কাজল, বয়স ১৯ বছরের মত। যশোর শহরের দক্ষিণ দিকে একটি মহল্লার বাসিন্দা। শহরের একটি কলেজে ইন্টারমিডিয়েটের ছাত্র। তার শারীরিক গড়ন ছেলেদের মত। কিন্তু, আচার-আচরণ আর মানসিকতা সম্পূর্ণ মেয়েদের মত। তার ইচ্ছে, সুঠাম দেহের স্মার্ট একজন ছেলেকে বিয়ে করে সংসার করা।
আশিক নামে এক ছেলে বছর পাচেক আগে তার এক জ্ঞাতির দ্বারা প্রথম দফা পায়ুপথে সেক্সের শিকার হন। ভয়ে-লজ্জায় কাউকে তখন তিনি বলতে পারেননি। ভেবেছিলেন, কেউ তাকে বিশ্বাস করবে না। উল্টে তাকেই দুষবে সবাই।
উল্লিখিত দু’যুবকই পুরুষ সমকামী। তাদের মত যশোর সদরে কয়েক শ’ পুরুষ সমকামী রয়েছে। এইসব মানুষের রয়েছে নিজস্ব কিছু ভাষা, সঙ্গী নির্বাচনে-সঙ্গীর স্থায়ীত্বটাকে †বাঝাতে তারা †সইসব ভাষা ব্যবহার করে থাকেন। ফলে সহজেই তারা একে অপরকে শান্ত করতে পারেন। যশোরে তালিকাভুক্ত ছয় শ’ ২৯ জনকে লক্ষ্য করে যশোরে কাজ করছে লাইট হাউজ নামে একটি সংস্থা।
পুরুষ সমকামী ও হিজড়া জনগোষ্ঠীর এইচআইভির কার্যকর প্রতিরোধমূলক সেবা প্রদানের মাধ্যমে ঝুঁকি হ্রাসের লক্ষ্যেই তাদের এ কার্যক্রম ২০১০ সালের অক্টোবরে শুরু করে।
এ কার্যক্রমের আওতায় সাপ্তাহিক ও সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রত্যহ সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে; পাশাপাশি যৌনরোগ প্রতিরোধে চলে কার্যকর সেবাদান।
যশোর শহরে সহস্রাধিক পুরুষ সমকামী রয়েছে, নিজেদের মধ্যে গুটিয়ে রাখা অবস্থায়। তবে স্বগোত্রীয়দের সঙ্গে সুসম্পর্কযুক্ত এমন কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা যায় তাদের জীবনের নানা কথা।
নাম পরিচয় প্রকাশ করা হবে না-এমন শর্তে খেলামেলা কথা বলেন কাজল (ছদ্মনাম)। শিশুবেলা থেকেই তার খেলাধুলা ছিল মেয়েদের মতই। পুতুল নিয়ে খেলা, সাজগোজ ইত্যাদি। সুন্দর-স্মার্ট ছেলেদের প্রতি আগ্রহ জন্মায় একটু বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে। তাদের প্রতি তীব্র আকর্ষণ বোধ করেন এরপর পরই। সেই আকর্ষণের প্রেক্ষিতে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে প্রতিবেশী এক যুবকের সঙ্গে। দীর্ঘদিন তার সাথে শারীরিক সম্পর্কও ছিল। কিন্তু, মাঝে এক মেয়ের সাথে তার প্রেমেরসম্পর্ক জানাজানি হলে তিনি ভেঙ্গে পড়েন; তার সাথে ‘ব্রেক অফ’ হয়ে যায়।
এর মধ্যে কলেজে পরিচয় হয় তার এক সিনিয়র ভাইয়ের সাথে। চলতি বছরের মার্চ মাসে তার সঙ্গে প্রেম হয়। তার মেসে কিংবা নিজেদের বাসায় অন্যদের অনুপস্থিতিতে কয়েকদফা সেক্স করেছেন তারা।
‘নতুন এই বয়ফ্রেন্ড আমাকে খুব ভালবাসে; আমিও তাকে’- বলেন তিনি। লেখাপড়া শেষ করে ভাল একটা চাকরি হবে-স্বপ্ন দেখি। মা-বাবা, ভাইয়ের দেখভাল করার পাশাপাশি বয়ফ্রেন্ডটাকে সুখী রাখবো’- যোগ করেন তিনি।
আলাপকালে তিনি বলেন, যশোর শহরে অনেক পুরুষ সমকামী রয়েছে। তাদের মধ্যে সরকারি চাকুরে, ছাত্র, মুদিদোকানি, বড় ব্যবসায়ী, রিকশা-ভ্যান চালক, বাস-ট্রাকের ড্রাইভার ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
এ অঞ্চলে পুরুষ সমকামী ও হিজড়াদের স্বাস্থ্যসেবা ও সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজ করছে লাইট হাউজ নামে একটি বেসরকারি সংস্থা। দেশের ৫টি বিভাগের ২১ জেলার ৩২টি এলাকায় এক্সপান্ডিং এইচআইভি প্রিভেনশন ইন বাংলাদেশ প্রকল্পের আওতায় চলমান কর্মসূচিতে অর্থসহায়তা করছে গ্লোবাল ফান্ড। যশোরে এ প্রকল্পের অধীনে সুষ্ঠুভাবে কার্যক্রম পরিচালনায় সাংবাদিক ও আইনজীবীদের দুটি ফোরাম রয়েছে। প্রতি তিনমাসে তাদের পৃথক পৃথক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সম্প্রতি এমন এক সভায় আলোচনাকালে সংগ?নের যশোর ডিআইসি’র ব্যবস্থাপক শাহাফুর বখতিয়ার জানান, দুইটা কারণে মূলত পুরুষ সমকামী হয়ে থাকে। প্রথমত, শিশুর জন্মগত কারণে (হরমোনের কারণে), দ্বিতীয়ত, শৈশবে তার কোন স্বজন বা প্রতিবেশী কারো দ্বারা পায়ুপথে সেক্সের শিকার হলে। প্রথমদিকে ভয়ে বা লজ্জায় কাউকে বলতে পারে না। কিন্তু পরে সে বিষয়টি উপভোগ করতে থাকে। যার ফলে পরবর্তীতে তা বিস্তৃতি লাভ করে।
তিনি জানান, পায়ুপথ খুবই সেনসিটিভ স্থান। এভাবে সেক্স করার ফলে কোনো টিস্যু ছিড়ে গেলে বা অন্য কারণে যৌনবাহিত নানা রোগ বা এইচআইভি/এইডসের মত মরণব্যাধিও হতে পারে।
এই প্রকল্পের মাধ্যমে উপকারভোগীদের মাঝে স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধি, রোগের চিকিৎসা, তাদের জীবনদক্ষতা বৃদ্ধিসহ কর্মমুখি শিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে ব্যবস্থাপক শাহাফুর বখতিয়ার বলেন, প্রচার ও জনসচেতনতা কর্মকাণ্ডের কারণে উপকারভোগীরা এখন অনেক সচেতন।
পুরুষ সমকামী একজনের স্বপ্ন
একদিন বাংলাদেশেও আইন হবে সমকামী বিয়ে বৈধ। যেদিন এই আইন পাশ হবে, সেদিনই যশোরে কমপক্ষে দুই শ’জোড়া বিয়ে করবে-বলেন তিনি।
মাঝেমাঝে মনে হয়, যেসব দেশে এই আইন পাশ হয়েছে, সেখানে গিয়ে নাগরিকত্ব নিই। বয়ফ্রেন্ডকে বিয়ে করে সুখের সংসার গড়ি।
যশোর: ০১.০৯.১৪