somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আক্কলে উদয়

৩১ শে অক্টোবর, ২০০৯ দুপুর ১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আক্কেল উদয়

চেইন স্মোকার না হইলেও ২য় সিগারেটটা শেষ হইতে না হইতেই ৩য় সিগারেটটা ধরাইলেন আক্কেল সাহেব। খুব বেশি টেনশনে না পরিলে আক্কেল সাহেব সাধারণত এতটা ধূমপান করেন না। অবশ্য আক্কেল সাহেবের আজকের চিন্তাটা তাহার বউকে নিয়া নয়, ছেলেকে নিয়া। মিসেস আক্কেল আজও ছেলের মুখ হইতে সিগারেটের গন্ধ পাইয়াছেন। গত তিন মাস ধরিয়া এতটা চেষ্টার পরেও কেন তাহার ছেলে সিগারেট ছাড়িতেছে না, আক্কেল সাহেব কিছুতেই তাহা বুঝিয়া উঠিতে পারিতেছেন না। আক্কেল সাহেব তাহার ছেলের মতন বদ আর একটি ছেলেও দেখেন নাই। এই ছেলের জন্য কতটাই না অপমান অপদস্ত হইতে হইয়াছে তাহাকে। গত পাঁচ ছয় বছরে তিনি এমন একটা দিনও পান নাই, যেদিন ছেলের নামে কাহারো কাছ থেকে কোন নালিশ আসে নাই। এই বয়সের পোলাপানেরা কতটাই না ভাল হইয়া থাকে। এই যে পাশের বাড়ির তাহার ছেলের বয়সি আরেকটা ছেলে বিচ্চু না বিল্লু কি যেন নাম, সেও তো বেশ ভাল। কি সুন্দর দেখা হইলেই সালাম দেয়।
এরই মধ্যে হঠাৎ করিয়াই পাশের বাড়ীতে মরা কান্নার আওয়াজ শুরু হওয়াই আক্কেল সাহেবের চিন্তার ব্যঘাত ঘটিল। মিস্টার ও মিসেস আক্কেল বারান্দায় গিয়া দ্বাড়াইতেই বিল্লুর মা তাহার সর্বশক্তি দিয়া বিল্লু আর বিল্লুর বাবাকে আক্কেল সাহেবদের চোখ হইতে আড়াল করিয়া ভিতরে নিয়া গেলেন। আক্কেল সাহ্বে ঘটনার কিছুই বুঝিলেন না। কিন্তু, মিসেস আক্কেল অতান্ত ঘাগু মহিলা। তিনি হাস্যউজ্জ্বল মুখে অঙ্ক স্যারের ন্যায় সম্পূর্ণ ঘটনাটা বুঝাইয়া দিলেন। মিসেস আক্কেলের কথার সারমর্ম হইল এই যে, সেই সকাল বেলায় যখন আক্কেল সাহেবদের মতন মানুষেরা অফিস বা দোকানে থাকেন, তখন বিল্লু আর বিল্লুর মায়ের মধ্যে সে কি চেচামেচি, মিসেস আক্কেল নাকি সেই সময় ফেলুদার মতই আসল রহস্যটা বাহির করিয়া ফেলিয়াছেন। আসল ব্যাপারটা হইল বিল্লু আজও তাহার মায়ের ড্রয়ার হইতে টাকা চুরি করিয়া ধরা খাইয়াছে। তাই বিল্লুর বাবা অফিস হইতে ফিরিয়াই বিল্লুর মাতার অভিযোগের ভিত্তিতে দ্রুত বিচার আদালতে তড়িৎ বিচারকার্য সম্পন্ন করিয়াই দোষী ব্যাক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করাতেই এই সঙ্কটের সৃষ্টি হইয়াছে।
স্ত্রীর পুলক দেখিয়া, মনে মনে ব্যাথিত হওয়া সত্যেও আক্কেল সাহেব মুখ মন্ডলটা স্বাভাবিক করিয়াই রাখিবার চেষ্টা করিলেন। বিল্লুকে তিনি কতটাই না ভাল ভাবিয়াছিলেন, কিন্তু সেও কিনা তাহার অন্তরটা খান খান করিয়া দিল। এ যুগের ১৩-১৪ বৎসরের পোলাপানের উপর আক্কেল সাহেব একেবারেই চটিয়া উঠিলেন। তিনি একবার ভাবিলেন ইহা যুগের, আরেকবার ভাবিলেন বয়সের দোষ। কিন্তু নাতো, এই বয়সে আক্কেল সাহেবরা কতটাই না ভাল মানুষ ছিলেন। এবার আক্কেল সাহেব তাহার ছায়রঙ্গা ছেলেবেলার সৃতিগুলো প্রায় স্পষ্টই দেখিতে পাইলেন। তিনি প্রায় স্পষ্ট দেখিলেন বর্ষার দুপুরে ছেলেবেলার বন্ধুদের সাথে নিজেকে মাঝ পুকুরে সাতার কাটিতে। তিনি ভাবিলেন সেই শরতের মাছ ধরা আর কাঁদায় লুটপুটি খাওয়া দিনগুলো, তিনি আরো দেখিলেন হেমন্তের ফাকা মাঠ যেখানে আক্কেল সাহেব ঘুড়ি উড়াইতেন। শীতের কনকনে ঠান্ডার কথা মনে পরিতেই তাহার হাত-পা ঠান্ডায় জড়ো-সড়ো হইয়া আসিয়া মনে পরিল সেই পোষা ঘুঘুটির কথা, যেটা একবারের প্রচন্ড শীতে মারা গিয়াছিল। তাহার আরো মনে পড়িল বসন্তে কুটুম বাড়ি বেড়াতে যাওয়া, আর গ্রীষ্মের আম চুরি করার কথা মনে পরিতেই তাহার হাসি পাইয়া গেল। তাহারাও যে ছোট বেলায় দুষ্টুমি করেন নাই তাহা নয়, কিন্তু তাহার একটা লিমিট ছিল। তা বটে আম, জাম, লিচু, ডাব ইত্যাদি সবই অন্যেরত বটেই এমনকি নিজেদের গাছ হইতেও তাহারা চুরি করিয়া খাইয়াছেন। তাহার মুরগী চুরি করিয়া বনভোজনও করিয়াছেন আবার কুমড়োর শুকনো লতার ধোয়াও খাইয়াছেন আবার বাবা-চাচাদের পকেট হইতে বিড়ি চুরি করিয়াও খাইয়াছেন। এটুকু মনে পরিতেই তাহার সেদিনের কথা মনে পড়িয়া গেল, যেদিন বিড়ি খাবার জন্য বাবার কাছে প্রথম রাম ধোলাই খাইয়াছিলেন।
আচ্ছা তাইতো এই বিড়ি-সিগারেটের জন্য আক্কেল সাহেব নিজেওত কম ধোলাই খান নাই। তাহার পরেও কেন তিনি সিগারেট ছাড়িতে পারেন নাই। তিনি যখন তিন দশকেও সিগারেট ছাড়িতে পারেন নাই, তখন তাহার ছেলে মাত্র তিন মাসে সিগারেট ছাড়িবে এমন বেআক্কেলের মতন চিন্তা তিনি করেন কিভাবে ?



