somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জানা না জানা বৌদ্ধধর্মের ইতিহাস ( প্রথম পর্ব )

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


খৃষ্টপূর্ব ৫ম শতাব্দী হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিস্তৃত যা পূর্বে প্রাচীন ভারতের পূর্বাঞ্চল থেকে গড়ে উঠে মগধ রাজ্যের যা বর্তমানে ভারতের বিহার প্রদেশ চারদিকে প্রচারিত হয়েছিলো। বৌদ্ধ ধর্ম অস্তিত্ব মূলত সিদ্ধার্থ গৌতমের শিক্ষার উপর ভিত্তি করে। বৌদ্ধ ধর্ম আজ পালনকৃত প্রাচীন ধর্মগুলোর মধ্যে একটি। বৌদ্ধ ধর্মের সূত্রপাত মূলত ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে শুরু হয়ে মধ্য এশিয়া এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অব্দি ছড়িয়ে পরে। এক সময় এই ধর্ম পুরো এশিয়া মহাদেশের বেশির ভাগ অংশ জুড়ে প্রভাব বিস্তার করেছিল। এছাড়াও বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস নানা ধরনের ভাববাদি আন্দোলনের উন্নয়ন যেমন, থেরবাদ, মহাযান এবং বজ্রযানের মতো বৌদ্ধ ধর্মের অন্যান্য শাখার উত্থান ও পতনের মধ্য দিয়ে চিহ্নিত।



অশোক চক্র, একটি প্রাচীন ভারতীয় ধর্মচক্রের চিহ্ন যা ভারতের জাতীয় পতাকার অংশভুক্ত।

