ইচ্ছে ছিল ইন্ডিয়া যাবো। চিকিৎসার জন্যে। তাই অর্থনৈতিক এই টানাটানির মধ্যেও বেশকিছু টাকা খরচে কার্পণ্য ছিল না।
ক’দিন আগে সেদেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এসেছিলেন আমাদের দেশে। তার আসার আগে নানা আয়োজন; কত কথাবার্তা আকাশে-বাতাসে।
শুনলাম, উনি এসে ঘোষণা দেবেন- লাইনে দাড়িয়ে দিনের পর দিন ভিসা প্রাপ্তির হ্যাপা আর নয়। এবার পোর্ট ভিসা লাগবে পাসপোর্ট-এ।
আশায় বুক বাধি! আহা আমার যে ভাগ্য, তাতে তো শিঁকে ছিড়বে না। যদি পোর্টভিসার ব্যবস্থাটা হয়ে যায়- তবে আমায় আর দেখে কে!
ইন্ডিয়ার ভিসাপ্রাপ্তির আবেদন অনলাইনে করতে হয়; আমিও চেষ্টা করেছি। ফলাফল শূন্য!
অতএব, চলো যাই সরাসরি রাস্তায়! মানে ফেলো কড়ি (টাকা), মাখো তেল।
যেখানে কোনো খরচ হওয়ার কথা নয় অনলাইনে সিরিয়ালপ্রাপ্তির, সেখানে নগদ আড়াই হাজার টাকা গুণতে হলো।
ঢাকায় কাগজপত্র পাঠিয়ে সিরিয়াল করাতে এমনই খরচ! এটাই নিয়ম!!
যাহোক, সিরিয়াল পেলাম। সময় অবশ্য ১০-১২ দিন লেগেছে। কিন্তু, কাজ হলো পাকা!
সিরিয়াল প্রাপ্তির পর ২৩ জুনপাসপোর্টটা জমা দিতে যেতে হবে খুলনায়। খুব সকালে পৌছাতে হবে ভিসা অফিসে!
রোজা-রমজান মাসে খুব ভোরে উঠে জুয়েলের সাথে গেলাম খুলনায়।
জুয়েলের অ্যাপ্লিকেশন জমার সময় সোয়া আটটায়; আমারটা পৌণে নয়টায়।
হালকা বৃষ্টির মধ্যে যথাসময়ে লাইন। লাইন থেকে সোয়া আটটা, সাড়ে আটটার লোকজনকে ভেতরে ডেকে নিয়েছে কর্তপক্ষ।
এরপর আমরা যারা পৌণে নয়টার লাইন, তারা দাড়িয়ে আছি তো আছিই! আর আমাদের ডাক পড়ে না...
এর মধ্যে বৃষ্টির তীব্রতা বাড়ে, আমরা জড়োসড়ো হয়ে দাড়াই ছোট্ট বারান্দায়! আর লাইন তদারকির দায়িত্বে থাকা আকাশিরঙা শার্ট- নীলরঙের প্যান্ট পরা সিকিউরিটি গার্ডরা আমাদের ধমক দিচ্ছে- লাইনে দাড়ান, বারান্দা থেকে নামুন- সরেন সরেন...
ওদিকে জুয়েলের পাসপোর্টটি জমা হয়ে গেছে। সে ফোন করে জানতে চাইলো, কেন দেরি!
মেজাজ আছে খিচে, বৃষ্টি আর সিকিউরিটি গার্ডদের ধামকিতে।
ওকে বলি, ভেতরে দাড়া আসছি!
অনেক লড়াই সংগ্রাম করে ভেতরে ঢুকি। সবাইকে একটা টোকেন নিতে হচ্ছে। টোকেনপ্রদানকারী নারীটি যখন আমার পাসপোর্টখানি নিলেন, তখনই সমস্যা দেখা গেল! স্ট্যাপলারের পিন শেষ! বুঝি, আমার প্রাপ্তিও শেষ!
যাহোক সেখানে কিছুক্ষণ বসে আছি; সিরিয়াল অনুযায়ী বুথে যেতে হচ্ছে, পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পর পর সাজিয়ে দুটি কাতারে আটকে সেগুলো জমা দিতে হচ্ছে।
এখানেও আরেক যন্ত্রণা। বুথে যারা (৬টি বুথ) কাগজপত্র জমা নিচ্ছেন, তারা বেশ স্মার্ট। মাঝেমধ্যে হুংকার দিচ্ছেন- আপনারা কেউ পাশাপাশি কথা বলবেন না। কথা বললে অ্যাপ্লিকেশন জমা নেওয়া হবে না। যিনি কথা বলবেন, তার অ্যাপ্লিকেশন টেনে ছিঁড়ে ফেলা হবে। তখন পা ধরে ক্ষমা চাইলেও লাভ হবে না... ইত্যাদি ইত্যাদি
মেজাজটা খিচে গেছিল। সেসময় আমার কাগজপত্র জমা দিচ্ছি। কাগজপত্রের সাথে সাত শ’ টাকাও।
খুব ক্ষীণস্বরে বলি, এত কষ্ট করে লাইন দিয়ে বৃষ্টি ভিজে মানুষজন এসেছে, আপনি তাদের অ্যাপ্লিকেশন ছিঁড়ে ফেলার হুমকি দিচ্ছেন, কাজটি কি ভাল হবে?
বুথের কর্মকর্তা মুখে কিছু না বললেও কী যেন পিটি পিট করে বললেন।
যাহোক জমা দিয়ে আরেকটা টোকেন-
বলা হলো, ২ জুলাই ২০১৫ খুলনা অফিসে এসে পাসপোর্ট নিয়ে যেতে হবে।
সেই মোতাবেক দুপুর দেড়টার দিকে খুলনার উদ্দেশে রওনা।
পথিমধ্যে, জুয়েলকে বলি-তুই তো মেসেজ পাইছিস, আমি পাইনি। খামোখা যাচ্ছি!
চারটার কিছুপর বুথে পৌঁছাই। কয়েকটি লাইনে অল্পকিছু সংখ্যক মানুষ তাদের পাসপোর্ট ফেরৎ পাচ্ছে।
জুয়েল আগে পেয়ে গেছে, তার ছয়মাসের ভিসা।
এরপর আমি হাতে পেলাম। বুকটা ধুকপুক করছে; ধারণা কি সত্যি হতে যাচ্ছে?
হুমমম পাসপোর্টটার কোনো পাতায় ইন্ডিয়াভ্রমণের ছাড়পত্র নাই।
জুয়েলের মন খারাপ, সে আমার হাত থেকে পাসপোর্টটি নিয়ে অনেক নেড়েচেড়ে দেখলো- নাহ, খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না-
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:৩৯