শামীমুল হক
’৮০-এর দশকে আমাদের দেশের এক মন্ত্রী গিয়েছিলেন অন্য এক দেশে। সেখানে দু’দেশের সরকারের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আবার কোন কোনটির চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়েছে। সে দেশ থেকে বিদায় নেয়ার সময় নিয়ম অনুযায়ী তিনি সেখানে কি করে গেলেন তা জানাতে হয় প্রেসের মাধ্যমে দেশবাসীকে। সে দেশের সাংবাদিকরা ঘিরে ধরলেন বাংলাদেশের মন্ত্রীকে। নানা প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া হচ্ছে মন্ত্রীর সামনে। তিনিও কৌশলে উত্তর দিচ্ছেন। এক সাংবাদিক প্রশ্ন করলেন, মাননীয় বাংলাদেশের মন্ত্রী আপনার পেশা কি? মন্ত্রী উত্তর দিলেন রাজনীতি। উত্তর শোনে সাংবাদিক বেচারা ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। ভাবে মন্ত্রী হয়তো বুঝেননি তার প্রশ্ন। তাই ওই সাংবাদিক দ্বিতীয়বার একই প্রশ্ন করলেন। এবারও মন্ত্রী উত্তর দিলেন, আমার পেশা রাজনীতি। ওই সাংবাদিকতো হতবাক। রাজনীতি আবার পেশা হয় কি করে? এটাতো সমাজসেবা। দেশসেবা। রাজনীতিবিদদের অন্য পেশা না থাকলে সংসার চালাবে কি করে? শুধু কি সংসার? না, আরও অনেক কিছু।
ক’দিন আগে এক ছাত্র নেতার সঙ্গে দেখা। তার লক্ষ্য জাতীয় রাজনীতিতে জড়ানো। এজন্য নামের পাশে ছাত্রনেতার পাশাপাশি অধ্যাপক বসাতে চান। আর তাই তিনি দেশের যে কোন কলেজে শিক্ষকতা করতে চান স্বল্প সময়ের জন্য। তার আরও ইচ্ছে, নামের পাশে এডভোকেট বসানো। এজন্য ল’তে ভর্তি হবেন। সার্টিফিকেট নেবেন। বললেন, ক’দিন আদালতে গেলেই হবে। লোকে আমাকে এডভোকেট ও অধ্যাপক বলবে। রাজনীতিতেও সুবিধা পাব। এ সবের পেছনে একটিই কারণ, রাজনীতি। তিনি বড় নেতা হতে চান। তার ভাষায়- বড় নেতা হলে টাকার কোন অভাব হয় না। রাজনীতি এ দেশে লাভজনক পেশা বলেই ওই ছাত্রনেতা পেশা হিসাবে রাজনীতিকে বেছে নিয়েছেন। এখন এটিকে পাকাপোক্ত করতে নামের পাশে ক’টি পদ বসাতে চাইছেন। আসলে রাজনীতির জন্য রাজনীতিবিদরা অনেক কিছুই করতে পারেন। বাংলাদেশের রাজনীতির মাঠ আবার গরম হতে শুরু করেছে। ভোলার নির্বাচনের পর সেখানে নির্যাতন যে কিছু হয়েছে তা একেবারেই সত্যিই। আর তাইতো শপথ নিয়েই সংসদ সদস্য শাওন সাংবাদিকদের বলেছেন, সেখানে ধর্ষণ হয়নি, হয়েছে শ্লীলতাহানি। হায়রে রাজনীতি। মনে পড়ছে আওয়ামী লীগের সাবেক সেক্রেটারি আবদুল জলিল এমপি’র কথা। দেশের বাইরে গিয়ে তিনি বোমা ফাটালেন। বললেন, আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করে ক্ষমতায় এসেছে। আবার ২ দিন পর বলেছেন, আমি মানসিক ভারসাম্যহীন। এ রাজনীতির জন্যই তিনি দু’দিন আগে এক কথা বলেছিলেন। আবার রাজনীতির জন্যই নিজেকে মানসিক ভারসাম্যহীন বলতেও দ্বিধা করেননি। শুধু কি তাই? না আরও আছে। আজ যে রাজনীতিক এক দলের প্রধানকে গুরু মানছে। কাল দলবদল করে সেই রাজনীতিকই