somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মহাকর্ষঃ চাঁদ কেন পৃথিবীর টানে মাটিতে পড়ে যায় না (উৎস)

৩০ শে নভেম্বর, ২০০৮ ভোর ৬:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাসখানেক আগে এই ব্লগে ধর্ম আর বিজ্ঞান নিয়ে তর্কে একটা প্রসঙ্গ উঠে এসেছিল পৃথিবী স্ট্যাটিক না স্ট্যাবল। যদিও বৈজ্ঞানিক সত্য-অসত্যে ধর্মের কিছু আসে যায় না, ধর্ম নিজে বিশ্বাসের ওপর নির্ভরশীল, সে বিশ্বাস যতই ভিত্তিহীন হোক বা না হোক। ধর্মের বক্তব্যের সাথে রাশিচক্র, হস্তরেখা বিশারদের কথা বার্তার অনেক মিল আছে, যে সব বিষয় এরা জানে না সেখানে এমন মন্তব্য এরা করবে যার বহ ু অর্থ হয়, দ্্ব্যর্থবোধক এসব কথার সত্য-অসত্যের সিদ্ধান্তে আসা মুশকিল। তারপরও রাশিচক্রই হোক আর হস্তরেখাই হোক একটা পর্যায়ের পরে সত্যানুসন্ধানী যে কেউ এদের দুর্বলতা বের করতে সক্ষম। এই ধারাবাহিকের লেখায় ভৌত বিজ্ঞান, মহাশুন্য, মহাকর্ষ, আপেক্ষিক তত্ত্ব এসব নিয়ে আলোচনার ইচ্ছা আছে। জিনতত্ত্বের সাথে পার্থক্য হচ্ছে পদার্থ বিজ্ঞান ভীষনভাবে গনিত নির্ভর, গনিত বাদ দিয়ে তুলে ধরা কঠিন, দেখা যাক কতটুকু পারা যায়।

শৈশবে আরও অনেক শিশুর মতো মহাশুন্য, রকেট, নক্ষত্র এসব নিয়ে আমার খুব আগ্রহ ছিল, এসবে সবচেয়ে বেশী উৎসাহ দাতা ছিলেন আমার বাবা। 80র দশকের শুরুতে ভয়েজার শনি গ্রহের ছবি পাঠাতে শুরু করে, বিটিভিতে খবরে এগুলো দেখানো হতো। গ্রহগুলো সুর্যের চারদিকে ঘুরছে শুনলেও কেন ঘুরছে পরিস্কার ধারনা ছিল না। বাবার উত্তর ছিল মহাকর্ষের কারনে, একবার যখন প্রশ্ন করলাম, তাহলে চাঁদ মহাকর্ষের টানে কেন মাটিতে না পড়ে ঘুরছে, বাবা এবার আর উত্তর দিতে পারলেন না। বাবা এই প্রথম নয়, আরো অনেক বারই গাছে উঠিয়ে মই সরিয়ে নিয়েছেন। ভৌত বিজ্ঞানের অনেক ধারনাই তার কাছে পরিস্কার ছিল না, বোধ করি এজন্য বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে গিয়ে বিজ্ঞান ছেড়ে অর্থনীতি পড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। বাবা পরলোকগত হয়েছেন কয়েকবছর হয়ে গেল, তারপরও মনে হয় না তার লিগ্যাসি থেকে বের হয়ে আসতে পেরেছি। কৌতুহল এখনও আমার এক নম্বর মোটিভেশন। নাইন-টেনের বইয়ে মহাকর্ষ, ঘুর্নন, ভরবেগের সুত্র ছিল, আগ্রহী কেউ গানিতিক ভাবে এখান থেকে বের করতে পারে চাঁদ এমন বেগে ঘুরছে যে পৃথিবীর আকর্ষনে পড়তে গিয়েও পড়ছে না। গনিতের জন্য এই ব্যাখ্যা যথেষ্ট, তারপরেও সন্তুষ্টি আসছিল না, ততদিনে ড. আব্দুল জব্বারের লেখা "বিশ্ব ও সৌরজগত", "খ-গোল পরিচয়" পড়েছি, সোলার নেবুলা থেকে সৌরজগতের সৃষ্টি হয়েছে তা জানি, কিন্তু চাঁদ কিভাবে ঠিক এমন একটা গতি পেল যে সে পড়তে গিয়েও পড়ছে না (বেশী বা কম হলো না কেন) এর কোন সন্তোষজনক ব্যাখ্যা পাচ্ছিলাম না। ইতোমধ্যে প্রায় দশ বছর হয়ে গেছে বাবাকে প্রথম এই প্রশ্ন করার, আরও তিন বছর পরে প্যাসকাল প্রোগ্রামিং শিখে আমার প্রথম দিকের প্রজেক্ট ছিল খুবই রুডিমেন্টারি মহাকর্ষের সিমুলেশন করা, অবশেষে পরিস্কার হতে লাগলো চাঁদ কিভাবে এরকম পারফেক্ট কম্বিনেশন পেয়েছে (সমাধান পরে বিস্তৃত করবো, তবে সংক্ষেপে বললে আসলে এটা একটা র্যান্ডম কম্বিনেশন, কোন বিশেষত্বনেই)।

যেহেতু গনিতে অনেকের অরুচি আছে, আমি মহাকর্ষ সিমুলেট করে ছবির মাধ্যমে তুলে ধরব। পুরোনো প্রোগ্রামটা হাতের কাছে নেই, কাল রাতে তাই আবার নতুন করে লিখলাম। ছবি-2.1 এ দেখিয়েছি দুটো বস্তু গতিহীন ভাবে মহাশুন্যে রেখে দিলে কি হতে পারে, নিজেদের আকর্ষনে একসময় এরা মিলিত হবে। ছবি-2.2 একটু জটিল, যদি এদের মধ্যে একটি বস্তুর (লাল) আগে থেকে গতি থাকে তাহলে কি হতে পারে, এক্ষেত্রেও একজন আরেকজনের কাছে আসবে, এবং যত কাছে আসবে তত গতিবেগ বাড়তে থাকবে (ডট গুলো তত দুরে দুরে), তবে গতি বেগের দিক ভিন্নতার জন্য সরলরেখা না হয়ে বাকা পথে বস্তু দুটি মিলিত হবে। এখন যদি লাল বস্তুটার বেগ আরেকটু বাড়াই তাহলে কি হবে দেখা যাক (ছবি -2.3)। এবার দুটি বস্তু মিলিত না হয়ে, ছোট বস্তুটা বড়টার চারদিকে ঘোরা শুরু করবে। এখন যদি লাল বস্তুটার বেগ আরও বাড়াই (ছবি - 2.4) তাহলে দেখা যাবে লাল বস্তু তার গতিপথ ঈষৎ বাকাবে বটে তবে অন্যটার চারদিকে ঘোরা শুরু করবে না, বরং পথ বাতলে অসীমের দিকে চলে যেতে থাকবে। চাঁদ এবং মানুষের নির্মিত স্যাটেলাইট গুলো যারা পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে তাদের পরিস্থিতি ছবি 2.3 এর মতো। যদি এদের প্রারম্ভিক গতিবেগ না থাকত তাহলে এরা ছবি 2.1 এর মতো মাটিতে এসে পড়ত, যেমন কোন বস্তু হাত থেকে ছেড়ে দিলে খাড়া ভাবে মাটিতে পড়ে যায়। আবার গতিবেগের দিক এবং মান যথেষ্ট না হলে 2.2 এর মতো বাকা পথে পৃথিবীতে পড়ে যেত, উদাহরন একটি ঢিল angle করে ছুড়ে মারলে যা হবে । আর প্রারম্ভিক গতিবেগ যথেষ্ট থাকলে 2.3 এর মতো মোটামুটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরতে থাকবে। আবার অনেক স্যাটেলাইট বা নভোযান বেশী গতিবেগ নিয়ে পৃথিবীর মহাকর্ষের আওতা থেকে বের হয়েও যাচ্ছে (বাস্তবে ত্বরন জড়িত) যেমন ভয়েজার, হালের ক্যাসিনি স্পেসক্রাফট। এখানে খেয়াল করলে দেখব কক্ষপথগুলো আসলে বৃত্তাকার নয়, বরং উপবৃত্তাকার (আসলে বৃত্ত বিশেষ একধরনের উপবৃত্ত)। উপবৃত্তের কারনে দুটি বস্তুর দুরত্ব সবসময় সমান থাকে না, কখনও তারা খুব কাছে আসে আবার কখনও দুরে চলে যায়। যেমন পৃথিবী সুর্যের সবচেয়ে কাছে থাকে জানুয়ারীতে (যদিও বাংলাদেশে তখন শীতকাল, দুরত্ব নয় কোটি চোদ্দ লক্ষ মাইল), আবার সবচেয়ে দুরে থাকে জুলাইয়ে (দুরত্ব নয় কোটি পয়তাল্লিশ লক্ষ মাইল)। পৃথিবীর এই দুই অবস্থানে সুর্য থেকে দুরত্বের পার্থক্য কম, কিন্তু প্লুটোর ক্ষেত্রে এই পার্থক্য অনেক বেশী। প্লুটোর গতিপথ এতই বাকানো যে 1979-1999 পর্যন্ত প্লুটো নেপচুনের চেয়েও সুর্যের কাছে ছিল, তখন সৌরজগতের সবচেয়ে দুরবর্তি গ্রহ ছিল নেপচুন। ভেক্টর ক্যালকুলাস দিয়ে গ্রহের কক্ষপথ যে উপবৃত্তাকার তার একটা চমৎকার প্রমান আছে, ইন্টারমিডিয়েটে বসে সরাসরি প্রমান দেখে খুব মজা পেয়েছিলাম।

