somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রসঙ্গ ড. জাফর ইকবাল - প্রতিক্রিয়াশীলতা ও ঘৃণার চাষাবাদ কখনো ভাল ফল বয়ে আনে না

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১০ রাত ৩:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রতিক্রিয়াশীলতা শব্দটির সাথে যখন প্রথম পরিচয় ঘটে তখন বয়স খুব বেশি নয়। প্রতিক্রিয়াশীলতা কি বস্তু তা বুঝতে আরো কিছু শীত-গ্রীষ্ম-বসন্ত পার করতে হয়েছিল। এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে প্রতিক্রিয়াশীলতা আমার নিজের জীবনেও ছিল। কিছুকিছু ক্ষেত্রে হয়তো এখনো আছে। কিন্তু এটুকু বোঝার জ্ঞান এখন হয়েছে যে প্রতিক্রিয়াশীলতা কোন ভাল ফল বয়ে আনতে পারে না। যে জীবন ব্যবস্থায় আমি নিজেকে সাজাতে চাই সেই ব্যবস্থার ম্যনুয়াল আল-কোরআনে পরিষ্কার ভাবেই প্রতিক্রিয়াশীল হতে নিষেধ করা হয়েছে। সুতরাং সচেতন ভাবেই প্রতিক্রিয়াশীলতা এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি।

চরমপন্থায় ঈমান হারানোর পরের হঠাৎ একদিন আবিষ্কার করলাম আমাদের চারিদিকে চরমপন্থীর অভাব নেই। প্রতিক্রিয়াশীলতাই বেশিরভাগের পুঁজি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক যে যাদের কাছে জীবনে প্রথম 'প্রতিক্রিয়াশীলতা' শব্দটা শুনেছি সেই তারাই আজ প্রতিক্রিয়াশীলতার ভূমিকায়। সভা, সেমিনার, বিবৃতি, কলাম, বই; সর্বত্রই আজকাল শুধু ঘৃনার চাষাবাদ, প্রতিক্রিয়াশীলতায় ভরপুর। হাস্যকর লাগে যখন এরা প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে বক্তব্য দেয়। চরম উত্তেজক বক্তব্য ও ঘৃনার চাষাবাদ করে বেড়ায়। যাহোক, সেটা এদের দৈন্যতা বৈ আর কিছু নয়। কিন্তু যারা জীবনের সুন্দরতম সংজ্ঞাগুলোর সাথে সবাইকে পরিচয় করিয়ে দিতে চায়, জীবনকে সুন্দর করে সাজাতে সাহায্য করতে চায় তাদের জন্য প্রতিক্রিয়াশীলতা বেমানানই নয় বরং আত্মঘাতীও বটে। আপনার কোন আচরণ বা কর্মকান্ডে যদি কারো মনে আরো ঘৃণার সৃষ্টি করে সেটার পরিণাম ভাল হওয়ার সম্ভবনা কতটুকু? আপনার উদ্দেশ্য যদি হয় তার বা তাদের ভাল করা, তা হলে আপনি এক্ষেত্রে কতটুকু সফল হচ্ছেন? তার ভুল চিন্তা-ভাবনা ও কাজগুলো তো তার নিজের ও তার অনুসারীদেরই ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে। আপনি আমি সেই ক্ষতি থেকে তাদেরকে বাঁচাতে গিয়ে তাদেরকে আরো বেশি ক্ষতির দিকে কেন ধাবিত করবো?

এই কথাগুলো নানাভাবে নানা প্রসঙ্গে অতীতেও অনেকবার বোঝানোর চেষ্টা করেছি। হয়তো আমার প্রকাশভঙ্গির দুর্বলতা বিষয়টাকে আরো পরিষ্কার ভাবে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হইনি। সম্প্রতি সময়ে অশ্লীল হিন্দি গানের সাথে ভার্সিটি ছাত্রীদের সাথে ড. জাফর ইকবাল স্বপরিবারে নাচার বিষয়টি নিয়ে অনলাইনে বেশ তোলপাড় হওয়াতে ভাবলাম আবার নতুন করে চেষ্টা করে দেখি। তার আগে যে বিষয়টা নিয়ে এই গোলযোগ সেটার দিকে মনোযোগ দেওয়া যাক্‌-

ঘটনা-১) ড. জাফর ইকবাল একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদর সাথে স্বপরিবারে অশ্লীল হিন্দি গানের সাথে নেচেছেন।