আক্কেল সাহেবের কাহিনী এখানেই শেষ, তাহার কথা ভাবিয়া আমার রাতের ঘুম নষ্ট করিবার কোনই মানে হয় না, ঠিক নয় কি ? এবার আমি আমার বাস্তব জীবনের একখানা কাহিনী জানাচ্ছি, আমি আর আমার সিগারেট প্রেমী এক বন্ধু একদিন কথা বলিতেছিলাম। আমার ঐ বন্ধুর মতে সিগারেট খাবার মধ্যে নাকি দোষের কিছুই নাই। তাহার মতে, সিগারেটের জন্য পোলাপানদের শোষন করা ঠিক নয়। কাজেই ও নাকি ওর পোলাপানদের সিগারেট খেতে কখনই বাধা দেবে না। আমি ওর কথার বিপক্ষে একটা ল্যাংড়া যুক্তি খাড়া করিলাম, আমি বলিলাম, তুই হইতো তোর পোলাপানের সিগারেট খাওয়াটা স্বাভাবিক ভাবেই মেনে নিতে চাইবি। কিন্তু, তোর ছেলে বোধকরি আরেকটু লাফিয়ে মদ-গাজা খাবার আবদার নিয়া আসিবে।

তা বটে শেষ পর্যন্ত ওর ছেলে পর্যন্তও অপেক্ষা করতে হইনি.........
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ১০:২৯
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

'জুলাই যোদ্ধারা' কার বিপক্ষে যুদ্ধ করলো, হ্তাহতের পরিমাণ কত?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৫১



সর্বশেষ আমেরিকান ক্যু'কে অনেক ব্লগার "জুলাই বিপ্লব" ও তাতে যারা যুদ্ধ করেছে, তাদেরকে "জুলাই যোদ্ধা" ডাকছে; জুলাই যোদ্ধাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি, ছাত্রলীগ; জুলাই বিপ্লবে টোটেল হতাহতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির হত্যাকান্ড ও সরকারের পরবর্তি করণীয়!

লিখেছেন আহলান, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫১

হাদির প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা। সে দেশকে ভালোবেসে, দেশের মানুষকে ইনসাফের জীবন এনে দিতে সংগ্রাম করেছে। তাকে বাঁচতে দিলো না খুনিরা। অনেক দিন ধরেই তাকে ফোনে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে এসেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×