somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পিএসসি'র ভাইভা বোর্ড ও আমার কিছু কথা

২৫ শে মে, ২০১০ দুপুর ২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক'বছর আগের কথা। 'উপজেলা শিক্ষা অফিসার' পদে লোক নিয়োগ করার বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে পিএসসি কতৃপক্ষ। যোগ্যতা থাকায় আবেদন করি। আমার মত আরও প্রায় ৫০ হাজার আবেদন করেছেন। প্রিলিমিনারী, ভাইভা আর পূর্বেকার ফলাফল দেখে নিয়োগ দেয়া হবে। প্রিলিমিনারী শেষে ৮৪১ জনকে বাছাই করা হয়। আমি তাদের মধ্যে একজন। পত্রিকা মারফত জানতে পেরেছিলাম ১০০ তে যারা সর্বনিন্ম ৮৭ পেয়েছিল তারা প্রিলিমিনারীতে উর্ত্তীর্ন হয়েছে। এরপর প্রস্তুতি নিতে থাকি ভাইভা'র জন্যে। নির্দিষ্ট দিনে যথাসময়ে ভাইভা বোর্ডে উপস্থিত হই। জনাব মোঃ লতিফুর রহমান বোর্ড প্রধান। আর একজন আছেন পরীক্ষক হিসেবে। রুমে প্রবেশ করি। বসার পর বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকেন উনারা।

-বাংলাদেশে কতটি উপজেলা আছে?
-সর্বশেষ উপজেলা কোনটি?
-উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাজ কি?
-আপনার জেলা শহর কেন বিখ্যাত?
-উপজেলার কয়েকজন প্রথম শ্রেনীর কর্মকর্তার পদবী বলুন।
------ইত্যাদি নানা প্রশ্ন। কোন প্রশ্ন বাদ যায়নি যেটার উত্তর দিতে পারিনি। আমি নিজে অতটা আশা করিনি। পরিক্ষকেরা খুশি হলেন কিনা বুঝতে পারিনি। উনারা নিজেদের মধ্যে কি যেন পরামর্শ করে নিলেন।

এবার দ্বিতীয় জন আমাকে প্রশ্ন ছুরলেন—
আপনি বর্তমান সরকারের ৩টা ব্যর্থতার কথা বলুন।
-দ্রব্যমুল্যের উর্ধ্বগতি ঠেকাতে পারছে না।
-সন্ত্রাস দমন করতে পারছে না।
-বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সকল ছাত্র-ছাত্রী'র সহাবস্থান নিশ্চিত করতে পারছে না।

আমার তৃতীয় ব্যর্থতার কথায় পরীক্ষক তেলে বেগুনে জ্বলে উঠলেন যেন। তিনি বলতে লাগলেন- ‘আপনি কি জানেন ততকালীন আওয়ামী লীগ আমলে ছাত্রদলের ছেলেরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে প্রবেশ করতে পারেনি। এখনতো তবুও ছাত্রলীগ রাজনীতি করতে পারছে’। আমি একজন পরিক্ষকের এরকম কথায় তাজ্জব বনে গেলাম।

তিনি আমাকে আবারো বললেন দেশে এত সমস্যা থাকতে আপনার কেন এটিকে তৃতীয় গুরুত্বপূর্ন বলে মনে হল।
আমি উত্তর দিলাম এভাবে—ততকালীন আওয়ামী লীগ সময়ে ছাত্রদল ঠিকমত রাজনীতি করতে পারেনি, ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে পারেনি-এটি ছিল আওয়ামী লীগ সরকারের ব্যর্থতা। আমি বলতে চেয়েছি বর্তমান সরকার এটির ধারাবাহিকতা বজায় রেখে চলছে। আমার মতে এটি তৃতীয় গুরুত্বপূর্ন কারন-বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব ছাত্র-ছাত্রী পড়াশুনা করতে আসে তারাই ভবিষ্যতে নেত্রীত্ব দেবে দেশকে, তারা সৌভাগ্যবান যে আমাদের মত দরিদ্র দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করতে পারছে। তারা যদি মুক্তভাবে পড়াশুনা চালিয়ে যাবার সুযোগ না পায়, অস্ত্র আর রাজনীতির কাছে যদি তাদের বাক স্বাধীনতা রুদ্ধ হয় তাহলে আমাদের ভবিষ্যত হুমকির সম্মুখীন। তাই আমার কাছে এটি গুরুত্বপুর্ন।
আমার এরকম কথায় পরিক্ষক খুশি হতে পারলেন না বলে মনে হল। কিছুটা সময় ভাবলেন। এবার তিনি বর্তমান সরকারের ৩টি সফলতার কথা জিজ্ঞেস করলেন। আমি বলেছিলাম-
-পলিথিনের ব্যবহার রোধ
-নারী শিক্ষায় অগ্রগতি তথা উপবৃত্তি প্রকল্প।
তৃতীয়টি বলতে পারছিলাম না। বলার মত কিছু পাচ্ছিলামও না। তিনি এবারও রেগে গেলেন। ব্যর্থতার কথাতো ভালই বলতে পারলেন; সফলতার কথা মুখে আসছে না! কেন আপনার কি মনে পরছে না নকল রোধের কথা। আমি বল্লাম-নকল দুরীকরন একজন মন্ত্রীর রুটিন ওয়ার্ক। এটি কোন সরকারের সফলতা হতে পারে না। তিনি আবার রেগে গেলেন যেন। তার এই বার বার রেগে যাওয়া আমাকে অবাক করে দিচ্ছিল। পিএসসি’র মত প্রতিষ্ঠানে এমন ব্যক্তি কেমন করে ভাইভা বোর্ডের সদস্য হয়! তিনি কি আসলে আমার জ্ঞান পর্যালোচনা করতে চাইছেন নাকি কোন দলের রাজনীতি করি তা খুঁজে বের করার চেষ্টা করছেন?

