খবরদার হাত দিবেন না। হাত সরান বলছি। ডা. কামরুল ধমকের সুরে কথাটা বললেন ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের রেজিস্ট্রার ডা. প্রফুল্লকে উদ্দেশ্য করে।
ডা. প্রফুল্ল তখন একজন পঞ্চাশোর্ধ বয়সের হার্নিয়ার রোগীর মলিন লুঙ্গি প্রবল হাতে ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের মেঝেতে লুটিয়ে নিজের পবিত্র দায়িত্ব জ্ঞানে ওলিয়ার রহমানের পুরুষাঙ্গ পরীক্ষা করতে যাচ্ছিলেন। অসংখ্য রোগীর সুচিকিৎসা বিধানের অমোঘ কর্তব্যবোধ তার এই বোধটি হরণ করেছে যে, ওয়ার্ডের যে ৭৬ জন রোগীর সামনে পিতৃবয়সী ওলিয়ার রহমান অসহায় আত্মসমর্পনে উলঙ্গ হতে চলেছেন, তার কৃষক পরিচয় ছাড়াও আরেকটি পরিচয় আছে- তিনি স্বভাবজাত লজ্জা ও অন্যান্য সাধারণ বৈশিষ্ট্য সম্বলিত বয়োজ্যেষ্ঠ একজন মানুষ, একজন পিতা।
তার আরো একটি পরিচয় আছে; যে পরিচয় আমরা এই মাত্র ধমকের সুরে কথা বলে ওঠা ডা. কামরুলের কাছে এখনি জানতে পারব; যে পরিচয় তাকে আসন্ন, অবশ্যম্ভাবী এবং সর্বোপরি অতি দৈনন্দিন এক বেইজ্জতির হাত থেকে বাচিয়েঁ দিল।
প্রফেসর মান্নান তখন ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডেই সকালের রাউন্ড দিচ্ছিলেন। নম্রভাষী ডা. কামরুলের মুখে ধমকের সুর শুনে, তাও আরেকজন ডাক্তারকে উদ্দেশ্য করে, একটু কৌতূহলী হয়ে তিনি এগিয়ে আসলেন- 'কি কামরুল খেপলে কেন; কি হয়েছে?'
ডা. কারুল তার খেপার কারণ বলেন- ‘স্যার, এই যে রুগিটাকে দেখছেন, দেখে কি মনে হয়?’
-কেন, আশপাশের আর দশটা রুগিকে দেখে যা মনে হয়, গ্রামের গরিব কৃষক টৃষক হবে, মন্ত্রী মিনিস্টার যে না তা তো ছেঁড়া পাঞ্জাবি আর ময়লা লুঙ্গি দেখেই বোঝা যাচ্ছে।
- ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে যে নতুন অনারারিটা জয়েন করেছে আক্তার না মোক্তার কি যেন নাম তার বাবা এইটা। আমাকে খুব কাচু মাচু হয়ে কালকে রাত্রে বলে গেল যেন একটু দেখি।
এতক্ষণে ডা. প্রফুল্লর সাথে ট্রলির পেছনে দাড়িয়েঁ থাকা সিস্টার নির্মলা মুখ খুলে, সায় দেয় ডা. কামরুলের কথায়, এটা যে নতুন অনারারি ডাক্তারটার গ্রাম থেকে আসা বাবা তা সে নিশ্চিত করে। ডা. প্রফুল্লকেও এবার কিংকর্তব্যবিমূঢ় অবস্থা থেকে একটু প্রফুল্ল হতে দেখা যায়- 'আগে বলবেন না কামরুল ভাই….এইখানে এত কিছু মেইনটেইন করা যায় নাকি? ডাক্তারের বাবা এইটা আমি কিভাবে জানব?'
ডা. কামরুল অসন্তুষ্ট মুখে জবাব দেন- কেন হিপোক্রাটিসের ওথ পড়েন নাই নাকি কোনদিন, ডাক্তারের বাবা হোক আর যাই হোক, এত বড় একটা ওয়ার্ডের মাঝখানে একজন রোগীর কাপড় ধরে টান দেয়াকে জাস্টিফাই করা যায়না।
গ্রামের কৃষক, কৃষিকাজ করে ছেলেকে সদ্য ডাক্তারি পাশ করানো ওলিয়ার রহমান এসব কথোপকথনের কি বুঝল আমরা জানিনা।
ফরাসী আভাঁ গার্দ্ সিনেমার পরাবাস্তব চরিত্রের মত আমরা একজন বৃদ্ধকে দেখতে পাই ৫৬ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝখানে বিব্রত মুখে দাঁড়িয়ে আছে ত্রস্ত হাতে তার ময়লা লুঙ্গিটা আঁকড়ে ধরে । কিছু অশ্রু তার চোখ থেকে চোয়াল বেয়ে সাদা দাড়ি গড়িয়ে ফোঁটায় ফোঁটায় ভিজিয়ে দিচ্ছে সেই লুঙ্গি।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





