somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রথম উসমানের স্বপ্নই উসমানীয় সাম্রাজ্যের উত্থানে জোরালো ভূমিকা রেখেছিল

১৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


উসমান গাজি হলেন উসমানীয় তুর্কিদের একজন নেতা এবং তিনি উসমানীয় রাজবংশের প্রতিষ্ঠাতা। উসমানের সময় উসমানীয়দের রাজ্য আকারে ছোট ছিল এবং পরবর্তীতে তা বিশাল একটি সাম্রাজ্যের পরিণত হয়েছিল। ১৯২২ সালে সালতানাতের বিলুপ্তির পূর্ব পর্যন্ত সাম্রাজ্য টিকে ছিল।১২৯৯ সালের ১৭ই জানুয়ারি উসমান রুম সম্রাজ্যে থেকে তার ক্ষুদ্র রাজ্যের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন এবং কায়ি গোত্রের খান উপাধি ধারণ করেন। সেলজুকদের ভাঙনের পর আনাতোলিয়ায় উদ্ভূত ক্ষুদ্র তুর্কি রাজ্যসমূহের মধ্যে উসমানীয় রাজ্য অন্যতম একটি রাজ্য ছিল। সেসকল রাজ্যের মধ্যে উসমানীয়রা অবশেষে আনাতোলিয়াকে তুর্কি শাসনের অধীনে ঐক্যবদ্ধ করেন। মোঙ্গলদের পশ্চিমমুখী আগ্রাসনের কারণে অসংখ্য মুসলিম উসমানের রাজ্যে আশ্রয় নেন। বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের পতনের মধ্য দিয়ে উসমানীয় বেয়লিকের উত্থান শুরু হয়।


প্রথমযুগ থেকে উসমানীয়দের বিশ্বাস করা হয় যে প্রথম উসমানের নাম তৃতীয় রাশিদুন খলিফা উসমান ইবনে আফফানের নামে নামকরণ করা হয়েছিল। কিন্তু কিছু পন্ডিতের মতে তার মূল নাম তুর্কি যা আতমান বা আতামান হতে পারে এবং পরে তা পরিবর্তিত হয়ে উসমান হয়। উসমানের সমসাময়িক জর্জ পেকিমেরেসসহ পুরনো বাইজেন্টাইন সূত্রে তার নাম আতুমান বা আতমান হিসেবে উল্লেখিত আছে অন্যদিকে গ্রীক সূত্রে উসমান হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে। পুরনো একটি আরবি সূত্রে তার নাম ث এর পরিবর্তে ط দ্বারা লেখা হয়েছে।একটি প্রচলিত মতানুযায়ী প্রথম উসমানের পিতা এরতুগরুল মোঙ্গলদের আগ্রাসন থেকে রক্ষা করে তুর্কি কায়ি গোত্রকে মধ্য এশিয়া থেকে আনাতোলিয়া নিয়ে আসেন। তার মায়ের নাম ছিল হালিমা খাতুন। উসমান রুম সুলতান প্রথম কায়কোবাদের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেন। সুলতান তাকে আনাতোলিয়ায় বেয়লিক প্রতিষ্ঠা এবং পশ্চিমে বাইজেন্টাইনদের দিকে সীমানা বৃদ্ধির অনুমতি প্রদান করেন।


বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য দুর্বল হতে থাকায় এই অনুমতি সুযোগ সৃষ্টি করে। অন্যদিকে পূর্বাঞ্চলে সেলজুক তুর্কিদের অধীনে মুসলিমরা ক্রমাগত মোঙ্গল আগ্রাসন এবং অভ্যন্তরীণ কলহের কারণে বিভক্ত হয়ে যাচ্ছিল। ১২৫৮ সালে উসমানের জন্মের বছরে হালাকু খান বাগদাদ আক্রমণ করেন। ১২৫১ সালে এরতুগরুল নাইসিয়ান শহর থেবাসিওন জয় করেন। এর নতুন নামকরণ করা হয় সোগুত এবং এটি তার সাময়িক রাজধানী হয়। উসমান সেখানেই জন্মগ্রহণ করেছেন।পিতার মৃত্যুর পর উসমান প্রধান হন। সে সময় নাগাদ দুর্বল হয়ে পড়া বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য সমগ্র ইসলামি জগত থেকে সৈনিকরা তার শাসনাধীন অঞ্চলে এসে জড়ো হন। তাছাড়াও মোঙ্গলদের হাত থেকে বাঁচার জন্য অসংখ্য উদ্বাস্তু উসমানের আমিরাতে এসে আশ্রয় নেন। তাদের মধ্যে অনেক গাজিও ছিল। উসমানের দক্ষ নেতৃত্বে সেই যোদ্ধারা দ্রুত কার্যকর বাহিনী হিসেবে গড়ে উঠে এবং তার ফলে সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থাপিত হয়।উসমান বাইজেন্টাইনদের দিকে সীমানা বৃদ্ধি এবং তার তুর্কি প্রতিবেশিদের সাথে সংঘর্ষ এড়িয়ে চলার কৌশল গ্রহণ করেন। উত্তর ফ্রিজিয়ার অনুর্ব‌র এলাকা থেকে বিথিনিয়ার উর্বর সমভূমির দিকে যাওয়া গিরিপথের মধ্য দিয়ে তিনি প্রথমে অগ্রসর হন। স্ট্যানফোর্ড শর মতে এসকল বিজয় স্থানীয় বাইজেন্টাইন অভিজাত ব্যক্তিবর্গে‌র বিরুদ্ধে সংঘটিত হয়, তাদের মধ্যে কিছু যুদ্ধে পরাজিত হন এবং অন্যান্যরা বিভিন্ন চুক্তির মাধ্যমে শান্তিপূর্ণভাবে অধীনস্ত করা হয়।প্রথমদিককার সেসব বিজয় উসমানীয় লেখকদের পছন্দের বিষয়বস্তু ছিল। সেসকল কিংবদন্তি কবিরা তাদের লেখায় ব্যবহার করেছেন ফলে তা পরবর্তী যুগেও টিকে ছিল। উসমানীয় লেখকরা সেসকল কিংবদন্তীকে গুরুত্ব প্রদান্য দিতেন।
উসমান গাজি বিখ্যাত শাইখ এদিবালিকে শ্রদ্ধা করতেন এবং তার মতামতকে গুরুত্ব দিতেন। তিনি প্রায়ই এসকিশেহিরে এদিবালির সাথে সাক্ষাত করতেন।এক রাতে এদিবালির দরগাতে অবস্থান করার সময় দেখা স্বপ্ন পরের দিন তিনি এদিবালিকে জানান। তিনি বলেন, আমার শাইখ স্বপ্নে আমি আপনাকে দেখেছি। একটি চাঁদ আপনার বুকে দেখা দিয়েছে। এটি উঠতে থাকে এবং আমার বুকে এসে অবতীর্ণ হয়। আমার নাভি থেকে একটি গাছ উঠে। এটি বৃদ্ধি পায় এবং শাখাপ্রশাখা এত বেশি হয় যে এর ছায়া পুরো পৃথিবীকে আবৃত করে ফেলে। এই স্বপ্নের অর্থ কী ?
কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থাকার পর এদিবালি ব্যাখ্যা দিলেনঃ
অভিনন্দন উসমান! সর্বশক্তিমান আল্লাহ তোমার এবং তোমার বংশধরদেরকে সার্বভৌমত্ব প্রদান করেছেন। আমার কন্যা তোমার স্ত্রী হবে এবং সমগ্র বিশ্ব তোমার সন্তানদের নিরাপত্তাধীন হবে।উসমানের স্বপ্ন উসমানীয় সাম্রাজ্যের উত্থানে জোরালো ভূমিকা রেখেছে। উসমানীয় পণ্ডিতদের কাছে এই স্বপ্ন একটি গুরুত্বপূর্ণ সাহিত্যিক উপাদান ছিল।


স্ট্যানফোর্ড শর বক্তব্য অনুযায়ী সেলজুকদের কর্তৃত্ব ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর উসমানের প্রথম বাস্তব সামরিক বিজয় এসেছে। সেসময় তিনি এসকিশেহির এবং কারাজাহিসার দুর্গ অধিকার করতে সক্ষম হন। তারপর তিনি তার অঞ্চলের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ শহর ইয়েনিশেহির অধিকার করেন এবং তা উসমানীয়দের রাজধানী হয়।১৩০২ সালে নাইসিয়ার নিকটে সংঘটিত বাফিয়াসের যুদ্ধে বাইজেন্টাইনদের পরাজিত করার পর উসমান তার বাহিনীকে বাইজেন্টাইন নিয়ন্ত্রিত এলাকার নিকটে অবস্থান করান। বিপুল সংখ্যক গাজি যোদ্ধা ও ইসলামি পন্ডিত এবং দরবেশ উসমানের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে বসতি শুরু করেন। অভিবাসীদের অনেকেই তার সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। বিভিন্ন পটভূমি থেকে উঠে আসা গাজি যোদ্ধা এবং অভিযাত্রীদের সম্মেলনক্ষেত্র হওয়ায় পরবর্তী উসমানীয় শাসকরা নিজেদেরকে গাজিদের সুলতান বলতেন।উসমানের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের ফলে বাইজেন্টাইনরা ক্রমান্বয়ে আনাতোলিয়ার গ্রামাঞ্চল ত্যাগ করেন। বাইজেন্টাইন নেতৃত্ব উসমানীয়দের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছিল তবে তারা সুসংগঠিত এবং কার্যকরী ছিল না। ইতিমধ্যে উসমান উত্তর দিকে সাকারিয়া নদী এবং দক্ষিণদিকে মার্মারা সাগরের দিকে সীমানা বিস্তার করে ফেলেন । তাছাড়াও তার অনুসারীরা এজিয়ান সাগরের নিকটে বাইজেন্টাইন শহর ইফেসাস জয়ে অংশ নেয় আর তার ফলে শেষ উপকূলীয় বাইজেন্টাইন শহর তার হস্তগত হয়। তবে সেই শহর আইদিনের আমিরের অধীন হয়েছিল।বুরসার বিরুদ্ধে উসমান তার শেষ অভিযান চালান। তিনি তাতে ব্যক্তিগতভাবে অংশ নেননি। তবে বুরসার জয় উসমানীয়দের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বাইজেন্টাইনদের বিরুদ্ধে পরবর্তী অভিযানসমূহের ক্ষেত্রে সেই শহর ভিত্তিভূমি হিসেবে কাজ করেছে। পরে উসমানের পুত্র প্রথম ওরহান সেখানে রাজধানী স্থানান্তরিত করেন।

তথ্যসূত্র
http://www.theottomans.org/english/family/osman.asp

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৮:৪৬
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×