somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডাক্তার বনাম সাংবাদিক; এ যুদ্ধের শেষ কোথায় ?

২১ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের দেশের সকল খাতের মধ্যে দূর্নীতি, অনিয়মতান্ত্রিকতা, স্বেচ্ছাচারিতা আছে। অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। প্রতিটি পেশায় ভালো মানুষের চেয়ে খারাপ মানুষের সংখ্যাই ইদানীং বেড়ে চলেছে। তার মধ্যে চিরকালীন উপদ্রব সাংবাদিক বনাম চিকিত্সক। এই দুই পেশাজীবীর কারনে প্রায়ই সংবাদপত্রে শিরোনাম হয় হাসপাতালে হানাহানি, কর্মবিরতি ইত্যাদি। ভোগান্তি পোহায় সাধারণ মানুষ। নতুন আবার কি হল যে আমি ব্লগে পোস্ট দিচ্ছি ??

এইটা আজকের ইত্তেফাকের খবর।রোগীর শরীরে উপর্যুপরি ৮০ ইনজেকশন, পরে মৃত্যু

খবর পড়ে পড়বেন। আগে শিরোনামটা খেয়াল করেন। মৃত্যু সবসময়েই দুঃখজনক। শিরোনাম পড়ে কি আপনার মনে হচ্ছেনা ডাক্তার 'পৈশাচিকভাবে' ' ধর্ষকের মতো' ইঞ্জেকশন দিয়ে কুপিয়েছে ? (আপনার কোন দোষ নাই, শিরোনামটার উদ্দেশ্যই বোধহয় এমন ছিল যাতে উপুর্যুপুরি কোপ, উপুর্যুপুরি ধর্ষণ এর সাথে আপনার মাথায় গাঁথে উপর্যুপরি ইনজেকশন)

আচ্ছা, আগে খবরটা পড়ে নিন। তারপর নাহয় আমার বক্তব্য বলি।

খবরঃ-

রোগীর শরীরে উপর্যুপরি ৮০ ইনজেকশন, পরে মৃত্যু
রংপুর প্রতিনিধি২১ জুলাই, ২০১৬ ইং

রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক রোগীর শরীরে উপর্যুপরি ৮০ টি ইনজেকশন পুশ করায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত মহির হোসেন মন্টু (৪৬) একজন ব্যবসায়ী। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার সকালে নিহতের স্বজনদের সঙ্গে ইন্টার্ন চিকিত্সক ও হাসপাতালের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংঘর্ষে পুলিশসহ কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন। পরে ভুল চিকিত্সায় রোগীর মৃত্যুর প্রতিবাদে এবং জড়িত চিকিত্সকের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ব্যবসায়ীরা। এ ঘটনায় নিহত ব্যবসায়ীর পুত্র ইসতিয়াক আহমেদ সানি রংপুর কোতয়ালী থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, নগরীর গনেশপুর বকুলতলা এলাকার মৃত আব্দুল গনির পুত্র ও স্টিল আসবাবপত্রের ব্যবসায়ী মহির হোসেন মন্টু গতকাল সকালে একটি বাসে ঢাকা থেকে রংপুরে আসছিলেন। পথে বগুড়ায় তিনি অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়েন। গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় তাকে প্রথমে একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে সেখান থেকে বুধবার সকালে তাকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগে ভর্তি করা হয়। কর্তব্যরত ইন্টার্ন চিকিত্সকরা মন্টুর চিকিত্সার জন্য তার আত্মীয়-স্বজনকে দ্রুত বিভিন্ন নামের ৩৫টি ইনজেকশন নিয়ে আসতে বলেন। তারা দ্রুত ইনজেকশন নিয়ে এলে ইন্টার্ন চিকিত্সক ৩৫টি ইনজেকশনই পুশ করেন। পরে আরো ৪৫টি ইনজেকশন আনিয়ে সবগুলোই মন্টুর শরীরে পুশ করার কিছুক্ষণ পরে তার মৃত্যু হয়।

এ ঘটনায় নিহতের আত্মীয়-স্বজনরা ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলে চিকিত্সক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ওই ওয়ার্ডের দরজা বন্ধ করে তাদের বেধড়ক মারপিট করেন। খবর পেয়ে ধাপ পুলিশ ফাঁড়ির সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে তারা পুলিশের উপরও চড়াও হয়। এসময় দু’পক্ষের সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হন। এ ঘটনার পর বিপুল সংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে নিহত মন্টুর স্বজনদের উদ্ধার করে নিয়ে আসে। দুপুরে ঠিকাদারপাড়া ক্ষুদ্র সমবায় সমিতি, রংপুর রেল স্টেশন রোডের রড, স্টিল আলমারি ব্যবসায়ী সমিতির সদস্যরা তাদের দোকানপাট বন্ধ রেখে ঘটনায় জড়িত চিকিত্সক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গ্রেফতার এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে নগরীর শাপলা চত্বরে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষোভকারীদের শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

নিহত মন্টুর ছেলে সানি বলেন, ‘আমার বাবাকে হাসপাতালে চিকিত্সকরা ঠিকমত চিকিত্সা দেয়নি। এমনকি ভুল চিকিত্সা দিয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানালে চিকিত্সক ও নার্সদের সঙ্গে সামান্য বাকবিতন্ডা ও হাতাহাতি হয়। এক পর্যায়ে তারা ওয়ার্ডের দরজা বন্ধ করে আমাদের উপর লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায়।’