ঘটনা-২) কিছু ব্লগার ও অনলাইন ব্যবহারকারী বিষয়টির প্রতিবাদ করে অনলাইনে ক্যাম্পেইন চালাচ্ছেন।

ঘটনা-৩) অতি উৎসাহী কিছু ব্যক্তি ড. জাফর ইকবালের ঘটনাটার সাথে রং মিশিয়ে বিষয়টাকে আরো ঘোলাটে করার চেষ্টা করছেন। ঘোলা পানিতে মাছ ধরাই তাদের উদ্দেশ্য।

ঘটনা-৪) ড. জাফর ইকবালের ভক্তরা জাফর ইকবালের এই কাজে কোন দোষ খুঁজে পাচ্ছেন না এবং তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। একই সাথে অতি উৎসাহীদের বানানো তথ্যগুলোকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তাদের প্রিয় ব্যক্তিত্বকে বাঁচাতে ও তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের উপরে বিষয়টি চাপাতে তৎপর।

দেখা যাচ্ছে এখানে একই সাথে তিনটি দলে সবাই বিভক্ত-

ক-দল) ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে স্বপরিবারে অশ্লীল হিন্দি গানের সাথে নাচাকে খারাপ কাজ মনে করছেন তারা।

খ-দল) এই ঘটনার সাথে রং মিশিয়ে মজা লুটতে ব্যস্ত এই দল।

গ-দল) এই ঘটনাকে খুব স্বাভাবিক ঘটনা হিসেবে দেখার ফলে 'ক-দল' ও 'খ-দল' এর কাজে বিরক্ত হয়ে প্রতিক্রিয়াশীলতার ভূমিকায় অবতীর্ন।

পুরো বাংলাদেশের পরিস্থিতি কি নিশ্চিত নই, কিন্তু ব্লগীয় পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করে দেখা যাচ্ছে 'গ-দল' সংখ্যায় ভারী। মানে আমাদের দেশের তরুন সমাজের একটা বিশাল অংশ মেয়েদের হলে অশ্লীল হিন্দি গানের সাথে নাচাকে ভাল কাজ হিসেবে মেনে নিচ্ছে বা নিতে অভ্যস্থ হয়ে গিয়েছে। যদি সমগ্র তরুন সমাজ (বিশেষ করে শিক্ষিত)-এরই এই হাল হয়, তা হলে অবশ্যই সেটা ভাবার মত একটা বিষয়। আর এর জন্য শুধুমাত্র একজন ব্যক্তিকে দোষারফ করাটা কোন কাজের কথা নয়। ড. জাফর ইকবাল যে অনুষ্ঠানে মেয়েদের সাথে নেচেছেন সেই অনুষ্ঠানের মেয়েরাও এই ঘটনাকে স্বাভাবিক ভাবে নিয়েছে এবং অশ্লীল হিন্দি গানের সাথে নাচা তাদের জন্য বেশ স্বাভাবিক ঘটনা। এক্ষেত্রে যে শিক্ষক তার ছাত্রীদের সাথে নেচেছেন তিনি নিজেও এই বিষয়টাকে স্বাভাবিক ভাবে দেখছেন বলেই মনে হচ্ছে। সুতরাং ঐ শিক্ষক, অনষ্ঠানে অংশগ্রহণ করা ছাত্রীরা এবং অনলাইনে ঐ শিক্ষকের পক্ষে লড়ে যাওয়া বিশাল সংখ্যক জনতার সাথে 'ক-দলের' চিন্তা চেতনার পার্থক্যটা নিয়ে গবেষণায় নামা উচিত। 'ক-দল' যদি তাদের নিজেদের চিন্তা চেতনাকে সঠিক মনে করে থাকে তা হলে 'খ-দল'-এর বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করা উচিত। একই সাথে 'গ-দল' এই সংখ্যাধিক্যতা ও চিন্তা চেতনার বিবর্তনের কারণ অনুসন্ধান জরুরি। 'গ-দল' এর ভাল চাইতে গিয়ে তাদেরকে আঘাত করাটা হঠকারীতা ব্যতিত আর কিছুই নয়!
সর্বশেষ এডিট : ৩০ শে নভেম্বর, ২০১০ সকাল ৮:৩৭
৭৩টি মন্তব্য ৫৪টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×