তাকে শয়তান বলছে। বিএনপি’র ক্ষমতার শেষ দিকে বেশ ক’জন রাজনীতিক বিএনপিকে গুডবাই জানিয়ে নতুন দল করেছেন। ওরে বাপরে, সে সময় সমাবেশ করে একদিন আগে যে দলে ছিলেন, সেই দল ও দলীয় প্রধানের চৌদ্দগোষ্ঠি উদ্ধার করলেন। তা শুনে আম জনতাও লজ্জায় মুখ লুকিয়েছে। সবই করেছেন, তারা রাজনীতির জন্য। স্বাধীনতার ৩৯ বছর পর এসেও তাই প্রশ্ন জাগে দীর্ঘ এতবছরে আমাদের অর্জন কি? শুধু কি একটি দেশ পেলাম। পতাকা পেলাম। বিনিময়ে লাজ, লজ্জা বিসর্জন দিলাম।
এ মুহুর্তে মনে পড়ছে সেই দুই মাতালের কথা। একরাতে দুই মাতাল রাস্তা দিয়ে হেটে যাচ্ছে। হাটতে হাটতে একটি ৫ তলা বিল্ডিং-এর নিচে গিয়ে থেমে যায় একজন। অন্যজন বলে, কিরে থামলি কেন? উত্তর দিল-ওই হোন, আমাগো মহল্লায়তো কোন বিল্ডিং নাই। ল, দুইজনে ধাক্কাইতে ধাক্কাইতে বিল্ডিংটারে আমাগো মহল্লায় লইয়া যাই। যেই কথা সেই কাজ। দু’জনে শুরু করলেন ধাক্কা। ধাক্কাতে ধাক্কাতে এক সময় তারা হয়রান হলেন। একজন বললেন, দেখ এতক্ষণ ধাক্কালাম। ক’ আমরা কতদূর আইছি। অন্যজন আকাশের দিকে চেয়ে বলে, আমরা অনেক দূর আইছি। অন্যজন বললেন, কেমনে বুঝলি? আরে বোকা, আমরা যখন ধাক্কানো শুরু করি, তখন আসমানের চাঁনডা ওইহানে ছিল। আর অহন চাইয়া দেখ, চাঁনডা ওই হানে। অপরজন বলল, ঠিকই কইছস। ল, বইয়া না থাইক্যা আবার ধাক্কানো শুরু করি। ফের দু’জনে শুরু করল ধাক্কানো। ধাক্কাতে ধাক্কাতে আবার হয়রান। শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। আবার দু’জন একটু থামল। শরীর থেকে কাপড়- চোপড় খুলে পেছনে রেখে খালি গায়ে আবার ধাক্কানো শুরু করেছে। ধাক্কার পর ধাক্কা। কোন দিকে খেয়াল নেই। সকাল হওয়ার আগেই যে বিল্ডিংটা মহল্লায় নিতে হবে। ওদিকে পাশ দিয়ে যাচ্ছিল এক চোর। ওই চোর বেচারা আজ তেমন সুবিধা করতে পারেনি। রাস্তার পাশে রাখা দুই মাতালের কাপড় নিয়ে দিয়েছে চম্পট। ওদিকে দুই মাতাল বিল্ডিংকে ঠেলেই যাচ্ছে। একসময় একজন বলল, কিরে কতদূর আইছি? অপরজন পেছন ফিরে বলে, অনেকদূর আইছি। পাল্টা প্রশ্ন কেমনে বুঝলি। আরে বোকা কাপড় যে রাখছিলাম দেখ ওইগুলো নাই। নিশ্চয় অনেকদূর আইছি। আর আমাগো কাপড় যেহানে রাখছিলাম, হেইআনে পইড়া আছে। হ! ঠিকই কইছস। ল, আবার একটু ধাক্কা দিলেই আমরা আমাগো মহল্লায় পৌঁছে যেতে পারুম। আবার শুরু ধাক্কানো। এবার ধাক্কাতে ধাক্কাতে একেবারে ভোর হয়ে গেছে। চারদিকে ফর্সা। দুই মাতাল দেখে যেখান থেকে শুরু করেছিল, তারা সেখানেই রয়েছে। স্বাধীনতার ৩৯ বছর পর এসেও দেশ আর- এর পরিচালনাকারীদের অবস্থা দেখে মনে হয়, আমরা একটুও এগুইনি। রয়েছি সেই একাত্তরেই। রাজনীতি যেখানে পেশা সেখানে এর চেয়ে আর বেশি কি আশা করতে পারি?
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মে, ২০১০ রাত ৯:৪০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




