জগদ্দল মহাবিহার বাংলাদেশের নওগাঁ জেলার ধামুরহাট উপজেলার একটি প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। এটি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার উত্তর ওপূর্বে এবং মঙ্গলবাড়ি থেকে ৬ কিলোমিটার উত্তর ওপশ্চিমে অবস্থিত।এটি জগতপুর মৌজার উত্তরে এবং জগদ্দল মৌজার দক্ষিণাংশে অবস্থিত এক অতি প্রাচীন নিদর্শন। নওগাঁ জেলার ধামুইরহাট থানার জয়পুর ওধামুইরহাট সড়কের উত্তর দিকে অবস্থিত এই প্রাচীন কীর্তি।বর্তমানে স্থানীয় জনগণ এটিকে বটকৃষ্ণ রায় নামক এক জন জমিদারের বাড়ির ধ্বংসাবশেষ বলে মনে করেন।
কক্ষগুলি মূলত ব্যবহৃত হতো পাঠকক্ষ হিসেবে।
এখানে বেরিয়ে এসেছে মূল মন্দির, সামনের দিকের বিশালাকার হলঘরের অংশ ও চারটি বৌদ্ধ ভিক্ষু কক্ষের অংশ বিশেষ। পূর্বমুখী মন্দিরটি প্রায় বর্গাকার। এর তিনদিকে প্রশস্ত প্রদক্ষিণ পথ রয়েছে। প্রবেশপথের প্রশস্ততা এক দশমিক ১২ মিটার। তিনটি ধাপ পেরিয়ে মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করা যায়। মন্দিরে প্রবেশপথে বিশাল আকারের কালো পাথর দিয়ে চৌকাঠ ব্যবহার করা হয়েছিল
ইতিহাস থেকে জানা যায় যে রাজা রামপাল গৌড় রাজ্য পুনরুদ্ধারের পর রামাবতী নগরে রাজধানী স্থাপন করেন। আইন-ই-আকবর রচয়িতা আবুল ফজল এ স্থানটিকে রমৌতি বলে উল্লেখ করেছেন। প্রাচীন বাংলার ধর্মমঙ্গল কাব্যগুলিতে রামাবতীর উল্লেখ আছে। রাজা রামপালের পুত্র মদনপালের তাম্র শাসনেও রামাবতী নগরীর উল্লেখ আছে। দীনেশ চন্দ্র সেন বলেছেন যে এই রামাবতী নগরে রাজা রামপাল জগদ্দল মহাবিহারের প্রতিষ্ঠা করেন। ঐতিহাসিক রামপ্রাণগুপ্ত জগদ্দল বিহার দিনাজপুরে অবস্থিত বলে উল্লেখ করেছেন। রামপ্রাণগুপ্তের জগদ্দল বিহার যে নওগাঁ জেলার আলোচ্য বিহার তা সহজেই অনুমান করা যায়। কারণ পূর্বে এ জেলা দিনাজপুর জেলার অংশ ছিল। একাদশ বা দ্বাদশ শতাব্দীতে রাজা রামপাল এই মন্দির নির্মাণ করেন বলে নীহাররঞ্জন রায়ের বাঙ্গালীর ইতিহাস গ্রন্থে উল্লেখ আছে। সে গ্রন্থে আরও উল্লেখ আছে যে এই মন্দিরের অধিষ্ঠাতা দেবতা ছিলেন অবলোকিতেশ্বর, আর অধিষ্ঠাত্রী দেবী ছিলেন মহাতারা।
এখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেক নির্দশন ও টক্কামারী দিঘীসহ নানান স্থাপনা।
এই বিহারটি প্রাচীন বাংলার শিক্ষাদীক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের মতে এই বিহারের দুইজন স্বনামধন্য পন্ডিত ছিলেন আর তারা হলেন দানশীল এবং বিভূতিচন্দ্র। প্রায় ষাটখানা গ্রন্থের তিব্বতী অনুবাদ করেন আচার্য দানশীল। রাজপুত্র বিভূতিচন্দ্র ছিলেন একাধারে গ্রন্থকার, টীকাকার, অনুবাদক এবং সংশোধক। জগদ্দল বিহারের আচার্য মোক্ষকর গুপ্ত তর্কভাষা নামে বৌদ্ধ ন্যায়ের উপর একটি পুঁথি লিখেছিলেন। শুভকর গুপ্ত ধর্মাকর, প্রভৃতি মনীষী আচার্যরা কোন না কোন সময় এই মহাবিহারের অধিবাসী ছিলেন। কথিত আছে যে কাশ্মিরের প্রসিদ্ধ পন্ডিত শাক্যশ্রীভদ্র ১২০০ খ্রিস্টাব্দে বিভিন্ন বিহার দর্শন করে জগদ্দল বিহারে এসেছিলেন। বাংলার জগদ্দল বিহারের বৌদ্ধ পন্ডিত বিদ্যাকর সুভাষিত রত্নকোষ নামে একটি কোষকাব্য সংকলন সমাপ্ত করেছিলেন। প্রাচীন বাংলার এই জ্ঞানসাধন কেন্দ্র আজ সম্পূর্ণ ধ্বংসপ্রাপ্ত।
প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, উৎখননের সময় এখান থেকে প্রচুর প্রাচীন নির্দশন পাওয়া যায়। এখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অনেক নির্দশন ও টক্কামারী দিঘীসহ নানান স্থাপনা।
এখানে যে একটি বিশাল জনপদ ছিল, তা কয়েকটি স্থান অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে। জগদ্দলের পূর্বে নিকেশ্বর বা নিকাই শহর এবং পশ্চিমে জগৎনগর নামে বিশাল জনপদ ছিল।
এই ছবিটি বাংলাদেশের একটি স্তম্ভের।
১৯৯৬ সালের পর তিনবার উৎখননের কাজ হয়। উৎখননের ফলে এখানে যে ধ্বংসাশেষ পড়ে রয়েছে তার আয়তন পূর্ব ওপশ্চিমে দীর্ঘ ১০৫মি.X৮৫মি, দেওয়াল প্রায় ৫মি.X৫মিটার।
তথ্যসূত্রঃ
http://whc.unesco.org/en/tentativelists/1212/
এবং ইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৯:৩১