃতগৌরব পুনরুদ্ধারের আশায় অ্যাকিলিস তার জননী থেটিসের কাছে প্রার্থনা জানান যে তিনি যেন জিউসের কাছে আবেদন করে ট্রোজানদের দ্বারা গ্রিকদের হঠিয়ে দেন।হেক্টরের নেতৃত্বে ট্রোজানরা সত্যসত্যই গ্রিক বাহিনীকে হঠিয়ে সৈকত পর্যন্ত নিয়ে আসে। সেখানে তাঁরা গ্রিক জাহাজগুলি লুণ্ঠন করেন। ধ্বংসের মুখোমুখি গ্রিক বাহিনীকে রক্ষার জন্য মিরমিডন বাহিনীকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে আসেন প্যাট্রোক্ল্যাশ। অ্যাকিলিস কিন্তু তাবুতেই রয়ে যান। প্যাট্রোক্ল্যাশ ট্রোজানদের সৈকত থেকে হঠিয়ে দিতে সমর্থ হন। কিন্তু ট্রয় নগরীকে যথার্থভাবে জয় করার আগেই হেক্টরের হাতে তিনি নিহত হন।


হেক্টর বধ
অ্যাকিলিস নেস্টরের পুত্র অ্যান্টিলোকাসের নিকট হতে প্যাট্রোক্ল্যাসের মৃত্যুসংবাদ পেলেন। ঘণিষ্ঠ সহচরের মৃত্যুতে শোকে মূহ্যমান হয়ে পড়লেন তিনি। তার সম্মানে আয়োজন করলেন একাধিক অন্ত্যেষ্টি ক্রীড়া প্রতিযোগিতার। মা থেটিস শোকার্ত অ্যাকিলিককে সান্ত্বনা দিতে এলেন। তিনি হেফাস্টাসকে বলে একটি বর্ম নির্মাণ করালেন। কারণ অ্যাকিলিসের যে বর্মটি পরে প্যাট্রোক্ল্যাস যুদ্ধে গিয়েছিলেন সেটি হেক্টর নিয়ে যান। এই নতুন বর্মের অংশ ছিল অ্যাকিলিসের ঢাল যেটির সুন্দর এবং বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন কবি।প্যাট্রোক্ল্যাসের মৃত্যুতে ক্রোধান্বিত অ্যাকিলিস মন পরিবর্তন করেন এবং যুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। ক্রোধের বশে তিনি অনেককে হত্যা করেন এবং হেক্টরকে খুঁজতে থাকেন। এমনকি অ্যাকিলিস নদীদেবতা স্ক্যামান্ডারের সঙ্গেও যুদ্ধে লিপ্ত হন। স্ক্যামান্ডার ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন কারণ অ্যাকিলিস নরহত্যা করে মৃতদেহ দিয়ে নদীপথ রুদ্ধ করে দিচ্ছিলেন। স্ক্যামান্ডার অ্যাকিলিসকে ডুবিয়ে দিতে গেলে হেরা এবং হেফাস্টাস তাকে বাধা দেন। জিউস স্বয়ং অ্যাকিলিসের ক্রোধে বিচলিত হয়ে ওঠেন এবং দেবতাদের পাঠিয়ে তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন যাতে তিনি ট্রয় নগরীকে আক্রমণ না করে বসেন। কারন ট্রয় ধ্বংসের উপযুক্ত সময় তখনও আসেনি। অবশেষে অ্যাকিলিস তার শিকারের সন্ধান পান। অ্যাথেনা তিন বার হেক্টরের প্রিয় ভাই ডেইফোবাসের ছদ্মবেশে হেক্টরকে অ্যাকিলিসের সঙ্গে সম্মুখসমরে যেতে নিষেধ করেন। অ্যাকিলিস ট্রয়ের প্রাচীরের চারিধারে তিন বার হেক্টরকে ধাওয়া করেন। অবশেষে অ্যাকিলিসের রণকৌশলটি ধরতে পেরে হেক্টর বুঝে যান যে মৃত্যু অনিবার্য। তিনি নিজের নিয়তিকে মেনে নেন। সম্মুখ সমরে এসে কেবল একটি তরবারি নিয়ে অ্যাকিলিসকে আক্রমণ করেন তিনি। অ্যাকিলিস হেক্টরের ঘাড়ে একটিমাত্র আঘাত করে তাকে বধ করেন এবং নিজের প্রতিশোধ তোলেন। তারপর হেক্টরের দেহ নিজের রথের সঙ্গে বেঁধে নয় দিন ধরে যুদ্ধক্ষেত্রময় তা হেঁচড়ে নিয়ে বেড়ান।দেবতা হার্মিসের সহযোগিতায় হেক্টরের পিতা প্রিয়াম অ্যাকিলিসের তাবুতে গিয়ে অ্যাকিলিসকে অনুরোধ করেন হেক্টরের শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে দিতে। ইলিয়াড এর সর্বশেষ স্তবকে বর্ণিত হয়েছে হেক্টরের শেষকৃত্যের বর্ণনা। যার পর ট্রয়ের পতন ছিল সময়ের অপেক্ষামাত্র।
পেন্থেসিলিয়া
প্রিয়ামের সঙ্গে সাময়িক যুদ্ধবিরতির পর অ্যাকিলিস আমাজনীয় যুদ্ধনায়িকা পেন্থেসিলিয়াকে যুদ্ধে পরাজিত ও নিহত করেন। প্রথমে পেন্থেসিলিয়ার রূপে মুগ্ধ অ্যাকিলিস তার সঙ্গে যুদ্ধ করতে চাননি। পরে তিনি বুঝতে পারেন পেন্থেসিলিয়ার রণকৌশল তার অপেক্ষাও উন্নত এবং তার প্রতি আকর্ষণ অ্যাকিলিসের কাছে মারাত্মক হতে পারে। সেই কারণে তিনি যুদ্ধ করেন ও পেন্থেসিলিয়াকে হত্যা করেন। কিন্তু এমন সুন্দরী নারীকে হত্যা করে তিনি শোকাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন এবং বিলাপ করতে থাকেন। তাতে থেরসিটাস নামে এক কুখ্যাত গ্রিক উপহাসকারী হেসে তাকে উপহাস করলে তার মুখে এক ঘুষি মেরে অ্যাকিলিস থেরসিটাসকে হত্যা করেন।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৩:১৫
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×