somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতঃপর ক্লাব নিয়ে সাতকাহন ( একটি ছবি + লেখাব্লগ)

০৬ ই অক্টোবর, ২০০৯ রাত ১:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঢাকা ক্লাবে ঘটে যাওয়া ঘটনা এখন টক অফ দা টাউন। বিশেষ করে ক্লাব প্রেসিডেন্ট পস সেলিমের বক্তব্য যেন আগুনে ঘৃতাহুতির মত। এই নিয়ে যে বাদ প্রতিবাদ তার ঢেউ ব্লগেও এসে লেগেছে।



১৮৭০ সালে এই সেই ঢাকা ক্লাব


পশ্চিমা রীতিতে সামাজিক মেলামেশার কাজটি সাধারণত ক্লাবেই সারা হয়ে থাকে। ঢেকি যেমন স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙ্গে তেমনি বৃটিশরাও তাদের ঔপনেবেশিক শাসনামলে, অবিভক্ত ভারতের প্রচুর ক্লাব তৈরি করে করেছিল। সাধারণত বৃটিশ সেনাবাহিনীতে কর্মকত অফিসারদের বিনোদনকেন্দ্র হিসেবেই এই সব ক্লাব তৈরি হয়। তবে সেখানে বৃটিশরাজের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা কর্মচারি সবাই উপস্থিত হতেন। প্রথম দিকে সেখানে নেটিভ অর্থাৎ ভারতের স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতি নিষিদ্ধ হলেও, পরে, তৎকালিন সমাজের উচ্চবিত্ত নেটিভরাও বিশেষ আমন্ত্রনে উপস্থিত হতে পারতেন।



চট্রগ্রামের ইউরোপিয়ান ক্লাব। যেখানে হানা দিয়েছিলেন সুর্যসেন।

এই ক্লাবগুলিতে শুধু বিশ্রাম নয় অনেক কিছুই চলতো, যা সর্বভারতীয় সংস্কৃতির পরিপন্থি। বৃটিশদের উচ্ছিস্টভোগি কিছু কর্মচারি এবং রাজা মহারাজা উপাধিপ্রাপ্তরাও সেখানে যেতেন। উদ্দেশ্যে ধন সম্পদ বা কৃষ্ণকেশি স্থানীয় সুন্দরি ললনাদের ঘুষ দিয়ে নিজের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থানকে আরো পাকা করা।



কলকাতা ক্লাব

এই ক্লাবে বসেই ভারতের জনগণকে আরো কি কি উপায়ে বাঁশ দেয়া যায়, সে সব পরিকল্পনাও করতো বৃটিশরা। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ষড়যন্ত্রের সুতিকাগারও ছিল বৃটিশ এই ক্লাবগুলি।




বৃটিশরা যখন নেটিভদের জন্য আধুনিক শিক্ষাব্যাবস্থার প্রচলন করলো, তখন কট্টর ঔপনিবেশিক বৃটিশরা এর বিরোধিতা করেছিল। উওরে এই শিক্ষাব্যাবস্থা প্রচলনের পক্ষ্যে বলা হয়েছিল, আমরা এমন একটি শ্রেণি সৃস্টি করে যাবো, যারা চেহারায় ভারতীয় হবে বটে, কিন্ত মন মানসিকতা চলনে বলনে খাটি বৃটিশ হবে। আমাদের স্বার্থোদ্ধারে, এরাই অগ্রদুতের ভুমিকা পালন করবে।



সারা বিশ্বে স্থানীয় লোকজনের মধ্যে বিভেদ হিংসা দ্বেষের বীজ বপনকারিদের একমাত্র হলো বৃটিশরা। তারই ধারাবাহিকতায় এখনও সারা বিশ্বে অনৈক্য এবং বিভেদ বজায় আছে। যেমন আমেরিকায় সাদা কালো, ভারতে হিন্দু মুসলিম কাশ্মির পাঞ্জাব, ইরাক-কুয়েত, মধ্যপ্রাচ্যে ইসরাইল, আফ্রিকায় বিভিন্ন উপজাতীয়, বাংলাদেশে পস - নন পস ইত্যাদি। ক্লাবগুলি ছিল এধরণের বিভেদ রচনার গোপন সুতিকাগার।



জৌলুস আর ভোগবিলাসের অন্যতম তীর্থ লাস ভেগাসের জনপ্রিয় শ্লোগান হচ্ছে, Whatever happens in Vegas stays in Vegas



বৃটিশরা এই নিয়ম অনেক আগে থেকেই অনুসরণ করতো। ফলে ক্লাবে বসে আনন্দ ফুর্তিই বলুন কিংবা ষড়যন্ত্রের কাহিনী, সেটা প্রকাশ পেতে অনেক অনেক দিন পার হয়ে গিয়েছে। নব্য সাহেবরাও বৃটিশ আচারের সাথে সাথে এই গোপনীয় রক্ষার কাজটি খুব যত্ন করে অনুসরণ করে থাকেন।



বৃটিশদের রেখে যাওয়া ঐতিহ্য অনুসরণ করে, তাদের শুন্য ক্লাবগুলি প্রতিস্থাপিত হয়েছে দেশীয় প্রভাবশালিদের। সারা ভারত বর্ষেই এধরণে অসংখ্য ক্লাব আছে। যার অনেক গুলিই অবশ্য সাধারনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ভারতে।

আমাদের ব্যাপারটা অবশ্য অন্যরকম। ঢাকা ক্লাব, অফিসার্স ক্লাব তো ছিলো, সেগুলির পিছু পিছু অভিজাতদের জন্য ক্রমেই বনানি ক্লাব, গুলশান ক্লাব, উত্তরা ক্লাব, বারিধারা ক্লাব, আরো কত ক্লাব গড়ে উঠেছে। এখানেও যা কিছু চর্চা হয়, সেটা আমাদের বৃত্ততর সংস্কৃতির চরম পরিপন্থি বটে।

ফিরে আসছি ঢাকা ক্লাবের কথায়। ঐ যে বল্লাম, বৃটিশরা চলে গেলেও রেখে গেছে মন মানসিকতার কিছু স্থানীয়দের। যারা ক্ষমতার নেপথ্যের কারিগর হিসেবে বিভিন্ন সময়ে ভুমিকা রেখে থাকেন। ঢাকা ক্লাবের সদস্যপদ নেবার জন্য এতো বিশাল অংকের চাঁদা দিতে হয় যে, সেটা বহন করা সাধারণ তো দুরের কথা অনে বিত্তবানেরও ইচ্ছা জাগে না। শুধু চাদা দেবার সামর্থ্য থাকলেই চলবে না, সমাজের প্রবল প্রভাবশালি কারো রেফারেন্স ছাড়া সেখানে সদস্যপদ লাভ করা অসম্ভব।

এমন ঢাকগুরগুর অবস্থা সেখানে কেন, সেটা ঢাকা ক্লাবের মহারথিরা কেউ মুখে না বললেও, ইতিহাস বিচার করে সেটা আন্দাজ করা মোটেও কস্টকর কিছু নয়।

২৪টি মন্তব্য ২৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×