৯ মাস আগে এই ধরায় আগমন ঘটে নদীর। নদী হচ্ছে এই দুনিয়ার অন্যতম অভাগা এক মেয়ে। তার বাবা ইব্রাহিম, মা শিল্পী বেগম।
নদী অভাগা এই কারণে যে, তাকে দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে পারছে না তার অভাবী মা-বাবা। দু’দিন আগ থেকে আজ (বৃহস্পতিবার) পর্যন্ত সময়ে তার মুখে কোন খাবার দিতে পারেনি ইব্রাহিম বা শিল্পী কেউই।
দারুণ খিদে পেটে তারা সকালে যশোর ২৫০ শয্যাাবাশষ্ট জেনারেল হাসপাতাল চত্বরে ঘোরাফেরা করছিল। মেয়েটি না খেতে পেরে শুকিয়ে এই এতটুকুন হয়ে গেছে।
মা-বাবার ইচ্ছে, কোন স্বচ্ছল পরিবারের কাছে মেয়েকে বিক্রি করে দেয়া। তাতে দুটো লাভ, মেয়ে খেয়ে পরে বেঁচে থাকবে আর তারা কিছু টাকা পাবে। যা দিয়ে নিজেদেরও উদর ভরবে কিছুদিন!
বিষয়টি নজরে আসে হাসপাতাল বিটের দীর্ঘসময়ের রিপোর্টার বিএম আসাদের। তিনি তার কয়েক কলিগের সহায়তায় মেয়েটিকে হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি করে দেন। তার ভাল মিলের ব্যবস্থাও করেন। যে খাবারে মা-মেয়ের অন্তত দু’বেলা হয়ে যাবে।
বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের চিকিৎসকদের সাথে শলাপরামর্শ করেছেন সাংবাদিকরা। এরপর চিকিৎসকদের সহায়তায় হাজার খানেক টাকাও সংগ্রহ হয়েছে। টাকাগুলো নদীর মা-বাবাকে দেবেন বলে মনস্থির করেছেন তারা। একইসাথে, ইব্রাহিমকে যশোরে কোন প্রতিষ্ঠানে চাকরি দেয়ার ব্যাপারে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে-এমনটাই জানালেন বিএম আসাদ।
তিনি জানান, ইব্রাহিম সম্প্রতি ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছেন, তার স্ত্রীও। কুষ্টিয়ার খোকসা উপজেলার একতারপুরে তাদের বাড়ি।
ইব্রাহিমের পূর্বের নাম দেবাশীষ, বাবার নাম কমল সরদার। আর শিল্পীর নাম পরিবর্তন হয়নি, তার বাবার নাম সরজিৎ।
মেশিনারির কাজে দক্ষ ইব্রাহিম (দেবাশীষ) কুষ্টিয়া থেকে বছর তিনেক আগে ঝিনাইদহে আসেন। সেখানে একটি দোকানে কাজও করতেন। সম্প্রতি সেখানে তার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। চলে আসেন যশোরে। টাকা-পয়সাহীন এ দম্পতির গত তিনদিনই উপোস থাকতে হয়েছে। খেতে দিতে পারেননি সন্তান নদীকেও।
সকালে হাসপাতালে কয়েকজন ‘দালাল’ বিষয়টি বিএম আসাদকে অবহিত করেন। প্রথমে তারাই খাবারের ব্যবস্থা করেছিল।