সিদ্ধার্থ গৌতম বৌদ্ধ ধর্মের ঐতিহাসিক প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। তিনি শাক্য রাজবংশের এক ক্ষত্রিয়-ব্রাহ্মণ পরিবারে রাজপুত্র হয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্ম ও মৃত্যুর সময়কাল নিয়ে এখনও অনেক ইতিহাসবেত্তাদের মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ ইতিহাসবেত্তাগণ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, ৪০০ খৃষ্টপূর্বের কিছু দশক আগে বুদ্ধ মারা গিয়েছিলেন।তার শাক্য ক্ষত্রিয় বংশের পরিবারগণ ব্রাহ্মণ গোত্রের ছিল, যা তার পরিবার কর্তৃক প্রদানকৃত নাম গৌতম দ্বারা নির্দেশিত। উনবিংশ শতাব্দির পন্ডিত এইতেল এর মতে সিদ্ধার্থ গৌতমের নাম গৌতম শব্দটি এক ব্রহ্মর্ষি গৌতম থেকে অনুপ্রাণীত। অনেক বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থগুলোতে বর্ণিত আছে যে, বৌদ্ধ ছিলেন ব্রহ্মর্ষি অঙ্গিরসের বংশধর। উদাহরণস্বরূপঃ পালি মহাভাগ্য অঙ্গিরস গ্রন্থে বুদ্ধকে অঙ্গিরস হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে যা মূলত গৌতম বুদ্ধ কে অঙ্গিরস সম্প্রদায়ভুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করে। লেখক এবং ইতিহাসবেত্তা এডওয়ার্ড জে. থমাসও বুদ্ধকে ব্রহ্মর্ষি গৌতম এবং অঙ্গিরসের বংশধর হিসেবে উল্লেখ করেছেন।বৌদ্ধ পরম্পরাগত মতবাদানুযায়ী, সন্ন্যাসী জীবনযাপন ও ধ্যানের মধ্য দিয়ে সিদ্ধার্থ গৌতম ভোগপরায়ণতা এবং স্ব রিপুদমনের একটি সংযমী পথ আবিষ্কার করেছিলেন।সিদ্ধার্থ গৌতম সিদ্ধিলাভ করেছিলেন মূলত একটি অশ্বত্থ বৃক্ষের নিচে যেটি বর্তমানে ভারতের বুদ্ধ গয়ায় বোধি বৃক্ষ হিসেবে পরিচিত। সিদ্ধিলাভের পর থেকে গৌতম বুদ্ধ সম্যকসমবুদ্ধ বা আলোকিত ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচয় লাভ করেছিল।
তৎকালীন মগধ রাজ্যের সম্রাট বিম্বিসারের শাসনামলে বৌদ্ধ তার ধর্ম প্রচারে পৃষ্ঠপোষকতা পেয়েছিলেন। সম্রাট বিম্বিসার তার ব্যাক্তিগত ধর্মীয় বিশ্বাস হিসেবে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং তার রাজ্যে অনেকগুলো বৌদ্ধ বিহার নির্মাণের আদেশ প্রদান করেছিলেন। আর এই বিহারগুলোই বর্তমান ভারতের বিহার অঙ্গ রাজ্যের নামকরণে ভূমিকা রেখেছিল।উত্তর ভারতের বারাণসীর বর্তমান হরিণ-পার্ক নামক জায়গাটিতে বৌদ্ধ তার পাঁচ সঙ্গীকে প্রথম ধর্মদেশনা প্রদান করেছিল। বুদ্ধ সহ তার এই পাঁচ সন্ন্যাস সহচর মিলে প্রথম সংঘ ভিক্ষু বা সন্ন্যাসীদের দ্বারা গঠিত সম্প্রদায় গঠন করেন। বিভিন্ন বৌদ্ধ-গ্রন্থ অনুযায়ী,প্রাথমিক অনিচ্ছা থাকার সত্ত্বেও গৌতম বুদ্ধ পরে সন্ন্যাসীনিদেরও সংঘের আওতাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বৌদ্ধ সন্ন্যাসীনিদের ভিক্ষুণী হিসেবে অভিহিত করা হয়। বুদ্ধের মাসী এবং তার সৎ মা মহাপজাপতি গোতমী ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মের প্রথম ভিক্ষুণী। খৃষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দিতে তিনি ভিক্ষুণী হিসেবে সন্ন্যাস পদ গ্রহণ করেন।জানা যায়, বুদ্ধ তার অবশিষ্ট জীবনের বছরগুলোতে ভারতের উত্তরাঞ্চল ও অন্যান্য গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলগুলোতে পরিভ্রমণ করেন।
বুদ্ধ কুশীনগরের পরিত্যাক্ত এক জঙ্গলে দেহত্যাগ বা মহাপরিনির্বাণ লাভ করেন।
জনশ্রুতিতে শোনা যায় যে, মারা যাওয়ার পূর্বে বুদ্ধ তার শিষ্যদের বলে গিয়েছিলেন যে, তার প্রচার করা ধর্মীয়দেশনাই হবে তাদের নেতা যা তাদের দিক-নির্দেশনা প্রদানে সহায়তা করবে। পূর্ববর্তী অড়হৎরা গৌতমের মুখ-নিঃসৃত বাণীকেই ধর্ম এবং বিনয়ের শৃঙ্খলা ও সম্প্রদায়ের জীবনযাত্রার নিয়ম প্রাথমিক উৎস হিসেবে অভিহিত করেছিল। কিন্তু বাস্তবে বুদ্ধের কোন মুখ-নিঃসৃত বাণীরই হদিস মিলে নি। পালি, সংস্কৃত, চৈনিক ভাষা ও তিব্বতি ভাষায় যে ত্রিপিটক ও ধর্মীয়গ্রন্থগুলো পাওয়া যায় তা মূলত স্থানীয় মানুষদের মৌখিক বর্ণনা থেকে সংগৃহীত।


