somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিষিদ্ধ নগরী ছিল তিব্বতের রাজধানী লাসা

১৭ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আসলে লাসা শব্দটির আক্ষরিক অর্থ হল দেবতাদের আবাস। প্রাচীন তিব্বতী দলিলপত্র অনুযায়ী এই স্থানের আদি নাম ছিল রাসা যার আক্ষরিক অর্থ হলো দরবার বা ছাগলের আবাস ভূমি। তবে একটি বিষয় হলো আমরা অনেকেই ছোটবেলায় সাধারণ জ্ঞান হিসেবে যেটা জানতাম নিষিদ্ধ নগরী হলো তিব্বত।আসলে কথাটা কিছুটা ভুল পুরোপুরি সঠিক নয়। আসলে নিষিদ্ধ নগরী ছিল তিব্বতের রাজধানী লাসা নগরী। কিন্তু কেন লাসা নিষিদ্ধ ছিল? সে রহস্যের অনুসন্ধানেই আজকের এই লেখা।তিব্বতের বৌদ্ধদের জীবন্ত ঈশ্বরনামে খ্যাত আগের দালাই লামার নগরী লাসার নামের অর্থ দেবতাদের ভূমি Land of the Gods। তিব্বতের প্রাচীন পাণ্ডুলিপি অনুযায়ী আগে এই জায়গার নাম ছিল রাসা যার মানে কিনা ছাগলদের ভূমি। তবে হতে পারে শব্দটা এসেছে রাও-সা থেকে যার মানে দেওয়াল আবিষ্ট এলাকা। হতে পারে মারপরি টিলার রাজকীয় পরিবারের শিকার করবার সংরক্ষিত এলাকা হবার কারণে এরকম নাম ছিল। ৮২২ সালে চীন ও তিব্বতের মাঝে হয়ে যাওয়া চুক্তিতে প্রথমবারের মতো ‘লাসা’ নামখানা উল্লেখিত দেখা যায়। প্রসংগত উল্লেখ্য, রাজা সংস্তান গ্যাম্পোকে বলা হয় তিব্বতী সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা যার হাত ধরে এখানে বৌদ্ধ ধর্মের আবির্ভাব হয়।


দলাই লামা সংক্ষিপ্ত কিছু কথাঃ
দালাই লামা বা তালে লামা ছিলেন তিব্বতের আধ্যাত্মিক প্রধান। তিনিই তিব্বতের শাসনতন্ত্রের শীর্ষ পদাধিকারী। তিব্বতি বিশ্বাসানুসারে দলাই লামা করুণাময় বোধিসত্ত্ব অবলোকিতেশ্বরের অবতার। ইনি তিব্বতের রাজকীয় মর্যাদাপ্রাপ্ত ব্যক্তিত্ব। তিব্বতের লাসা শহরে অবস্থিত বিলাসবহুল পোতালা প্রাসাদে দলাই লামা বসবাস করেন। বর্তমান চতুর্দশ দলাই লামা হলেনতেনজ়িন গিয়াত্সো। চীন কর্তৃক তিব্বত অধিগৃহীত হওয়ার পর ১৯৫৮ সালে চতুর্দশ দলাই লামা তার কিছু অনুগামীসহ গোপনে দেশত্যাগ করে ভারতে আগমন করেন এবং সেখানে আশ্রয় গ্রহণ করেন। ইনি তিব্বতে শান্তিরক্ষার ক্ষেত্রে অবদানের জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেছেন।


