somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কৃত্রিম ভূমিকম্প ও সুনামী তৈরীর প্রযুক্তি

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া গবেষণার প্রকল্প হার্প নিয়ে পশ্চিমা বিজ্ঞানীরা কেউ কেউ ভীষণ উদ্বিগ্ন। তারা মনে করেন ওই প্রকল্প থেকে যুক্তরাষ্ট্র এমন অস্ত্র তৈরি করেছে যা দিয়ে তারা আবহাওয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এর দ্বারা কৃত্রিমভাবে সুনামি ও ভূমিকম্প সৃষ্টিও সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় ক্যাটরিনা ঝড় আঘাত হানার পর প্রথম অভিযোগ ওঠে এটি ছিল হার্পের ভুল পরীক্ষার ফল। এরপর পাকিস্তানে বন্যা, হাইতিতে ভূমিকম্প এবং সাম্প্রতিক জাপান বিপর্যয়ের জন্যও দায়ী করা হচ্ছে হার্প প্রকল্পকে। অনেকেই বলে থাকে যে, হার্প একটি অগুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রাম। কিন্তু সমালোচকেরা এক্ষেত্রে হার্পের বাজেটকে পুঁজি করেন। তারা মনে করেন, ২৩০ মিলিয়ন ডলার দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সরকার নিশ্চয়ই ছেলেখেলা করছে না। কি এই হার্প? কিভাবে তা কাজ করে?



হার্পের পুরো নাম হলো হাই ফ্রিকোয়েন্সি একটিভ অরোরাল রিসার্চ প্রোগ্রাম (High Frequency Active Auroral Research Program)। যুক্তরাষ্ট্রের বিমান বাহিনী ও নৌবাহিনীর আর্থিক সহায়তায় আলাস্কা বিশ্ববিদ্যালয় এবং প্রতিরক্ষা উন্নয়ন গবেষণা কর্মসূচী সংস্থা (ডিআরপিএ) হার্প গবেষণা চালাচ্ছে ১৯৯৩ সাল থেকে। এ কর্মসূচির প্রধান উদ্দেশ্য হলো আবহাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে রেডিও তরঙ্গের মাধ্যমে আয়নমলের সৌরবিদ্যুতের ওপর প্রভাব তৈরি করা। যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে হার্প দিয়ে মানব বিধ্বংসী অস্ত্রের পরীক্ষার অভিযোগ দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। জানা যায়, এই প্রকল্প শুরু হয় স্নায়ু যুদ্ধের শুরু থেকে। রাশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র আলাদাভাবে এ নিয়ে বিভিন্ন প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছে। হার্পের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া উভয়েই কৃত্রিমভাবে প্রাকৃতিক দুর্বিপাক সৃষ্টির অস্ত্র তৈরি করেছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। হার্প নিয়ে রাশিয়ার চেয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিপক্ষেই অভিযোগ বেশি আসছে। এর কারণ যুক্তরাষ্ট্র প্রকাশ্যে হার্প নিয়ে গবেষণা চালাচ্ছে।

জাপান বিপর্যয় আমেরিকার সৃষ্টি!
সম্প্রতি জাপান বিপর্যয়ের পর এর সঙ্গে হার্পের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে। কানাডীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেলো বেঞ্জামিন ফালফোর্ড কাজ করেন যুক্তরাষ্ট্রের ‘নাইট রাইডার’ পত্রিকার জাপান প্রতিনিধি হিসেবে। দীর্ঘদিন ধরে তিনি জাপানে অবস্থান করছেন। যুক্তরাষ্ট্র সরকারের নানা গোপন গবেষণাই সাংবাদিকতায় তার আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দু। ২০০৯ সালে তিনি অভিযোগ করেন যে, হার্প হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের গোপন এক সামরিক অস্ত্র। উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষুদ্র তরঙ্গের শক্তি ব্যবহার করে এই প্রকল্পের মাধ্যমে জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্তকরণ এবং ভূমিকম্প সংঘটনের মতো ভয়াবহ কাজ করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। জাপানে ভূমিকম্প ও সুনামির পরপরই তিনি এক সাক্ষাৎকারে দৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করেন যে, জাপানে সুনামি ও ভূমিকম্প যুক্তরাষ্ট্রের সৃষ্টি। তিনি দেখান কিভাবে ভূমিকম্পের কয়েক দিন আগে থেকে গ্যাকোনার হার্প কেন্দ্র থেকে বিপুল পরিমাণে বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ প্রেরণ করা হয়। ফালফোর্ডের হিসেবে দেখা যায়, ৬ মার্চ থেকে বিদ্যুৎচৌম্বকীয় তরঙ্গ উৎক্ষেপণ শুরু হয়। প্রতি ঘন্টায় এর মাত্রা বাড়তে থাকে। এভাবে ১১ মার্চ সুনামি ও ভূমিকম্প শেষ হওয়া পর্যন্ত চলতে থাকে তরঙ্গ উৎক্ষেপণের কাজ।



