এই প্রেমপত্র নিয়েই আমাদের স্কুল কলেজ জীবনে কিছু ছোটখাটো মজার ব্যাপার হয়েছিলো।
১.
স্কুল জীবনের গল্প নিয়েই শুরু করি। ক্লাস সেভেন – এইট থেকেই কিছু ফ্রেন্ড প্রেম করা শুরু করছে। আমাদের কাজ হলো তাদের গুতায় গুতায় গল্প শুনা

। আবার মাঝে মাঝে আমাদের ফ্রেন্ডই আমাদের গল্প শুনাতো। হঠাৎ নাইনে উঠে টের পেলাম যে আরেক মেয়েও প্রেম করা শুরু করেছে। প্রেমও বেশ লুতুপুতু প্রেম

। আমাদের আর পায় কে। কেমন দেখতে কি করে এই নিয়ে ত কত কত প্রশ্ন আছেই তার উপর মেয়ে একদিন ভুলে আমাদের বলে ফেলেছিলো যে তারা চিঠি লেখে। ছেলে থাকে পাশের বাসায়। পাশের বাসায় নানান উপায়ে চিঠি বিতরন। আমরা এও জেনে গেলাম যে সে বাসায় যদি টের পেয়ে যায় তাই সে তার বান্ডিল ভরা প্রেমপত্র ব্যাগে করেই নিয়ে ঘুরতো। হে হে ...

এরপর থেকে আমাদের দৈনন্দিন কাজ হতো যে ওর কাছ থেকে অই বান্ডীল ছিনতাই করা আর পড়া

। কখনো কখনো একেকজন একটা করে নিয়ে পড়তাম। আবার কখনো কেউ পড়তো জোরে জোরে আর অন্যরা শুনতো। বেচাড়ি আর কি বলবে। হয়তো মনে মনে অভিশাপ দিতো

আর সেই বয়সের চিঠি সেইরামই হবে। হাসতে হাসতে পেট ব্যাথা হয়ে যেতো। আবার গান থাকতো চিঠিতে

। একবার একটা এডাল্ট টাইপের বাংলা মুভির গানও পেয়ে গেছিলাম :!> :!> । তার উপর পাশাপাশি গার্লস বয়েজ স্কুল থাকার কারনে অসংখ্য প্রেম পত্র আনা নেওয়া দেখেছি। :#> :#>
২.
এরপর আসলো কলেজ জীবন। তখন হয়তো চিঠি পত্রের এত বালাই নাই। মোবাইল যুগের বীরদর্পে পদার্পন ঘটেছে আমাদের কাছে। আমরা সবাই নতুন নতুন মোবাইল কিনেছি। বাপ মা শখ করে কিনে দিয়েছে। মেয়েরা কলেজ যাচ্ছে। দেই কিনে। তবুও আমরা এই যুগে এসেও প্রেমপত্রের যুগের সূচনা করলাম। পুরো কাহিনীই বলি।
যখন নতুন ক্লাস শুরু হয় তখন নিজে নিজেই কিছু গ্রুপ হয়ে যায়। একটা থাকে অতিমাত্রায় আঁতেল গ্রুপ তাদের কাজ থাকে সবসময় সামনের বেঞ্ছে বসা,সারাদিন বই খুলে রাখা আর কিছু একটা পড়াশুনা করা, ফ্রি টাইমে লাইব্রেরীতে গেলে তাদের পাওয়া এবং সবচেয়ে বিরক্তিকর হচ্ছে যে এত পড়াশুনা করেও ওদের ঘেনর ঘেনর তাদের তো কিছুই পড়াশুনা হয় নি,তারা পরীক্ষায় ফেল করবে, “হায় আল্লাহ আমার কি হবে এরপর নাঁকি কান্না। তুমি তো সব পড়ে ফেললা। আমি তো কিছুই পড়ি নাই”

