মিস্টি মুখের হাসি দিয়ে করছো না তো ছলনা?
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
ভারতীয় পররাস্ট্র মন্ত্রনালয়ের আমন্ত্রনে ১০ দিন ভারত সফরে ঘুরে আসলেন বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়া। এ নিয়ে ভারতে তেমন শোরগোল না হলেও বাংলাদেশে অনেকেরই ত্রাহি মধুসুধন দশা।
দেখা করবো না করবো বললেও শেষ পর্যন্ত রাস্ট্রপতি প্রনব মুখার্জি পর্যন্ত খালেদা জিয়ার সাথে দেখা করেছেন। সবার সাথে দেখা হলেও কংগ্রেস নেত্রি সোনিয়া গান্ধির সাথে দেখা হয়নি খালেদার। মুলত কিন্তটা শুরু সেখান থেকেই।
আমাদের রাজনীতিতে যেমন খালেদা হাসিনা ছাড়া কিছু হয় না, তেমনি ভারতীয় কংগ্রেসের রাজনীতিতে সোনিয়াকে ছাড়াও কিছু সম্ভব না। তাই দুই দেশের সম্পর্কোন্নয়ের ব্যাপারে মনমোহন কিংবা ভারতীয় নেত্রিবৃন্দ যত কথাই বলুন না কেন, শেষ কথা বলবার এক্তিয়ার একমাত্র সোনিয়ারই আছে। তাই ভারতের বাঘা বাঘা নেতৃবৃন্দের কথায় আস্থা স্থাপন করা খুব বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক হতে পারে না।
ভারত এই করেছে, সেই করেছে, এমন উচ্ছাস প্রকাশের লোকের অভাব নেই। কিন্তু স্বাধীন বাংলাদেশকে ভারত খারাপ ছাড়া ভালো করেছে্ এমন উদাহারণ কোথায়?
যুদ্ধবিধবস্ত সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর যখন অচল, তখনই রিলিফ খালাসের সুবিধার জন্য মাত্র ৭ দিন কলকাতা বন্দর ব্যবহার করতে দিতে অস্বীকার করেছিল ভারত।
সাত কাহন না গেয়েও বলা যায়, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতি ভারতের মিত্রতার একটি উদাহারণও খুজে পাওয়া যাবে না।
এর পরেও আওয়ামি লিগের কারণহীন একনিস্ট ভারতপ্রীতির অর্থ খুজে পাবার জন্য ২০১১ সাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়েছে। গোমর ফাস করে দিয়েছে বৃটেনের ডেইলি ইকোনমিস্ট। যেখানে ভারতীয় অর্থ ও প্রভাব নির্বাচনে ব্যাবহার করে আওয়ামি লীগ সুবিধা লাভ করেছে বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে।
রিপোর্টটি গুজব বলে উড়িয়ে দেয়া যেতো যদি মিডিয়ায় আওয়ামি লিগের নেতা নেত্রিরা হম্বি তম্বি করার পরিবর্তে ডেইলি ইকোনমিস্টের বিরুদ্ধে মামলা করতেন।
অন্য দেশ হলে, অন্যদেশের দালাল সরকারকে গদি থেকে টেনে নামানো হতো। কিন্ত যেহেতু মুক্তিযুদ্ধের সময়কার রয়েল বেঙ্গল টাইগার এখন নখদন্তহীন বিড়ালে পরিণত হয়েছে, তাই চোরেরা গদিতে বসে বড় গলায় কথা বলছে।
আমার একজন ঘনিস্ট ভারতীয় সাংবাদিক বন্ধু আছে। তার একটাই কথা।
"তোরা ইন্ডিয়ার কাছ থেকে এত কিছু আশা করিস কেন? তোরা যা চাস, সেটা ইন্ডিয়ার কোন সরকারই দেবে না।
দুটা কারণ। প্রথম কারণ হলো, বাঙালি বিদ্বেষ ভারতীয়দের মজ্জাগত। তার উপর তোরা সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমান। তাই ভারতের পাওয়ার হাউজ বলে খ্যাত চরম সাম্প্রদায়িক নর্থ বা সাউথ ইন্ডিয়ানরা তোদের কথা ভাববে কেন? তোদের স্বার্থের কথা বলতে গেলেই ভোটে ভরাডুবি ঘটবে।