হার্প ঘটনাবলিঃ
হার্প কার কার হাতে রয়েছে এ নিয়ে তেমন বিতর্ক নেই। যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়াই পরস্পরকে এ নিয়ে অভিযোগ করেছে। ১৯৯৭ সালে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী উইলিয়াম কোহেন রাশিয়াকে ইঙ্গিত করে একবার বিশ্ব ইকো টেরোরিজমের বিপদ সম্পর্কে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন, "এ ধরনের ইকো সন্ত্রাসীরা উচ্চপ্রযুক্তির যন্ত্রের মাধ্যমে ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ পাঠিয়ে আবহাওয়া পরিবর্তন, ভূমিকম্প সৃষ্টি বা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ঘটাতে পারে।" তবে হার্পের ভয়াবহতার দিকে লক্ষ্য রেখে আমেরিকা এবং রাশিয়া উভয় পরাশক্তিই এই বিষয়টাকে কখনো লাইম লাইটে আসতে দেয়নি। তবে মাঝে মধ্যেই স্লিপ অফ টাং হিসাবে ঐ দু’দেশের অথরিটির মুখ থেকেই বেরিয়ে এসেছে এর কথা।

২০০২ সালে জর্জিয়ার গ্রিন পার্টির নেতা দেশটিতে কৃত্রিম ভূমিকম্প সৃষ্টির জন্য রাশিয়াকে অভিযুক্ত করেন। তেমনি দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ায় ঘটে যাওয়া প্রলয়ংকরী সুনামির জন্য রাশিয়াও একই অভিযোগ এনেছিল আমেরিকার উপর। হাইতিতে ভূমিকম্পের পর পরই ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো শ্যাভেজ অভিযোগ করেন, আমেরিকা হাইতিতে টেকটোনিক ওয়েপন বা ভূকম্পন অস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। ওই পরীক্ষার ফলে হাইতির পরিবেশ মারাত্মক বিপর্যয়ের কবলে পড়ে সৃষ্টি হয় রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার ভূমিকম্প। তিনি আরো বলেন, এই অস্ত্র দূরবর্তী কোনো স্থানের পরিবেশের পরিবর্তন ঘটাতে পারে। পরিবেশকে ধ্বংস করে দিতে পারে। শক্তিশালী বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গ সৃষ্টির মাধ্যমে ভূমিকম্প সৃষ্টি করতে পারে বা আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত ঘটাতে পারে। শ্যাভেজ আমেরিকাকে এই ধ্বংসাত্মক ভূমিকম্প অস্ত্র প্রয়োগ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। হাইতির ঘটনায় প্রায় এক লাখ ১০ হাজার মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হয়। ভয়াবহ এই ভূমিকম্পে ৩০ লাখেরও বেশি লোক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কয়েকটি সূত্রে দাবি করা হয়, এ ধরনের অপর এক অস্ত্র পরীক্ষায় চীনের সিচুয়ান প্রদেশে ২০০৮ সালের ১২ মে ৭ দশমিক ৮ মাত্রার ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। এছাড়া রাশিয়া ২০০২ সালের মার্চে আফগানিস্তানে অনুরূপ এক পরীক্ষা চালিয়ে ৭ দশমিক ২ মাত্রার ভূমিকম্প সৃষ্টির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অভিযুক্ত করে।

রাশিয়ার উত্তরাঞ্চলীয় নৌবহরের ২০১০ সালের প্রতিবেদনেও যুক্তরাষ্ট্রের হার্প পরীক্ষা সম্পর্কে বলা হয়। সরকারিভাবে স্বীকার না করা হলেও যুক্তরাষ্ট্রের ফক্সনিউজ ও রুশ টিভি চ্যানেল "রাশিয়া টুডে"র মতো কিছু গণমাধ্যম খবরটিকে গুরুত্বের সাথে পরিবেশন করে। রাশিয়ার অসমর্থিত রিপোর্টের বরাত দিয়ে ভেনেজুয়েলার ভিভে টিভি জানায়, জানুয়ারির গোড়ার দিকে যুক্তরাষ্ট্র প্রশান্ত মহাসাগরে একই ধরনের একটি পরীক্ষা চালিয়েছিল এবং এর ফলে ক্যালিফোর্নিয়ার ইউরেকা শহরের কাছে ৬.৫ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছিল। ঐ ভূমিকম্পে কেউ গুরুতর আহত না হলেও ইউরেকা শহরের অনেক ভবন বিধ্বস্ত হয়। চ্যানেলটি আরো জানায়, তাদের পরীক্ষার ফলে যে এ ধরনের মারাত্মক ভূমিকম্প ঘটতে পারে সে ব্যাপারে মার্কিন নৌবাহিনী ‘সম্পূর্ণ অবগত’ ছিল। সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলা করার জন্যই মার্কিন সেনা কর্তৃপক্ষ কিছুদিন আগেই ক্যারিবীয় এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলীয় কমান্ডের উপপ্রধান জেনারেল পি কে কিনকে মোতায়েন করে।