এটা হল তিব্বতের লাসা শহরে অবস্থিত পোতালা প্রাসাদ যা তিব্বতি আধ্যাত্মিক প্রধান দলাই লামার বাসস্থান । তিব্বত চিন কর্তৃক অধিগৃহীত হওয়ার পর ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে চতুর্দশ দলাই লামা তেনজ়িন গিয়াৎসো এই প্রাসাদ ত্যাগ করে তার অনুগামীদের সঙ্গে নিয়ে গোপনে তিব্বত থেকে প্রস্থানপূর্বক ভারতে আগমন করেন এবং ভারত সরকারের আশ্রয় গ্রহণ করেন। চীনের দক্ষিণ পশ্চিমের এক স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হলো তিব্বত। এই অঞ্চলটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৫ সালে। এখন যে তিব্বত আমরা দেখি তার সীমারেখা সেই অষ্টাদশ শতকেই নির্ধারিত হয়।ক্ষেত্রফল সুবিশাল- ১২,২৮,৪০০ বর্গ কিলোমিটার। চীনের জিংজিয়াং অঞ্চল বাদ দিলে এটাই সবচেয়ে বড় প্রাদেশিক অঞ্চল।তবে এখানের জনসংখ্যা ঘনত্ব সবচেয়ে কম আর এর মূল কারণ এলাকাটা খুবই পাহাড়ি, দুর্গম, উঁচু এবং বৈরী আবহাওয়ার। একই কারণে এ অঞ্চলের অর্থনীতিও খারাপ। ৭৫ লাখ তিব্বতীর মাঝে ৩০ লাখই বাস করে তিব্বতের বাইরে। গবাদি পশু চড়ানো বাদে কম দক্ষতাই আছে তিব্বতবাসীদের। টুরিজম ব্যবসা ছাড়া অন্য তেমন কিছু থেকে আয় হয় না এখানে। শিক্ষার হারও বেশ কম। অনেক তিব্বতবাসী স্বাধীন হতে চাইলেও তিব্বত এখনও চীনেরই অংশ। এছাড়াও দালাই লামা সংক্রান্ত খবর আর বেইজিং সরকারের বিরুদ্ধে বিদ্রোহজনিত সংবাদের কারণে প্রায়ই বিশ্বসংবাদের বিষয় হয়ে দাঁড়ায় তিব্বত। তিব্বতের প্রশাসনিক রাজধানী হলো লাসা। তিব্বতী মালভূমির দ্বিতীয় জনবহুল অঞ্চল হলো লাসা, আর লাসা পৃথিবীর উচ্চতম শহরগুলোর একটি অন্যতম শহর ।তিব্বতী বৌদ্ধ ধর্মের পবিত্র যে স্থানগুলো এখানে অবস্থিত সেগুলো হল পোটালা প্রাসাদ, জোখাং মন্দির, নরবুলিংকা প্রাসাদসমূহ ইত্যাদি।


সম্ভবত ৮২২ সালে চীন এবং তিব্বতের মাঝে হয়ে যাওয়া চুক্তিতে প্রথমবারের মতো লাসা নামখানা উল্লেখিত দেখা যায়। প্রসংগত উল্লেখ্য, রাজা সংস্তান গ্যাম্পোকে বলা হয় তিব্বতী সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা, যার হাত ধরে এখানে বৌদ্ধ ধর্মের আবির্ভাব হয়েছিল।
এখন প্রশ্ন লাসা কেন নিষিদ্ধ নগরী নাম পেল ?
এর কারন হিসেবে যা জানা যায় তা হলো বিদেশিদের জন্য এই নগরে প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ছিল। আধুনিক যুগে এসে সাংবাদিকরাও পর্যন্ত ঢুকতে পারতেন না লাসা নগরীতে ছবি তুলবার জন্য। যেহেতু আলাদা থাকাটাই তিব্বতীদের বেশি পছন্দ ছিল, তাই আধুনিকতার সাথে পরিচয় খুবই দেরিতে হয়েছে তিব্বতের। কেউ কখনো লাসাতে উড়ে যেতে পারত না, এমনকি গাড়িতে যাওয়াও যেত না; যেতে চাইলে একদম হেঁটেই যেতে হবে। এখানের প্রথম যে থিয়েটার চালু হয় সেটা বর্তমান চতুর্দশ দালাই লামার কারণেই হয়েছে।
সপ্তদশ শতকে স্থানীয় তিব্বতীগণ ছাড়াও ভারতবর্ষ থেকে আগত বণিক এবং চীন থেকে আগতরা আবাস গাড়ে লাসা-তে। সেখানে এমনকি হিন্দু এবং মুসলিমও ছিল। ১৯৫০ সালের পর রেড আর্মি তিব্বতের দখল নিয়ে নেয় এবং কড়া নজরে রাখে দশকের পর দশক। এখন অবশ্য কিছু লোক চাইনিজ দূতাবাস থেকে ভিসা নিয়ে তিব্বতে প্রবেশ করতে পারে। তবে এখানে চলাফেরা করতেও বিশেষ অনুমতি লাগে চীন সরকারের কাগজে কলমে লেখা থাকবে কবে কোথায় আপনি যাচ্ছেন। ছাদে ছাদে চৈনিক সেনা থাকে। আপনি হান চাইনিজ না হলে লাসা-কে আপনার জন্য পুরো মুক্ত বলা যাচ্ছে না। স্বাধীনতাকামীদের আন্দোলনের পর থেকে নিষেধাজ্ঞা কড়াকড়ি হয়েছিল।
তথ্যসূত্রঃ http://www.chinatoday.com/city/lhasa.htm
https://www.tibettravel.org/tibetan-cities/tibet-capital-city.html
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৫:০৩
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×