somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জেগে আছে বাংলাদেশ- শেষ পর্ব

৩১ শে মে, ২০০৭ বিকাল ৩:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

না ৷ আমার ভেবে দেখার কিছু ছিল না৷ সব ভাবনা আব্বু ভেবে রেখেছে, আমাদের সব ভাবনা আব্বুই ভাবে ৷ জিন্দা বাজার সরকারী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ছেড়ে আমি এখন সিলেট সরকারী মহিলা মহাবিদ্যালয়ে যাই ৷ সাদা সালোয়ার কামিজ আর ভাঁজ করা সাদা ওড়না সেপটিপিন দিয়ে কাঁধের দু পাশে আটকানো, ঝোলানো ব্যাগে বই খাতা, কলমটা আমি গুঁজে রাখি আমার কামিজের গলায় ৷ না ৷ এখন আর ও দাঁড়িয়ে থাকে না রুনা আপুদের বারান্দায়৷ আমার বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় ঐ বারান্দায় এখন আর কেউ দাঁড়ায় না ৷ রিকশা থেকে নামার আগে অভ্যেসবশত চোখ চলে যায় ঐ বারান্দায়, ওখানে কেউ নেই, থাকবে না জেনেও ৷ ঝোলানো দুই বিনুনী বেখেয়ালে পড়ে থাকে বুকের পরে, ক্লান্ত পায়ে আমি এগিয়ে যাই বাড়ির দিকে৷ ওবাড়ির খালাম্মা এখনও সোয়েটার বুনে চলে বছরভর ৷ কার জন্যে কে জানে? আমিও বুনি, জানি না কার জন্যে, তবে এখন আর আমি সোয়েটার বুনতে গিয়ে ভুল করে ঘর ছেড়ে দিই না ৷ তবুও খালাম্মার কাছে গিয়ে বসি, নতুন কিছু ডিজাইন তুলে আনব বলে, বহুবার শোনা গল্প আবার শুনি খালাম্মার কাছে, টুটু এখন নোয়াপাড়ায় থাকে, চাকরী করে কোন এক টেক্সটাইল মিলে, ডিজাইন আঁকে টুটু, শাড়িতে, শার্টের পিসে আর বেডশিটে ৷ আমি মনে মনে দেখতে পাই সার সার জ্যামিতির নকশা তার পাল্টে পাল্টে যাওয়া বিনুনি করা সব মেয়ের মুখ৷ আম্মুর সাথে যখন শাড়ি কিনতে দোকানে যাই বোঝার চেস্টা করি কোনটা টুটুর করা ৷ কোন শাড়ির কোন ডিজাইনে আমি কোন মেয়ের মুখ দেখতে পাই না৷ বিনুনি পরা, একটু একটু করে পাল্টে যাওয়া সব মুখ৷ এখনও সে ঐ চাকরিই করে সে? কে জানে ৷ ওদের বাড়ির অর্থনৈতীক অবস্থা ভাল নয়, টুটুকে তাই বি এ পাস করেই চাকরীতে ঢুকতে হয়েছে, ইচ্ছা থকলেও আর্ট কলেজে যেতে পারেনি ৷ টুটুর সরকারী চাকুরে বাবা এখন রিটায়ার করে বাড়িতেই আছেন ৷ অসুস্থ মা আরও বেশি অসুস্থ হয়েছেন৷ ইতিমধ্যে তাঁর আরও দু বার শক্ত শক্ত অপারেশন হয়েছে, আর টাকা জোগাড় করতে দিনরাত কাজ করে টুটু, রোজই ওভারটাইম ৷ আমার কি? তবু আমার ভাল লাগে না খালাম্মার কথা শুনতে৷ আমি উঠে যাই রুনা আপুর ঘরে, একটু বসি রুনা আপুর পরিত্যক্ত বিছানায়, কান না পেতেই শুনতে পাই রুনা আপু ফিসফিস করে বলছে, রুকু রে, টুটুভাই তোকে সত্যিই খুব ভালবাসে, একটু ভেবে দেখিস! চারপাশে