গত বছর পাকিস্তানের বন্যাঃ
পাকিস্তানি আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে বলা হয় মৌসুমী বৃষ্টির কারণে এ বন্যার সূত্রপাত। পাকিস্তান আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, চব্বিশ জুলাই থেকে পরের ৩৬ ঘণ্টায় ৩০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টি পড়েছে। ফলে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। তবে এ ঘটনায় পাকিস্তানের স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বেশকিছু সংস্থা ও গোষ্ঠী দাবি করছে, দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে হার্প প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ বন্যা সৃষ্টি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা বলছেন, পাকিস্তানের উত্তর পশ্চিমাঞ্চল যেহেতু তালেবান ও আল কায়েদার নিয়ন্ত্রণে সেহেতু হার্প প্রযুক্তি ব্যবহার করে বন্যার মাধ্যমে এ অঞ্চলে পুরোদস্তুর বিপর্যয় সৃষ্টি করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

হার্প সম্পর্কে নানা পক্ষের বক্তব্যঃ
বিজ্ঞানীরা অনেকে আশঙ্কা করেন, যুক্তরাষ্ট্রে হারিকেন ক্যাটরিনা এবং মহাকাশযান কলম্বিয়া ধ্বংসের জন্য হার্পই দায়ী। উল্লেখ্য, ক্যাটরিনা সংঘটিত হয়েছে কালো অধ্যুষিত ক্যালিফোর্নিয়া অঞ্চলে। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, হার্পের প্রাথমিক পরীক্ষায় ভুলের ফলে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এবং ভুল হতে পারে জেনেই পরীক্ষার জন্য কালো অধ্যুষিত অঞ্চলটিকে বেছে নেয়া হয়। যদিও তখন হার্প সংশ্লিষ্টরা এ অভিযোগকে অস্বীকার করে। হার্প প্রোগ্রামে কর্মরত বিজ্ঞানী উমর ইনান যুক্তরাষ্ট্রের একটি ম্যাগাজিন কর্তৃক এ সম্পর্কিত প্রশ্নের মুখোমুখি হন। সে সময় উত্তর দিতে গিয়ে তিনি ক্ষোভে ফেটে পড়েন। তিনি বলেন, ‘হার্পের ভেতরে এমন কিছু নেই যা দিয়ে আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটানো যায়। তাছাড়া হার্পের শক্তিও অনেক কম। এটা ৫০ থেকে ১০০টি ফ্লাশলাইটের সমপরিমাণ তরঙ্গ তৈরি করতে পারে। যা দিয়ে এমন কিছু করা সম্ভব না।’ যদিও এটা স্বীকৃত সত্য যে, হার্প এক ধরনের উচ্চ কম্পঙ্কবিশিষ্ট চুল্লি, যার কার্যকরী তেজস্ক্রিয়তার শক্তির পরিমাণ ১ গিগাওয়াট অথবা ৯৫ থেকে ১০০ ডেসিবেল ওয়াট থেকেও বেশি। সহজ কথায় এটি আয়নম লকে নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে কার্যকর ও শক্তিশালী গবেষণা।

হার্পের সঙ্গে যুক্ত অনেক বিজ্ঞানী এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানতে পেরে এ থেকে বেরিয়ে এসেছেন। তারা জানিয়েছেন, আবহাওয়া নিয়ে গবেষণা করার জন্য তাদের ডাকা হলেও কাজ করতে গিয়ে তারা টের পান আবহাওয়াকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার সুবিধা পেতে চেষ্টা চালাচ্ছে প্রতিরক্ষা দপ্তর। হার্পের সাবেক প্রোগ্রাম ম্যানেজার জন এল হ্যাকশেয়ার বলেন, ‘জনগণকে বলা হয় যে, হার্পের কোনো মিলিটারি ভ্যালু নেই। যদিও এটি বিমানবাহিনী ও নৌবাহিনী দ্বারা পরিচালিত। কিন্তু এর গভীর উদ্দেশ্য সম্পর্কে জনগণকে কখনো জানানো হয় না। এর দ্বারা হাজার হাজার মাইল দূরে অবস্থিত শত্রু এলাকার আবহাওয়ায় প্রভাব ফেলা যাবে।’

