৬৩৭ সালের জেরুজালেম অবরোধ ছিল বাইজেন্টাইন সাম্রাজ্য এবং রাশিদুন খিলাফতের মধ্যকার একটি সংঘর্ষ। ৬৩৭ সালে এই ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল। রাশিদুন সেনাবাহিনী আবু উবাইদাহর নেতৃত্বে ৬৩৬ সালের নভেম্বরে জেরুজালেম অবরোধ করলে এই ঘটনা সংঘটিত হয়। ছয় মাস পর পেট্রিয়ার্ক সফ্রোনিয়াস তৎকালীন খলিফা উমরের ব্যক্তিগত উপস্থিতির শর্তে আত্মসমর্পণ করতে রাজি হয়। ৬৩৭ সালের এপ্রিলে খলিফা উমর জেরুজালেমে আসেন এবং সেসময় শহর মুসলিমদের কাছে আত্মসমর্পণ করে।শহরের উপর মুসলিমদের বিজয়ের ফলে ফিলিস্তিনের উপর আরব নিয়ন্ত্রণ সুপ্রতিষ্ঠিত করা হয়। একাদশ শতকে প্রথম ক্রুসেডের আগ পর্যন্ত সেই নিয়ন্ত্রণ বজায় ছিল। খ্রিস্টান এবং ইহুদিদের পাশাপাশি এটি মুসলিমদের কাছেও একটি পবিত্র শহর। সেই ঘটনার ফলেই বাইজেন্টাইন প্রদেশ প্যালেস্টিনা প্রিমার অবস্থা স্থিতিশীল হয়। ৬১৩ সালে ইহুদিদের হেরাক্লিয়াসের বিরুদ্ধে বিদ্রোহের পর ৬১৪ সালে সাসানীয়রা জেরুজালেম দখল করে নেয় এবং এখানে ইহুদি স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। ৬২৯ সালে বাইজেন্টাইন পুনরায় শহর দখল করে নেন । ফলে ১৫ বছরের ইহুদি শাসনের অবসান হয়ে যায়।জেরুজালেমে মুসলিম কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হলে বাইজেন্টাইন শাসন প্রতিষ্ঠার ৮ বছর পর এবং জুডিয়াথেকে রোমানদের দ্বারা ইহুদিদের বহিষ্কারের প্রায় ৫০০ বছর পর ইহুদিরা এখানে স্বাধীনভাবে বসবাস এবং ধর্মপালনের সুযোগ পুনরায় ফিরে পায়।
সাসানীয় বা সসনিয়ন সাম্রাজ্যের কিছু কথাঃ
সাসানীয় বা সসনিয়ন সাম্রাজ্য ইরানে ইসলামের আগমনের পূর্বে সেখানকার সর্বশেষ সাম্রাজ্য। প্রায় ৪০০ বছর ধরে এটি পশ্চিম এশিয়া এবং ইউরোপের দুইটি প্রধান শক্তির একটি ছিল। প্রথম আর্দাশির পার্থীয় রাজা আর্দাভনকে পরাজিত করে সসনিয়ন রাজবংশের পত্তন করেন। ইসলামের আরব খলিফাদের কাছে শেষ সসনিয়ান রাজা শাহানশাহ ৩য় ইয়াজদেগের্দের পরাজয়ের মাধ্যমে সসনিয়ন সাম্রাজ্যের সমাপ্তি ঘটে। সসনিয়ন সাম্রাজ্যের অধীনস্থ এলাকার মধ্যে ছিল বর্তমান ইরান ইরাক আর্মেনিয় ও দক্ষিণ ককেসাস, দক্ষিণ পশ্চিম মধ্য এশিয়া, পশ্চিম আফগানিস্তান ও তুরস্কের এবং সিরিয়ার অংশবিশেষ, পাকিস্তানের দক্ষিণপশ্চিমাংশ এবং আরব উপদ্বীপের কিছু উপকূলীয় এলাকা। সসনিয়নরা তাদের সাম্রাজ্যকে এরানশাহর অর্থাৎ ইরানীয় সাম্রাজ্য বলে ডাকত। সসনিয়নদের সাংস্কৃতিক প্রভাব সাম্রাজ্যের ভৌগোলিক সীমানা ছাড়িয়ে চতুর্দিকে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল। কোন কোন ঐতিহাসিকের মতে ইসলামের ইরান বিজয়ের পর সসনিয়নদের সময়ে প্রচলিত সংস্কৃতি, স্থাপত্য, লিখনপদ্ধতি, ইত্যাদি পরে ইসলামী সংস্কৃতি, স্থাপত্য ও লিখনপদ্ধতির অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত হয়।