যাহোক চাঁদ কেন পড়ে যাচ্ছে না তা না হয় বুঝলাম, কিন্তু চাঁদ কি এভাবে অনন্তকাল ঘুরতে থাকবে? ব্যাপারটা এত সরল নয়। ওপরের সিমুলেশন গুলো শুধু দুটি বস্তুর মধ্যে করেছি, বাস্তবে মহাশুন্যে তো আর শুধু দুটি বস্তু নয়, সমস্ত গ্রহ, সুর্য, উপগ্রহ এরা একজন আরেকজনকে আকর্ষন করছে, ফলাফলে কারও গতি পথই আদর্শ উপবৃত্তাকার নয়। চাঁদ যেমন প্রতিবছর গড়ে 3.9 সে.মি. করে পৃথিবী থেকে দুরে সরে যাচ্ছে। কম মনে হলেও এই বেগে বিলিয়ন বছর পরে চাঁদ এমন অবস্থানে পৌছবে যখন পৃথবী এবং সুর্যের উভমুখী আকর্ষনে চাঁদ ভেঙ্গে হয়ত আমাদের চারপাশে শনি গ্রহের মতো বলয় তৈরী করবে। আবার চাঁদের কারনে পৃথিবীর দিনের দৈর্ঘ্যও ক্রমশ বাড়ছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে লেখার শুরুতে যে প্রশ্ন উল্লেখ করেছিলাম সৌরজগৎ স্ট্যাবল না স্ট্যাটিক তার উত্তর হলো, স্ট্যাবলও না স্ট্যাটিকও না। শুধু আমাদের চাঁদের ক্ষেত্রে নয়, অন্যান্য গ্রহের উপগ্রহরাও আনস্ট্যাবল অবস্থায় আছে। শনি, বৃহস্পতি, ইউরেনাস বা নেপচুনের বলয়ও এভাবে তৈরী হয়েছে।

আমার শেষ প্রশ্ন চাঁদ এই বিশেষ গতি বেগ পেল কিভাবে, কেন 2.1, 2.2 বা 2.4 না হয়ে এর কনফিগারেশন 2.3 এর মতো। পরের লেখায় উত্তর পাওয়া যাবে। প্রোগ্রামটা আপলোড করার চেষ্টা করছি, পারলে জানাব।



৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যবহারে বংশের পরিচয় নয় ব্যক্তিক পরিচয়।

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৫

১ম ধাপঃ

দৈনন্দিন জীবনে চলার পথে কত মানুষের সাথে দেখা হয়। মানুষের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য আসলেই লুকিয়ে রাখে। এভাবেই চলাফেরা করে। মানুষের আভিজাত্য বৈশিষ্ট্য তার বৈশিষ্ট্য। সময়ের সাথে সাথে কেউ কেউ সম্পূর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

মহিলা আম্পায়ার, কিছু খেলোয়ারদের নারী বিদ্বেষী মনোভাব লুকানো যায় নি

লিখেছেন হাসান কালবৈশাখী, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯



গত বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল প্রাইম ব্যাংক ও মোহামেডানের ম্যাচে আম্পায়ার হিসেবে ছিলেন সাথিরা জাকির জেসি। অভিযোগ উঠেছে, লিগে দুইয়ে থাকা মোহামেডান ও পাঁচে থাকা প্রাইমের মধ্যকার ম্যাচে নারী আম্পায়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

জানা আপুর আপডেট

লিখেছেন আরাফআহনাফ, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৭

জানা আপুর কোন আপডেট পাচ্ছি না অনেকদিন!
কেমন আছেন তিনি - জানলে কেউ কী জানবেন -প্লিজ?
প্রিয় আপুর জন্য অজস্র শুভ কামনা।



বি:দ্র:
নেটে খুঁজে পেলাম এই লিন্ক টা - সবার প্রোফাইল... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ধুর বউ কে শাড়ি উপহার দিলেন ব্যারিস্টার সুমন। বাটার প্লাই এফেক্ট এর সুন্দর উদাহারন।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:০৭



এক দেশে ছিলো এক ছেলে। তিনি ছিলেন ব্যারিস্টার। তার নাম ব্যারিস্টার সুমন। তিনি একজন সম্মানিত আইনসভার সদস্য। তিনি সরকার কতৃক কিছু শাড়ি পায়, তার জনগণের মাঝে বিলি করার জন্য।... ...বাকিটুকু পড়ুন

অধুনা পাল্টে যাওয়া গ্রাম বা মফঃস্বল আর ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া শহুরে মানুষ!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০০


দেশের দ্রব্যমুল্যের বাজারে আগুন। মধ্যবিত্তরা তো বটেই উচ্চবিত্তরা পর্যন্ত বাজারে গিয়ে আয়ের সাথে ব্যায়ের তাল মেলাতে হিমসিম খাচ্ছে- - একদিকে বাইরে সুর্য আগুনে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অন্যদিকে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমুল্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

×