৮ আগস্ট, ২০০২ রাশিয়ার সরকার হার্প নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দেয়। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘হার্প প্রকল্পের অধীনে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন তরঙ্গকে কাজে লাগিয়ে পৃথিবীর মধ্যভাগের ভূতত্ত্বে আঘাত হানার জন্য নতুন গোপন অস্ত্র তৈরি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। ঠাণ্ডা ইস্পাতকে অগ্নিপ্রজ্বলিত করা বা সাধারণ অস্ত্রকে পারমাণবিক অস্ত্রে রূপান্তর করার মতো ক্ষমতাশালী এ অস্ত্র। পূর্বের অস্ত্র থেকে এটার পার্থক্য এই যে, ভূতলের মধ্যভাগে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যক্ষ প্রভাব ঘটাতে এটি সক্ষম। যা আর কোনো অস্ত্রের পক্ষে সম্ভব না।’ বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘হার্প কর্মসূচির অধীনে বৈজ্ঞানিকদের গবেষণায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পরিকল্পনা বহুদূর এগিয়ে গেছে এবং বিশ্ব সম্প্রদায় এটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। বেতার যোগাযোগের মাধ্যম ভেঙে ফেলতে সক্ষম নতুন অস্ত্রটি। এটি বিমানের ওপর রকেট নিক্ষেপণ এবং গ্যাস পাইপলাইন, তেল, বৈদ্যুতিক সংযোগে বিপজ্জনকভাবে আঘাত হানতে পারে। আক্রান্ত অঞ্চলে জনসাধারণের মানসিক ক্ষতি ঘটতে পারে।’ মস্কো দুমা, প্রতিরক্ষা কমিটি, আন্তর্জাতিক কমিটি এবং রাশিয়ার সরকার কমিশন এ লিখিত বিবৃতি দিয়েছিল। এ বিবৃতিতে রাশিয়ার ৯০ জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার স্বাক্ষর ছিল। জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক সংগঠনের সদস্যভুক্ত দেশগুলোর নেতৃবৃন্দের কাছে প্রচারও করা হয়েছিল বিবৃতিটি।

স্টিভেন মিজরাখ ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান, নৃতত্ত্বের শিক্ষক হলেও তার আগ্রহের প্রধান জায়গা মহাকাশতত্ত্ব। তিনি ‘হার্প কি তারকা যুদ্ধের হাতিয়ার?’ শীর্ষক প্রবন্ধে বলেন, ‘সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর মার্কিনীদের তারকা যুদ্ধের পিছনে কাজ করা ব্যাপকভাবে কমে যায়। কিন্তু বর্তমান সময়ে সামরিক কাজে তারকা যুদ্ধের জন্য সময় ও অর্থ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। হার্প প্রকল্পটি বিশেষভাবে চালু করা হয়েছিল আমেরিকান নৌ ও বিমান বাহিনীর জন্য। বৈজ্ঞানিক গবেষণার আড়ালে বায়ুম-লের ওজোনস্তরে শক্তিশালী রশ্মি প্রক্ষেপণের মাধ্যমে ওজোনস্তরকে উত্তেজিত করে সামরিক কাজে ব্যবহার করাই এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। ওজোনস্তর সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি এবং ভূপৃষ্ঠ ও বিভিন্ন স্যাটেলাইট হতে যোগাযোগের জন্য ব্যবহৃত রশ্মি শোষণের মাধ্যমে পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখে। তাই ওজোনস্তরের স্থিতিশীলতার সংগে পরিবেশের নানা ভারসাম্যের দিক জড়িত।’ তিনি আশঙ্কা ব্যক্ত করেন, ‘বিগত ৫০ এর দশকে এবং ৬০ এর শুরুতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সোভিয়েত রাশিয়া ভূপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে পরীক্ষামূলক পারমাণবিক বিস্ফোরণ ঘটায়। এতে জলবায়ুর যে পরিবর্তন ঘটে তা পরবর্তী ২০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়। তাহলে হার্প প্রকল্পে ওজোনস্তর উত্তেজিত করার মাধ্যমে আমরা কি এই ধরনের একটি পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি?’ তিনি ওই প্রবন্ধে আরো বলেন, ‘পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী ব্যবস্থা বলে দাবি করা এই প্রকল্পটির অবকাঠামোগুলো বর্তমানে আলাস্কার গ্যাকোনাতে নির্মাণাধীন। এই ধরনের আরো হার্প হিটার ইতোমধ্যেই নরোয়ে, ইউক্রেন, রাশিয়া, তাজাকিস্তান, পুর্তোরিকায় চালু করা হয়েছে। এই ধরণের গবেষণা ও পরীক্ষা কি বৈশ্বিক জলবায়ুর পরিবর্তন আনছে? গতবছর ঘটে যাওয়া যুক্তরাষ্ট্রের বন্যার জন্য কি এই প্রকল্পই দায়ী? জিরিনোভস্কি কি এই ধরনের গোপন অস্ত্রের কথাই বলেছিলেন? এই হিটার কি ভূচৌম্বক ক্ষেত্রের পরিবর্তন আনবে? আমাদের ওজোনস্তরে নতুন সৃষ্টি হওয়া ফুটো দিয়ে আগত সূর্যের ক্ষতিকারক রশ্মি থেকে নিজেদের রক্ষা করা কি প্রয়োজনীয় নয়? হার্প প্রকল্পের অবকাঠামোগুলোর নিকটবর্তী এলাকায় বসবাসকারী মানুষগুলো কি তড়িৎচৌম্বকীয় তেজস্ক্রিয়তায় আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে নেই?

