এটা ১৯৭৩সালে আরব-ইসরায়েলি যুদ্ধ ,অক্টোবর যুদ্ধ, রমজান যুদ্ধ এবং ইয়ম কিপুর যুদ্ধ বলেও অনেকের কাছে পরিচিত । মিশর এবং সিরিয়ার নেতৃত্বাধীন জোট ও ইসরায়েলের মধ্যে ১৯৭৩ সালের ৬ই অক্টোবর থেকে ২৫শে অক্টোবরের মধ্যে সংঘটিত হয়।ইহুদিদের পবিত্র দিন ইয়ম কিপুরের সময় ইসরায়েল অধিকৃত অঞ্চলে আরব জোটের অতর্কিত হামলার মাধ্যমে সেই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। সেসময় পবিত্র রমজান মাস ছিল। মিশরীয় এবং সিরিয়ান সেনারা যুদ্ধবিরতি রেখা ভেদ করে যথাক্রমে সিনাই উপদ্বীপ এবং গোলান মালভূমিতে ঢুকে পড়েন। সেই অঞ্চলগুলো ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধের সময় ইসরায়েল অধিকার করে নেয়। যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন উভয়ে তাদের নিজ নিজ মিত্রদের তখন সহায়তা করেন। ফলে দুইটি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে বিবাদ সৃষ্টি হয়েছিল।
মিশরের সফলভাবে সুয়েজ খাল অতিক্রম করার মাধ্যমে যুদ্ধের সূচনা হয়। যুদ্ধবিরতি রেখা অতিক্রম করার পর মিশরীয় সেনারা সিনাই উপদ্বীপের দিকে যাত্রা করে। তিন দিন পর ইসরায়েল এর অধিকাংশ সেনা নিয়োগ করে মিশরীয় অগ্রযাত্রা থামাতে সক্ষম হয়। সিরিয়ানরা গোলান মালভূমির উপর হামলা চালায়। প্রথমদিকে তারা ইসরায়েলি অধিকৃত অঞ্চলে সাফল্য লাভ করে।
তিন দিনের মধ্যে ইসরায়েলিরা সিরিয়ানদের যুদ্ধপূর্ব যুদ্ধবিরতি রেখার বাইরে পাঠাতে সক্ষম হয়। এরপর তারা সিরিয়ার অভ্যন্তরে চারদিনব্যপী পাল্টা আক্রমণ চালায়। এক সপ্তাহের মধ্যে ইসরায়েলি গোলন্দাজরা দামেস্কের উপকন্ঠে গোলাবর্ষণ শুরু করে। নিজ মিত্রের ক্ষতির কথা চিন্তা করে মিশরের রাষ্ট্রপতি আনোয়ার সাদাত ধারণা করতেন যে সিনাইয়ের ভেতরে দুইটি কৌশলগত পথ অধিকার আলোচনার সময় তার অবস্থান শক্ত করবে। তাই তিনি মিশরীয়দের পুনরায় আক্রমণের নির্দেশ দেন। কিন্তু এই আক্রমণ প্রতিহত করা হয়। এরপর ইসরায়েলিরা পাল্টা আক্রমণ করে এবং দক্ষিণ ও পশ্চিমদিকে কায়রোর দিকে ধীরে অগ্রসর হওয়া শুরু করে। সেসময় উভয় পক্ষে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
২৪শে অক্টোবর নাগাদ ইসরায়েল নিজেদের অবস্থান শক্ত করে নেন এবং মিশরের থার্ড আর্মি এবং সুয়েজের শহর ঘিরে ফেলতে সক্ষম হন। তখন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে বেশ উত্তেজনা বেড়ে যায়। ২৫শে অক্টোবর যুদ্ধবিরতি হয় এবং যুদ্ধের সমাপ্তি হয়।সেই যুদ্ধের দীর্ঘমেয়াদি ফলাফল ছিল। ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধে ভারসাম্যহীন অবস্থায় পরা মিশরীয়-সিরিয়ান-জর্ডানি মিত্রতা প্রাথমিক সাফল্যের ফলে খন্ডিত হয়। ইসরায়েল যুদ্ধক্ষেত্রে সফল হলেও এটি একচ্ছত্রভাবে আরব রাষ্ট্রগুলো সামরিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না তা প্রতীয়মান হয়। এসকল পরিবর্তন শান্তি প্রক্রিয়ার দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। ১৯৭৮ সালে ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তার ফলে মিশরকে সিনাই উপদ্বীপ ফিরিয়ে দেওয়া হয় এবং প্রথমবারের মত কোনো আরব রাষ্ট্র কর্তৃক ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। মিশর সোভিয়েত ইউনিয়ন বলয়ের প্রভাব ত্যাগ করে বেরিয়ে আসে।
তথ্যসূত্র: Perez, Cuba, Between Reform and Revolution, pp. 377–379
Gott, Cuba, A New History, p. 280.
Mahjoub Tobji (২০০৬)। Les officiers de Sa Majesté: Les dérives des généraux marocains 1956-2006। 107: Fayard।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০১৭ রাত ১:৩২