somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অপেক্ষা (গল্প)

০৯ ই মে, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ডাক্তারের নেমপ্লেট লাগানো একটা ঘরে ঢুকে রাজু চোখ বড় বড় করে তাকায়। ঘরভর্তি চেয়ার, চেয়ারভর্তি মানুষ। সামান্য একজন প্রাইভেট টিউটর নির্বাচনের জন্য এতো প্রার্থী ডাকা হয়েছে!! পরে বুঝা গেল এই ফ্ল্যাটটা আসলে রোগী দেখার চেম্বার। ঘরে বসে থাকা লোকগুলো সবাই ডাক্তার দেখাতে এসেছেন। যদিও ডাক্তার এখনো আসেননি। কখন আসবেন তাও বুঝা যাচ্ছেনা। সে একটা চেয়ারে বসতেই চোখের সামনে ভেসে উঠে তাদের মেস ম্যানেজার রফিক ভাইয়ের মুখটা। যিনি আজ সকালেও বলেছেন- রাজু কি অবস্থা? তোমার ট্যাকাতো শ্যাষ। আর কদ্দিন খাওয়ামু ভাই? চাউলের কেজি পঞ্চাশ..। কি কষ্টটাই না গেছে গত দেড় বছর! এই শহরে তার পরিচিত এমন কেউ নেই যাকে সে একটা টিউশনি যোগাড় করে দেওয়ার কথা বলেনি। তারপর অনেক প্রতীক্ষা আর ধৈর্যের পর আজ সকালে সে খবর পেয়েছে এক ডাক্তার তার ছোট মেয়েকে পড়ানোর জন্য প্রাইভেট টিচার খুজছেন, তাই রাজুকে ডেকে পাঠিয়েছেন ইন্টারভিউ নেয়ার জন্য। কিন্তু সন্ধ্যা সাতটার পরেও ডাক্তার না আসায় সে একটু অধৈর্য হয়। কখন আসবেন তিনি? প্রায় আড়াইঘন্টা বসে থাকার পর তিনি আসলেন রাত আটটায়। এসেই রোগী দেখা শুরু করলেন। এক মিনিটো দেরী করলেন না। দেরি করার সময়ও তাদের নেই। এক মিনিট সমান দুইটা রোগী, দুইটা রোগী সমান এক হাজার টাকা। ১০০০ ইন্টু...। হিসাবে গন্ডগোল। বসে থাকতে থাকতে মাথা এলোমেলো হয়ে গেছে। চেহারা হয়েছে শুটকির মতো। একটু চা পানি খেতে পারলে ভালো লাগতো। কিন্তু এখন বাইরে যাওয়া ঠিক হবে না। ডাক্তার এসে পড়েছেন। যেকোন সময় তাকে ডাকতে পারেন কথা বলার জন্য। অতএব সে বাইরে যায় না। চেয়ারেই বসে থাকে। লোকজনের ভিড়ও বাড়তে থাকে ঘরটায়, বাড়ে কোলাহল। একটা ছোট বাচ্চা তিড়িং বিড়িং করে তার সামনে এসে দাড়ায়। রাজু তার গাল টিপে দিয়ে বলে কেমন আছো সোনামনি? তোমার নাম কি? সোনামনি তার নাম বলেনা। কেমন আছে তাও বলে না। শুধু চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে রাজুর দিকে। রাজু তাকায় ঘরে বসে থাকা ঘরে বসে থাকা লোকগুলোর দিকে। এরা কেউই তার প্রতিযোগী নয় এটা ভেবে তার ভালোই লাগে। কিন্তু সবাই খুব কথা বলছে এটা তার ভালো লাগে না। এরা সবাই কি অসুস্থ? কিংবা রোগী? ভাবে রাজু। তাহলে মুখ বন্ধ হচ্ছেনা কেন? এমন কোন রোগ বালাই কি নেই যা মুখের কথা বন্ধ করে ? নিজের কাছে প্রশ্ন করে সে নিজেই আবার উত্তর দেয়- হ্যাঁ আছে। প্রেমরোগ। হা-হা-হা-, হাসতে থাকে রাজু। হাসি থেমেও যায় কিন্তু প্রেম শব্দটা মাথার ভেতর নাচতে থাকে। প্রেম! প্রেম! হয়েছিল কি তার