শিল্প, প্রযুক্তি, সেনাবাহিনীর দূষণ বা কর্মকান্ডের অপক্রিয়া নিয়ে কাজ করতেন যুক্তরাষ্ট্রের মানবাধিকার ও স্বাস্থ্যকর্মী ড. রোসালি বারটেল। হার্পের অপব্যবহারের বিষয়টি তিনি সবার নজরে আনার চেষ্টা করেন। ব্যাকগ্রাউন্ড অব হার্প প্রজেক্ট শীর্ষক প্রবন্ধে উপসংহার টানতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ধরে নেয়া যায় যে হার্প কোনো বিচ্ছিন্ন গবেষণা নয়। এটি ৫০ বছরের নিবিড় এবং বর্ধনশীল ধ্বংসাত্মক কার্যক্রম যা আয়নমলের ওপর নিয়ন্ত্রণ নিতে চালানো হচ্ছে। হার্প মহাশূন্য গবেষণাগার তৈরির পরিকল্পনা থেকে বিচ্ছিন্ন নয়। এটা মহাশূন্য গবেষণা এবং সমরবিদ্যা উন্নয়নের একটি অবিচ্ছিন্ন অংশ। যা সামরিক প্রয়োগের যৌথ কার্যক্রমের ইংগিত দেয়। এই প্রকল্পের মূল কাজ হলো যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর নিয়ন্ত্রণ এবং বৈরী প্রকৃতির ধ্বংসাত্মক অবস্থা এবং প্রকৃতির নির্ভরতার উপর নিয়ন্ত্রণ নেয়া। এই ধরনের নিয়ন্ত্রণ অবশ্যই একটি বড় ক্ষমতা। লেজার এবং আহিত কণার রশ্মি নির্গমনের মাধ্যমে এবং মহাশূন্য গবেষণাগার ও রকেট এর সমন্বয়ে হার্প পৃথিবীর যে কোনো স্থানে অনেক শক্তি সরবরাহ করতে পারে। যা পারমাণবিক বোমা সমতুল্য। এটা অনেক ভীতিকর।’



হার্পের ইতিহাসঃ
যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কার গ্যাকোনার টক হাইওয়ে সংশ্লিষ্ট এলাকায় হার্পের অবস্থান। ৪০ একর আয়তনের বিশাল জমিতে ১৮০টি এ্যালুমিনিয়াম অ্যান্টেনার সমাবেশের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে এর গবেষণা কর্মকান্ড। বিমানবাহিনীর ফিলিপস ল্যাবরেটরি এবং নৌবাহিনীর অফিস অব নেভাল রিসার্চ অ্যান্ড নেভাল রিসার্চ ল্যাবরেটরি এর সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত থেকে কাজ করে যাচ্ছে। রেথন কর্পেরেশন এর ডিজাইন এবং নির্মাণের কাজে নিয়োজিত ছিল। বার্নার্ড ইস্টল্যান্ড কাজ করতেন তারকা যুদ্ধ নিয়ে। অনেক বছর ধরে তিনি হার্প ধারণাটির সমালোচনা করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে দেখা গেছে হার্প যন্ত্রটির পেটেন্ট হয়েছে তার নামে। যুক্তরাষ্ট্রের পেটেন্ট বিভাগ হার্প সম্পর্কে বলছে, এটি পৃথিবীর যে কোনো এলাকার বায়ুমণ্ডল, আয়নমণ্ডল বা চৌম্বকমণ্ডলের পরিবর্তনের একটি পদ্ধতি ও যন্ত্র। পেটেন্ট বিভাগ হার্পের আবিষ্কারক হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে পদার্থবিদ বার্নার্ড ইস্টল্যান্ডকে। এজন্য তারা সূত্র হিসেবে নিউইয়র্ক টাইমস ও লিবার্টি ম্যাগাজিনে ইস্টল্যান্ডের প্রকাশিত এ বিষয়ক কয়েকটি নিবন্ধকে উল্লেখ করেছেন। হার্প ১১ আগস্ট, ১৯৮৭ পেটেন্টভুক্ত হয়। পেটেন্ট নং ৪,৬৮৬,৬০৫।