খৃষ্ট-পূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দির শুরু থেকে বৌদ্ধ ভূ-খন্ড হিসেবে পরিচিত উত্তর ভারত,গাঢ় কমলা রঙ দ্বারা চিহ্নিত, থেকে বৌদ্ধ ধর্মের সম্প্রসারণ, বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশসমূহ ,কমলা রঙ দ্বারা চিহ্নিত, এবং বৌদ্ধ ধর্মের ঐতিহাসিক প্রভাব সম্বলিত অংশসমূহ,হলুদ রঙ দ্বারা চিহ্নিত। মহাযান লাল তিরাকৃত চিহ্ন,, থেরবাদ ,সবুজ তিরাকৃত চিহ্ন, এবং তান্ত্রিক বজ্রযান,নীল তিরাকৃত চিহ্ন।
বৌদ্ধ ধর্ম পূর্বে গাঙ্গেয় উপত্যকায় কেন্দ্রীভূত থাকলেও পরে এই প্রাচীন ভূ-খন্ড থেকে বৌদ্ধ ধর্ম অন্যত্র ছড়িয়ে পরে। বৌদ্ধ ধর্মের ধর্মীয় শাস্ত্রের উৎসগুলো দুইটি ধর্মীয় মহাসঙ্গীতি সংরক্ষণ করেন, যার একটি হলো বুদ্ধের পাঠগত শিক্ষা সংরক্ষণের জন্য সন্ন্যাসী সংঘ ও আরেকটি হলো সংঘের অভ্যন্তরীণ নিয়মানুবর্তিতামুলক সমস্যাগুলো সমাধানের উপায়সমূহ।
১ম বৌদ্ধ মহাসঙ্গীতি খৃষ্টপূর্ব ৫ম শতাব্দি
প্রথম বৌদ্ধ মহাসঙ্গীতি গঠিত হয় বুদ্ধের পরিনির্বাণ লাভের পর অর্থাৎ বুদ্ধের দেহত্যাগের পর। খৃষ্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতাব্দিতে মহাকাশ্যপ নামক বুদ্ধের একজন কাছের শিষ্যের তত্ত্বাবধানে এবং রাজা অজাতশত্রুর সমর্থনে এই প্রথম বৌদ্ধ মহাসঙ্গীতি গঠিত হয়। এই মহাসঙ্গীতি গঠনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল বুদ্ধের মুখ নিঃসৃত বাণীগুলোকে মতবাদ সংক্রান্ত শিক্ষায় এবং অভিধর্মে রূপান্ততরিত করা এবং বৌদ্ধের সন্ন্যাসগত নিয়ামাবলীকে লিপিবদ্ধ করা। এই মহাসঙ্গীতি বৌদ্ধের খুড়তুতো ভাই এবং তার প্রধান শিষ্য আনন্দকে ডাকা হয় বুদ্ধের উপদেশ এবং অভিধর্ম আবৃত্তি করার জন্য এবং বুদ্ধের আরেক প্রধান শিষ্য উপালি কে বলা হয় বিনয়ের সূত্রসমূহ পাঠ করার জন্য। এগুলোই মূলত ত্রিপিটকের মূল ভিত্তি হিসেবে পরিচয় লাভ পায় যেগুলো পালি ভাষায় লিপিবদ্ধ হয়।তবে প্রথম বৌদ্ধ মহাসঙ্গীতিতে অভিধর্মের অস্তিত্বের কথা উল্লেখ নেই। এটি শুধুমাত্র দ্বিতীয় মহাসঙ্গীতির পরই অস্তিত্ব লাভ করে।
২য় বৌদ্ধ মহাসঙ্গীতি খৃষ্ট-পূর্ব ৪র্থ শতাব্দি
দ্বিতীয় বৌদ্ধ মহাসঙ্গীতি অনুষ্ঠিত হয় বৈশালিতে যেটি বৌদ্ধ ভিক্ষুদের নিয়ম-শৃংখলার বিভিন্ন বিষয়ের শিথিলকরণের বিতর্ক থেকে উত্থান হয়েছিল। প্রথম বৌদ্ধ মহাসঙ্গীতিতে মূল বিনয় গ্রন্থের সংরক্ষণের যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল, তা বৌদ্ধ ভিক্ষুদের শিথিলকরণসমূহের কারণগুলো বুদ্ধের শিক্ষার পরিপন্থী হওয়ায় দ্বিতীয় বৌদ্ধ মহাসঙ্গীতির আবির্ভাবের কারণ হয়ে উঠে।


সম্রাট অশোকের অধীনে মৌর্য্য সাম্রাজ্য ছিল পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী বৌদ্ধ রাষ্ট্র। এই সাম্রাজ্যে দাতব্য চিকিৎসালয়, বিনামূল্যে পড়াশোনার ব্যবস্থা এবং মানবাধিকার প্রাধান্য পেয়েছিল।
সম্রাট অশোকের ধর্মান্তরীকরণ খৃষ্টপূর্ব ২৬১ অব্দে
মৌর্য্য সাম্রাজ্যের সম্রাট অশোক প্রাচীন ভারতের পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত কলিঙ্গ রাজ্যের বর্তমান ভারতের ওড়িশা প্রদেশ রক্তাক্ত বিজয়ের পর বৌদ্ধ ধর্মে দীক্ষিত হন। ভয়াবহ কলিঙ্গ যুদ্ধ যে আতংক ও দূর্বিপাক সৃষ্টি করেছিল, সেইসব বিষয় নিয়ে অনুতপ্ত হয়ে সম্রাট অশোক সহিংসতা ত্যাগের সিদ্ধান্ত নেন এবং মহানুভবতার সাথে যুদ্ধের ফলে সৃষ্ট কলিঙ্গ রাজ্যের জনগণের দুঃখ দূর্দশাকে সম্মান এবং যথাযথ মর্যাদা দিয়ে তা প্রতিস্থাপন করার চেষ্টা করেন। সম্রাট স্তুপ এবং স্তম্ভ নির্মাণের মধ্য দিয়ে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারকার্য শুরু করেন এবং পশু-পাখিদের প্রতি দয়াশীল এবং মানুষের জীবনযাপনকে ধর্মমুখী করার জন্য তাঁর ধর্ম-প্রচারের মাধ্যমে আহ্বান করতে থাকেন। তাঁর নির্মাণকৃত স্তুপগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ভারতের অঙ্গরাজ্যে মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালে অবস্থিত সাচী স্তুপ। এটার নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছিল খৃষ্ট পূর্ব ৩য় শতাব্দীতে এবং পরবর্তীতে এটার নির্মাণ কাজ আরো সম্প্রসারণ করা হয়। এই স্তুপের উৎকীর্ণ ফটক যেটি তোরণ নামে পরিচিত, মূলত ভারতে বৌদ্ধ শিল্পের শ্রেষ্ঠ উদাহরণ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সম্রাট এছাড়াও পুরো দেশ জুড়ে অনেক রাস্তাঘাট, হাসপাতাল, পান্থশালা, বিশ্ববিদ্যালয় এবং সেচ ব্যবস্থার উন্নয়ন সাধন করেন। তিনি তার প্রজাদের ধর্ম, বর্ণ, জাত-পাত, রাজনীতি নির্বিশেষে সমান আচরণ করতেন।



ব্রাহ্মি পাথর দ্বারা তৈরী সম্রাট অশোকের ৬ষ্ঠ স্তম্ভের ভগ্নাংশ বিশেষ, যা বৃটিশ জাদুঘরে সংরক্ষিত।


সর্বোচ্চ স্তূপ খৃষ্টীয়পূর্ব ৪র্থ শতাব্দি, সাচী, ভারত।
সম্রাট অশোকের আমলেই বৌদ্ধ ধর্ম ভারতের বাইরে পৃথিবীর অন্যান্য দেশগুলোতে ছড়িয়ে পরে । অশোকের স্থম্ভ ও স্তুপ থেকে জানা যায়, বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারের জন্যে সম্রাট তার প্রতিনিধিদের ভারতের দক্ষিণের দিকে শ্রীলংকা পর্যন্ত, পশ্চিমের গ্রীক সাম্রাজ্যে, বিশেষ করে প্রতিবেশী গ্রিক ব্যাক্ট্রিয় রাজ্য এবং সম্ভবত ভূমধ্যসাগর পর্যন্ত বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার করেন।
৩য় বৌদ্ধ মহাসঙ্গীতি খৃষ্ট-পূর্ব ২৫০ অব্দে
সম্রাট অশোক খৃষ্ট পূর্ব ২৫০ অব্দে পাটালিপুত্রে বর্তমান ভারতের বিহার অঙ্গরারাজ্যের রাজধানী পাটনায় ৩য় বৌদ্ধ মহাসঙ্গীতির আহ্বান করেন। এই ৩য় বৌদ্ধ মহাসঙ্গীতির তত্ত্বাবধান করেছিলেন বৌদ্ধ সন্ন্যাসী মোগালিপুত্ততিসসা। এই মহাসঙ্গীতির উদ্দেশ্য ছিল সংঘের শুদ্ধিকরণ, বিশেষ করে অ বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা যারা রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতায় আকৃষ্ট ছিল। ৩য় মহাসঙ্গীতির মধ্য দিয়ে বৌদ্ধ মিশনারী পৃথিবীর অন্যত্র প্রচার হতে থাকে।
অশোকের কিছু স্থম্ভ থেকে জানা যায় যে বৌদ্ধ বিশ্বাস হেলেনিস্টিক বিশ্বে প্রচারের জন্য তিনি যে কার্য-সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছিলেন তা ভারতের সীমানা পেড়িয়ে সুদূর গ্রীস অব্দি ছড়িয়ে পরেছিল। পাশাপাশি অশোকের স্তম্ভ থেকে হেলেনিস্টিক অঞ্চলের তৎকালীন রাজনৈতিক সংগঠন এবং প্রাচীন গ্রীকের রাজাদের নাম এবং তাদের রাজ্যের অবস্থান এবং এমনকি কিছু গ্রীক সম্রাট যেমনঃ সেল্যুসিড সাম্রাজ্যের এন্টিওকাস ২য় থিউওস ২৬১,২৪৬ খৃষ্টপূর্ব, মিশর সাম্রাজ্যের তৎকালীন অধিপতী টলেমি ২য় ফিলাডেলফোস ২৮৫,২৪৭ খৃষ্টপূর্ব, ম্যাকাডোনিয়া সাম্রাজ্যের সম্রাট অ্যান্টিগোনাস গোনাটাস ২৭৬,২৩৯ খৃষ্টপূর্ব, সিরেনেইকা বর্তমান লিবিয়া সাম্রাজ্যের মাগাস ২৮৮,২৫৮ খৃষ্টপূর্ব এবং এপিরাস বর্তমান গ্রীসের উত্তর ও পশ্চিমাংশ সাম্রাজ্যের অ্যালেক্সান্ডার ২য় ২৭২ থেকে ২৫৫ খৃষ্টপূর্ব প্রমুখ সম্রাটেরা বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছে বলে দাবী করা হয়।