আর দ্বিতীয় কারণ হলো, নেহেরু ডকট্রিন। অখন্ড ভারতের স্বপ্ন যে স্বপ্ন ভারতের স্বাধীনতার নেতৃবৃন্দ দেখেছিলেন, সরকারে যেই আসুক, সেই স্বপ্ন থেকে তারা পিছিয়ে আসেনি কোনদিনও। আর আসবেও না। তাই সুখি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নয়, দুর্বল ভারত মুখাপেক্ষি বাংলাদেশই তাদের স্বপ্নের পথকে মসৃণ করবে।"
স্বাধীন বাংলাদেশের পর থেকে আমাদের প্রতি ভারতের আচরণ বিশ্লেষন করলে বন্ধুর কথাটিকে উড়িয়ে দেয়া যায় না।
এর মধ্যে খালেদা জিয়া ভারত সফরে গিয়ে এতটা উচ্ছসিত হয়ে গিয়েছিলেন যে, কথাবার্তা বলার সময় কান্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছেন। এতে বাংলাদেশে ক্ষতির কারণ হয়েছে।
এখন খালেদা সরকার গঠন করলেও, ভারতের ইশারায় নৃত্য না করলে, বহিঃবিশ্বে বাংলাদেশকে সন্ত্রাসবাদিদের সমর্থনকারি হিসাবে প্রবল প্রপাগান্ডা চালাতে পারবে ভারত। ফলে দেশের ভাবমুর্তি কঠিন চ্যালেঞ্জে পড়বে। ফলাফল উন্মুক্ত বাজার অর্থনীতি নির্ভর বাংলাদেশের টিকে থাকা খুবই মুশকিল হবে।
আমাদের দেশের সবচেয়ে দুর্ভাগ্য হলো, এখানে পৃথিবির সবচেয়ে সস্তায় দালাল মিলে। কিন্ত দেশপ্রেমিক মেলা ভার। আমাদের অবস্থা এমন হয়েছে যে, জাতিয় নিরাপত্তার সাথে সংক্লিস্ট বিষয়গুলিতেও আমরা একমত হতে পারি না। সুতরাং অনৈক্যের সুত্র ধরে অন্যদেশ কেন সুবিধা নেবে না বলুন?
ভারতীয় শিক্ষা ব্যাবস্থা বিশ্বমানের। সেখানে ৫২ ৭১ আর ৯১ এর ধুয়া তুলে ছাত্র রাজনীতির নামে খুন ধর্ষন জ্বালাও পোড়াও সন্ত্রাস চাদাবাজি এসব চলে না। ফলে শিক্ষাক্ষেত্র থেকে নিরবিচ্ছিন্নভাবে উপযুক্তরাই পরিবর্তিতে প্রশাসনে আসছে।
অন্যদিকে শ্রেফ দলীয় তকমা গায়ে থাকার কারণে চরম মুর্খ আর অনুপোযুক্তরাই প্রশাসনে বসে দলবাজি করে চলেছে। তো দেশের কথা ভাববে কে?
এই বাস্তবতায় কুটনীতিতে ভারতের সাথে টেক্কা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ক্রমাগত মার খেয়েই যাচ্ছি আমরা।
যেখানে প্রজ্ঞা আর মেধা দিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে টিকে থাকার সংগ্রাম প্রয়োজন, সেখানে ঠিক কার বুদ্ধিতে খালেদা জিয়া বাংলাদেশের মাটি থেকে সন্ত্রাস করতে দেয়া হবে না কথাটি উচ্চারন করেছেন, সেটি অনুসন্ধানের প্রয়োজন আছে।
বিএনপির বাকি নেতারাও দেখি হিজ মাস্টারস ভয়েজের মত ভারত তোষণকারি মন্ত্র আওড়াচ্ছেন।
তারা কি বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবেন যে স্বাধীন বাংলাদেশের চিরশত্রু ভারত তার কোন শত্রুতামুলক আচরণ বদল করেছে? টিপাইমুখ বাধ থেকে সরে এসেছে ভারত? তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি নিয়ে টালবাহানা বন্ধ হয়েছে? সীমান্ত মানুষ হত্যা করা ছেড়ে দিইয়েছে?