ইস্টল্যান্ড রেথন কর্পোরেশনের যে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আধুনিক বৈদ্যুতিক প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতেন সেই প্রতিষ্ঠানই এখন হার্পের কর্মকান্ড পরিচালনা করছে। ইস্টল্যান্ড হার্প নিয়ে কাজ করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন যে, এটা মানব সমাজ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষতির কারণ হয়ে ওঠতে পারে। কিন্তু ইস্টল্যান্ডের মৃত্যুর পর দেখা যায় যে, হার্প তার নামে পেটেন্ট হয়েছে। তার ঘনিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানটিই এ নিয়ে কাজ শুরু করছে। এ অবস্থায় ড. নিক বেগিচ হার্পের বিরুদ্ধে ক্রুসেড ঘোষণা করেন। তিনি এ নিয়ে ড. ম্যানিংয়ের সঙ্গে যৌথভাবে ‘এঞ্জেলস ডোন্ট প্লে দিস হার্প’ শীর্ষক একটি বইও লেখেন। তিনি বলেন, ‘আমি বলছি না এটা বন্ধ করে দিতে হবে। আমি বলছি এটা গভীরভাবে পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। কারণ এর অপব্যবহারের শঙ্কাটা কিন্তু সব সময়েই থাকছে। তিনি আরো বলেন, ‘এতে প্রকৃতির নানা অংশকে ব্যবহার করে বিপর্যয় সৃষ্টির সুযোগ রয়েছে। সরকার এবং বিশেষজ্ঞরা হার্প কর্মসূচির এই অংশটি জনগণের সামনে উন্মুক্ত করেননি।’ তিনি আরো চিন্তিত ছিলেন যে, হার্প মানুষের মস্তিষ্কেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ এর সিগনালগুলো মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলার ক্ষমতাসম্পন্ন।

হার্প আবিষ্কারঃ
প্রথম ব্যক্তি যার মাথায় হার্পসদৃশ অস্ত্রের ধারণাটি আসে তিনি হচ্ছেন সার্বীয় বংশোদ্ভূত বিজ্ঞানী নিকোলা তেসলা। যার নামে কিনা বলা হয়ে থাকে ‘দ্য ম্যান হু ইনভেন্টেড দ্য টোয়েনটিয়েথ সেঞ্চুরী’। তিনি এসি বিদ্যুৎ যন্ত্র আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে বিদ্যুতের বহুমুখী ও বাণিজ্যিক ব্যবহারের পথ উন্মুক্ত করেন। ১৯০৬ সালে তিনি একটি ম্যাগাজিনকে বলেন, অল্প সময়ের মধ্যেই মানুষ তারবিহীন বার্তা আদান প্রদানে সক্ষম হবে। বর্তমান মোবাইল ও ইন্টারনেটভিত্তিক যোগাযোগ ব্যবস্থার ভবিষ্যদ্বক্তা ছিলেন তিনি। মহান এই বিজ্ঞানী ৭ জানুয়ারি, ১৯৪৩ রহস্যজনকভাবে যুক্তরাষ্ট্রে মৃত্যুবরণ করেন।

১৯৪৩ সালের মার্চেই তড়িৎ প্রকৌশলী ড. জন জি ট্রায়াম্ফের নেতৃত্বে নিকোলা তেসলার সব ধরণের গবেষণাপত্র সংগ্রহ করে সরকার। ট্রায়াম্ফ ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উন্নয়ন দপ্তর অধিভুক্ত জাতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা কমিটির একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তখন ওটাকে গবেষণার জন্য সংগ্রহ বলে চালানো হলেও আদতে তা ছিল দৃশ্যপট থেকে এগুলো সরিয়ে ফেলা বা জব্দ করারই নামান্তর। ট্রায়াম্ফ তার কাজের শেষে নিয়মমাফিক একটি রিপোর্ট দেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন যে, ‘তেসলার কাজের অধিকাংশই অমিমাংসিত। এমনও কাজ আছে যেগুলোতে দশ বছরের ধুলো জমেছে।’ তাই বলে এগুলোকে যেন অবহেলা না করা হয় সে বিষয়েও গুরুত্বারোপ করেন তিনি। ট্রায়াম্ফ রিপোর্টের শেষে উল্লেখ করেন, ‘তেসলার গবেষণায় এমন একটি বাক্যও নেই যা অবন্ধুত্বপূর্ণ কারো হাতে পড়লে বিপদ ডেকে আনবে না।’ এরপর থেকে তেসলার গবেষণাপত্রগুলোর গোপনীয়তা রক্ষা করা হচ্ছে আজ পর্যন্ত। তেসলার গবেষণাপত্র এর আগেও বেহাত হয়েছে। ১৮৯৫ এর মার্চে তার ল্যাবরেটরিতে আগুন লেগে যায়। অনেক কাগজপত্র খোয়া যায় তখন। ধারণা করা হয় প্রতিরক্ষা দপ্তর তখন বুঝতে চেয়েছিল তেসলা আসলে কি করছেন। এজন্য আগুনের আড়ালে তার কাগজপত্র হাতিয়ে পরীক্ষা চালায় তারা।

নিকোলা তেসলা হার্প সম্পর্কে গবেষণা করেছেন তার মৃত্যু পর্যন্ত। ‘কিভাবে প্রাকৃতিক শক্তিকে কেন্দ্রীভূত করে একে একটি অস্ত্র হিসেবে কাজে লাগানো যায়’ শিরোনামে এক প্রবন্ধে তিনি হার্প সম্পর্কে লিখেছেন যে, ‘একে অনেকটা লেজার গানের সঙ্গে তুলনা করা যায়। লেজার গানের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এমনভাবে নির্দিষ্ট একটি স্থানে কেন্দ্রীভূত করে রশ্মিটি ফেলা হয়। এ ক্ষেত্রেও তেমনি ঘটবে। শুধু রশ্মিটি আসবে প্রাকৃতিক মাধ্যম থেকে।’

হার্পের কাজঃ
হার্প কিভাবে কাজ করে তা নিয়ে ব্যাপক মতভেদ আছে। আছে অস্পষ্টতাও। বিষয়টি কাগজে কলমে উম্মুক্ত হলেও এর আসল অংশটি একেবারে টপ সিক্রেট। পশ্চিমা বিজ্ঞানীদের একাংশ মনে করেন, হার্প একটি অস্ত্র। যা দিয়ে ভূমিকম্প, সুনামি, বন্যা, ঝড়ের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটানো সম্ভব। যুক্তরাষ্ট্রের হার্প প্রকল্প থেকে জানা যায়, প্রকল্পে স্থাপিত অ্যালুমিনিয়াম অ্যান্টেনাগুলো দিয়ে আয়নমলে তরঙ্গ প্রেরণ করা হয়। এই তরঙ্গ প্রেরণ করা হয় ভূমি থেকে প্রায় ৫০ মাইল দূরবর্তী অবস্থান থেকে। এর ফলে সূর্যরশ্মির গমন পথে আহিত কণা সৃষ্টি হয়। এটি নিম্ন আয়নমলে কম্পন সৃষ্টি করে। এই কাঁপুনির ফলে এক ধরণের সাময়িক অ্যান্টেনার উৎপত্তি ঘটে। এই অ্যান্টেনাগুলো পৃথিবীতে অনেক ক্ষুদ্র ও নিচু মাত্রার তরঙ্গ পাঠাতে থাকে। এই তরঙ্গগুলো সাগরের গভীরে প্রবেশ করতে পারে। সমুদ্রের লবণাক্ত পানি উচ্চ মাত্রার তরঙ্গ গ্রহণ করতে সক্ষম। ফিরে আসা এ তরঙ্গকে হার্প আবার পাঠাতে পারে নির্দিষ্ট কোনো স্থানে। এছাড়া পৃথিবীর যে অংশে রাত থাকে সূর্যরশ্মি না থাকার ফলে সেখানে আয়নমলের নিচের স্তরটি সাময়িকভাবে অনুপস্থিত থাকে। এ কারণে হার্প পরীক্ষার জন্য রাত বেশি উপযোগী। হার্পের প্রোগ্রাম ম্যনেজার পল কুসি এই তরঙ্গ সম্পর্কে বলেছেন, ‘এটিই হচ্ছে সত্যিকারের তরঙ্গ। এগুলো উপর থেকে আসে এবং অনেক গভীরে যেতে পারে। এটা কোনো ধরনের তার দিয়ে সৃষ্টি করা সম্ভব না।’

আমরা জানি, সূর্যের অভ্যন্তরে অগ্নিঝড়ের দমকা চলতে থাকে সারাক্ষণ। পর্যায়ক্রমে এর হার বাড়তে ও কমতে থাকে। একেকটি দমকার সঙ্গে প্রচন্ড তাপবাহী সৌরশিখা সৌরজগতে ছড়িয়ে পড়ে। এই শিখার সঙ্গে বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তেজস্ক্রিয়তার (ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন) আণবিক বিস্ফোরণ ঘটে। তেজস্ক্রিয় শিখা যখন পৃথিবীর দিকে আসতে থাকে, তখন বায়ুমন্ডলের বাইরের পরিমন্ডল কতৃক তা বাধাগ্রস্ত হয়। এতে ভূ-পৃষ্ঠে থাকা মানুষ সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা পায়। কিন্তু হার্পের মাধ্যমে বায়ুমন্ডলের ওজোনস্তরে ফাটল ধরিয়ে সরাসরি তেজস্ক্রিয় শিখাকে প্রবেশের রাস্তা করে দেয়া হয়। এবং এভাবে সৃষ্টি করা হয় প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

আবার হার্প দ্বারা সরাসরি ভূমির অভ্যন্তরে টেকটোনিক প্লেটে বিদ্যুৎচৌম্বকীয় তরঙ্গ প্রেরণ করে তাতে ফাটল ধরানোর মাধ্যমে সৃষ্টি করা হয় ভূমিকম্প ও সুনামি। পৃথিবীর উপরিতল একাধিক শক্ত স্তরে বিভক্ত। এগুলোকে টেকটনিক প্লেট বলা হয়। কোটি কোটি বছর ধরে এগুলো পৃথিবীর উপরিতলে এসে জমা হয়েছে। টেকটনিক প্লেট মূলত পাথরের তৈরি, এর উপরিভাগ মাটি, বালি ও জীবাশ্ম দিয়ে তৈরি। টেকটনিক প্লেট ১৫ কিলোমিটার থেকে ২০০ কিলোমিটার পুরু হতে পারে। পৃথিবীর অভ্যন্তরে থাকা গলিত ম্যাগমা বা লাভার ওপর এগুলোর অবস্থান।

হার্প পরিচালনাকারীদের মতে, এই প্রকল্পের লক্ষ্য হলো আয়নমলের বিভিন্ন প্রক্রিয়া ও ঘটনা সনাক্তকরণ এবং অনুসন্ধান করা। এর মাধ্যমে নিম্মোক্ত কাজগুলো করা যাবে এটা তারাই স্বীকার করেছেন।

১) আয়নমলের বৈশিষ্ট, চরিত্র ও তা সনাক্ত করতে ভূবিদ্যা সম্পর্কিত কিছু পরীক্ষা চালানো যাতে করে ওজনস্তরের নিয়ন্ত্রণ লাভ করা যায়।
২) আয়নমলে লেন্সের মাধ্যমে অতি উচ্চকম্পাঙ্কের শক্তিকে ফোকাস করা এবং আয়নমন্ডলের প্রক্রিয়ার উপর নিয়ন্ত্রণ নেয়া।
৩) প্রেরিত ইনফ্রারেড তরঙ্গ আয়নমন্ডলের ইলেকট্রন গুলোকে আরো গতিশীল করবে এবং অন্যান্য আলোক তরঙ্গ নির্গমনের মাধ্যমে রেডিও ওয়েভের চলাচলের উপর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করবে।
৪) ভূচৌম্বকীয় গঠনের পরিবর্তনের মাধ্যমে রেডিও তরঙ্গের প্রতিফলন নিয়ন্ত্রণ করা।
৫) পরোক্ষভাবে তাপ দিয়ে অনেক দূর পর্যন্ত রেডিও ওয়েভ এর চলাচলের ওপর প্রভাব ফেলা যা আয়নমন্ডলের নিয়ন্ত্রণের সামরিক উদ্দেশ্যকে সম্প্রসারিত করে।
৬) আয়নমলের ৯০ কি.মি. নিচে রেডিও ওয়েভের প্রতিফলক স্তর তৈরী করা, যা দিয়ে অনেক দূর দুরান্ত পর্যন্ত নজরদারি করা যাবে।

এবার চলুন দেখে নেই এই HAARP নিয়ে বানানো একটি ভিডিও প্রতিবেদন যা আপনাকে এই HAARP কে বুঝতে আরো বেশি সহায়তা করবে।

ভিডিওটির লিংক...
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ সকাল ১১:৪৭
৮টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪৬

পানির অপচয় রোধ: ইসলামের চিরন্তন শিক্ষা এবং সমকালীন বিশ্বের গভীর সংকট



পানি জীবনের মূল উৎস। এটি ছাড়া কোনো প্রাণের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন:

وَجَعَلۡنَا... ...বাকিটুকু পড়ুন

মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫….(৭)

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৭

ষষ্ঠ পর্বের লিঙ্কঃ মায়াময় স্মৃতি, পবিত্র হজ্জ্ব- ২০২৫-….(৬)

০৬ জুন ২০২৫ তারিখে সূর্যোদয়ের পরে পরেই আমাদেরকে বাসে করে আরাফাতের ময়দানে নিয়ে আসা হলো। এই দিনটি বছরের পবিত্রতম দিন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে shoot করে লাভবান হলো কে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৪


শরিফ ওসমান হাদি যিনি সাধারণত ওসমান হাদি নামে পরিচিত একজন বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী ও বক্তা, যিনি জুলাই গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র হিসেবে পরিচিত। তিনি ত্রয়োদশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আধা রাজাকারি পোষ্ট ......

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৬


আমি স্বাধীন বাংলাদেশে জন্মগ্রহণ করেছি। আমার কাছে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বা পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে আজকের বাংলাদেশের তুলনা—এসব নিয়ে কোনো আবেগ বা নস্টালজিয়া নেই। আমি জন্মগতভাবেই স্বাধীন দেশের নাগরিক, কিন্তু... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা কেন ভারতীয় বাহিনীকে বাংলাদেশে দীর্ঘদিন রাখেনি?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২০



কারণ, কোল্ডওয়ারের সেই যুগে (১৯৭১সাল ), আমেরিকা ও চীন পাকিস্তানের পক্ষে ছিলো; ইন্দিরা বাংলাদেশে সৈন্য রেখে বিশ্বের বড় শক্তিগুলোর সাথে বিতন্ডায় জড়াতে চাহেনি।

ব্লগে নতুন পাগলের উদ্ভব ঘটেছে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

×