দলাই লামা সংক্ষিপ্ত কিছু কথাঃ
দালাই লামা বা তালে লামা ছিলেন তিব্বতের আধ্যাত্মিক প্রধান। তিনিই তিব্বতের শাসনতন্ত্রের শীর্ষ পদাধিকারী। তিব্বতি বিশ্বাসানুসারে দলাই লামা করুণাময় বোধিসত্ত্ব অবলোকিতেশ্বরের অবতার। ইনি তিব্বতের রাজকীয় মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব। তিব্বতের লাসা শহরে অবস্থিত বিলাসবহুল পোতালা প্রাসাদে দলাই লামা বসবাস করেন। বর্তমান চতুর্দশ দলাই লামা হলেনতেনজ়িন গিয়াত্সো। চীন কর্তৃক তিব্বত অধিগৃহীত হওয়ার পর ১৯৫৮ সালে চতুর্দশ দলাই লামা তার কিছু অনুগামীসহ গোপনে দেশত্যাগ করে ভারতে আগমন করেন এবং সেখানে আশ্রয় গ্রহণ করেন। ইনি তিব্বতে শান্তিরক্ষার ক্ষেত্রে অবদানের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেছেন।
এটা হল তিব্বতের লাসা শহরে অবস্থিত পোতালা প্রাসাদ যা তিব্বতি আধ্যাত্মিক প্রধান দলাই লামার বাসস্থান । তিব্বত চিন কর্তৃক অধিগৃহীত হওয়ার পর ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে চতুর্দশ দলাই লামা তেনজ়িন গিয়াৎসো এই প্রাসাদ ত্যাগ করে তার অনুগামীদের সঙ্গে নিয়ে গোপনে তিব্বত থেকে প্রস্থানপূর্বক ভারতে আগমন করেন এবং ভারত সরকারের আশ্রয় গ্রহণ করেন। চীনের দক্ষিণ পশ্চিমের এক স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হলো তিব্বত। এই অঞ্চলটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৫ সালে। এখন যে তিব্বত আমরা দেখি তার সীমারেখা সেই অষ্টাদশ শতকেই নির্ধারিত হয়।ক্ষেত্রফল সুবিশাল- ১২,২৮,৪০০ বর্গ কিলোমিটার। চীনের জিংজিয়াং অঞ্চল বাদ দিলে এটাই সবচেয়ে বড় প্রাদেশিক অঞ্চল।তবে এখানের জনসংখ্যা ঘনত্ব সবচেয়ে কম আর এর মূল কারণ এলাকাটা খুবই পাহাড়ি, দুর্গম, উঁচু এবং বৈরী আবহাওয়ার। একই কারণে এ অঞ্চলের অর্থনীতিও খারাপ। ৭৫ লাখ তিব্বতীর মাঝে ৩০ লাখই বাস করে তিব্বতের বাইরে। গবাদি পশু চড়ানো বাদে কম দক্ষতাই আছে তিব্বতবাসীদের। টুরিজম ব্যবসা ছাড়া অন্য তেমন কিছু থেকে আয় হয় না এখানে। শিক্ষার হারও বেশ কম। অনেক তিব্বতবাসী স্বাধীন হতে চাইলেও তিব্বত এখনও চীনেরই অংশ। এছাড়াও দালাই লামা সংক্রান্ত খবর আর বেইজিং সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহজনিত সংবাদের কারণে প্রায়ই বিশ্বসংবাদের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় তিব্বত। তিব্বতের প্রশাসনিক রাজধানী হলো লাসা। তিব্বতী মালভূমির দ্বিতীয় জনবহুল অঞ্চল হলো লাসা, আর লাসা পৃথিবীর উচ্চতম শহরগুলোর একটি অন্যতম শহর ।তিব্বতী বৌদ্ধ ধর্মের পবিত্র যে স্থানগুলো এখানে অবস্থিত সেগুলো হল পোটালা প্রাসাদ, জোখাং মন্দির, নরবুলিংকা প্রাসাদসমূহ ইত্যাদি।
সম্ভবত ৮২২ সালে চীন এবং তিব্বতের মাঝে হয়ে যাওয়া চুক্তিতে প্রথমবারের মতো লাসা নামখানা উল্লেখিত দেখা যায়। প্রসংগত উল্লেখ্য, রাজা সংস্তান গ্যাম্পোকে বলা হয় তিব্বতী সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা, যার হাত ধরে এখানে বৌদ্ধ ধর্মের আবির্ভাব হয়েছিল।
এখন প্রশ্ন লাসা কেন নিষিদ্ধ নগরী নাম পেল ?
এর কারন হিসেবে যা জানা যায় তা হলো বিদেশিদের জন্য এই নগরে প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। আধুনিক যুগে এসে সাংবাদিকরাও পর্যন্ত ঢুকতে পারতেন না লাসা নগরীতে ছবি তুলবার জন্য। যেহেতু আলাদা থাকাটাই তিব্বতীদের বেশি পছন্দ ছিল, তাই আধুনিকতার সাথে পরিচয় খুবই দেরিতে হয়েছে তিব্বতের। কেউ কখনো লাসাতে উড়ে যেতে পারত না, এমনকি গাড়িতে যাওয়াও যেত না; যেতে চাইলে একদম হেঁটেই যেতে হবে। এখানের প্রথম যে থিয়েটার চালু হয় সেটা বর্তমান চতুর্দশ দালাই লামার কারণেই হয়েছে।
সপ্তদশ শতকে স্থানীয় তিব্বতীগণ ছাড়াও ভারতবর্ষ থেকে আগত বণিক এবং চীন থেকে আগতরা আবাস গাড়ে লাসা-তে। সেখানে এমনকি হিন্দু এবং মুসলিমও ছিল। ১৯৫০ সালের পর রেড আর্মি তিব্বতের দখল নিয়ে নেয় এবং কড়া নজরে রাখে দশকের পর দশক। এখন অবশ্য কিছু লোক চাইনিজ দূতাবাস থেকে ভিসা নিয়ে তিব্বতে প্রবেশ করতে পারে। তবে এখানে চলাফেরা করতেও বিশেষ অনুমতি লাগে চীন সরকারের কাগজে কলমে লেখা থাকবে কবে কোথায় আপনি যাচ্ছেন। ছাদে ছাদে চৈনিক সেনা থাকে। আপনি হান চাইনিজ না হলে লাসা-কে আপনার জন্য পুরো মুক্ত বলা যাচ্ছে না। স্বাধীনতাকামীদের আন্দোলনের পর থেকে নিষেধাজ্ঞা কড়াকড়ি হয়েছিল।
তথ্যসূত্রঃ http://www.chinatoday.com/city/lhasa.htm
https://www.tibettravel.org/tibetan-cities/tibet-capital-city.html
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:০৩