somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর সঙ্গী হিসেবে প্রথম জান্নাতে প্রবেশকারীর হযরত বিল্লাল (রাঃ) এর সংক্ষিপ্ত জীবনী

১১ ই জুন, ২০১৮ রাত ১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বিলাল ইবনে রাবাহ ৫৮০ সালে হেজাজের মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন।তার পিতা রাবাহ ছিলেন একজন আরব দাস এবং তার মাতা হামামাহ ছিলেন একজন প্রাক্তন আবিসিনিয় রাজকুমারী যাকে আমুল-ফিল এর ঘটনার সময় আটক করে দাসী করে রাখা হয়। দাস হিসেবে জন্মানোয় বিলাল (রাঃ) কে তার মনিব উমাইয়া খালাফ এর জন্য কাজ করতে হয়। কঠোর পরিশ্রমী ছিলেন বলে হযরত বিলাল (রাঃ) একজন ভাল দাস হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন এবং তার কাছেই আরবের পুতুলগুলোর ঘরের চাবি থাকতো। কিন্তু বর্ণবাদ এবং আরবের সামাজিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে সে সময় তিনি সমাজের উচুস্তরে যেতে পারেননি। এছাড়াও হযরত বিলাল (রাঃ) নবী মুহাম্মদ (সঃ) এর একজন ঘনিষ্ঠ সাহাবী ছিলেন।হযরত বিলাল (রাঃ) ছিলেন আবিসিনিয় বা হাবাশী যা বর্তমান ইথিওপিয়া তার বংশোদ্ভুত । হযরত বিলাল ছিলেন মক্কার কুরাইশ নেতা উমাইয়া ইবনে খালফ-এর ক্রীতদাস। ইসলাম গ্রহণের কারণে তিনি তার মনিব দ্বারা নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতিত হন। পরবর্তীতে আবু বক্কর (রাঃ) তাকে ক্রয় করেন দ্বাসত্ব এবং অত্যাচার থেকে মুক্ত করেন| হিজরতের পর মদীনায় থাকাকালীন অবস্থায় তিনিই সর্বপ্রথম আযান দেওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেন। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর সঙ্গী হিসেবে প্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী হওয়ার অগ্রিম সুসংবাদও তিঁনি নিজ জীবদ্দশাতেই নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর কাছ থেকে পেয়েছিলেন।

মুহাম্মাদ (সাঃ) যখন তার নবুয়াতের কথা ঘোষণা করে আল্লাহর বাণী প্রচার হরা শুরু করলেন হযরত বিলাল (রাঃ) তখন থেকে অবতীর্ণ সকল আয়াত মনোযোগ সহকারে শুনতেন। মুহাম্মাদ (সাঃ) এর ধর্মপ্রচার হযরত বিলাল (রাঃ) কে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করে এবং সে সময়ই তিনি ইসলাম গ্রহণ করে ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম কয়েকজনের মধ্যে একজন হয়ে ওঠেন।হযরত বিলাল মূর্তিপূজাকে ত্যাগ করেন এবং ফলশ্রুতিতে নির্মম নির্যাতনের স্বীকার হন। বিলালের মনিব উমাইয়া ইবনে খালাফ তার ইসলাম গ্রহণের কথা জানতে পেরে তাকে ইসলাম ত্যাগ করার জন্য জোর করতে থাকেন এবং তাতে ব্যর্থ হয়ে তার উপর অমানবিক নির্যাতন করা শুরু করেন। উমাইয়ার নির্দেশে বিলালকে মরুভূমির উত্তপ্ত বালিতে শুইয়ে রাখা হতো এবং তার বুকের উপর একটি বড় আকারের ভারি পাথর রেখে দেওয়া হতো যে কারণে সে সময় তার নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে যেতো। তারপরেও সে ইসলাম ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানালে উক্ত পাথরের উপর একজন মানুষকে উঠিয়ে তাকে লাফাতে বলা হতো। এত কিছুর পরেও হযরত বিলাল (রাঃ) অবিরাম এক ঈশ্বর, এক ঈশ্বর বলে চিৎকার করতে থাকতেন।পরে আবু বকর তাকে ক্রয় করে মুক্ত করে দেন।হযরত বিলাল (রাঃ) ৬২২ সালে হিজরতের বছরে অন্যান্য মুসলিমদের সাথে ইয়াস্রিব বা মদিনায় প্রথম হিজরত করেন। পরবর্তী এক দশক জুড়ে তিনি হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সকল সামরিক অভিযানে তার সঙ্গ দিয়েছেন।হযরত বিলাল (রাঃ) মুহাম্মাদ(সাঃ) এর বর্শা বহনকারী হওয়ার সম্মাননা অর্জন করেন, যা তিনি ৬২৪ সাল থেকে নামাজের দিকনির্দেশক হিসেবে ব্যবহার করতেন।

সুন্নিগণ এবং শিয়াগণ উভয়েই একমত যে, ১ম হিজরী সনে সম্ভাবত ৬২২ বা ৬২৩ সালে মুহাম্মাদ(সাঃ) আযান দেওয়ার রীতি প্রতিষ্ঠিত করেন।তিনি হযরত বিলাল (রাঃ) কেই তার সুগভীর, সুমধুর এবং সুরেলা কণ্ঠের জন্য প্রথম মুয়াজ্জিন হিসেবে বেঁছে নেন। সুন্নি এবং শিয়াগণ উভয়ই বিলালকে প্রথম মুয়াজ্জিন হিসেবে স্বীকার করেন।মদিনা একটি উত্তমরূপে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র হিসাবে স্থায়িত্ব পাবার পর, মুহাম্মাদ (সাঃ) বিলালকে মদিনার ইসলামি রাষ্ট্রের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেন।বায়তুল মালের তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত ইসলামের প্রথম কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তি তৎকালীন ইসলামি রাষ্ট্রে হযরত বিলাল (রাঃ)কে অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন অবস্থান এনে দিয়েছিল। বায়তুল মালের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে বিলাল সকল লেনদেনের দেখাশোনা করতেন।পাশাপাশি, তিনি বিধবা, এতিম, মুসাফির, এবং অসহায় দরিদ্রদের বায়তুল মাল হতে অর্থ প্রদান করতেন। বদরের যুদ্ধ, উহুদের যুদ্ধ এবং খন্দকের যুদ্ধসহ মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সকল সামরিক অভিযানে তিনি অংশগ্রহণ করেন।৬৩০ সালে মুসলিমগণ কোন রক্তপাত ছাড়াই মক্কা পুনুরুদ্ধার করতে সক্ষম হন। মুসলিম সেনাবাহিনী মক্কা দখল করার পরপরই হযরত বিলাল (রাঃ) কাবাঘরের উপরে উঠে পড়েন এবং আযান দেন। মক্কা শহরে এটাই ছিল মুসলিমদের প্রথম আযান।

তথ্যসূত্রঃ Click This Link
https://www.searchtruth.com/searchHadith.php?keyword=bilal&translator=1&search=1&book=&start=0&records_display=100&search_word=exact
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১৮ রাত ১:৪৩
১৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সবুজের মাঝে বড় হলেন, বাচ্চার জন্যে সবুজ রাখবেন না?

লিখেছেন অপলক , ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:১৮

যাদের বয়স ৩০এর বেশি, তারা যতনা সবুজ গাছপালা দেখেছে শৈশবে, তার ৫ বছরের কম বয়সী শিশুও ১০% সবুজ দেখেনা। এটা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা।



নব্বয়ের দশকে দেশের বনভূমি ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×