আমাদের কাছে রোজার অর্থটাই ভিন্ন কিনা কে জানে। আমার মাথাতেও কুলায় না।
এ দেশে রোজা মানে গালিগালাজ না করা, মেয়েদের দিকে না তাকানো, খারাপ চিন্তা না করা, অ্যাডাল্ট ফিল্ম না দেখা কিম্বা মাস্টারবেটিং না করা।
রোজা রেখে এই ক'টি কাজ ঠিকঠাক মতো করতে পারলেই ইফতারি তে আমাদের চেহারাটা অটো-জান্নাতি টাইপের হয়ে যায়!
বাহ্ .. কত্তোগুলি খারাপ কাজ থেকে মুক্ত থাকে দেশ আর আমাদের যুব সমাজ!
এহেন অর্থ সম্বলিত ধর্মপালনকারী দেশ কে মৌলবাদী যে কারা বলে অনেকেই বুঝে না।
এতোকিছু বুঝেও রোজার মাস আসুক আমাদের দেশে, এটা আমি চাই না!
আমার এই ধৃষ্টতার জন্যে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি আগেভাগেই। তবু আমি এই কথাটাই বলবো বারবার।
কি শিক্ষাটা পাই বা পাচ্ছি আমরা দিনকে দিন?
আমার তো মনে হয় রোজা আসলেই ছা'পোষা মধ্যবিত্তদের চোখমুখ শুকনো হয়ে যায়। ঘামেভেজা মজুর আরেকবার চোখতুলে হয়তো বিধাতার কাছেই ফরিয়াদ জানায়, কি করে এই মাসটায় সন্তানগুলো আর স্ত্রী নিয়ে কেমন করে এই মাসটা কাটাবে, আর যদি ঘরে বাবা পেনশনে গিয়ে থাকেন এই মাসটাতেই তাইলে তো কথাই নেই।
আমার তো মনে হয় না, ধর্ম আর সমাজের দিকে তাকিয়ে এই রোজার মাসটাকে গ্রহন করবার ছাড়া তাদের আর কোন কারণ থাকে।
রোজার মাসটায় খুশি কারা থাকেন তাদের দিকে তাকাই একটু।
আড়ৎদার, ব্যাবসায়ী, সরকারী চাকুরিজিবী ( যাদের ঘুষ খাবার সুযোগ আছে) আর বিত্তবান।
আড়ৎদার দের কাজ হচ্ছে সারা বছর মজুদ রেখে কৃত্রিম ক্রাইসিস তৈরী করে রোজার মাসটায় লাভ কামিয়ে নেয়া। তাদের চোখে বছরের আর কোন সময় এসে ধরা দেয় না। সহজ সরল ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ধর্মভীরুতাই তাদের পুঁজি। ভেজাল তেল, ভেজাল ফল, ভেজাল খাদ্য সবকিছু ভেজালে ভেজালে ভাজাভাজি করতে চাও, রমজান মাসের তুলনাই নাই।
ঘুষখোর রা কারেন্ট জাল নিয়ে বসে থাকে ক্যামন করে একটা দাও মারা যায়। বাগে একজনকে পেলেই হলো, হাতে পায়ে ধরেও কাজ হবে না।
পুলিশের অপরাধ প্রবণতা বেড়ে হয় দ্বিগুণ ( কই যাই বলেন), ছিনতাই বাড়ে ঈদ সামনে রেখে।
এসবের পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় বিত্তবানরাই।
সবকিছুকে কমোডিফাইড করার চেষ্টা তাদের। তাদেরকে দেখে মর্ডানাইজড হবার চেষ্টা করে উচ্চমধ্যবিত্তরা ঈদভোগ্যবস্তু সামনে রেখে, প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়া নিম্নমধ্যবিত্ত আর দরিদ্ররা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে 'বড় বাপের পুলায় খায়' কিম্বা ' কাশ্মিরী শরবত ' খাওয়া দেখে।
এই সব বৈষম্য আমার রোজার সময়টাতেই চোখে পড়ে বেশি।
মেয়েদের দিকে তাকানো বন্ধ করলেই কিম্বা গালিগালাজ বন্ধ করলেই সংযম পালন হয় না। স্বভাবগত পরিবর্তন তো হচ্ছেই না।
অথচ এই সংযম এর মাসে আমাদের ভাবা উচিৎ ছিলো এই একটা মাস অন্তত আমরা মানুষের দিকে তাকাই, তাদের স্বস্তির দিকে তাকাই, এই একটা মাস না হয় আমরা লাভ নাই বা করলাম, এই মাসটাতে অন্তত সাম্যবাদ নিয়ে ভাবি, সবাই একসাথে খুশি থাকি. . .
সেইরকম সংযম এর কথাই তো হবার কথা ছিলো রমজান এ...
কি জানি, নাকি এ আমার বোঝার ভুল।
যদি তাই হয়, এমন রোজার মাস আমার চাই না।