তবে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক ডা. মো. শফিকুল ইসলাম ভুল চিকিত্সায় রোগী মৃত্যুর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, রোগীকে সঠিক চিকিত্সা সেবাই দেওয়া হয়েছে। অজ্ঞাত বিষক্রিয়ায় রোগী আক্রান্ত হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তির কিছুক্ষণ পরেই তার মৃত্যু হয় বলে তিনি দাবি করেন।

রংপুর কোতয়ালী থানার ওসি এবিএম জাহিদুল ইসলাম জানান, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। পাল্টাপাল্টি অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

খবর শেষ। উল্লেখ্য এখানে ডাক্তারদের বক্তব্য হল 'অজ্ঞাত বিষক্রিয়ায় রোগী আক্রান্ত'। আমাদের দেশে সাধারণত কীটনাশক ব্যবহার করা হয় বিষ হিসেবে। এটাকে কমনলি অর্গানোফসফরাস পয়জনিং বলে।

আসুন দেখি সাধারণ মানুষ হয়ে আপনি কি জানতে পারেন অর্গানোফসফরাস পয়জনিং সম্পর্কে। গুগল করলেন organophosphorus poisoning treatment লিখে। প্রথম লিংকের বিস্তারিত ট্রিটমেন্ট মেইন কথাগুলো সহজ করে বলে দিচ্ছি আমি । " শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হলে টিউবের মাধ্যমে অক্সিজেন সাপ্লাই। সাথে এট্রোপিন। যদি এট্রোপিন দেওয়া হয় অত্যাধিক পরিমানে তাহলে টিউবের মাধ্যমে অক্সিজেন দরকার কম হবে। এট্রোপিনের সাথে প্যালিডক্সিম আর বেনজোডায়াজেপিন দেওয়া যেতে পারে।" এটুকু পড়ে আপনার কাছে কি মনে হচ্ছে ?

এ ব্যাপারে আরেকটু বিস্তারিত জানি একজন ডাক্তারের কাছ থেকেঃ

কেসটা ছিল পয়জনিং এর। খুব সম্ভবত অর্গানোফসফরাস বা কীটনাশক পয়জনিং,
আমাদের দেশে খুব কমন পয়জনিং।

নিউজে ডিটেইলস যদিও নেই কি ধরনের পয়জনিং বা উক্ত বহুসংখ্যক কী ইঞ্জেকশন দেয়া হয়েছে, তবে ধারণা করা যায় ওটা ছিল অ্যাট্রপিন।

অ্যাট্রপিন দেয়ার নিয়মটা সংক্ষেপে বলি, প্রটোকল অনুযায়ী প্রথমে রোগীকে তিন অ্যাম্পুল অ্যাট্রোপিন দেওয়া হয়, তারপর রোগীর লক্ষণ ভাল না হওয়া পর্যন্ত প্রতি পাঁচমিনিট অন্তর অ্যাম্পুল সংখ্যা বাড়াতে
হয়। এটা বাড়াতে বাড়াতে ৫০-১৫০ অ্যাম্পুলও লাগে। এটাই চিকিৎসা, এভাবে প্রায়
প্রতিদিনই সবগুলো মেডিকেলে রোগীদের বাঁচানো হয়।

না, এটা সাধারণ মানুষের জানার কথা না। দরকারও নেই। কিন্তু উপরের ওই নিউজটা করার আগে দেশের
প্রধান একটি দৈনিকের সাংবাদিকের এটা জানা উচিত ছিল, কারন তার কাজই কিন্তু জানা এবং জানানো। ডাক্তারদের সময় নেই প্রতিটা বিষয় নিয়ে, প্রতিটা চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে সাধারণ মানুষকে জানানো।

এখন আপনার কি মনে হচ্ছে, উপুর্যুপুরি ৮০ টা ইঞ্জেকশন কি কম হয়ে গেছে ? খেয়াল করবেন রোগী কিন্তু গুরুতর অসুস্থ পত্রিকার ভাষ্যমতে।

দরকার হলে আরো খবর নেন। জিজ্ঞেস করেন যেকোন ডাক্তারকে। পয়জনিং এর লাইন অফ ট্রিটমেন্ট কি ?

উপসংহারঃ এভাবে চললে ভবিষ্যতে কোন ডাক্তার আপনি গুরুতর অসুস্থ, মরণাপন্ন দশা হলে আপনার চিকিতসা করবে না ভয়ে। এইরকম শিরোনামের শিকার হতে পারে এই ভয়ে। সকল পেশায় খারাপ পেশাজীবী আছে। সাংবাদিক পেশার কথা নাই বললাম। ডাক্তার পেশায় অনেক খারাপ ডাক্তার আছে। তবে ভালো ডাক্তারদের খারাপ হওয়ার দিকে ঠেলে দিবেন না, প্লিজ। আমাদের দেশে এমনিতেই মেধা সংকট। আমাদের বাঁচতে দিন।



সর্বশেষ এডিট : ২২ শে জুলাই, ২০১৬ দুপুর ২:৩৪
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×