সম্রাট অশোকের শাসনামলে খৃষ্টপূর্ব ২৬০-২১৮ অব্দ বৌদ্ধ ধর্মে ধর্মান্তরীকরণ যা অশোকের স্তম্ভ থেকে জানা গিয়েছিল।
সীমানা পেরিয়ে, ছয়শত যোজন দূরে ৫,৪০০-৯৬০০ কি.মি. সেখানেই ধর্মের বিজয় সাধিত হয়েছে যেখানে গ্রীক সম্রাট অ্যান্টিওকোস, টলেমি, অ্যান্টিগোনোস, মাগাস এবং অ্যালেক্সান্ডার এবং দক্ষিণে চোল সাম্রাজ্য, পান্ড রাজবংশ, তাম্রপার্নি বর্তমান শ্রী-লঙ্কা শাসন বিস্তৃত। ত্রয়োদশ শতাব্দির শিলালিপিতে পাওয়া অশোকের অনুশাসন
পালি সূত্র থেকে আরো জানা যায় যে, সম্রাট অশোকের কিছু প্রতিনিধিরা গ্রীক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ছিলেন যারা দুই উপমহাদেশের মধ্যে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদানে ভূমিকা রাখতেনঃযখন জ্যেষ্ঠ মোগ্‌গলিপুত্ত, ধর্মের শিখাদীপ প্রজ্জ্বলনকারি সম্রাট অশোক ৩য় মহাসঙ্গীতির সমাপ্তি ঘটান, তখন তিনি তার এক গ্রীক বৌদ্ধ সন্ন্যসী চতুর্থ থের কে ধর্মরক্ষিত নামের এক বৌদ্ধ মিশনারীর অধীনে অপারন্তকায় গুজরাট ও সিন্ধু প্রেরণ করেন।