এবার শ্রদ্ধেয় লতিফুর রহমান সাহেব আমার কাগজ-পত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। আপনার সব পরিক্ষার ফলাফলতো খুব ভাল। আপনি কেন উপজেলা শিক্ষা অফিসার হতে চাইছেন। আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আরও বললেন-আমরা যদি আপনাকে নিয়োগ দেই আপনি এর চেয়ে ভাল চাকুরী নিয়ে অন্যত্র কোথাও চলে যাবেন, আমাদের ডিপার্টমেন্টে শুন্যতা সৃষ্টি হবে। আমাদের লোকবলের অভাব হবে পরবর্তীতে। আমি আবার বিনয়ের সাথে বললাম যদি সুযোগ পাই চাকুরী করব অবশ্যই। তিনি আবার বললেন আপনি চাকুরী করবেন না, তাই আপনাকে নেয়া আমাদের ঠিক হবে না। আমি আর কিছু বলিনি। কাগজপত্র আমাকে ফেরত দিলেন, আমি সালাম জানিয়ে বিদায় নিলাম।

কিছুদিন পর ফলাফল প্রকাশিত হলো। ১২৩ জন নির্বাচিত হয়েছেন। আমি তাদের মধ্যে নেই। নাই থাকতে পারি। ৮৪১ জনের মধ্যে ৭১৮ জনইতো বাদ পড়েছে। কিন্তু আমি এমন একজনকে পেয়েছি যিনি সৌভাগ্যবানদের একজন, যার প্রিলিমিনারীতে পাস করার যোগ্যতাই নেই।

আমি আমার আভিজ্ঞতার কথা এখানে লিখার চেষ্টা করলাম। এরকম হয়ত অনেকের ক্ষেত্রেই হয়েছে। এখনও হচ্ছে। ভবিষ্যতেও হবে। কিন্তু আমরা এর পরিবর্তন চাই। এইসব জ্ঞানপাপী মানুষদের (যারা ভাইভা বোর্ডে বসে প্রতিনিয়ত অন্যায় করে চলছেন) বিবেকের মুক্তি চাই।

পরিশেষে, আমি লেখক নই। কাউকে হেয় বা আঘাত করার ইচ্ছাও আমার নেই। ছাপুষে মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান আমি। তাই প্রতিনিয়ত বিদেশের মাটিতে স্বপ্ন বদলের বেদনায় আহত হই কাছের মানুষগুলোকে না পেয়ে। প্রতিনিয়ত ব্যথিতও হই দেশের মাটি ছেড়ে এসেছি বলে। দেশে চাকুরী করার যোগ্যতা হয়তঃ অর্জন করতে পারিনি। বিদেশের মাটিতে বিদেশের অর্থায়নে যখন গবেষনা করি তখন বুক চিন চিন করে কষ্টে…কোনদিন কি যোগ্যতা হবে না দেশে চাকুরী করার! তবে স্বপ্ন দেখি আমার পরবর্তী দিনে ঘুম ভাংবে কোন পরিচিত পাখির কাকলীতে। আমি আমার শিয়র থেকে মাথা ঘুরিয়ে আম, জাম, কাঁঠাল গাছের সবুজ পাতার ফাঁক দিয়ে বাংলাদেশের সুর্য্য দেখব। ইট পাথরের অচেনা দেয়ালের মাঝে বিলীন হয়ে যাব না।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১০ দুপুর ২:১৬
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×