somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের চলচিত্র নিয়ে সাতকাহন [কিছু দুর্লভ ছবি সহ] ( দ্বিতীয় পর্ব)

১০ ই মে, ২০১০ দুপুর ২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(ইচ্ছে ছিল দুই পর্বেই সিরিজটা শেষ করবো। কিন্তু বিষয়টির পরিধির কথা চিন্তা করে, কয়েকটি পর্বে ভাগ করছি। আশা করি সাথে থাকবেন।)

প্রথম পর্বের লিংক

Click This Link

"এই সাআন সাআন সাআন... . এই মুকাদ্দার কা সিকান্দাররররর" দুই তিন জন তরুণের জটলা থেকে এই ধরণের অনেক হিন্দি ছবির নাম দিয়ে দৃস্টি আকর্ষন করা হতো নাজিমুদ্দিন রোড থেকে শুরু করে বেগম বাজার পর্যন্ত। এ রকম পকেট ছিল চকবাজার থেকে বেগম বাজার এবং মৌলবি বাজারে ঢোকার প্রবেশ পথে। সাত রওজা, চাদনি ঘাট, রহমতগঞ্জ থেকে হাজারিবাগ পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল এর পরিধি।

এরা স্থানীয় বেকার তরূণ। এলাকায় ছিচকে ষন্ডা বলেও কুখ্যাত। তাই পথযাত্রি বা রিক্সাযাত্রির যতই কর্ণে বিষ বহমান হোক না কেন, ভয়ে কেউ কিছু বলতো না। এরা বেশ্যার দালালদের মতই, ভিসিআরে হিন্দি ছবি দেখানোর জন্য দর্শক সংগ্রহ করতো। এবং নির্দিস্ট দর্শনীর বিনিময়ে, ভয়ংকর গলি ঘুপচি পেরিয়ে কোন একটা আধা ভাঙ্গা ঘরের হিন্দি ছবি উপভোগের জন্য নিয়ে যেতো। এরকম আড্ডাখানা ছিল প্রায় শ খানেক। যেখানে দিন রাত মিলিয়ে এক একটি শো তে ২৫ থেকে ৫০ জন দর্শক থাকতো। আর দিনে কতটা শো চলবে সেটা নির্দিস্ট ছিল না। মানুষ ভেদে ৫ থেকে ১০ টাকা করে প্রতি দর্শককে দিতে হতো। আর এভাবেই অবাঙ্গালি রাজাকার জাহাঙ্গির মোঃ আদেলের ভেঙ্গে পড়া কোমড় সিধে হতে থাকে।

কথা হচ্ছিল বাংলাদেশের চলচিত্র নিয়ে। এর মধ্যে ভিসিআরের প্রসঙ্গ আনার কারণ হলো, আমাদের চলচিত্রের (সাথে সামাজিক অবক্ষয়ের)ক্রমশ অবগতির জন্য এটি বিশাল একটি ভুমিকা রেখেছে।

আবারও ইতিহাসে চলে যাচ্ছি। গত পর্বেই লিখেছিলাম যে, ভারতের মত এত আগে না হোক, তাও জোড়াতালি দিয়ে নবাব বাড়ির কিছু তরুণদের উদ্যোগে সেই ১৯৩১ সালেই আমরা প্রথম চলচিত্রের স্বাদ নিয়ে ছিলাম। কিন্তু নবাব সলিমুল্লাহর ক্রমশ দেউলিয়াত্ব এবং পরে মৃত্যু, এবং অযোগ্য উত্তরসুরিদের কারণে বাংলাদেশি চলচিত্র মাধ্যম ধন্যাড্য পৃষ্ঠপোষকতা হারায়। এছাড়াও বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের ধনী ব্যাক্তিদের অনেকেই ১৯৪৭ সালেই বাংলাদেশ ত্যাগ করে ভারতে চলে যান। এই দলে অনেক জ্ঞানি গুনী ব্যাক্তিও ছিলেন বলে পুর্ব বঙ্গে শিক্ষিত ধনিদের শুন্যতা দেখা দেয়। অবশ্য কিছু শিক্ষিত মানুষ পশ্চিম বাংলা থেকে বাংলাদেশে আসলেও তাদের ট্যাকের ভার ছিল বেশ দুর্বল। ফলে রুটি রুজির ভাবনা তাদেরকে এক রকম শিল্প সাহিত্য থেকে দুরে রাখে। ( এ ব্যাপারে জহির রায়হানের কালজয়ি উপন্যাস সংসপ্তকে কিছুটা উল্লেখ করা হয়েছে।)


আগেই উল্লেখ করেছি যে, পুর্ব বঙ্গ বা বাংলাদেশের মানুষদের মধ্যে সিনেমার প্রতি উদাসীনতা থাকলেও, ভারত ও পাকিস্থানের মানুষদের মধ্যে এব্যাপার বেশ ভালো রকমেরই উৎসাহ ছিল। যেমন ধরুণ আমাদের প্রথম চলচিত্রটি ১৯৩১ সালে মুক্তি পেলেও, অবিভক্ত ভারতের বোম্বেতে সেই ৭ই জুলাই ১৮৯৬ তেই স্বল্প দৈর্ঘ্যের ছয়টি নির্বাক চলচিত্রের প্রদর্শনি হয়েছিল। ১৮৯৮ সালে ভারতীয় সিনেমার অন্যতম পথিকৃত বলে খ্যাত হীরালাল সেন কোলকাতায় থিয়েটারগুলি সেলুলয়েডে বন্দি করা শুরু করেন।