তাকিয়ে দেখি, সব তেমনি আছে, যেমনটি ছিল রুনা আপু থাকার সময়৷ তবে এখন রুনা আপুর বিছানা পরিপাটি গোছানো, কোন বই এলোমেলো কোথাও পড়ে নেই, বালিশের কাছে রাখা রুনা আপুর ওয়াকম্যানটা দেখে শুধু চোখ ভিজে আসে ৷ মাথার কাছে ক্যাসেটের র‌য়কে সার দিয়ে সাজানো সব ক্যাসেট, বেশির ভাগই নজরুল গীতির ৷ রোজই খালাম্মা একবার করে এসে এঘরের ধুলো ময়লা ঝেড়ে যায়, গোছানো বিছানা আবার গোছায় ৷ আমি ইচ্ছা করলে ওয়াকম্যানে ক্যাসেট ভরে শুনতে পারি আমার প্রিয় নজরুল গীতি৷
হেথা হিয়া ওঠে বিরহে বিকুলি',
মিলনে হারাই দু'-দিনেতে ভুলি,
হদৃয়ে যথায় প্রেম না শুকায়
সে অমরায় মরে স্মরিও৷৷
কিন্তু আমার এখন গানেও উত্সাহ নেই৷ ঘরে ফিরে আসি, তেলের বাটি চিরুণী হাতে আম্মু আসে, বিনুনী খুলে চুলে তেল দিয়ে চুল আঁচড়ে দেয় আম্মু, রোজকার মত ৷ আর তার কথা মানে সব আমার বিয়ের ভাবনা, কেমন হবে সে আয়োজন ৷ আব্বু আমার জন্যেও ভেবে রেখেছে আর সেই ভাবনা বাস্তবায়নের জন্যে আব্বু গুটিগুটি পায়ে সেদিকে এগুচ্ছেও ৷ প্রায় সন্ধ্যেতেই আব্বুর বন্ধু সৈয়দ কাকু এসে বসে আব্বুর কাছে, নতুন নতুন পাœরে খোঁজ নিয়ে আসে কাকু, সাথে পাত্রের ছবি সহ বায়োডাটা ৷ যেগুলো আব্বুর পছন্দ হয় সেগুলো এক পাশে রেখে বাদবাকিগুলো আব্বু ফেরত দেয় ৷ পরে ভাবনা চিন্তা করে যোগাযোগ করবে সৈয়দ কাকুর সাথে ৷ আমার সত্যিই কিছু ভেবে দেখার কিছু ছিল না ৷ সব ভাবনা আব্বু ভেবে রেখেছে, আমাদের সব ভাবনাই আব্বুই ভাবে ৷ আমি তবু আম্মুর সাথে দোকানে যেতে পারি, জ্যামিতির নকশা দেওয়া কাপড় পছন্দ করে কিনে আনতে পারি ৷ অমন জ্যামিতির নকশার মধ্যে আমি দেখতে পাই তিরতির করে করে জল ঝরা ছড়া ৷ ধাপে ধাপে উঠে যাওয়া পাহাড় ৷ গাছ, লতা, পাতা, পাখী আর পাহাড় ৷ আর মাঝে মাঝে আনারসের বন ৷ এ সব ভাবতে আমার কোন বাধা নেই ৷ জ্যামিতির ছাপ ছবির শড়িগুলি যেন বেদনার রঙে আঁকা ৷ শাড়িগুলি যেন আমার হারিয়ে যাওয়া কিশোরীবেলা ৷ আমার হারিয়ে যাওয়া গানেরা, হারিয়ে যাওয়া বাংলাদেশ ৷


কুহু কুহু কুহরে পাহাড়ী কুহু
কুহু কুহু কুহরে পাহাড়ী কুহু
পিয়াল ডালে পল্লব বীণা বাজায়
ঝিরিঝিরি সমীরন তালে তালে তালে,তালে তালে
সেই জল ছলছল শুনে ডাকিয়া
সাড়া দেয় মনপারে সাড়া দেয় , বাঁশি রাখালিরা
পল্লীর প্রান্তর উঠে শিহরি
বলে, চঞ্চলা কে গো তুমি
রুমঝুম রুমঝুম কে বাজায় জল ঝুমঝুমি
রুমঝুম রুমঝুম কে বাজায় জল ঝুমঝুম। ।

-:-

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০০৭ বিকাল ৩:১৯
২৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×