বিলাল ইবনে রাবাহ ৫৮০ সালে হেজাজের মক্কা নগরীতে জন্মগ্রহণ করেন।তার পিতা রাবাহ ছিলেন একজন আরব দাস এবং তার মাতা হামামাহ ছিলেন একজন প্রাক্তন আবিসিনিয় রাজকুমারী যাকে আমুল-ফিল এর ঘটনার সময় আটক করে দাসী করে রাখা হয়। দাস হিসেবে জন্মানোয় বিলাল (রাঃ) কে তার মনিব উমাইয়া খালাফ এর জন্য কাজ করতে হয়। কঠোর পরিশ্রমী ছিলেন বলে হযরত বিলাল (রাঃ) একজন ভাল দাস হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন এবং তার কাছেই আরবের পুতুলগুলোর ঘরের চাবি থাকতো। কিন্তু বর্ণবাদ এবং আরবের সামাজিক রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে সে সময় তিনি সমাজের উচুস্তরে যেতে পারেননি। এছাড়াও হযরত বিলাল (রাঃ) নবী মুহাম্মদ (সঃ) এর একজন ঘনিষ্ঠ সাহাবী ছিলেন।হযরত বিলাল (রাঃ) ছিলেন আবিসিনিয় বা হাবাশী যা বর্তমান ইথিওপিয়া তার বংশোদ্ভুত । হযরত বিলাল ছিলেন মক্কার কুরাইশ নেতা উমাইয়া ইবনে খালফ-এর ক্রীতদাস। ইসলাম গ্রহণের কারণে তিনি তার মনিব দ্বারা নিষ্ঠুরভাবে নির্যাতিত হন। পরবর্তীতে আবু বক্কর (রাঃ) তাকে ক্রয় করেন দ্বাসত্ব এবং অত্যাচার থেকে মুক্ত করেন| হিজরতের পর মদীনায় থাকাকালীন অবস্থায় তিনিই সর্বপ্রথম আযান দেওয়ার সৌভাগ্য লাভ করেন। নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর সঙ্গী হিসেবে প্রথম জান্নাতে প্রবেশকারী হওয়ার অগ্রিম সুসংবাদও তিঁনি নিজ জীবদ্দশাতেই নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর কাছ থেকে পেয়েছিলেন।
মুহাম্মাদ (সাঃ) যখন তার নবুয়াতের কথা ঘোষণা করে আল্লাহর বাণী প্রচার হরা শুরু করলেন হযরত বিলাল (রাঃ) তখন থেকে অবতীর্ণ সকল আয়াত মনোযোগ সহকারে শুনতেন। মুহাম্মাদ (সাঃ) এর ধর্মপ্রচার হযরত বিলাল (রাঃ) কে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করে এবং সে সময়ই তিনি ইসলাম গ্রহণ করে ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম কয়েকজনের মধ্যে একজন হয়ে ওঠেন।হযরত বিলাল মূর্তিপূজাকে ত্যাগ করেন এবং ফলশ্রুতিতে নির্মম নির্যাতনের স্বীকার হন। বিলালের মনিব উমাইয়া ইবনে খালাফ তার ইসলাম গ্রহণের কথা জানতে পেরে তাকে ইসলাম ত্যাগ করার জন্য জোর করতে থাকেন এবং তাতে ব্যর্থ হয়ে তার উপর অমানবিক নির্যাতন করা শুরু করেন। উমাইয়ার নির্দেশে বিলালকে মরুভূমির উত্তপ্ত বালিতে শুইয়ে রাখা হতো এবং তার বুকের উপর একটি বড় আকারের ভারি পাথর রেখে দেওয়া হতো যে কারণে সে সময় তার নিঃশ্বাস প্রায় বন্ধ হয়ে যেতো। তারপরেও সে ইসলাম ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানালে উক্ত পাথরের উপর একজন মানুষকে উঠিয়ে তাকে লাফাতে বলা হতো। এত কিছুর পরেও হযরত বিলাল (রাঃ) অবিরাম এক ঈশ্বর, এক ঈশ্বর বলে চিৎকার করতে থাকতেন।পরে আবু বকর তাকে ক্রয় করে মুক্ত করে দেন।হযরত বিলাল (রাঃ) ৬২২ সালে হিজরতের বছরে অন্যান্য মুসলিমদের সাথে ইয়াস্রিব বা মদিনায় প্রথম হিজরত করেন। পরবর্তী এক দশক জুড়ে তিনি হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সকল সামরিক অভিযানে তার সঙ্গ দিয়েছেন।হযরত বিলাল (রাঃ) মুহাম্মাদ(সাঃ) এর বর্শা বহনকারী হওয়ার সম্মাননা অর্জন করেন, যা তিনি ৬২৪ সাল থেকে নামাজের দিকনির্দেশক হিসেবে ব্যবহার করতেন।
সুন্নিগণ এবং শিয়াগণ উভয়েই একমত যে, ১ম হিজরী সনে সম্ভাবত ৬২২ বা ৬২৩ সালে মুহাম্মাদ(সাঃ) আযান দেওয়ার রীতি প্রতিষ্ঠিত করেন।তিনি হযরত বিলাল (রাঃ) কেই তার সুগভীর, সুমধুর এবং সুরেলা কণ্ঠের জন্য প্রথম মুয়াজ্জিন হিসেবে বেঁছে নেন। সুন্নি এবং শিয়াগণ উভয়ই বিলালকে প্রথম মুয়াজ্জিন হিসেবে স্বীকার করেন।মদিনা একটি উত্তমরূপে প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্র হিসাবে স্থায়িত্ব পাবার পর, মুহাম্মাদ (সাঃ) বিলালকে মদিনার ইসলামি রাষ্ট্রের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেন।বায়তুল মালের তত্ত্বাবধানে নিয়োজিত ইসলামের প্রথম কোষাধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্তি তৎকালীন ইসলামি রাষ্ট্রে হযরত বিলাল (রাঃ)কে অত্যন্ত মর্যাদাসম্পন্ন অবস্থান এনে দিয়েছিল। বায়তুল মালের কোষাধ্যক্ষ হিসেবে বিলাল সকল লেনদেনের দেখাশোনা করতেন।পাশাপাশি, তিনি বিধবা, এতিম, মুসাফির, এবং অসহায় দরিদ্রদের বায়তুল মাল হতে অর্থ প্রদান করতেন। বদরের যুদ্ধ, উহুদের যুদ্ধ এবং খন্দকের যুদ্ধসহ মুহাম্মাদ (সাঃ) এর সকল সামরিক অভিযানে তিনি অংশগ্রহণ করেন।৬৩০ সালে মুসলিমগণ কোন রক্তপাত ছাড়াই মক্কা পুনুরুদ্ধার করতে সক্ষম হন। মুসলিম সেনাবাহিনী মক্কা দখল করার পরপরই হযরত বিলাল (রাঃ) কাবাঘরের উপরে উঠে পড়েন এবং আযান দেন। মক্কা শহরে এটাই ছিল মুসলিমদের প্রথম আযান।
তথ্যসূত্রঃ Click This Link
https://www.searchtruth.com/searchHadith.php?keyword=bilal&translator=1&search=1&book=&start=0&records_display=100&search_word=exact
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই জুন, ২০১৮ রাত ১:৪৩