পারসিকদের কাছ থেকে জেরুজালেম পুনরুদ্ধারের পর হেরাক্লিয়াস এটির প্রতিরক্ষা মজবুত করেন।ইয়ারমুকে বাইজেন্টাইনদের পরাজয়ের পর জেরুজালেমের পেট্রিয়ার্ক সফ্রোনিয়াস প্রতিরক্ষা পুনরায় সংস্কার করেন। মুসলিমরা শহর অবরোধ করতে চায়নি। তবে ৬৩৪ সালে মুসলিমরা শহরের সকল প্রবেশ পথের উপর কর্তৃত্ব স্থাপনের পর্যায়ে ছিল। মুসলিমরা পার্শ্ববর্তী দুর্গ পেল্লা এবং বসরা দখল করে নেওয়ার পর জেরুজালেমে একরকম অবরোধের মুখে পড়ে। ইয়ারমুকের যুদ্ধের পর শহরটি সিরিয়ার বাকি অঞ্চল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় এবং সম্ভবত অবরোধের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে রাখে। মুসলিম বাহিনী জেরিকো পৌছলে সফ্রোনিয়াস সকল পবিত্র চিহ্ন সংগ্রহ করেন এবং কনস্টান্টিনোপলে পাঠানোর জন্য উপকূলে পাঠিয়ে দেন। মুসলিমরা ৬৩৬ এর নভেম্বরে শহর অবরোধ করে। শহরের উপর ক্রমাগত আক্রমণের বদলে তারা বাইজেন্টাইনদের রসদ কমে যাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করেন যাতে রক্তপাতহীন আত্মসমর্পণ সম্ভব হয়।অবরোধের ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্য লিখিত নেই। তবে এটি রক্তপাতহীন ছিল বলে প্রতীয়মান হয়।বাইজেন্টাইনরা হেরাক্লিয়াসের কাছ থেকে সাহায্যের ব্যাপারে আশা ছেড়ে দিয়েছিল। চার মাস অবরোধের পর সফ্রোনিয়াস জিজিয়া প্রদান এবং আত্মসমর্পণ করতে সম্মত হন। তবে তিনি শর্ত দেন যে খলিফা উমরকে নিজে এসে চুক্তি স্বাক্ষর করতে হবে।বলা হয় যে সফ্রোনিয়াসের শর্তগুলো মুসলিমদের কাছে পৌছালে অন্যতম মুসলিম সেনাপতি শুরাহবিল ইবনে হাসানা প্রস্তাব করেন যে মদীনা থেকে খলিফার প্রত্যাবর্তনের অপেক্ষা না করে খালিদ বিন ওয়ালিদকে খলিফা হিসেবে পাঠানো হোক। কারণ তিনি দেখতে অনেকটা উমরের মতই ছিলেন। কিন্তু সেই কৌশল কাজ করেনি। সম্ভবত খালিদ সিরিয়ায় খুব পরিচিত ছিলেন অথবা শহরের খ্রিষ্টান আরবদের কেউ কেউ মদীনায় গিয়ে উমর এবং খালিদ উভয়কেই দেখেছে ফলে তাদের পার্থক্যগুলো তাদের জানা ছিল। সফ্রোনিয়াস আলোচনায় অসম্মতি জানান। যখন খালিদ মিশনের ব্যর্থতা সম্পর্কে রিপোর্ট করেন। আবু উবাইদাহ খলিফা উমরের কাছে চিঠি লিখে পরিস্থিতি অবহিত করেন ও আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের জন্য তাকে জেরুজালেম আসার আমন্ত্রণ জানান।
তথ্যসূত্রঃ ইন্টারনেট।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:২২