কান্দাহারে পাওয়া সম্রাট অশোকের দ্বি-ভাষিক শিলালিপি যা কাবুল জাদুঘরে সংরক্ষিত।
অশোক এছাড়াও গ্রীক এবং আর্মাইক ভাষায় তার ধর্ম-স্তম্ভ নির্মাণ করেছিলেন যেগুলো আফগানিস্তানের কান্দাহারে পাওয়া গিয়েছিল। গ্রীক সম্প্রদায়ের মানুষদের মধ্যে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারের জন্য তিনি গ্রীক শব্দ "eusebeia" কে ধর্ম শব্দের প্রতিশব্দ রূপে ব্যবহার করেনঃ
"রাজত্বের দশ বছরের সময়কালে, সম্রাট Piodasses অশোক মতবাদ কে বৌদ্ধ বিশ্বাসকে মানুষদের কাছে ভক্তি-পূর্ণ রূপে তুলে ধরেছেন। এবং সেই থেকে তিনি মানুষদের আরো ধার্মিক গ্রীক শব্দ: εὐσέβεια, eusebeia করে তুলেন এবং সমগ্র পৃথিবীতে উন্নতি লাভে সচেষ্ট করে তুলেন।"
জি.পি. কারাটেলি কর্তৃক মূল গ্রীক অংশ হতে অনুবাদকৃত
এট স্পষ্টত নয় যে, সাংস্কৃতির এই পারষ্পরিক আন্তঃক্রিয়া বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারে কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পেরেছিল। তবে কিছু লেখকের মতে ধর্ম-প্রচারে হ্যালিনিস্ট চিন্ত-ভাবনা ও বৌদ্ধ দর্শনের মধ্যে এই সমন্বয় প্রচেষ্টা সেই সময় গ্রীসের দেশগুলোতে প্রভাব বিস্তার করেছিল। সেই সব লেখকগণ আরো উল্লেখ করেছিলেন যে সেই সময়ে হ্যালেনিস্টিক বিশ্বে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব ছিল, বিশেষত আলেক্সান্দ্রিয়া আলেক্সান্দ্রিয়ার ক্লেমেন্ট দ্বারা উল্লেখিত ও বিশেষ করে বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব ছিল আলেক্সান্দ্রিয়ার খৃষ্টপূর্ববর্তী থেরাপুটি ইহুদী সম্প্রদায়ের মধ্যে যারা হয়তো পরবর্তীতে বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষা ও সন্ন্যাস জীবনযাপন থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছিল এবং এছাড়াও এদের পশ্চিমে সম্রাট অশোকের ধর্মীয় প্রতিনিধিদের বংশধর হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। এছাড়া সাইরিনের দার্শনিক হেজেসিসের মতে, সাইরিন সাম্রাজ্যের সম্রাট মাগাসের শাসনামলে অশোকের বৌদ্ধ মিশনারীদের প্রভাব ছিল বলে তিনি উল্লেখ করেন।
এছাড়াও টলেমিক সাম্রাজ্যের সময়কালীন বৌদ্ধ ধর্মের যে শিলালিপি পাওয়া যায়, তাও মিশরের আলেকজান্দ্রিয়া থেকে উদ্ধার হয়, ধর্ম চক্রের সাথে সাজানো রয়েছে। খৃষ্টপরবর্তী ২য় শতাব্দিতে ব্যাকট্রিয়ানের বৌদ্ধ সম্প্রদায় এবং ভারতীয় উলঙ্গ সন্ন্যাসীদের খৃষ্টান পাদ্রী ও গোড়ামীবাদি আলেকজান্দ্রিয়ার ক্লেমেন্ট তাদের গ্রীক চিন্তা-ভাবনা ও দর্শনে অবদান রেখেছিল বলে স্বীকৃতি প্রদান করেন।
এভাবেই দর্শন, সর্বোচ্চ উপযোগী একটি জিনিস, যা বিকশিত হয় প্রাচীনত্বের বর্বরদের হাত ধরে, জাতির উপর তাদের আলো প্রতিফলনের মধ্য দিয়ে। এবং পরবর্তীতে তারা গ্রীসেও এসেছিল। তাদের প্রথম সারীর পদগুলোতে মিশরের ভাববাদিরা ছিল; এবং অ্যাসাইরানদের মধ্যে ছিল কাল্ডিয়া-রা; গল-দের মধে ছিল ড্রুইড-রা; ব্যাকট্রিয়ানদের মধ্যে ছিল শ্রমণরা; ছিল সেল্টিক সভ্যতার দার্শনিকরা; এছাড়াও ছিল পারস্যের জোরোয়াস্ট্রিনরা যারা প্রভু যীশুর আগমনী বার্তা ভবিষ্যত বাণী করেছিল এবং তারা জুডার ভূ-খন্ডে এসেছিল। ভারতের উলঙ্গ সন্ন্যাসী ও অন্যান্য দার্শনিকরাও এদের মধ্যে ছিল। এবং ভারতীয় উপমহাদেশের এই লোকগুলোর মধ্যে দুইটি শ্রেণী বিদ্যমান ছিল। একটি ছিল শ্রমণ সম্প্রদায় আর আরেকটি ছিল ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়।" - আলেকজান্দ্রিয়ার ক্লেমেন্ট।

বইঃ The Stromata, or Miscellanies, চাপ্টারঃ ১৫
তথ্যসূত্র ইন্টারনেট
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:১৯
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×