somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জনস্বাস্থ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে কোরবানির বাংলাদেশি ভার্সন: বিকল্প ভাবনার আহ্বান

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈদের উৎসবটা বিভিন্ন দেশে কাটানোর অভিজ্ঞতা হয়েছে- শৈশবে ইরানে, বাবা মা'র চাকরির সুবাদে সৌদি আরবে, কনফারেন্সের সূত্রে সুইজারল্যান্ডে, আর পড়াশুনার সূত্রে নেদারল্যান্ড ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এর মধ্যে ইরান, সুইজারল্যান্ড ও নেদারল্যান্ডের বিষয়ে কথা তুলতে চাইনা, কারণ সেখানে কোরবানির সাথে আমার ব্যক্তিগত কোন সংশ্লিষ্টতা ছিলনা। কিন্তু সৌদিআরব আর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোরবানির স্মৃতি বেশ ভালভাবেই রয়েছে- তাই এই দুটো দেশের কথাই বলছি।
মুসলমানদের ধর্মীয় ইস্যুগুলোতে সৌদিআরবের আচরিত বিধানগুলোকে সঙ্গতকারণেই প্রামাণ্য ধরা হয়। ওখানকার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি- হজ্বের সাথে সংশ্লিষ্ট কোরবানি ছাড়া সাধারণ মানুষের কোরবানি দেয়ার ক্ষেত্রে রাস্তাঘাট নোংরা করে, দৃষ্টি অসুখকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, পরিবেশ দূষিত করে, বাচ্চাদেরকে রক্তারক্তির দৃশ্যে এক্সপোজ করে- কোরবানির ঈদের কথা কল্পনাই করা যায়না। যারা কোরবানি দিতে চান তারা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে টাকা জমা দিয়ে চলে আসেন, এরপর যথা সময়ে নিজের ভাগের অংশটুকু বাসায় নিয়ে আসেন। ভাগ বাটোয়ারা এবং গরিবদের অংশ বিলিয়ে দেয়ার কাজটাও সেই অথরিটিই করে থাকে; সম্ভবত চাইলে নিজেও সেটা করা যায়। তবে রাস্তা ঘাট দখল করে, নোংরা করে, ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে কোরবানির রেওয়াজ সেখানে নেই।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মুসলিম প্রধান দেশ নয়, সেখানে পরিচ্ছন্নতার বিষয়টিও আরো বেশি গুরুত্ব পায়। তাই ওখানকার কোরবানি দিতে ইচ্ছুকদেরকে আরেকটু কষ্ট করতে হয়। আমি ম্যারিল্যান্ডে থাকি; ওখান থেকে পরিচিত অনেককেই দেখেছি পার্শ্ববর্তী স্টেট ভার্জিনিয়াতে গিয়ে কোরবানীর আনজাম করতে। তবে সেক্ষেত্রেও সুনির্দিষ্ট অথরিটির তত্বাবধানে, নির্ধারিত জায়গতেই যে কোরবানি হয়- তা বলাই বাহুল্য।
কোরবানির ঈদ শুরু হবার কিছুদিন আগে থেকেই বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কিছু মানুষ শুরু করে দেয় 'কোরবানি ব্যাশিং'। সেই তর্কে যেতে চাইনা, তবে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ হিসেবে কোরবানির স্বাস্থ্যঝুঁকি এবং পরিবেশ দূষণ সৃষ্টিকারী আসপেক্ট থেকে বাংলাদেশে প্রচলিত কোরবানি প্রথার সংস্কার প্রয়োজন বলে মনে করি। আমাদের দেশে যে নোংরা প্রক্রিয়ায় কাজটি করা হয়, এবং এর ফলশ্রুতিতে কোরবানি পরবর্তী অন্তত মাসখানেক যে ভেক্টর বর্ন ডিজিজগুলোর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়- কোরবানির ধর্মীয় মাহাত্ম্যকে ক্ষুণ্ন না করেও এগুলোকে এ্যাড্রেস করা সম্ভব। এতে ইসলামের যে পরিচ্ছন্নতার সংস্কৃতি আছে (ওযু, গোসল- ইত্যাদি)- তার প্রতি যেমন বিশ্বস্ত থাকা হয়; অন্যদিকে যারা কোরবানি বাংলাদেশি সংস্করণের দোহাই দিয়ে গোটা কোরবানিকেই প্রশ্নবীদ্ধ করেন- তাদেরকেও একটু বিশ্রাম দেয়া যায়।
মোদ্দা কথা- কোরবানির যে বিভৎস রূপ আমরা বাংলাদেশে জিইয়ে রেখেছি- সেটা আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধের যতটা না বহি:প্রকাশ, তার চেয়ে ঢের বেশি আমাদের ইনসেনসিটিভিটি, অপরিচ্ছন্নতা, ক্রিয়েটিভ প্রব্লেম সল্ভিংয়ে অনীহা/অপারগতা- ইত্যাদির বহি:প্রকাশ।


দীর্ঘদিনের বিতর্কের অভ্যাসহেতু সবকিছুরই আরেকটা দিক দেখার প্রবণতাটা রয়ে গিয়েছে। সবাই মিলে গোল হয়ে বসে রক্তাক্ত গেঞ্জি গায়ে মাংস কাটা, ওজন করে ভাগাভাগি করা, কার গরুতে লাভ হয়েছে সে বিষয়ে সমাধানহীন বাতচিতে মেতে ওঠা, গরীব প্রার্থীদের হাতে নিজ হাতে মাংস তুলে দেয়া- এসবের একটা আলাদা চার্ম রয়েছে অবশ্যই।
তর্ক চলুক। দ্বন্দ্বের কড়াঘাতে বেরিয়ে আসুক নবতর সত্য। সত্যই সুন্দর। সুন্দর হোক সবার ঈদ- এবং তার পরবর্তী সময়গুলোও। সাবাইকে শুভেচ্ছা। ঈদ মোবারক।।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:৫২
১৫টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×