Hiralal Sen the Indian movie pioneer

এর আগে ১৮৯৭ সালেই হরিশ্চন্দ্র সখারাম নামে এক ব্যাক্তি ১২ স্বর্ণ মুদ্রায় ইংল্যান্ড থেকে সিনেমার ক্যামেরা কিনে আনেন। সেটা দিয়েই তিনি বেশ কয়েকটি প্রামান্য চিত্র তৈরি করেন। এর মধ্যে ১৯০৩ সালে লর্ড কার্জনের দিল্লি দরবারের অভিষেকটি বেশ উল্লেখযোগ্য।

scene from Lord Curzon's Delhi Darbar.

ভারতীয় চলচিত্র পরিচালনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে অগ্রগামি বলে যাকে ধরা হয় সেই দাদা সাহেব ফালকে যে শুধু চলচিত্র নির্মান করে সফল হয়েছেন তা নয়। বরং উপার্জিত অর্থ তিনি বিনিয়োগ করেছিলেন ভারতীয় চলচিত্র উন্নয়নের জন্য। একারণে বর্তমান বলিউড তার কাছে চির কৃতজ্ঞ। একারণেই ভারতে চলচিত্রের অস্কার নামে খ্যাত পুরস্কারটি দাদা সাহেব ফালকের নামেই পরিচিতি।

Dadasaheb Phalke who devoted his life for making silent movies. Starting with the famous movie on mythological character “Raja Harishchandra” in 1913, he made 95 movies and 26 short films in the span of 19 years, till 1932.


ভারতীয়রা যে শুধু ছবি পরিচালনায় ছিল এমন না। বরং, বানিজ্যিক ভিত্তিতে সারা দেশে সিনেমা ছড়িয়ে দেবার জন্য সমানভাবে তৎপর ছিল। এফ বি থানেওয়ালার গ্র্যান্ড কিনেটস্কোপ এবং জামশেদজি ফ্রামজি মদনের মদন থিয়েটারের উদ্যোগে শুধু ভারতীয় নয়, এমন কি সুদুর আমেরিকার ছবিও সারা ভারতে পরিবেশনা করতো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ভারতই ছিল আমেরিকান চলচিত্রের সবচেয়ে বড় বিদেশি বাজার। আপনারা জেনে অবাক হবেন যে, হলিউডের বিশ্বখ্যাত পরিবেশনা সংস্থা
ইউনিভার্সাল পিকচার্স সেই ১৯১৬ সালেই ভারতে তাদের শাখা স্থাপন করে।

The oldest logo of Universal Studios

ফলে দেশি বিদেশি বিনোদন লাভের আকাংখায় ভারতীয় সাধারণ মানুষ আরো বেশি ছবি দেখার দিকে ঝুকে পড়লো। তাই ভারতে সিনেমা হলগুলির সংখ্যা বেড়ে গেলো। এমন কি দর্শক সংকুলানের জন্য খোলা মাঠে তাবু খাটিয়েও ছবি প্রদর্শিত হতো।

A scene from 1st Indian cinema Raja Harishchandra

এতো গেলো ভারতের খবর। ৪৭ এ ভারত ভাগের পর পঃ পাকিস্থানিরাও বসে থাকেনি। অবিভক্ত ভারতে বোম্বের পাশাপাশি লাহোরেও ফিল্ম স্টুডিও প্রতিষ্ঠিত হয়। তখন একই দেশের মানুষ হিসেবে ভারতীয় চলচিত্র দুই যায়গাতেই নির্মিত হতো।

(চলবে)
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ইন্টেরিম সরকারের শেষদিন : গঠিত হতে যাচ্ছে বিপ্লবী সরকার ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:২২


ইরাক, লিবিয়া ও সিরিয়াকে ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করার আন্তঃদেশীয় প্রকল্পটা সফল হতে অনেক দিন লেগে গিয়েছিল। বাংলাদেশে সে তুলনায় সংশ্লিষ্ট শক্তিসমূহের সফলতা স্বল্প সময়ে অনেক ভালো। এটা বিস্ময়কর ব্যাপার, ‘রাষ্ট্র’... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিচার চাই? না ভাই, আমরা "উল্লাস" চাই

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৩৭





দীপু চন্দ্র দাস একটি পোশাক শিল্প কারখানায় চাকরি করতো। সম্প্রতি দীপু দাস তার যোগ্যতা বলে সুপার ভাইজার পদে প্রমোশন পেয়েছিলো।

জানা যায়, সুপারভাইজার পজিশনটির জন্য আরও তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

মব সন্ত্রাস, আগুন ও ব্লাসফেমি: হেরে যাচ্ছে বাংলাদেশ?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:৫২


ময়মনসিংহে হিন্দু সম্প্রদায়ের একজন মানুষকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। মধ্যযুগীয় এই ঘটনা এই বার্তা দেয় যে, জঙ্গিরা মবতন্ত্রের মাধ্যমে ব্লাসফেমি ও শরিয়া কার্যকর করে ফেলেছে। এখন তারই... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×