somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার প্রিয় প্রাণীরা: হাতি

২১ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১২:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(১) হাতি
অনেকেই এটি শুনে হো হো করে হাসেন। অনেকে বলেন হাতি কারো প্রিয় প্রাণী হতে পারে এটি নাকি আমার সাথে পরিচয় না হলে জানা সম্ভব ছিলনা। কিন্তু আমি আত্মবিশ্বাসের সাথেই জানাচ্ছি- হাতি এবং হাতিই আমার প্রিয় প্রাণী। হাতি বিরাট একটি প্রাণী। তার শক্তিরও তুলনা নেই। এমন এ্যানাটমিকাল এ্যাডভান্টেজ থাকা সত্তেও দেখুন প্রাণীটি কতটা নিরীহ। মায়া মায়া চোখে, সুর দুলিয়ে, হেলে দুলে হেঁটে বেড়ায় মৌন হয়ে। নিতান্ত বাধ্য না হলে কাউকে কখনো সামান্য আঘাতও দেয়না। দেখে মনে হয় তার এই বিশালত্ব নিয়ে সে যেন বিব্রত, কুন্ঠিত। এমন বিনয় আর কার মাঝে দেখা যায় বলুন?

খাদ্যাভ্যাসের দিকে তাকান। চাইলে কি সে পারতনা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে দুর্বল প্রাণী হত্যা করে নিশ্চিত জীবন যাপন করতে? অথচ কি অমায়ীক এই প্রাণিটি পায়ের নখ দিয়ে কষ্ট করে কলাগাছ বা অন্য কোন গাছের বাকল ছিলে সুর দিয়ে ধরে মুখে পুরে খায়। এ যেন রাজকুমার কর্তৃক স্বেচ্ছায় বরণ করে নেয়া সন্যাসীর জীবন।

মেধার বিচারেও হাতির আছে সুখ্যাতি। বলা হয়ে থাকে তাদের স্মৃতিশক্তি এতটাই প্রখর যে জীবনে যাকে একবার দেখে তাকে আর কখনো ভোলেনা। এটি অতিরঞ্জিত হলেও হাতির স্মৃতিশক্তি যে অত্যন্ত প্রখর এ ব্যাপারে প্রাণিবিজ্ঞানীদের মাঝে দ্বিমত নেই।



যূথবদ্ধতা এবং গোষ্ঠীপ্রেম হাতির আরেকটি প্রশংসনীয় বৈশিষ্ট্য। এরা একসঙ্গে বিচরণ করে এবং একে অপরের বিপদে অকুতোভয় বীরের মতো সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে। যূথের কোন হাতি মারা গেলে সবাই গোল হয়ে ছলো ছলো চোখে দাঁড়িয়ে শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে। অনুভূতির তীব্রতা তাদের এতটাই বেশি যে শুনেছি তারা দু:খে কাদে, সঙ্গীর বিচ্ছেদে মুষড়ে পড়ে। আমার মনে পড়ে পশ্চিমবঙ্গে একটি বনের ভেতর দিয়ে ট্রেন লাইন গিয়েছে। ট্রেনের আঘাতে একটি হাতি মারা গেলে বনের অন্যান্য হাতিরা সেখানে জড়ো হয়ে রেলপথ অবরোধ করেছিল। দুরদর্শনের খবরে দেখিয়েছিল তাদের এই পারস্পরিক সহমর্মীতা।

শ্রীলঙ্কায় একটি গবেষণার কাজে গিয়েছিলাম ২০১০ সালে। মিটিংয়ের পর একদিন হাতে থেকে গিয়েছিল; যেটিকে কাজে লাগাতে অন্যান্যরা ছুটে গিয়েছিলেন কলম্বো শহর, ক্যান্ডি বীচ, গালে অথবা অনুরাধাপুরে। আমি বাসে ঝুলে, বেবিট্যাক্সিতে চেপে, মানুষ জনকে জিজ্ঞেস করে পথ খুঁজে খুঁজে হাজির হয়েছিলাম পিন্নাওয়ালা এলিফ্যান্ট অরফানেজে। শুনেছি এমন আরেকটি হস্তি অনাথাশ্রম আছে কেনিয়ায়। সারাদিন অসহায় অবোধ সেসব হাতির সাথে চমৎকার একটি দিন কাটিয়েছিলাম।


প্রাণিটির সাথে কেন জানি অদ্ভুত এক টান অনুভব করি। হাতির চোখের দিকে তাকিয়ে অনুভব করি গভীর মমত্ব। ছোট্ট অনাথ হস্তীশাবকদের কৌতূহলী লেজ নাড়ানো আর সুরের ওপর এখনো নিয়ন্ত্রণহীন বিব্রত বিক্ষিপ্ত সঞ্চালন দেখে আমোদিত হই। তাদের মিতাচারীতা এবং মৌনতা আমাকে বিনয়ের শিক্ষা দেয়। সর্বোপরি তাদের যূথবদ্ধতা থেকে শিখি কি করে নিজের দেশ আর দেশের মানুষকে আপন ভাবতে হয়, ভালবাসতে হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০১৩ সকাল ৯:১৩
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×