জীবনে। কখনো? কী দীপ্তিময় অদ্ভুত সুন্দর দুটো চোখ ছিল মেয়েটির! রাজুর বুক ভারী হয় কী এক দুঃখ বেদনায়। কিন্তু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সে আবার উত্তেজিত হয়। দশটা বাজে! সে প্রায় ধমকের সুরে পিয়নকে দিয়ে ভিতরে খবর পাঠায় যে সে এসেছে। পিয়ন ছেলেটা ঘুরে এসে খবর দেয় রোগী দেখা শেষ করে স্যার তার সাথে কথা বলবেন। রাজু বিরক্ত হয়ে বসে থাকে। কখন রোগী দেখা শেষ হবে আর কখন শুরু হবে তার ইন্টারভিউ! যাক তাও হবেতো শুরু একসময় এই ভেবে কিছুটা স্বস্তি সে পাওয়ার চেষ্টা করে বিরক্তি এড়ানোর জন্য। উত্তেজনা কিছুটা কমলে মনটাও একটু নরম হয়। আহা, এই দুর্দিনের অবসান হবেতো? কতোবেলা তার কেটেছে না খেয়ে ভার্সিটির বেতন আর মেস ভাড়া দিতে গিয়ে। বাড়ি থেকে যা সামান্য কিছু টাকা আসে তা দিয়ে মেস খরচই চলেনা ঠিকমতো। এতো বড় শহর, লক্ষ লক্ষ মানুষ। সামান্য একটা টিউশনি সে জোগাড় করতে পারছেনা! কি করে চলবে পড়াশোনা? এসব ভাবতে ভাবতে তার ধন্দ লাগে। চোখের পাতা নেমে আসে ক্লান্তিতে। তার মনে হয় এই অপেক্ষা এই বসে থাকা বুঝি কোনদিনই শেষ হবে না। মনে হয় সে এক মৃত মানুষ। মৃত্যুর পর তাকে আবার জীবিত করা হয়েছে বিচারের জন্য। বিচারে তার রায় ঘোষনা হয়েছে একজন ডাক্তারের অপেক্ষায় টিউশনির প্রতীক্ষায় একটা কাঠের চেয়ারে তাকে বসে থাকতে হবে সারাজীবন। যে জীবনের মৃত্যু নেই, ক্লান্তি আছে। যে সময়ের উৎস আছে, পরিণতি নেই। সময় বয়ে যাচ্ছে অনন্ত অসীমতার দিকে। বইতে বইতেই একসময় যখন রাত এগারোটা বাজে তখন হঠাৎ কীযে হয়। পেটটা মোচড় দিয়ে উঠে খিদেয়। সে একটু বাইরে যায় কিছু খাওয়ার জন্য এবং মাত্র দশ মিনিটের জন্য বাইরে গিয়ে ফিরে এসে দেখে ডাক্তার নেই। বাসায় চলে গেছেন!!
[email protected]
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চাঁদগাজীর মত শিম্পাঞ্জিদের পোস্টে আটকে থাকবেন নাকি মাথাটা খাটাবেন?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৫৭


ধরুন ব্লগে ঢুকে আপনি দেখলেন, আপনার পোস্টে মন্তব্যকারীর নামের মধ্যে "জেন একাত্তর" ওরফে চাঁদগাজীর নাম দেখাচ্ছে। মুহূর্তেই আপনার দাঁত-মুখ শক্ত হয়ে গেল। তার মন্তব্য পড়ার আগেই আপনার মস্তিষ্ক সংকেত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টি দিল্লী থেকে।

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৫


((গত ১১ ডিসেম্বর ধর্মীয় উগ্রবাদ ও জঙ্গী সৃষ্টির ইতিবৃত্ত ১ শিরোনামে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম। সেটা নাকি ব্লগ রুলসের ধারা ৩ঘ. violation হয়েছে। ধারা ৩ঘ. এ বলা আছে "যেকোন ধরণের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×