মুসলমানদের ধর্মীয় ইস্যুগুলোতে সৌদিআরবের আচরিত বিধানগুলোকে সঙ্গতকারণেই প্রামাণ্য ধরা হয়। ওখানকার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি- হজ্বের সাথে সংশ্লিষ্ট কোরবানি ছাড়া সাধারণ মানুষের কোরবানি দেয়ার ক্ষেত্রে রাস্তাঘাট নোংরা করে, দৃষ্টি অসুখকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, পরিবেশ দূষিত করে, বাচ্চাদেরকে রক্তারক্তির দৃশ্যে এক্সপোজ করে- কোরবানির ঈদের কথা কল্পনাই করা যায়না। যারা কোরবানি দিতে চান তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে টাকা জমা দিয়ে চলে আসেন, এরপর যথা সময়ে নিজের ভাগের অংশটুকু বাসায় নিয়ে আসেন। ভাগ বাটোয়ারা এবং গরিবদের অংশ বিলিয়ে দেয়ার কাজটাও সেই অথরিটিই করে থাকে; সম্ভবত চাইলে নিজেও সেটা করা যায়। তবে রাস্তা ঘাট দখল করে, নোংরা করে, ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে কোরবানির রেওয়াজ সেখানে নেই।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মুসলিম প্রধান দেশ নয়, সেখানে পরিচ্ছন্নতার বিষয়টিও আরো বেশি গুরুত্ব পায়। তাই ওখানকার কোরবানি দিতে ইচ্ছুকদেরকে আরেকটু কষ্ট করতে হয়। আমি ম্যারিল্যান্ডে থাকি; ওখান থেকে পরিচিত অনেককেই দেখেছি পার্শ্ববর্তী স্টেট ভার্জিনিয়াতে গিয়ে কোরবানীর আনজাম করতে। তবে সেক্ষেত্রেও সুনির্দিষ্ট অথরিটির তত্বাবধানে, নির্ধারিত জায়গতেই যে কোরবানি হয়- তা বলাই বাহুল্য।
কোরবানির ঈদ শুরু হবার কিছুদিন আগে থেকেই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু মানুষ শুরু করে দেয় 'কোরবানি ব্যাশিং'। সেই তর্কে যেতে চাইনা, তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হিসেবে কোরবানির স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং পরিবেশ দূষণ সৃষ্টিকারী আসপেক্ট থেকে বাংলাদেশে প্রচলিত কোরবানি প্রথার সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করি। আমাদের দেশে যে নোংরা প্রক্রিয়ায় কাজটি করা হয়, এবং এর ফলশ্রুতিতে কোরবানি পরবর্তী অন্তত মাসখানেক যে ভেক্টর বর্ন ডিজিজগুলোর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়- কোরবানির ধর্মীয় মাহাত্ম্যকে ক্ষুণ্ন না করেও এগুলোকে এ্যাড্রেস করা সম্ভব। এতে ইসলামের যে পরিচ্ছন্নতার সংস্কৃতি আছে (ওযু, গোসল- ইত্যাদি)- তার প্রতি যেমন বিশ্বস্ত থাকা হয়; অন্যদিকে যারা কোরবানি বাংলাদেশি সংস্করণের দোহাই দিয়ে গোটা কোরবানিকেই প্রশ্নবীদ্ধ করেন- তাদেরকেও একটু বিশ্রাম দেয়া যায়।
মোদ্দা কথা- কোরবানির যে বিভৎস রূপ আমরা বাংলাদেশে জিইয়ে রেখেছি- সেটা আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধের যতটা না বহি:প্রকাশ, তার চেয়ে ঢের বেশি আমাদের ইনসেনসিটিভিটি, অপরিচ্ছন্নতা, ক্রিয়েটিভ প্রব্লেম সল্ভিংয়ে অনীহা/অপারগতা- ইত্যাদির বহি:প্রকাশ।
দীর্ঘদিনের বিতর্কের অভ্যাসহেতু সবকিছুরই আরেকটা দিক দেখার প্রবণতাটা রয়ে গিয়েছে। সবাই মিলে গোল হয়ে বসে রক্তাক্ত গেঞ্জি গায়ে মাংস কাটা, ওজন করে ভাগাভাগি করা, কার গরুতে লাভ হয়েছে সে বিষয়ে সমাধানহীন বাতচিতে মেতে ওঠা, গরীব প্রার্থীদের হাতে নিজ হাতে মাংস তুলে দেয়া- এসবের একটা আলাদা চার্ম রয়েছে অবশ্যই।
তর্ক চলুক। দ্বন্দ্বের কড়াঘাতে বেরিয়ে আসুক নবতর সত্য। সত্যই সুন্দর। সুন্দর হোক সবার ঈদ- এবং তার পরবর্তী সময়গুলোও। সাবাইকে শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:৫২