। তাদের সাথে একটু কথা বললেই কান মাথা ব্যাথা হয়ে যেতো

। এইরকমের বৈশিষ্ট্য একটা মেয়ের ক্ষেত্রে একটু বেশি পরিলক্ষিত হতো। অন্য যারা ছিলো তাদের টা সহ্য করা গেলেও তারটা মাত্রা অতিক্রম করেছিলো।যাই হোক এরা এক গ্রপ।অন্য আরেকটা থাকে যে খুব সুন্দরী যাদের পুরা কলেজের ছেলে মেয়েরা একনামে চিনে। কিছু কিছু ছেলেদের স্বপ্নের মালিকা

:#> । এবং শেষ দল হচ্ছে আমরা যারা সবসময় পিছনের বেঞ্ছে বসবে। সারা ক্লাস বক বক করবে। সহজ কথায় যাদের বলে বেক বেঞ্চার। মাঝে মাঝে ছোটখাটো বদমাইশি করবে। নইলে আমরা ভালই

। আমরা আবার অতি আঁতেল গ্রুপের ঐ সদস্যের উপর কিঞ্চিত রাগান্বিত ছিলাম

। তো আমাদের মাঝে এক ফ্রেন্ডের মাথায় আসলো “আয় দোস্ত ওর আঁতলামী আর সহ্য করা যাচ্ছে না। ওরে নকল লাভ লেটার পাঠাই”। আমি কই “হ দোস্ত আইডিয়া তো খারাপ দিস নাই। আয় লিখি। কতদিন কিছু করি না”

। লেখতে বসলাম। নীল কাগজে সুন্দর চিঠি। লাল নীল কলম দিয়ে। সাথে গান। পারফিউমের স্প্রে :#> :#> । কিন্তু বিলাইয়ের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে????? অবশেষে প্ল্যান করলাম যে একেকটারে সরায় নিয়ে যাবো। আর অন্যরা ব্রেকে চিঠি বই এর মাঝে ঢুকায় দিবে। অইদিন দেখি সবই ঠিকঠাক। সরে গেলো সবাই। আর যারা সরে নাই তাদের আমরা নিয়ে গেলাম। এখন চিঠি তো দেয়া হলো এরপর আফটার রিএকশন। ইংলিশ বইয়ে দেয়া হয়েছে তাহলে ইংলিশ ক্লাসের অপেক্ষা তাও লাস্ট ক্লাসটাতেই। তাও ওরা বসছে সামনের বেঞ্ছে যথারীতি।চিন্তায় ছিলাম যদি স্যার ওদের কাছ থেকে বই নিয়ে যায় তাহলে তো মেয়ের বদলে স্যার পেয়ে বসে থাকবে।ধুর...পিছের বেঞ্চ থেকে আমরা অধীর আগ্রহে তাঁকিয়ে আছি। স্যার আসলো। স্যার বই নেয়ার শুধু কিছু সেকেন্ড আগে সে বই খুললো (যাক!!) দেখেই তো তার অবস্থা । এরপরে রিএকশন আর নাই বললাম। কাজ টা কি খুব খারাপ করছিলাম??? একটা সুবিধা হয়েছিলো মেয়ে কয়দিন তার প্যানপ্যানানী থামিয়েছিলো এবং প্রচন্ড ভাব নেয়া শুরু করেছিলো।


মেয়ের ধারনা ছিলো ক্লাসের কোনো ছেলের কাজ কারন আমরা একটা ফোন নাম্বারো দিয়ে দিছিলাম। অন্যদের ধারনা ছিলো ক্লাসের বোকাসোকা পোলাপান গুলার কাজ। এক সুন্দরী বলেছিলো যে, “হয়তো সামনের বেঞ্ছে বসে ঐ গাধা ছেলেগুলোর একটার কাজ”। আমরাও জবাবে মাথা নেড়েছিলাম।
যাই হোক হঠাৎ মনে পড়লো। এখন তো প্রেম পত্রের যুগই নাই। এখন হলো ফেসবুক,মেইল,মোবাইল,মেসেঞ্জারের যুগ।
*এইটা বেশ কয়েকদিন আগে ড্রাফট করে রেখেছিলাম। আজ দিলাম পাব্লিশ।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০১১ বিকাল ৫:৩৯