সব কথা বাদই দিলাম না হয় ! সেই ৪০ বছর আগে সম্পাদিত মুজিব ইন্দিরার চুক্তির আলোকে আমরা কি আমাদের এক ইঞ্চি যায়গা ফিরে পেয়েছি? প্রসঙ্গ উঠলেই পার্লামেন্টে পাশ করার অজুহাত দেখিয়ে বছরের পর বছর ধরে ওরা প্রতারনা করেই চলেছে।
এই তো সেদিনও আমাদেরই নকশি কাথা, ফলজি আম, মায় ইলিশ পর্যন্ত নিজেদের প্যাটেন্টে নিয়ে গিয়েছে। এই হচ্ছে তথাকথিত মিত্রতার নমুনা !
গত ৪০ বছর আওয়ামি লিগের একান্ত বন্ধু ভারতীয় কংগ্রেস, হঠাৎ বন্ধু বদল করবে, একথা একমাত্র পাগলে বিশ্বাস করতে পারে।
ইন্ডিয়ার ঝানু ঝানু আমলা এবং দেশপ্রেমিক রাজনীতিবিদরা তাদের দেশের স্বার্থে যা খুশি বলে এসেছে, যা খুশি করে এসেছে।
এখন যখন আওয়ামি দুঃশাসনে দেশের মানুষ বীতশৃদ্ধ এবং বিএনপির পুনরায় ক্ষমতায় যাবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, তখন তারা শুরু করেছে খালেদাকে নিয়ে উচ্ছাস করা।
চাণক্য নীতি যে দেশের পররাস্ট্র নীতির মুল উপাদান, তাদের প্রতিটা পদক্ষেপ খুব সাবধানে পর্যালোচনা করা উচিত।
এমনও তো হতে পারে যে, ভারতীয়রা খালেদাকে সমর্থন দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাকে আওয়ামি লিগের অধীনে নির্বাচনের দিকে ঠেলে দিতে চাচ্ছে। যাতে সেই ফাদে পা দিয়ে আবারও আওয়ামি লীগ বিজয়ি হতে পারে।
স্বাধীন বাংলাদেশের নিজস্ব সুরক্ষার জন্য একটি অস্থির এবং দুর্বল ভারতের বিকল্প নেই। উঃপুর্ব ভারতের স্বাধীনতাকামিদের সমর্থন বাংলাদেশের জন্য অন্যতম ট্রাম্প কার্ড। এতদিন হাসিনা সেই কার্ড ছিড়ে ফেলে দিয়েছিলেন। আর খালেদা জিয়া সেই কার্ডটি অচল করে দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়ে এসেছেন।
তবে হ্যা ! খালেদা যদি সব মুখের বলে আসেন, তাহলেই বলবো তিনি বিচক্ষণ। ৪০ বছর ধরে অযথা শত্রুতাকারি প্রতারক একটি রাস্ট্রের সাথে সততা কিংবা মিত্রতা কোনটাই বাংলাদেশের স্বার্থের অনুকুল নয়।
পুনশ্চঃ পাকিস্থানের দালালরা যেমন তেমনি ইন্ডিয়ান দালালদেরও বাংলাদেশে থাকার কোন অধিকার নেই। যদি সত্যিকারের দেশপ্রেমিক হয়ে কেউ ক্ষমতায় বসেন, তবে সবার আগে এই সব দালালদের বাংলাদেশের মাটি থেকে উচ্ছেদ করা চাই। কারণ ঘরের শত্রু বিভীষনই সবচেয়ে বড় হুমকি।
২০টি মন্তব্য ২১টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা
মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন
ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?
সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন
চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়
অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন
ঘুষের ধর্ম নাই
শহীদুল ইসলাম প্রামানিক
মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।
হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।
পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন
ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??
সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন